বাঙ্গালী
Sunday 24th of November 2024
0
نفر 0

এক খেয়ানতকারী ও ইমাম হুসাইন (আ.) এর বিচারকার্য

কাফেলা রওনা হওয়ার জন্য প্রস্তুত। উটদের চিৎকার এরই জানান দিচ্ছিল। শহরের অধিবাসীরা এই শব্দের অর্থ জানে। মদিনার আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চল হতেও অনেক সফরের প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র নিয়ে কাফেলার উদ্দেশ্য রওনা হল। কেউ ঘোড়ার চড়ে, কেউ উটের পিঠে, আবার কেউ পায়ে হেটে। যার যেটা ছিল সেটা নিয়েই তারা বেরিয়ে পড়লো, উদ্দেশ্য একটাই; কাফেলার সাথী হওয়া। তাদের সবারই জানা যে, একটি লম্বা সফর
তাদের সামনে রয়েছে।
নতুন যাত্রিরা সংযুক্ত হওয়ার সাথে সাথে কাফেলার রূপ বৃহদাকার ধারণ করতে লাগলো এবং মদিনাকে পিছনে ফেলে কাফেলা প্রাণহীন মরুর বুক
চিরে গন্তব্যের দিকে এগুতে থাকলো।
হুসাইন (আঃ)ও উক্ত কাফেলায় যোগ দিয়েছিলেন।
তাঁর সাথে একটি ঘোড়া থাকা সত্ত্বেও তিনি ঘোড়ার লাগাম ধরে পায়ে হাটছিলেন।
কাফেলা আল্লাহর ঘর যেয়ারত করার উদ্দেশ্যে
শহর ত্যাগ করেছিল। কয়েকদিন আরবের মরু রাস্তা অতিক্রম করার পর অবশেষে মক্কার নিকটাবর্তী
হল। কোনরকম দুর্ঘটনা ছাড়াই এই রাস্তা অতিক্রম করায় যাত্রিরা খুবই খুশি।
কাফেলার যাত্রিরা কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর যেয়ারাতের জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করলেন। তার একই রঙের "ইহরামের" পোশাক পরিধান করলেন যাতে করে সাতবার আল্লাহর
ঘরের তাওয়াফ করতে পারেন।
কা'বা মাসজিদুল হারামের উঠানে অবস্থিত এবং মসজিদুল
হারামের চতুর্দিক ছোট ছোট টিলা দ্বারা ঘেরা।
বেশ কিছু আশ্চার্য জনক জিনিষ সেখানে ছিল।
"যমযম"
কূপ যা ঐ লবনাক্ত মরুর মাঝেও বছর বছর ধরে যেয়ারতকারীদের মিষ্টি পানি দান করে আসছে এবং
একটি পাথর যার উপর ইব্রাহীমের (আঃ) পায়ের ছাপ এখনো পরিলক্ষিত হয়। পুরুষেরা একদিকে এবং
মহিলারা অপরদিকে, প্রজাপতিদের মত কা'বার চারপাশে তাওয়াফ করছিলেন।
এমন সময় এক মহিলা অনুভব করলো যে, একজন অপরিচিত পুরুষ তার
হাতে চাপ প্রয়োগ করছে। সে
আল্লাহর ঘরের নিকট এই ধরণের নোংরা কাজে খুবই রাগান্বিত হল এবং সেই খেয়ানতকারী ব্যক্তিটিকে
বলল:
-কেন আল্লাহর ঘরের সন্মান নষ্ট করেছো এবং
একজন মুসলমানের সম্ভ্রমে খেয়ানত করেছো।
লোকটি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে চাইল নিজের হাতটি
টেনে নিতে কিন্তু কোন লাভ হল না কেননা লোকটির হাত মহিলার হাতের সাথে জোড়া লেগে গিয়েছিল।
তারা উভয়েই হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলো কিন্তু কোন লাভ হল না।
যেসব যেয়রতকারীদের তাওয়াফ শেষ হয়েগিয়েছিল
তার এই ঘটনার সাক্ষি ছিলেন। ঐ খেয়ানতকারী লোকটিকে গ্রেফতার করে তৎকালীন শাসকের নিকট যাওয়া হল। কেউ কেউ বলছিল লোকটিকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া উচিৎ। আবার কেউ কেউ বলছিল তার হাত কেটে ফেলা হোক। সবাই কিছু না কিছু বলছিল। শাসক সকল বিচারকদেরকে রাজ প্রাসাদে
এসে সমবেত হওয়ার নির্দেশ দিলেন।
ঘোষণাকারী সমস্ত অঞ্চলে শাসনকর্তার নির্দেশ ঘোষণা করে দিল। কিছুক্ষন পরেই শাসনকর্তার
প্রাসাদে সবাই প্রবেশ করল।
শাসনকর্তা বিচারকদের উদ্দেশ্যে বলল ঐ খেয়ানতকারী ব্যক্তিটির বিরুদ্ধে হুকুম
জারী করতে।
শহরের বিচারকগণ অনেক চিন্ত-ভাবনা শলা-পরামর্শের
পর এই সিদ্ধান্তে উপনীত হল যে, খেয়ানতকারী লোকটির হাত
কেটে ফেলা হোক।
বিচারকদের রায়ে শাসনকর্তা তুষ্ট হল না এবং
গভীর চিন্তায় মগ্ন হল। হঠাৎ কিছু একটা তার মাথায় আসল এবং রক্ষীদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন:
- হুসাইন কি এই শহরেই আছে?
- রক্ষীগণ বলল: জ্বি! তিনি গতরাতে শহরে প্রবেশ করেছেন।
- শাসনকর্তা বললেন: সেই সর্বোত্তম ব্যক্তি যে এই বিষয়ের বিচার করতে সমাধান দিতে পারবে। সাথে সাথে এ বিষয়ে তাঁর মতামত জানার জন্য একজন লোককে প্রেরণ করা হল।
হুসাইন (আঃ) যখন ঘটনা সম্পর্কে অবগত হলেন, আল্লাহর ঘরে গেলেন এবং আল্লাহর নিকট দোয়া করলেন তারপর শাসকের প্রাসাদে গেলেন। তিনি কি বিচার করেন এটা দেখার জন্য তখনও সবাই অপেক্ষা
করছিল?
হুসাইন (আ.) উক্ত পুরুষ এবং মহিলার দিকে একবার দৃষ্টি দিলেব এবং অতি নিম্নস্বরে ঠোঁটের কোণে কিছু একটা বললেন এবং হঠাৎ করে লোকটির হাত মহিলার হাত হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।
শাসনকর্তা খুশি হয়ে হুসাইন (আ.) কে ধন্যবাদ জানিয়ে বললেন:
এখন যে শাস্তিই আপনি এই লোকটির জন্য ধার্য্য
করবেন আমি নির্দেশ দেব সেটা পালন করার জন্য? তিনি বললেন : কোন শাস্তি দেবার প্রয়োজন
নেই! তাকে ছেড়ে দাও সে যেখানে খুশি চলে যাক। তার জন্য শাস্তি এটাই যথেষ্ট যে তার সন্মান
মানুষের সামনে নষ্ট হয়েছে।
হ্যাঁ যে ব্যক্তি পায়ে হেটে যেয়ারতে আসে
আল্লাহও তার দোয়া এভাবেই কবুল করেন।

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

নেয়ামতের হাত ছড়া হওয়ার কারন
হযরত মুসা (আ.)'র মু'জিজার কাছে ...
মহানবী (স.) হতে বর্ণিত ৪০টি হাদীস (২)
গাদিরে খুম
কুরআনের দৃষ্টিতে নবী-রাসূলগণ
আল কুরআনের দৃষ্টিতে মানব জীবনের ...
রমজানে দোয়া ও মোনাজাত
পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে ...
যুগের ইমাম সংক্রান্ত হাদীসের ওপর ...
ইহুদিবাদী ইসরাইলের অবৈধ জন্মের ...

 
user comment