বাঙ্গালী
Friday 22nd of November 2024
0
نفر 0

বেহেস্তি নেত্রি: ফাতিমা যাহরা সা.আ

মহানবী ( সা:) এর প্রিয়তমা কন্যা ছিলেন হযরত ফাতেমা যাহরা ( সাঃ আঃ )। তাঁর শুভ জন্ম সম্পর্কে হযরত খাদিজা (সা: আ: ) বলেন, ফাতেমার জন্মের সময় সাহায্য করার জন্য আমি প্রতিবেশি কুরাইশ রমণীদের ডেকে পাঠিয়েছিলাম । কিন্তু তারা এই বলে প্রত্যাখ্যান করল যে, আমি মুহাম্মদ (সা:) কে বিয়ে করেছি। আমি কিছুক্ষণের জন্য দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম । হঠাৎ দেখলাম চারজন উজ্জ্বল জ্যোতির্ময়ী দীর্ঘকায়া মহিলা আমার দিকে এগিয়ে আসছেন। আমাকে আতঙ্কিত দেখে তারা বললেন, হে খাদিজা ভয় পাবেন না ।আমি হলাম ইসহাকের মাতা সারা, আর অপর তিনজন হলেন ঈসার মাতা মরিয়ম, ফিরাউনের স্ত্রী আসিয়া এবং মূসার বোন উম্মে কুলসুম ।আল্লাহ আমাদেরকে পাঠিয়েছেন আপনাকে সাহায্য করতে। এই বলে সেই জ্যোতির্ময় নারীরা আমার চারপাশে ঘিরে বসলেন । আমার মেয়ে ফাতেমা জন্মগ্রহণ করা পর্যন্ত তাঁরা আমার সেবা করলেন। হযরত ফাতেমা যাহরা ( সাঃ আঃ ) মাত্র ৫ বছর তাঁর স্নেহময়ী মায়ের আদর-সোহাগ পেয়েছিলেন । তাঁর জম্মের পাঁচ বছর পরেই হযরত খাদিজা ( সা: আ: ) ইন্তেকাল করেন।
মা খাদিজা ( সা: আ:)র ইন্তেকালের পর সংগ্রামী পিতার সাথে হযরত ফাতেমাও জীবনের কঠোর বাস্তবতার মুখোমুখি হন। ইসলাম প্রচারের প্রথম দিকে যেসকল দুঃখ-কষ্ট নবীজী ভোগ করেছেন সে সময়ে তাঁর সাথী ছিলেন হযরত ফাতেমা। তিনি যখন খুব ছোট তখনই কুরাইশরা বনি হাশিমকে শেবে আবু তালিবে নির্বাসন দিয়েছিল। মহানবী (সা:) তাঁর পরিবার-পরিজন নিয়ে দীর্ঘ তিন বছর সেখানে অনাহারে-অর্ধাহারে অবরোদ্ধ জীবন যাপন করেছিলেন। মা বাবার সাথে ছোট্ট ফাতেমাও এ দুঃখ-কষ্ট সহ্য করেন। ইন্তেকালের সময় মা খাদিজা ( সা: আ: ) প্রচুর ধন সম্পদ রেখে যান। সে সম্পদের কোন প্রভাব বালিকা ফাতেমার উপর প্রাধান্য বিস্তার করতে পারে নি। মহীয়সী মায়ের মতো তিনিও সকল ধন সম্পদ ইসলাম প্রচারের জন্যে পিতার হাতে তুলে দেন।
মায়ের ইন্তেকালের পর থেকে হযরত ফাতেমা যাহরা ( সাঃ আঃ ) এর দায়িত্ব অনেক বেড়ে যায় । নবী পিতার সেবা-শুশ্রুষা থেকে শুরু করে সংসারের নানান কাজের দায়িত্ব তিনি নিজ কাঁধে তুলে নেন। মক্কার কাফেররা প্রায়ই মহানবী ( সা:)কে উত্যক্ত করত, তাঁর ওপর অত্যাচার চালাত। সেই সময় স্নেহময়ী মায়ের মতো বালিকা ফাতেমা পিতার পাশে এসে দাঁড়াতেন, পিতার ক্ষতের পরিচর্যা করতেন, কাফেরদের হাত থেকে তাঁকে আগলে রাখার চেষ্টা করতেন । তিনি একাই তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হতেন। এজন্য হযরত ফাতেমা যাহরা ( সাঃ আঃ )কে সকলে উম্মে আবিহা বলে ডাকতো। উম্মে আবিহা অর্থ তাঁর পিতার মা। ফাতেমা মহানবী (সা:) এর কন্যা হয়েও স্নেহময়ী মায়ের মতো মহানবীকে ভালোবাসতেন বলেই তাঁর উপাধি হয়েছিল উম্মে আবিহা। ইসলাম প্রচারের কঠিন মিশন নিয়ে মহানবী ( সা: ) দেশান্তরী হয়েছিলেন । সে সময়ও হযরত ফাতেমা যাহরা ( সাঃ আঃ ) পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ইসলাম প্রচারে আত্মনিয়োগ করেন। মদিনায় পৌছে মহানবী (সা: ) তাঁর আদরের উম্মে আবিহার সাথে তাঁর অত্যন্ত প্রিয়পাত্র হযরত আলী ( আ:) এর বিয়ে দেন।
হযরত ফাতেমা যাহরা ( সাঃ আঃ )র যখন বিয়ের বয়স হলো তখন তাঁর জন্য অনেকেই বিবাহের প্রস্তাব পাঠান। মহানবী এ ব্যাপারে কাউকেই কথা দিলেন না ।তিনি আল্লাহর সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছিলেন । অবশেষে হযরত আলী ( আ: ) তাঁর কাছে হযরত ফাতেমা যাহরা ( সাঃ আঃ র বিয়ের প্রস্তাব পাঠালেন । মহানবী (সা: ) এতে খুব খুশী হলেন । কারণ আল্লাহর ইচ্ছা ছিল আলীর সাথে ফাতেমার বিয়ে দেবার । হযরত আলী (আ:) এর প্রস্তাব নিয়ে মহানবী (সা:) কন্যা হযরত ফাতেমার কাছে এলেন । জিজ্ঞেস করলেন, মা তুমি কি আলীকে বিয়ে করতে রাজী আছো ? আল্লাহ আমাকে এ নির্দেশ দিয়েছেন। হযরত ফাতেমা এ কথা শুনে খুবই আনন্দিত হলেন। তিনি লজ্জায় মুখ ফুটে কিছু বলতে পারলেন না। মাথা নিচু করে সম্মতি জানালেন। মহানবী ( সা:) মেয়ের সম্মতি জানতে পেরে খুশীতে আল্লাহুআকবর বলে উঠলেন। দ্বিতীয় হিজরীর ১ লা জিলহাজ্জ রোজ শুক্রবার হযরত আলী (আ:) এর সাথে হযরত ফাতেমার শুভ বিবাহ সুসম্পন্ন হয়। এ বিবাহ অনুষ্ঠানে সকল আনসার ও মুহাজির উপস্থিত ছিলেন। বিয়ের অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে মহানবী ( সা: ) সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বলেন,আল্লাহর আদেশেআমি ফাতেমার সাথে আলীর বিয়ে দিচ্ছি এবং তাদের বিয়ের মোহরানা বাবত ধার্য করেছি চারশ মিসকাল রৌপ্য। অতঃপর মহানবী (সা:) হযরত আলীকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আলী তুমি কি এতে রাজী আছো ?
হযরত আলী (আ:) সম্মতি জানিয়ে বললেন, হ্যাঁ , আমি রাজী। তখন নবীজী দুহাত তুলে তাঁদের জন্য এবং তাঁদের অনাগত বংশধরদের সার্বিক কল্যাণের জন্য দোয়া করলেন। হযরত ফাতেমা যাহরা ( সাঃ আঃ ) এর সন্তান ইমাম হাসান ( আ:), ইমাম হোসাইন ( আ: ), হযরত জয়নাব (সা: আ: ) ও হযরত উম্মে কুলসুম (সা: আ: ) ছিলেন মুসলিম উম্মার সর্বোত্তম সন্তান। ধার্মিকতায়, সৎ কাজে এবং উদারতায় তাঁরা ছিলেন অতুলনীয় । তাঁদের চরিত্র মাধুর্য এবং কর্মশক্তি ইতিহাসের গতিধারাকেই পাল্টে দিয়েছে এবং ইসলামের আদর্শকে মানবজাতির উদ্দেশ্যে চিরকালের জন্য সমুন্নত রেখেছে।

 

 

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

শিয়া মুসলমানরা কি দৈনিক তিন ...
ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাঈলের জন্ম ...
قرآن مجید میں حوادث کے جزئیات کیوں ذکر هوئے هیں ...
খলিফা ওমর বিন -আব্দুল আজী
নবী ও রাসূলের প্রয়োজনীয়তা
ভুলে যাওয়া ইতিহাস : ঘটনা প্রবাহ ...
ইসলামের পবিত্র চারটি মাস ও আমাদের ...
ইসলাম এবং বিশ্বজনীন শান্তি ও ...
কারবালার প্রেক্ষাপট : কীভাবে নবীর ...
হযরত যয়নব (রা.) বিনতে রাসূলুল্লাহ্ ...

 
user comment