বাঙ্গালী
Saturday 4th of May 2024
0
نفر 0

আমিরুল মু’মিনীন (আ.) এর দৃষ্টিতে হযরত ফাতেমা যাহরা (সা. আ.)


আমিরুল মু'মিনীন (আ.) এর দৃষ্টিতে হযরত ফাতেমা যাহরা (সা. আ.)

আমিরুল মু'মিনীন (আ.) এর দৃষ্টিতে হযরত ফাতেমা যাহরা (সা. আ.)


আমিরুল মু'মিনীন হযরত আলী (আ.) এর নিকট হযরত ফাতেমা যাহরা (সা. আ.) এর মর্যাদা ও স্থান এ বিষয়টি তাঁর (আ.) দৃষ্টিতে নারীর স্থানের বিষয়টিকে স্পষ্ট করে এবং এ বিষয়ের প্রমাণস্বরূপ যে, একজন নারী এমন সুউচ্চ স্থানে পৌঁছাতে সক্ষম যে, স্বয়ং ইমামের গর্বের কারণ হতে পারে।

যদিও আমিরুল মু'মিনীন (আ.) এর দৃষ্টিতে হযরত ফাতেমা (সা. আ.) বিষয়টি স্বতন্ত্র গবেষণা দাবীদ্বার, কিন্তু এখানে সংক্ষেপে এ বিষয় ভিত্তিক কিছু আলোচনা করা হয়েছে, যার মাধ্যমে হযরত যাহরা (সা. আ.) এর সুমহান মর্যাদার বিষয়টি অধিক স্পষ্ট হয়।

হযরত আলী (আ.) এর ন্যায় মহান ব্যক্তিত্ব, হযরত ফাতেমা যাহরা (সা আ.) এর জীবনসঙ্গী হতে পেরে গর্ববোধ করেন, এ বিষয়কে অন্যের উপর তার প্রাধান্য লাভ এবং এর কারণে মুসলিম জাহানের নেতৃত্ব দানের ক্ষেত্রে তিনি অধিক যোগ্য ব্যক্তি বলে উল্লেখ করেন। হযরত আলী (আ.) নিজের সত্যতার প্রমাণে হযরত ফাতেমা যাহরা (সা. আ.) এর স্বামী হওয়ার বিষয়কে প্রমাণ স্বরূপ উপস্থাপন করেছেন। এ বিষয়ে কয়েকটি দৃষ্টান্ত নিম্নে উল্লেখ করা হল :

* তিনি মুয়াবিয়া'র পত্রের উত্তরে, নিজের যে সকল শ্রেষ্টত্বের কথা উল্লেখ করেছেন তম্মধ্যে একটি হচ্ছে তাঁর (আ.) হযরত ফাতেমা যাহরা (সা. আ.) এর জীবনসঙ্গী হওয়ার বিষয়টি। তিনি লিখেছেন : ‘বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ নারী আমাদের মধ্য হতে এবং হাম্মালাতাল হাতাব তথা যে দোযখের আগুনের জ্বালানী কাঠ বহন করে সে [আবু লাহাবের স্ত্রী] তোমাদের মধ্য হতে'। (১)

* দ্বিতীয় খলিফা তার স্থলাভিষিক্ত নির্বাচনের জন্য যে ছয়জনের একটি কমিটি নির্বাচন করেছিলেন, হযরত আলী (আ.) তাদের উদ্দেশ্যে বলেন : ‘তোমাদের মধ্য হতে এমন কেউ আছে কি যে, বিশ্বের নারীদের সর্দারের জীবনসঙ্গী স্বামী?' তারা সকলেই উত্তর দিয়েছিলেন : না। (২)

* হযরত আলী আলাইহিস সালাম, মুয়াবিয়াহ'র অপর এক পত্রের উত্তরে লিখেছিলেন : ‘মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি) এর কন্যা আমার সহধর্মিনী, তার মাংস আমার রক্ত ও মাংসের সাথে মিশে গেছে। হযরত আহমাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি) এর দৌহিত্ররা হচ্ছে ফাতেমা [আলাইহাস সালাম] হতে আমার সন্তানেরা, তোমাদের মধ্যে হতে কে আমার মত এমন বৈশিষ্ঠের অধিকারী।(৩)

* সাকীফাহ'র ঘটনায় তিনি তার শ্রেষ্ঠত্বের বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ ও মহানবী (স.) এর পর মুসলিম সমাজের নেতৃত্ব তার দায়িত্বে বর্তায় এ কথা উল্লেখ করে আবু বকরের উদ্দেশ্যে বলেন : ‘তোমাকে আল্লাহর শপথ দিচ্ছি! আল্লাহর রাসূল (স.) যাকে তাঁর কন্যার জীবনসঙ্গী হিসেবে নির্ধারণ করেছেন এবং বলেছেন, মহান আল্লাহ তাকে তোমার [আলী] জীবসঙ্গী হিসেবে নির্ধারণ করেছেন, সে কি আমি নাকি তুমি? আবু বকর বললেন : তুমি। (৪)

আল ভাষাকুরআনের শৈলী

আল ভাষাকুরআনের শৈলী

 

আলকুরআন মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে এমন একজন ব্যাক্তির উপর নাযিল হয়েছে যার কোন অক্ষরজ্ঞান ছিল না। আল্লাহ তাআলা ইচ্ছা করেই এমনটি এই জন্য করেছেন যাতে প্রমাণিত হয় যে, এ গ্রন্থটি এমন চমকপ্রদ আলংকারিক ভাষা ও শৈলী বহন করে যা কোন নিরক্ষর লোকের ব্যক্তিগত ভাষা হতে পারে না। যে সময় কুরআন নাযিল হয়, সে সময় আরবে খ্যাতিমান কবি-সাহিত্যিকদের অভাব ছিল না। কিন্তু তারপরও আল্লাহ যখন কুরআনের অনুরূপ কুরআন সৃষ্টির জন্য চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করলেন; তখন এসব কবি-সাহিত্যিক অপারগতা প্রকাশ করে বলল; ‘লাইসা হাযা মিন কালামিল বাশার' (এটা কোন মানব রচিত বাণী নয়)-এর ভাষা, রচনাশৈলী ও বিন্যাস পদ্ধতি উঁচু মানের। এ গন্থে উঁচু স্তরের শিল্পকলা বিদ্যমান, যা কুরআনের বিশেষ কোন অংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং গোটা কুরআনে তা সমভাবে বিস্তৃত।

ইমাম সাদিক (আ.) এর সংক্ষিপ্ত জীবনচরিত

ইমাম সাদিক (আ.) এর সংক্ষিপ্ত জীবনচরিত


জন্ম ও বংশ পরিচয় :

শিয়াদের ষষ্ট ইমাম হযরত ইমাম সাদিক (আ.) ১৭ই রবিউল আওয়াল ৮৩ হিজরীতে পবিত্র মদিনা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর কুনিয়াহ ছিল আব্দুল্লাহ এবং তাঁর উপাধী সাদেক (সত্যবাদী)। তাঁর পিতার নাম হযরত ইমাম মুহাম্মাদ বাকের (আ.) -শিয়াদের পঞ্চম ইমাম- এবং তাঁর মাতার নাম উম্মে ফারওয়া।


ইমামতের পূর্বে তিনি তাঁর সম্মানিত পিতার ধর্মীয় শিক্ষা প্রচার ও একনিষ্ঠ ছাত্র প্রশিক্ষণের সাক্ষ্য ছিলেন। ইমাম মুহাম্মাদ বাকের (আ.) বিভিন্ন সময়ে স্বীয় পুত্র হযরত জাফর সাদিক (আ.) এর ইমামত ও বেলায়েতের বিষয়টি শিয়াদের সম্মুখে স্পষ্ট করেছিলেন এবং শিয়াদেরকে নিজের পর স্বীয় পুত্রের অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরই ভিত্তিতে ইমাম সাদিক (আ.) এর ইমামতের সপক্ষে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে।


হযরত ইমাম সাদিক (আ.) স্বীয় পিতা হযরত ইমাম মুহাম্মাদ বাকের (আ.) এর শাহাদতের পর ১১৪ হিজরীতে ৩১ বছর বয়সে ইমামতের দায়িত্ব লাভ করেন। তার ইমামতের সময়টি ছিল স্বৈরাচারী বনি আব্বাস গোষ্ঠীর শাসনামলের শেষের দিক এবং অত্যাচারী আব্বাসী গোষ্ঠীর শাসনামলের শুরু। উমাইয়া শাসকদের হুকুমতের পতন ১৩২ হিজরী ঘটে।

ইমাম সাদিক (আ.) এর যুগটি ছিল অন্যান্য ইমাম (আ.) গণের যুগ অপেক্ষা আলাদা। ঐ সময়কার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ ছিল অন্যান্য ইমামদের সময় অপেক্ষা ভিন্ন। কেননা তাঁর যুগটি ছিল অত্যাচারী শাসক গোষ্ঠী বনি উমাইয়ার ক্ষমতা হতে পতনের সময় এবং উমাইয়া শাসকদের হতে আব্বাসীয় কর্তৃক ক্ষমতা কেড়ে নেয়ার সময়। এ দুই অত্যাচারী এ দুই শাসক গোষ্ঠী দীর্ঘদিন যাবত ক্ষমতার লোভে পরস্পরের সাথে দ্বন্দে লিপ্ত ছিল। অবশেষে ১২৯ হিজরীতে সশস্ত্র ও সামরিক হামলা শুরু হয়।


এই টানাপোড়ন ও সংঘর্ষের কারণে বনি উমাইয়া ও বনি আব্বাস ইমামগণ (আ.) এর তত্পরতার প্রতি কঠোর দৃষ্টি দেয়ার সুযোগ পেত না। এ কারণে এ সময়ে ইমাম সাদিক (আ.) ও শিয়ারা তুলনামূলকভাবে সাংস্কৃতিক ও ইলমি তত্পরতার জন্য উত্তম সুযোগ লাভ করেছিলেন।

ইমাম (আ.) তত্কালীন সরকারের রাজনৈতিক শক্তির দূর্বলতার সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ধর্মীয় শিক্ষা প্রচার ও প্রসারের জন্য সচেষ্ট হন। ইমাম (আ.) এর যুগে যেহেতু ইসলামি ভূখণ্ড প্রাথমিক যুগ অপেক্ষা ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হয়েছিল তাই ইসলাম ও শিয়া মাযহাব, অন্যান্য ধর্ম ও মাযহাবের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন ছিল। আর এ কারণেই সাংস্কৃতিক কর্মতত্পরতা ও ছাত্র প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা ঐ যুগে প্রকটভাবে দেখা দেয়। এ সময় ইমাম সাদিক (আ.) যথাযথ উত্তমরূপে অন্যান্য ধর্ম ও মাযহাবের সকল প্রশ্ন ও সন্দেহের জবাব অত্যন্ত গভীরভাবে ও মনোযোগ সহকারে দিতেন এবং শিয়া মাযহাবের স্বকীয়তা ও গভীরতা তুলে ধরতেন।


হযরত ইমাম সাদিক (আ.) এর যুগ থেকেই ইমামিয়া শিয়া মাযহাব ফিকাহ, কালাম শাস্ত্র, নৈতিকতা, তাফসীর ইত্যাদি বিষয়ে স্বতন্ত্র স্বকীয়তা লাভ করে। শিয়া মাযহাবের ফিকাহ -যা জাফরী ফিকাহ নামে প্রসিদ্ধ- ইমাম সাদিক (আ.) এর নামের সাথে নামকরণ করা হয়েছে। কেননা শিয়া মাযহাবের ফিকাহ শাস্ত্রের অধিকাংশ মাসআলা-মাসায়েল তাঁর (আ.) হতেই বর্ণিত হয়েছে। আজকে আমাদের মাঝে যে বিভিন্ন ফিকাহ'র রূপ আমরা দেখতে পাই সেগুলোর উত্পত্তি ইমাম সাদিক (আ.) এর সমসময়ে বা তার পরে। ইমাম সাদিক (আ.) এর এহেন পদক্ষেপের মাধ্যমে মহানবী (স.) কর্তৃক আনীত প্রকৃত ইসলাম আহল বাইত (আ.) এর মাধ্যমে তথা তত্কালীন যুগের ইমাম হযরত সাদিক (আ.) এর মাধ্যমে আমাদের নিকট পৌঁছে। আর এ যুগেই কুফা ও বসরাতে হাদীস ও কালাম শাস্ত্রে ও ফিকাহ শাস্ত্রের ব্যাপক চর্চা হয়।

তাঁর (আ.) সময়টি ছিল সংস্কৃতি ও চিন্তার জাগরণের সময় এবং বিভিন্ন মাযহাবের মাঝে তর্ক-বিতর্কের সময়। মহানবী (স.) এর যুগের পর এমন সুযোগ আর কখনই সৃষ্টি হয়নি। কেননা মহানবী (স.) এর ইন্তেকালের পর হাদীস লেখার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছিল। আর বনি উমাইয়া শাসকদের প্রচণ্ড চাপের কারণে ইমাম (আ.) গণও প্রকাশ্যে মহানবী (স.) এর শিক্ষাকে প্রচার করতে পারতেন না। এ কারণে তত্কালীন মুসলমানরা মহানবী (স.) এর রেখে যাওয়া শিক্ষা লাভ হতে বঞ্চিত হয়।

ইমাম সাদিক (আ.) রাজনৈতিক চাপ মুক্ত হওয়ার সাথে সাথে এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মহানবী (স.) এর প্রকৃত ইসলামের শিক্ষাকে -যা বংশীয় পরম্পরায় আহলে বাইত (আ.) এর এক সদস্য হতে অন্য সদস্যের মাধ্যে তাঁর নিকট পৌঁছে ছিল- মুসলমানদের মাঝে প্রচার শুরু করলেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ ছাত্র প্রশিক্ষণে নিজেকে নিয়োজিত করলেন। বিভিন্ন সূত্র হতে বর্ণিত বিশ্বস্ত রেওয়াতের ভিত্তিতে জানা গেছে যে, ইমাম সাদিক (আ.) এর ছাত্রদের সংখ্যা ছিল ৪ সহস্রাধিক।

 


source : shiasearch.ir
0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

মহানবী (স.) হতে বর্ণিত ৪০টি হাদীস (২)
তাকওয়া হাসিলের উপায়
পুনরুত্থান দিবস
ইরানের ইসলামি বিপ্লবের দিনগুলি ...
ইসলামী ঐক্য : গুরুত্ব ও তাৎপর্য
আকাশ, পৃথিবী ও হযরত আদম (আ.) সৃষ্টি ...
দাওয়াতে দ্বীনের গুরুত্ব ও ...
কারবালার বীর নারী হযরত যায়নাব (আ.)
কুরআন ওইমামত সম্পর্কে ইমাম জাফর ...
সূরা হুদ;(২০তম পর্ব)

 
user comment