বাঙ্গালী
Wednesday 8th of May 2024
0
نفر 0

কারবালা বিপ্লবের শিক্ষা থেকে উপকার পেতে প্রকৃত ইতিহাস জানতে হবে

কারবালা বিপ্লবের শিক্ষা থেকে উপকার পেতে প্রকৃত ইতিহাস জানতে হবে

বাংলাদেশে ৬ নভেম্বর বুধবার শুরু হয়েছে শোকাবহ মহররম মাস। এ মাসেই ন্যায় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করতে গিয়ে পাপিষ্ঠ এজিদ বাহিনীর হাতে কারবালার ময়দানে নির্মমভাবে শাহাদতবরণ করেছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসেইন (আ.)। ইমাম তার প্রাণের বিনিময়ে ইসলামকে পুনরুজ্জীবন দান করেছিলেন। মহররমের তাতপর্য সম্পর্কে রেডিও তেহরানকে সাক্ষাতকার দিয়েছেন ঢাকার ইরান কালচারাল সেন্টারের শিক্ষা ও গবেষণা কর্মকর্তা ড. জহির উদ্দিন মাহমুদ।

 

প্রশ্ন: কেন কারবালার মজলুম বীরগণ মানব জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সম্মান ও অমরত্ব লাভ করেছেন?

উত্তর : আমরা জানি যে, এ পৃথিবীতে আগত সমস্ত নবী-রাসূলের নেতা মহানবী (সা.)-এর সময়টিতে পৃথিবী জ্ঞান-বিজ্ঞান, নৈতিকতা ও রাজনীতি-কুটনীতিসহ জীবনের সর্বক্ষেত্রে সূক্ষ্মতার চরম শিখরে উন্নীত হওয়ার পথে বিকাশমান ছিল। এহেন সার্বিকতার মাঝে ঐশী দ্বীনকে অকৃত্রিমভাবে ও সমকালীন প্রেক্ষিতের মানে প্রতিনিধিত্ব করতে কারবালার বীর শহীদগণ সর্বোচ্চ ভূমিকা রেখেছেন। তাই স্বাভাবিকভাবে শহীদসর্দার ইমাম হোসাইন সর্বোচ্চ ভূমিকা রেখেছেন। তাই স্বাভাবিকভাবে শহীদসর্দার ইমাম হোসাইন ও তাঁর সঙ্গীগণের এই মহান শাহাদাত স্বমহিমায় উজ্জ্বল ও অমরত্ব লাভেরই যোগ্য।

 

প্রশ্ন: কেন শহীদদের নেতা হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)-কে বিশ্বনবী (সা.) 'মুক্তির তরণী তথা সাফিনাতুন নাজাত' বলে উল্লেখ করেছেন এবং কেন বলেছেন যে,'হুসাইন আমা থেকে ও আমি হুসাইন থেকে'?

উত্তর: অন্যায়-অত্যাচার ও বিকৃতির সর্বব্যাপী ধ্বংসাত্মক স্রোতের প্রতিকূলে ইমাম হোসাইন (আ.) যথার্থই মহানবী (সা.)'র দ্বীনকে তাঁর শাহাদাতের বিনিময়ে রক্ষা করেছেন। ইমাম হোসাইন (আ.) মহানবী (সা.)-এর কাছ থেকেই সমস্ত ঐশী জ্ঞান ও মাহাত্ম্য লাভ করেছেন। আর মহানবী (সা.)-এর ওফাতের ৫০ বছর পর মুসলমানরা যখন তাঁর দ্বীনের শিক্ষা ভুলে গিয়েছিল বা তাঁর দ্বীনের শিক্ষা হতে দূরে সরে গিয়েছিল তখন ইমাম হোসাইন(আ.)ই মহানবী(সা.)র প্রকৃত পরিচয়, তাঁর প্রকৃত শিক্ষা উম্মতকে নতুন করে চিনিয়ে দিয়েছিলেন। মহানবী (সা.) তা জানতেন বলেই বলেছেন : ‘হোসাইন আমা হতে, আমি হোসাইন হতে।'

 

প্রশ্ন: মুহররমের সবচয়ে গুরুত্বর্পূণ র্দশন বা প্রধান শিক্ষাগুলো কী?

উত্তর: মুহররমের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হলো- সত্যমিথ্যাকে যাচাই করার সক্ষমতা অর্জন, সত্য ও সত্যের মহানায়কের নেতৃত্বকে মেনে সমকালীন জীবন পরিচালনা করা, ব্যক্তি ও সমাজ-জীবনে প্রকৃত দ্বীনের হুবহু শিক্ষাগুলোকে ধরে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করা। এ বিষয়গুলোকে হালকা করে না দেখে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া। দুশমনের সুবিধা গ্রহণ করে তাদের পাতা ফাঁদে পা না দেয়।

 

প্রশ্ন: মহররম সংক্রান্ত নানা বাড়াবাড়ি বা কুপ্রথা ও বিকৃত ইতিহাস প্রচারের আলোকে কারবালা বিপ্লবের প্রকৃত শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিস্তারের উপায়গুলো কী কী? বিশেষ করে সর্বস্তরে কারবালার গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও শহীদদের বক্তব্যগুলোকে তাজিয়া মিছিল, শোক-মিছিল, শোক-সভা ও মর্সিয়া বা শোক-গাঁথার মাধ্যমে প্রকাশ করে তাঁদের পবিত্র স্মৃতিকে চাঙ্গা রেখে শোককে শক্তিতে পরিণত করার পথে কেন নানা বাধা বিরাজ করছে এবং এইসব বাধা দূর করার উপায় কী?

উত্তর: মুহররম-আশুরা-কারবালার পূর্বাপর ঘটনাপ্রবাহ, এর পর্যালোচনা ইত্যাদি সম্পর্কে শত্রু-মিত্র উভয় মহলেই নানা কুপ্রথা ডালপালা মেলেছে। শত্রুরা নানা চাতুর্যপূর্ণ যুক্তির ছলনার আবরণে আশুরাকে আনন্দ দিবস হিসাবে পালনের প্রথা চালুর প্রয়াস চালাচ্ছে। আর হোসাইনী দাবিদারদের একাংশ আশুরার ঘটনাপ্রবাহকে আরো করুণ ও শোকাবহ রূপ দিতে নানা কিসসা-কাহিনী ও তার অবলম্বনে নানা প্রথার সংযোজন ঘটাচ্ছে- এই উভয় প্রান্তিকতাই পরিত্যাজ্য। আশুরা পূর্বাপর প্রকৃত স্বচ্ছ প্রতিটি ঘটনা নিজেই (itself) অত্যন্ত শোকাবহ ও গুরুত্ববাহী (significant)। সেইসব ঘটনাই স্ব স্ব ভাষাভাষী মানুষের মাঝে সাদা-মাটাভাবে আলোচনা ও বিভিন্নভাবে তুলে ধরলেই তা মানুষের মনোজগতে এক বিপ্লব বয়ে আনবে। আমাদের সবারই উচিত আশুরার মহান শহীদদের স্মরণে আলোচনা, মর্সিয়া, শোক-মিছিলের মধ্য দিয়ে হোসাইনী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় নিজেদের সম্পৃক্ত করা।

 

প্রশ্ন: কিভাবে সাধারণ নাগরিকসহ আমাদের মুসলিম সমাজের সবার জীবনে মহররমের শিক্ষাগুলো বাস্তবায়ন করা যায়?বিশেষ করে কারবালার মহান বিপ্লবের আলোকে ইসলামী চিন্তাবিদ ও শিক্ষিত মুসলিম সমাজের দায়িত্ব কী?

উত্তর: এ প্রশ্নের আগেই আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সমাধান প্রয়োজন। আদৌ কি আজকের মুসলিম সমাজের সাধারণ মানুষ দূরে থাকুক, শিক্ষিত ও চিন্তাবিদগণ আশুরার প্রকৃত ও স্বচ্ছ ইতিহাস জানেন? এমনকি পর্যালোচনাও পরের কথা- প্রকৃত পূর্বাপর ঘটনাও জানেন না। যতটুকু জানেন, তা চরমভাবে বিকৃত, সত্য-মিথ্যার সংমিশ্রণে এক গোলকধাঁধা। ইমাম হোসাইন (আ.) জীবন দিয়েও আজও মুসলমানদের বিরাট অংশের কাছে অজানা। মুসলিম বিশ্বের বিরাট অংশ কারবালার ঘটনাকে কিভাবে জানেন তার বর্ণনা দিয়ে আমি কলেবর বৃদ্ধি করতে চাই না। শুধু এটুকু বলব যে, মুহররমের শিক্ষা, কারবালা বিপ্লবের শিক্ষা থেকে উপকার পাওয়ার পূর্বশর্ত হলো প্রকৃত ইতিহাস জানা।

 

প্রশ্ন: প্রতিটি দিনই আশুরা ও প্রতিটি ময়দানই কারবালা। বর্তমান বিশ্ব-পরিস্থিতি ও বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামী জাগরণের আলোকে এই নীতিবাক্যের গুরুত্ব ও প্রয়োগ সম্পর্কে আপনার বক্তব্য বা পরামর্শ কী? বর্তমান যুগের ইয়াজিদদের সম্পর্কে আমাদের করণীয় কী?

উত্তর: পৃথিবীর ইতিহাসের প্রতিটি পর্যায়েই সত্য-মিথ্যার সংঘাতের উদাহরণ আমাদের পথ দেখায়। নমরুদের বিরুদ্ধে হযরত ইবরাহীম (আ.), ফিরআউনের বিরুদ্ধে হযরত মূসা (আ.) ইতিহাসের মাইলফলক। তাই আমাদের সমকালীন ইয়াযীদ ও ইয়াযীদদের ব্যাপারে আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে এবং হোসাইনী ও মোহাম্মদী প্রকৃত ইসলামের পাতাকাবাহীদের সাথে জুড়ে থাকতে হবে। তবেই আমরা নাজাতপ্রাপ্তদের সাথে থাকতে পারব।

 

প্রশ্ন: মহত উদ্দেশ্যে আত্মত্যাগের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হল কারবালা বিপ্লব। হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) শাহাদতের যে সংস্কৃতি চালু করেছেন তার আলোকে ইরান, লেবানন ও ফিলিস্তিন অঞ্চলের মুক্তিকামী ইসলামী আন্দোলন বা বিপ্লবগুলোকেআপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

উত্তর: একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে, মুসলিম বিশ্বের ইতিহাসে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধারায় জীবন দানের উদাহরণ কিন্তু নিতান্ত কম নয়। নিছক আবেগতাড়িত লক্ষ্যহীনভাবে যে কাউকে শত্রু চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে জংগী ভূমিকা নিয়ে হাজার হাজার জীবনদানের কি ফল আছে! কিংবা আল্লাহ ও রাসূলের মারেফাত বা প্রকৃত পরিচয় কিছুই জানলাম না, নামায ও অন্যান্য আমল-আখলাকের যথাযথ গুরুত্ব দিলাম না, শুধুই জীবন বিসর্জনই কি শাহাদাত? ধরুন, কেউ যুগের প্রকৃত ইমামকে চিনল না- যে কারো পেছনে কাতারবন্দী হয়ে, যে কারো দ্বারা উত্তেজিত হয়ে জীবন দিল- তাতে কি অর্জন হবে? ইরান-লেবানন-ফিলিস্তিনের প্রসঙ্গটি সম্ভবত এক্ষেত্রে বিবেচনায় আসতে পারে যে, সেখানকার বিপ্লবীরা যোগ্য ও আমলদার নেতার নেতৃত্বে, সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রায় এগিয়ে গেছে বলেই একটি গঠনমূলক পর্যায়ে এসেছে এবং শত্রুরা তাদের আন্দোলনকে হিসাব করে থাকে। যেমন ইমাম হোসাইন (আ.)'র শাহাদাতের একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা ছিল যা যথার্থই অর্জিত হয়েছে, প্রকৃত পর্যালোচকরা তা ঠিকই বুঝতে পারেন।

 

প্রশ্ন: সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে কারবালার মহান বিপ্লবের প্রভাব এবং এক্ষেত্রে করণীয় কাজ সম্পর্কে আপনার পরামর্শ কী?

উত্তর: শিল্প, সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রতিটি মাধ্যমে কারবালার মহান বিপ্লবের প্রতিধ্বনি ফুটিয়ে তুলতে হবে এমনভাবে যে, আমাদের রোগগ্রস্ত, কালিমার আবরণে ঢাকা রুহগুলো জেগে উঠতে পারে- আমরা যেন নাফসের দাসত্ব ও সুবিধাবাদ ছেড়ে সত্যপ্রিয় মজলুমের কাতারে দাঁড়াতে ভয় না পাই। যুগের ইয়াযীদের বিরুদ্ধে মার্জিত, উন্নত পদ্ধতিতে কথা বলতে শিখি। যাঁরা কারবালার প্রকৃত ঘটনা জানেন তাঁদের উচিত গণমানুষের পত্রিকায় আর্টিকেল লিখে তা স্পষ্ট করা- পত্রিকার বিকৃত লিখার বিরুদ্ধে শুধু বিষোদ্গার করে বসে থাকলে চলবে না।

 


source : www.abna.ir
0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

তৃতীয়বার যুক্তরাষ্ট্রের ...
২৮৮০ সালের ১৬ মার্চ গ্রহাণুর ...
ক্যান্সার দিবস : যে লক্ষণগুলো ...
শহীদ ইরানি জেনারেলের জানাযা ও ...
Tribunaux militaires égyptiens jugent 271 membres de FM
দিল্লি সফরে মমতার ভিন্ন রাজনৈতিক ...
ইসলামী বিপ্লব ইরানকে আত্মপরিচয় ও ...
পারাচিনারে বোমা হামলা ৭০ জন হতাহত ...
ন্যাটোর বিবৃতির জবাবে যা বলল ...
রাখাইনে হত্যা ধর্ষণ তাণ্ডব

 
user comment