আবনা ডেস্ক : সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএসআইএলের সন্ত্রাসী তৎপরতা নিয়ে এখন সর্বত্রই আলোচনা চলছে। ইরান সব সময় বলে এসেছে, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএসআইএল’র উত্থানের পেছনে রয়েছে আমেরিকা, ইউরোপ ও ইহুদিবাদী ইসরাইল। মালয়েশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহাথির মোহাম্মাদ ও কিউবার সাবেক প্রেসিডেন্ট ফিদেল ক্যাস্ত্রোসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও এখন বলছেন, আইএসআইএলের সন্ত্রাসী তৎপরতার পেছনে রয়েছে ইসরাইল ও আমেরিকা।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ি বহুবার বলেছেন, ইসলাম ধর্মের ক্ষতি করতেই ইসলামবিরোধী শক্তি আইএসআইএলের জন্ম দিয়েছে এবং ওই গোষ্ঠীকে সর্বাত্বক সহযোগিতা করছে। তিনি তাকফিরি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএসআইএল সম্পর্কে বলেছেন, 'তাকফিরি তৎপরতা কোনো নতুন বিষয় নয়; এর রয়েছে পুরনো ইতিহাস। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর নানা ষড়যন্ত্র অনুযায়ী এ অঞ্চলের কোনো কোনো সরকারের অর্থ ব্যবহার করে আমেরিকা, ব্রিটেন ও ইহুদিবাদী ইসরাইলের মতো উপনিবেশবাদী দেশগুলোর গোয়েন্দা সংস্থার নীল-নক্সার আলোকে তাকফিরিদেরকে নতুন জীবন দেয়া হয়েছে এবং তাদের তৎপরতা জোরদার করা হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, ‘ইসলামের শত্রুরা চায় মুসলিম বিশ্ব ফিলিস্তিন ইস্যুটি ভুলে যাক। ইসরাইলি মন্ত্রিসভা ফিলিস্তিনকে ইহুদি রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করেছে। মুসলিম বিশ্বের অবহেলার কারণেই ইসরাইল এই ধৃষ্টতা দেখাচ্ছে। তাই বিশ্বের সব মুসলমানের উচিত তাদের সরকারগুলোর কাছে ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার দাবি তোলা। আলেমদেরও উচিত একই কাজ করা। এটা একটি প্রধান দায়িত্ব।'
তিনি এক ভাষণে তাকফিরি-ওয়াহাবি গ্রুপগুলোর ইসলাম-বিরোধী চরিত্রের প্রমাণ হিসেবে ইহুদিবাদী ইসরাইল ও তার সহযোগীদের সঙ্গে তাদের আপোষের কথা তুলে ধরে বলেছেন: "দেখুন এইসব দেশের কত বিপুল সংখ্যক রাজপথ ও সড়ক, কত শোধনাগার, কত খনি, কতো বিমানবন্দর, কত শহর, কত বাড়িঘর এইসব গৃহযুদ্ধে ও ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধে ধ্বংস হয়ে গেছে। এইসব কাঠামোকে আবারও আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কত ব্যাপক সময় ও কত বিপুল অংকের অর্থ ব্যয় করতে হবে। এভাবে তাকফিরিরা গত কয়েক বছরে মুসলিম বিশ্বের কত ব্যাপক ক্ষতি করেছে।"
আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী এ প্রসঙ্গে বলেছেন: 'ওয়াহাবি-তাকফিরি গ্রুপগুলো ইসলামের চেহারাকে বিশ্ববাসীর কাছে কুৎসিত রূপ দিয়ে তুলে ধরেছে। সারা দুনিয়ার মানুষ টেলিভিশনে দেখছে যে তারা নিরপরাধ ব্যক্তির গলা কিভাবে ছুরি বা তলোয়ার দিয়ে কাটছে! অথচ পবিত্র কুরআনে (সুরা মুমতাহিনার ৮ ও ৯ নম্বর আয়াতে) বলা হয়েছে: ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করেনি, তাদের সঙ্গে সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালোবাসেন। আল্লাহ কেবল তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিষ্কার করেছে এবং বহিষ্কার-কার্যে সহায়তা করেছে। যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে তারাই জালেম।
অথচ দেখুন, এরা অর্থাৎ তাকফিরিরা কুরআনের এইসব আয়াতের নির্দেশনার ঠিক উল্টো আচরণ করছে। ওরা মুসলমানদের হত্যা করছে এবং শান্ত ও নিরীহ অমুসলমানকে জবাই করছে যার দৃশ্য সারা দুনিয়ায় প্রচারিত হয়েছে। আর এসবই করা হয়েছে ইসলামের নামে। দয়া, যুক্তি ও বিবেকের ধর্ম ইসলামকে এভাবে হিংস্র বলে তুলে ধরা হয়েছে। এর চেয়ে বড় জুলুম আর কী হতে পারে? এর চেয়ে নোংরা ফেতনা আর কি হতে পারে?'
সর্বোচ্চ নেতাসহ ইরানের নেতৃবৃন্দ মনে করেন, আইএসআইএল বা আইএস যেসব তৎপরতা চালাচ্ছে তাতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে আমেরিকা ও ইসরাইলসহ ইসলামের শত্রুরা। এ কারণেই এ গোষ্ঠীর সন্ত্রাসী তৎপরতায় সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে এসব দেশ। কারণ আইএসআইএলের তৎপরতা বিশ্লেষণ করলে এ বাস্তবতাই ফুটে ওঠে যে, মুসলমানদের দুর্বল করতে আইএসআইএলের চেয়ে ইসরাইলের জন্য বড় বন্ধু আর কেউ হতে পারে না। কারণ তারা যুদ্ধ ও জবর-দখলের মাধ্যমে যে লক্ষ্য হাসিল করতে চায়, তা করে দিচ্ছে আইএসআইএল বা আইএস। #
source : abna24