বাঙ্গালী
Wednesday 27th of November 2024
0
نفر 0

পবিত্র কুরআনের সুরা ফাতিহার নানা দিক ও বৈশিষ্ট্য

এই সুরার তিলাওয়াত ও অর্থ শুনব: بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ 01 الْحَمْدُ للّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ 02 الرَّحْمـنِ الرَّحِيمِ 03 مَـالِكِ يَوْمِ الدِّينِ 04
পবিত্র কুরআনের সুরা ফাতিহার নানা দিক ও বৈশিষ্ট্য

এই সুরার তিলাওয়াত ও অর্থ শুনব:
 
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
 
01
 
 الْحَمْدُ للّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
 
02
 
 الرَّحْمـنِ الرَّحِيمِ
 
03
 
 مَـالِكِ يَوْمِ الدِّينِ
 
04
 
 إِيَّاكَ نَعْبُدُ وإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ
 
05
 
    اهدِنَــــا الصِّرَاطَ المُستَقِيمَ
 
06
 
 صِرَاطَ الَّذِينَ أَنعَمتَ عَلَيهِمْ غَيرِ المَغضُوبِ عَلَيهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ
 
এই সুরার অর্থ:
 
১.পরম দয়ালু ও দাতা আল্লাহর নামে শুরু করছি।
 
২. সকল প্রশংসা কেবলই আল্লাহর যিনি (বিশ্ববাসী ও )বিশ্বজগতের প্রতিপালক।
 
৩. তিনি দাতা ও অতি দয়ালু।
 
৪. তিনি প্রতিদান দিবসের মালিক।
 
৫. (হে আল্লাহ) আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি ও একমাত্র তোমার কাছেই সাহায্য চাই।
 
৬. আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন।
 
৭. তাদের পথে যাদেরকে তুমি নেয়ামত দিয়েছ, তাদের পথে নয় যারা অভিশপ্ত নয় ও পথভ্রষ্টও নয়।
 
সুরা ফাতিহাকে কুরআনের উদ্বোধনী সুরা বলা হলেও বেশিরভাগ মুফাসসির মনে করেন, সুরা আলাক্বের প্রথম আয়াতটিই হল কুরআনের প্রথম আয়াত যা হেরা গুহায় বিশ্বনবী (সা.)'র ওপর নাজিল হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে সুরা ফাতিহাই কুরআনের প্রথম সুরা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
 
 
 
সুরা ফাতিহা হচ্ছে উম্মুল কিতাব বা কিতাবের তথা কুরআনের মাতা। কারণ, এতে রয়েছে পুরো কুরআনের সারমর্ম। এ সুরায় রয়েছে একত্ববাদ, আল্লাহর পরিচয়, পুনরুত্থান বা পরকাল, সুপথ ও পথভ্রষ্টটা সম্পর্কে মৌলিক বক্তব্য যার মাধ্যমে বিশ্বাসী ও কাফির বা অবিশ্বাসীদের মধ্যে পার্থক্য করা যায়।
 
 
 
সুরা ফাতিহা সুরা হামদ ও ফাতিহাতুল কিতাব নামেও খ্যাত। হামদ অর্থ আল্লাহর প্রশংসা আর ফাতিহা অর্থ হল শুরু বা উদ্বোধন। কারণ, এই সুরার মাধ্যমে শুরু হয়েছে পবিত্র কুরআন এবং এই সুরায় রয়েছে মহান আল্লাহর মহত্ত্বের প্রশংসা। মহান আল্লাহ নানা নেয়ামত দিয়েছেন বলে প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। সব ধরনের প্রশংসার যোগ্য হলেন তিনি এবং তিনিই একমাত্র অস্তিত্ব যার ইবাদত করা যায়। এই সুরা মহান আল্লাহ তথা স্রস্টার সঙ্গে সৃষ্টির সম্পর্কের এক অন্যন্যসুন্দর প্রকাশ। তাই এ সুরাকে বিশ্বনবী (সা.)'র জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বড় ধরনের অনুগ্রহ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
 
 
 
সুরা হামদ বা সুরা ফাতিহাকে সুরা শুকর ও সুরা নূরও বলা হয়। সুরা ফাতিহাকে সাবউল মাসানি বা 'দুই সপ্তক'ও বলা হয়। এর কারণ, অনেক মুফাসসির মনে করেন, সুরা ফাতিহার রয়েছে ৭ টি আয়াত এবং এই সুরা দুই বার নাজিল হয়েছিল। এ সুরা একবার মক্কায় ও একবার মদীনায় নাজিল হয়। আবার কেউ কেউ মনে করেন, এই নামকরণের কারণ হল, প্রত্যেক নামাজে দুই বার পাঠ করতে হয় বরকতময় এই সুরা।
 
 
 
সুরা ফাতিহায় যা জোর দিয়ে বলা হচ্ছে তা হল, একমাত্র এক আল্লাহই হল ইবাদত পাওয়ার যোগ্য এবং জীবনের সব ক্ষেত্রে সুখে ও দুঃখে মানুষ একমাত্র তাঁর কাছ থেকেই সহায়তা পেতে পারে। সুরা ফাতিহা সম্পর্কে বিশ্বনবী (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য ইমাম জাফর সাদিক্ব (আ.) বলেছেন: এই সুরার প্রথমে রয়েছে আল্লাহর প্রশংসা, মাঝখানে রয়েছে নিষ্ঠা বা আন্তরিকতা ও শেষে রয়েছে দোয়া বা প্রার্থনা। (তাফসিরে বুরহান, খণ্ড-১, পৃ-৪২)
 
 
 
সুরা ফাতিহার বক্তব্যের ধরণ, সুর ও ছন্দ অন্য সুরাগুলোর চেয়ে ভিন্ন। কারণ, এ সুরায় মহান আল্লাহ তাঁর কাছে মুনাজাত করার ও তাঁর সঙ্গে কথা বলার পদ্ধতি তার বান্দাকে শিখিয়েছেন এবং এখানে বান্দার ভাষায় বক্তব্য রাখা হয়েছে। এর শুরু প্রতিপালক আল্লাহর প্রশংসা দিয়ে এবং এর মাঝখানে রয়েছে সৃষ্টির উৎস হিসেবে আল্লাহর পরিচয়, তাঁর প্রতি ও পুনরুত্থান সম্পর্কে ঈমান; আর শেষ হয়েছে মুনাজাত বা প্রার্থনার মধ্য দিয়ে। মহান আল্লাহ বলেছেন, 'আমি সুরা ফাতিহাকে নিজের ও বান্দার মধ্যে ভাগ করেছি। এর প্রথম অংশ আমার বক্তব্য এবং দ্বিতীয় অংশ হচ্ছে আমার কাছে বান্দার প্রার্থনা। আর আমার দাস বা বান্দা আমার কাছে যা চায় আমি তাকে তা দেব।' (আবারও এই সুরার আবৃত্তি)
 
 
 
সুরা হামদ বা ফাতিহাই একমাত্র সুরা যা সব মুসলিম নামাজিকে নামাজের মধ্যে পাঠ করতে হয়। প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজে মুসলমানরা অন্তত দশ বার এই সুরা পাঠ করেন। সুরা ফাতিহা শুরু হয় যে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে তাতে রয়েছে রহমান ও রাহিম শব্দটি। এর দ্বিতীয় আয়াতেও আবারো এসেছে এ দুই শব্দ। এর অর্থ আল্লাহই ইবাদত পাওয়ার যোগ্য এবং তিনি সৃষ্টি জগৎ সৃষ্টি করেছেন রহিমিয়াত ও রাহমানিয়াত  তথা পরম করুণা, দয়া ও দানশীলতার ভিত্তিতে।
 
 
 
আল্লাহর অশেষ দয়া মুসলমান ও অমুসলমান এবং পাপী ও নেককার নির্বিশেষে সবার জন্যই উন্মুক্ত ঠিক যেমনটি সূর্যের আলো ও সাগরের পানি সবার জন্যই উন্মুক্ত, -রহমান এই অর্থই বহন করে। অন্যদিকে রাহিম আল্লাহর বিশেষ অনুগত, খোদাভীরু, মহৎ গুণের অধিকারী, সৎকর্মশীল ও প্রিয় বান্দাদের জন্য নির্ধারিত। যেমনটি সুরা আহজাবের ৪৩ নম্বর আয়াতে এসেছে- মহান আল্লাহ মুমিনদের জন রাহিম।    
 
সুরা ফাতিহার সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হল মানুষের সঙ্গে আল্লাহর সম্পর্ককে সুবিন্যস্ত করা। এ সুরার রয়েছে বেশ কিছু শিক্ষামূলক বানী। প্রথমত: মানুষের উচিত সব কাজই আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু করা এবং সকাল,সন্ধ্যা ও অন্যন্য সব সময়ই আল্লাহকে স্মরণ করা। দ্বিতীয়ত: মানুষের জীবনের সবক্ষেত্রে ও সব সময় একত্ববাদ আর এক আল্লাহর ইবাদতকে কথায়, কাজে ও চিন্তায় প্রয়োগ করতে হবে। এ জন্যই প্রতিদিন নামাজে বারবার আমরা বলি-‘আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং একমাত্র তোমার কাছেই সাহায্য চাই’। সুরা ফাতিহার এ বাক্যটি বারবার পাঠের মাধ্যমে সব ধরণের শিরক বা অংশীবাদীতা ও মিথ্যা থেকে দূরে থাকার অঙ্গীকার বাস্তবে প্রয়োগের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়। এর মাধ্যমে অস্তিত্বের জগতে আল্লাহকেই একমাত্র উপাস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয় এবং তাঁর কাছে আত্মসমর্পণ করা হয়। কবি বলেন,
 
 
 
যদি হও তুমি বিবেকবানদের ধর্মানুসারী
 
তাহলে এক হৃদয়ে কেবল এক বন্ধুরই হও প্রেম-অভিসারী।
 
আমাদের সরলপথে চালাও বলতে সঠিক পথে অবিচল থাকা এবং পূর্ণতা আর সৌভাগ্যের পথে এগিয়ে যেতে থাকার জন্য আল্লাহর সাহায্য চাওয়াকে বোঝায়। এই প্রেমময় আবেদনের পরে সুরাটির শেষ বাক্যে বলা হচ্ছে, সুপথপ্রাপ্ত ও বিভ্রান্তদের পথ ভিন্ন, এক নয়। মানুষকে নানা পথ আর মতের মধ্যে আসল ও কৌশলগত পথটিই বেছে নিতে হবে। যে পথটি হল শ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে উপযুক্ত।
 
 
 
সুরা ফাতিহার শেষাংশে তিনটি পথের কথা বলা হয়েছে: প্রথমটি সঠিক বা সরল-সোজা পথ যা পায় কেবল সুপথ-প্রাপ্তরা। দ্বিতীয়টি অভিশপ্তদের পথ। এ পথের লোকেরা সত্যের বিরোধিতায় অবিচল থাকে ও অন্যদেরও বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালায়। তৃতীয় পথ হল পথহারা ও অধ:পতিত বা বিভ্রান্তদের পথ।#


source : irib
0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

ইমাম মাহদি(আ.)'র বাবার কয়েকটি ...
আদর্শ মানব হযরত মুহাম্মদ (সা.) - ১ম ...
হযরত ঈসা (আ.) এর জন্মবার্ষিকী-২০১২
ইমাম হুসাইন (আ.)-এর জীবনী-১১তম পর্ব
যদি কেউ দাড়ি না রাখে তাহলে সে কি ...
বাংলাদেশের নিম গাছ আরাফাতের ...
মহানবীর ওফাত দিবস এবং ইমাম হাসান ...
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নবুওয়াত-পূর্ব ...
কে হযরত আলী (আ.) কে শহীদ করেছে? তার ...
আল কোরআনের অলৌকিকতা (৬ষ্ঠ পর্ব)

 
user comment