সুপ্রিয় পাঠক! হিজরী সনের আটাশে সফর ইসলামের ইতিহাসে এক শোকাবহ দিন। কোনো কোনো রেওয়ায়েতে আছে , এইদিন ইসলামের মহান নবী আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ রাসূল বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারী হযরত মুহাম্মাদ ( স.)'র ওফাত দিবস। অবশ্য ১২ই রবিউল আউয়াল তারিখে মহানবীর ইন্তেকাল হয়েছে বলেও প্রসিদ্ধি রয়েছে।
তবে মতানৈক্যের উর্ধ্বে উঠে যে বিষয়টি আমাদের বিবেচনা করতে হবে তা হলো, মহানবী (সা) এই পৃথিবীতে আমাদের জন্যে যে বার্তা নিয়ে এসেছেন, যেই আদর্শ নিয়ে এসেছেন তিনি সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্যে, সেই আদর্শ আমরা কতোটা অনুসরণ করছি , কতোটা বাস্তবায়ন করছি আমাদের জীবনে-তা একবার পর্যালোচনা করে দেখা উচিত। মনে রাখতে হবে রাসুলের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের একমাত্র উপায় হলো তাঁর প্রদর্শিত পথে চলা। জীবন সমস্যার সমাধানে তাঁর নির্দেশনাকে কাজে লাগানো। তাঁর চারিত্র্যিক ও নৈতিক আদর্শে আমাদের জীবনকে রাঙিয়ে তোলাই হবে তাঁর প্রতি ভালোবাসা নিবেদনের অন্যতম উপায়। এবার এ সম্পর্কেই রয়েছে একটি আলোচনা।
১১ হিজরির ২৮ সফর। অস্থিরতা ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সমগ্র মদীনা নগরীকে গ্রাস করেছে। মানবতার মুক্তির দূত ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবের জীবন প্রদীপের সর্বশেষ শিখা নির্বাপিত হতে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি।
মহানবী (সা.)-এর কন্যা হযরত ফাতিমা (সা.আ.) পিতার শয্যার পাশে বসেছিলেন এবং তাঁর উজ্জ্বল মুখমণ্ডলের দিকে তাকাচ্ছিলেন। তিনি যখন পিতার কপাল ও মুখমণ্ডলের উপর মুক্তার দানার মতো মৃত্যু-ঘামের বারিবিন্দুগুলো ঝরে পড়তে দেখলেন, তখন তিনি ভগ্ন হৃদয়ে, অশ্রুসিক্ত নয়নে এবং রুদ্ধ-কণ্ঠে মহানবী (সা.)-এর শানে হযরত আবূ তালিব রচিত এ কবিতাংশ মৃদু স্বরে আবৃত্তি করছিলেন :
“ঐ উজ্জ্বল মুখমণ্ডল, যাঁর মর্যাদার উসীলায় মেঘমালার বারিবিন্দুর জন্য প্রার্থনা করা হয়; তিনি অনাথদের আশ্রয়স্থল এবং বিধবা নারীদের রক্ষক।”
এ সময় মহানবী (সা.) চোখ মেলে তাকালেন এবং নিচু স্বরে কন্যার উদ্দেশে বললেন :
“এ কবিতা আবূ তালিব আমার শানে আবৃত্তি করেছেন। তবে এর পরিবর্তে পবিত্র কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত উত্তম:
মুহাম্মদ শুধু আল্লাহর রাসূল, তাঁর আগে রাসূলগণ চলে গেছেন। অতএব, যদি তিনি ইন্তেকাল করেন বা নিহত (শহীদ) হন, তা হলে কি তোমরা তোমাদের পেছন দিকে (পূর্বপুরুষদের ধর্মের দিকে) প্রত্যাবর্তন করবে? আর যারা তাদের দিকে ফিরে যাবে, তারা কখনোই মহান আল্লাহর ন্যূনতম ক্ষতিও করতে পারবে না। আর তিনি কৃতজ্ঞ বান্দাদের পুরস্কৃত করবেন।” (সূরা আলে ইমরান : ১৪৪)
মহানবী (সা.) অসুস্থ থাকার দিনগুলোয় প্রয়োজনীয় বিষয়াদি স্মরণ করিয়ে দেয়ার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতেন এবং তাঁর অসুস্থতার শেষ দিনগুলোয় নামাজ এবং দাস-দাসীদের সাথে সদাচরণ করার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি নির্দেশ দিতেন এবং বলতেন : “তোমরা দাস-দাসীদের সাথে সদাচরণ করবে, তাদের খাবার ও পোশাক-পরিচ্ছদের দিকে খেয়াল রাখবে, তাদের সাথে কোমল ভাষায় কথা বলবে এবং মানুষের সাথে সুন্দরভাবে মেলামেশা ও জীবন যাপন করবে।”
জীবনের অন্তিম মুহূর্তগুলোয় মহানবী (সা.) চোখ খুলে বললেন : “আমার ভাইকে ডাক যাতে সে এসে আমার শয্যার পাশে বসে।” সবাই বুঝতে পারলেন, তাঁর এ কথা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছেন আলী। আলী (আ.) তাঁর শয্যার পাশে এসে বসলেন। তিনি অনুভব করলেন, মহানবী (সা.) বিছানা থেকে উঠতে চাচ্ছেন। আলী (আ.) মহানবীকে বিছানা থেকে উঠালেন এবং নিজের বুকের সাথে তাঁকে হেলান দিয়ে ধরে রাখলেন।
আর ঠিক তখনই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার লক্ষণগুলো মহানবী (সা.)-এর পবিত্র দেহে প্রকাশ পেল।
আলী (আ.) বলেছেন : “শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার অবস্থায় মহানবী (সা.)-এর মাথা যখন আমার কাঁধের উপর রাখা ছিল, তখন তিনি বলছিলেন: (الصّلوة الصّلوة) নামাজ, নামাজ।”
এক ব্যক্তি ইবনে আব্বাসকে জিজ্ঞেস করেছিল : “মহানবী (সা.) কার বুকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন?” তখন ইবনে আব্বাস বলেছিলেন : “মহানবী (সা.) আলীর কোলে মাথা রেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন।” ইবনে আব্বাস আরও বলেছিলেন : “মহানবী (সা.) হযরত আলীর কোলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। আর আলী ও আমার ভাই ফযল তাঁকে গোসল দিয়েছেন।”
আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) তাঁর এক ভাষণে এ বিষয় স্পষ্ট করে দিয়ে বলেছেন :
“মহানবী (সা.) আমার বুকে মাথা রেখে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন... আমি তাঁকে গোসল দিয়েছি এবং ঐ অবস্থায় ফেরেশতারা আমাকে সাহায্য করেছেন।”
কোনো কোনো মুহাদ্দিস বর্ণনা করেছেন, মহানবী (সা.)কে তাঁর জীবনের অন্তিম মুহূর্তে ওহির ফেরেশতা বেঁচে থাকা ও মৃত্যুর মধ্যে যে কোনো একটি বেছে নিতে বললে তিনি বলেছিলেন, “না, বরং সবচেয়ে মহান বন্ধুর সাথে”। এটাই ছিল তাঁর শেষ কথা। অর্থাৎ তিনি মৃত্যুই বেছে নেয়ার উদ্দেশে মহান আল্লাহকে স্মরণ করেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর পবিত্র মহান আত্মা ২৮ সফর সোমবার দুপুর বেলা চিরস্থায়ী আবাসস্থলের দিকে উড়ে যায়। তবে মহানবীর ওফাতের তারিখ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। ওফাতের পর তাঁর পবিত্র দেহ একটি ইয়েমেনী চাদর দিয়ে ঢেকে দেয়া হয় এবং অল্প সময়ের জন্য কক্ষের এক কোণে রেখে দেয়া হয়।
মহানবী (সা.)-এর স্ত্রীগণের বিলাপ এবং নিকটাত্মীয়দের কান্নার ধ্বনি শুনে বাইরে অবস্থানরত জনতা নিশ্চিত হন যে, মহানবী (সা.) ইন্তেকাল করেছেন। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই মহানবী (সা.)-এর ওফাতের সংবাদ সমগ্র মদীনা নগরীতে ছড়িয়ে পড়ে।
আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) মহানবী (সা.)-এর পবিত্র দেহ মুবারক গোসল দেন এবং কাফন পরান। কারণ মহানবী (সা.) বলেছিলেন : “আমার সবচেয়ে নিকটতম ব্যক্তি আমাকে গোসল দেবে।” আর এ ব্যক্তি আলী ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। যা হোক, এরপর তিনি মহানবীর পবিত্র মুখমণ্ডল উন্মুক্ত করলেন। তখন তাঁর দু’নয়ন বেয়ে প্লাবনের মতো অশ্রু ঝরছিল। তিনি তখন এ কথাগুলো বলছিলেন : “আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোন। আপনার ওফাতের মাধ্যমে নবুওয়াতের সূত্র ছিন্ন এবং মহান আল্লাহর ওহী ও আকাশের (ঊর্ধ্ব জগতের) খবরা-খবর বন্ধ হয়ে গেল, যা অন্য কারো মৃত্যুতে কখনো বন্ধ হয় নি। আপনি যদি আমাদের অপ্রীতিকর অবস্থায় ধৈর্যধারণ করার আহ্বান না জানাতেন, তা হলে আমি আপনার বিচ্ছেদে এতটা কাঁদতাম ও অশ্রু ঝরাতাম যে, এর ফলে আমি অশ্রুর উৎসই শুষ্ক করে ফেলতাম। তবে এ পথে আমাদের দুঃখ ও শোক সব সময় বজায় থাকবে। আপনার পথে এ পরিমাণ শোক আসলে নগণ্য এবং এছাড়া আর কোন উপায়ও নেই। আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোন। আমাদেরকে আপনি পরলোকে স্মরণ করুন এবং স্মরণে রাখুন।”
সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি মহানবী (সা.)-এর জানাযার নামায আদায় করেন, তিনি আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)। অতঃপর মহানবী (সা.)-এর সাহাবীগণ দলে দলে এসে তাঁর জানাযার নামায আদায় করলেন। আর এ অনুষ্ঠান মঙ্গলবারের দুপুর পর্যন্ত চলতে থাকে। এরপর সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, মহানবী (সা.) যে কক্ষে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন, সেখানেই তাঁকে দাফন করা হবে। তাঁর কবর আবূ উবাইদাহ্ ইবনে জাররাহ এবং যাইদ ইবনে সাহল প্রস্তুত করেছিলেন। হযরত আলী (আ.), ফযল ও আব্বাসের সহায়তায় রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর দাফন কাজ সম্পন্ন করেন।
ফলে যে ব্যক্তিত্ব তাঁর নিরলস আত্মত্যাগের মাধ্যমে মানব জাতির ভাগ্যে পরিবর্তন এনেছিলেন এবং তাদের সামনে সভ্যতার এক নতুন ও উজ্জ্বল অধ্যায়ের অবতারণা করেছিলেন, তাঁর ইহজীবনের সূর্যাস্ত হল।
বিশ্বনবী (সা) বলেছিলেন, আমি শ্রেষ্ঠতম চারিত্রিক ও নৈতিক গুণগুলোকে পরিপূর্ণতা দিতেই নবুওতের দায়িত্ব পেয়েছি। ভ্রাতৃত্ব, সাম্য, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, ক্ষমাশীলতা, দয়া ও দানশীলতাসহ সমস্ত মহৎ মানবীয় গুণের সর্বোচ্চ প্রকাশ ছিল তাঁর জীবন। নারীর অমর্যাদা, অজ্ঞতা, কুসংস্কার, শোষণ, ব্যভিচার, পাপাচার, খোদাদ্রোহীতা ও বংশীয় আভিজাত্যসহ সব ধরনের অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে সংগ্রামের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন সবচেয়ে সফল দিশারী। মহান আল্লাহ এ জন্যই বলেছেন, মুহাম্মাদকে পাঠানো হয়েছে বিশ্বজগতের জন্য রহমত বা আল্লাহর অনুগ্রহ হিসেবে। তাই মানবজাতির জন্য তিনি হলেন সবচেয়ে বড় অনুগ্রহ। সব ধরনের সুরুচির অধিকারী মহানবী ছিলেন সবচেয়ে বড় বীর ও সাহসী। মানবতার মুক্তির জন্য তিনি সবচেয়ে বেশি কষ্ট স্বীকার করেছেন এবং মানুষ ও মুসলমানদের বিচ্যুতি, দুঃখ বা কষ্ট তার পবিত্র সত্তাকে এখনও সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেয়।
রাসূলে খোদা ( সা ) এর সম্মান ও মর্যাদা অনস্বীকার্য। কেবল তাঁর জীবদ্দশাতেই যে তিনি সম্মানিত ছিলেন তা নয়, বরং মৃত্যুর পরেও তিনি সমানভাবে মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী। অতএব যাঁরা তাঁর অনুসারী তাঁরা অবশ্যই সফলকাম। যেমনটি পবিত্র কোরআনের সূরা আরাফে বলা হয়েছে,
"অতএব যারা তাঁকে বিশ্বাস করে, তাঁকে মান্য করে, তাঁকে সাহায্য করে এবং তাঁর সাথে অবতীর্ণ আলোর অনুসরণ করে তারাই সফলকাম।"
তাই আমাদের সবার উচিত হবে রাসূলে খোদার মনে কষ্ট লাগে এমন কোনো কাজ না করা। বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতিতে রাসূলে খোদা (সা.) যে কারণে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাবেন, তা হলো মুসলমানদের মধ্যকার অনৈক্য ও মতপার্থক্য। কেননা; রাসূলে কারিম (সা.) সবসময় চেয়েছেন মানুষের মাঝে পারস্পরিক নৈকট্য সৃষ্টি করতে এবং আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে। এমন সম্পর্ক গড়ে তুলতে চেয়েছেন তিনি,যার মাঝে কোনোরকম ফাঁকফোকর না থাকে। কুরআনের ভাষায় যাকে বলা হয়েছে শিসা ঢালা প্রাচীরের মতো অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক।
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ আরও বলেছেন, "নিঃসন্দেহে আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীজীর ওপরে দরুদ পাঠান। তাই হে ঈমানদাররা! তোমরাও তাঁর প্রতি দরূদ পাঠাও এবং সশ্রদ্ধচিত্তে সালাম জানাও।"
পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, মুহাম্মাদের মধ্যেই রয়েছে তোমাদের জন্য সবচেয়ে উত্তম আদর্শ। তাই কেউ মুসলমান হওয়ার দাবি করে এটা বলতে পারবে না যে, রাজনীতি ও সমাজনীতি থেকে শুরু করে জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই মহানবীর নির্দেশিত আদর্শ ছাড়া অন্য কোনো আদর্শ অনুসরণ করার সুযোগ রয়েছে। বিশ্বনবী (সা) মুসলিম জাতি বা তাঁর উম্মতকে উপদেশ দিয়ে বলেছিলেন, আমার আহলে বাইত তোমাদের জন্য মুক্তির তরণী। যারা এতে আরোহণ করবে তারা নাজাত পাবে। আর যারা তা করবে না তারা নাজাত পাবে না।
দুঃখজনকভাবে মহানবীর ওফাতের পর এক শ্রেণীর কথিত মুসলমান নানা গোত্রীয় প্রথা ও বিতর্কিত পথ বা মতকে ইসলামী বিধান বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে। মহানবীর প্রকৃত অনুসারীরা হয়েছেন নির্যাতিত। তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে নানা যুদ্ধ। খুব শিগগিরই মুসলমানদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয় রাজতন্ত্র। সে যুগের বিভ্রান্ত খারিজিদের মতই আজও ইসলামের নামেই এমন কোনো অপরাধ নেই যা তাকফিরি-ওয়াহাবি সন্ত্রাসীরা করছে না।
২৮ সফর বিশ্বনবীর পবিত্র আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য এবং মহানবীর বড় নাতি হযরত ইমাম হাসান মুজতবা (আ)’র শাহাদত বার্ষিকী। নানা মহানবীর আদর্শ জিইয়ে রাখার জন্য যা যা করার দরকার তার সবই তিনি করেছিলেন। মহানবীর প্রকৃত অনুসারী তথা আহলে বাইতের অনুসারীদের অস্তিত্ব নির্মূলের সম্মুখীন হলে তিনি উমাইয়া শাসক মুয়াবিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ-বিরতির চুক্তি করতে বাধ্য হন। কিন্তু সন্ধির চুক্তি লঙ্ঘন করে বিষ প্রয়োগে শহীদ করা হয় বিশ্বনবীর বড় নাতিকে। ফলে ইয়াজিদের মত মহাকুলাঙ্গার ইসলামী খেলাফতের দাবিদার হওয়ার স্পর্ধা দেখায় এবং ইসলামকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষার জন্য কারবালায় চরম আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত রেখে যান ইমাম হাসানের ছোট ভাই ইমাম হুসাইন (আ) ও তাঁর ৭২ জন একনিষ্ঠ অনুসারী।
দেখতে প্রায় নানার মত চেহারার অধিকারী ইমাম হাসান (আ) ছিলেন সব ধরনের সুন্দর মানবীয় গুণে উচ্চতর আসনের অধিকারী। তিনি জীবনে অন্তত একাধিকবার নিজের পুরো ও অর্ধেক সম্পদ আল্লাহর পথে দান করেন এবং মদীনা থেকে ২৫ বার পায়ে হেটে গিয়ে হজ করেছেন।
ইমাম হাসান (আ)’র ইচ্ছা ছিল নানাজীর কবরের পাশে সমাহিত হওয়ার। কিন্তু দুঃখজনকভাবে তার এই ইচ্ছে বাস্তবায়িত হতে দেয়নি বিশেষ একটি মহল। আজ থেকে প্রায় ৯০ বছর আগেও জান্নাতুল বাকিতে ছিল ইমাম হাসান (আ)’র পবিত্র মাজার ভবন। সুদৃশ্য গম্বুজসহ সেই মাজার ভেঙ্গে দেয় তাকফিরি-ওয়াহাবি সন্ত্রাসীরা। কিন্তু মুক্তিকামী মানুষের হৃদয়-রাজ্যে তাঁর সুউচ্চ আসনকে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারবে না।#
source : irib