আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা –আবনা- : তেহরানে অনুষ্ঠিত হযরত আয়াতুল্লাহ শেইখ ঈসা কাসেমের কমেমোরেশন অনুষ্ঠান উপলক্ষে আয়োজিত সম্মেলনের প্রথম বক্তা ছিলেন লেবাননের হিজবুল্লাহ বাহিনীর ডেপ্যুটি প্রধান।
হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন নাঈম কাসেম বাহরাইনে সৃষ্ট সংকটের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন : মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে, কিন্তু না বিপ্লবীরা তাদের উদ্দেশ্যে পৌঁছুতে পেরেছে না গঠিত সরকারগুলো। আর এভাবেই এ দেশগুলো ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতির দিকে অগ্রসর হয়েছে ও হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে বাহরাইনই সর্বোত্তম পন্থা অবলম্বন করেছে। তাদের মূলমন্ত্র ছিল সহিংসতা বহির্ভূত ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলন’। আমাদেরকে লক্ষ্য রাখতে হবে শান্তিপূর্ণভাবে অগ্রসর হওয়া সামরিক অগ্রসর অপেক্ষা কঠিন। এর জন্য প্রয়োজন চরম ধৈর্য্য ও প্রতিরোধ। আগত বাধা-বিপত্ত ও কষ্টকে পেছনে ফেলতে দৃঢ় সংকল্পের প্রয়োজন রয়েছে।
লেবাননের হিজবুল্লাহ বাহিনীর ডেপ্যুটি প্রধান বলেন : সরকারের উচিত জনগণের উদ্দেশ্যে সাহায্য ও শান্তি স্থাপনের হাত বাড়িয়ে কাঙ্খিত সফলতায় পৌঁছানো। এ পদ্ধতি শাসক ও জনগণ উভয়েরই স্বার্থসিদ্ধ। একগুয়েমীর মাধ্যমে সরকার কখনই তাদের কাঙ্খিত ফলাফলে পৌঁছুতে পারবে না।
তিনি পশ্চিমাদের দু’মুখো নীতির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন : যদি পশ্চিমা সমমনা কোন ব্যক্তিকে আটক করা হয়, তাহলে বিশ্ব গণমাধ্যম তাদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে। কিন্তু মুসলমানদের গণহত্যার বিষয়ে তারা নিরব থাকে এবং দু’মুখো নীতির বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।
তিনি বলেন : দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও সরকারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার বাহরানের জনগণের আছে; একমাত্র রাজনৈতিক উপায়েই বাহরাইন সংকট সমাধানযোগ্য। সরকারের উচিত বাহরাইনের জনগণ ও শাইখ ঈসা কাসমকে মূল্যায়ন করা।
এরপর তিনি বাহরাইনে গণজাগরণের কথা উল্লেখ করে বলেন : তিনি (শেইখ ঈসা কাসেম) বেলায়েত-এ ফকিহ’র সাথে বাইয়াত করে ইমাম খোমেনি (রহ.) কে নিজের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
নাঈম কাসেম বলেন : ইমাম খোমেনি (রহ.)-এর ইন্তিকালের পর ইসলামি বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা তাকে শরয়ি বিষায়াদিতে পূর্ণক্ষমতাধর প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচন করেন; এটা তার সুউচ্চ ব্যক্তিত্বেরই প্রমাণ। তিনি নির্দিষ্ট নীতির উপর অটল থাকার জন্য সবার মাঝে সুপরিচিত ও সমাদৃত। তার নীতির দু’টি ভিত্তি রয়েছে, ‘সংশোধনের প্রতি আহবান’ ও ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলন’। এর অর্থ হল, তিনি বাহরাইনের গণবিপ্লব সশস্ত্র হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করেছেন।
হিজবুল্লাহ’র ডেপ্যুটি প্রধান বলেন : তার ঐ সকল পদক্ষেপের ফলাফল আমরা আজ দেখতে পাচ্ছি। যেগুলোর কারণে বাহরাইন আজ লিবিয়া, সিরিয়া ও অন্যান্য দেশের পরিণতির শিকার হয়নি।
তিনি তার বক্তব্যের অপর অংশে বাহরাইনের আহত ব্যক্তিদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেন এবং আটক ব্যক্তিদের –বিশেষতঃ আলী সালমান- জন্য মুক্তির কামনা করেন।
লোবননের বিশিষ্ট এ চিন্তাবিদ পশ্চিমা বিশ্বের দু’মুখো নীতির প্রতি ইঙ্গিত করে আরো বলেন : পশ্চিমারা একদিকে মানবাধিকার রক্ষার দাবী করে, অন্য দিকে বাহরাইনের জাতীয় ব্যক্তিত্বদেরকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে নিরব থাকে। যদিও তারা ভালভাবেই অবগত যে, এ সকল ব্যক্তিদেরকে শুধুমাত্র তাদের চিন্তাগত কারণে আটক করা হয়েছে।
তিনি বাহরাইন সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন : সৃষ্ট সংকট থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র পথ হচ্ছে রাজনৈতিক সমাধান। জনগণের মাঝে আসুন এবং তাদের ন্যায্য দাবীর যথাযথ জবাব দিন। কেননা এ পদক্ষেপ সকলেরই স্বার্থসিদ্ধ।
উল্লেখ্য, আল-মোস্তফা ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ডের চতুর্থ পর্ব আয়াতুল্লাহ শেইখ ঈসা কাসেমের কোমেমোরেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত সম্মেলন আল-মোস্তফা (স.) ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উদ্যোগে এবং আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থা ও মাযহাবসমূহের নিকটবর্তীকরণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক ফোরামসহ অন্যান্য সংস্থার উদ্যোগে সহযোগিতা তেহরানে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বলাবাহুল্য, শেইখ ঈসা আহমাদ কাসেম; বাহরাইন হাওযা ইলমিয়ার প্রধান এবং মুসলিম বিশ্বের একজন শীর্ষস্থানীয় আলেম। বাহরাইনের শান্তিপূর্ণ গণবিপ্লবে প্রজ্ঞাপূর্ণ নেতৃত্বে তার ভূমিকার কথা কারো অজানা নয়।#
source : abna24