বাঙ্গালী
Sunday 1st of September 2024
0
نفر 0

সূরা আ'রাফ;(২৬তম পর্ব)

রা আ'রাফ; আয়াত ১২৩-১২৭ (পর্ব-২৬) সূরা আরাফের ১২৪ ও ১২৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন- لَأُقَطِّعَنَّ أَيْدِيَكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ مِنْ خِلَافٍ ثُمَّ لَأُصَلِّبَنَّكُمْ أَجْمَعِينَ (124) قَالُوا إِنَّا إِلَى رَبِّنَا مُنْقَلِبُونَ ((125 "মূসার প্রতি ঈমান আনার কারণে ফেরাউন জাদুকরদের বললোঃ জেনে রাখ, আমি তোমাদের হাত ও পাগুলো বিপরীত দিক থেকে কেটে দিব এবং এরপর তোমাদের সবাইকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করবো।" (৭:১২৪) "জাদুকররা বললোঃ যা ইচ্ছে তা-ই কর, আমরা তো আমাদের প্রতিপালকের কাছে ফিরে যা
সূরা আ'রাফ;(২৬তম পর্ব)

রা আ'রাফ; আয়াত ১২৩-১২৭ (পর্ব-২৬)

সূরা আরাফের ১২৪ ও ১২৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

لَأُقَطِّعَنَّ أَيْدِيَكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ مِنْ خِلَافٍ ثُمَّ لَأُصَلِّبَنَّكُمْ أَجْمَعِينَ (124) قَالُوا إِنَّا إِلَى رَبِّنَا مُنْقَلِبُونَ ((125

"মূসার প্রতি ঈমান আনার কারণে ফেরাউন জাদুকরদের বললোঃ জেনে রাখ, আমি তোমাদের হাত ও পাগুলো বিপরীত দিক থেকে কেটে দিব এবং এরপর তোমাদের সবাইকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করবো।" (৭:১২৪)

"জাদুকররা বললোঃ যা ইচ্ছে তা-ই কর, আমরা তো আমাদের প্রতিপালকের কাছে ফিরে যাব।" (৭:১২৫)

আগের কয়েকটি আয়াতের তাফসীর থেকে আমরা জেনেছি, মিশরের জাদুকররা যখন হযরত মূসা (আ.)'র মোজেজা বা অলৌকিক নিদর্শন দেখলো, তখন তারা বুঝলো যে, তাঁর কাজটি জাদু বা সম্মোহন ছিল না। তাই তারা মূসা নবীর প্রতি ঈমান আনলো এবং তাঁকে আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ বা নবী বলে মেনে নিল। কিন্তু ফেরাউন এতো বড় অবমাননা মেনে নিতে প্রস্তুত ছিল না। তাই সে জাদুকরদেরকে মূসা (আ.)'র সহযোগী বলে অভিযুক্ত করলো এবং বললো যে তোমরা একজোট হয়ে আমাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র করছো। এ আয়াতে বলা হচ্ছে- জাদুকরদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করা ছাড়াও ফেরাউন তাদেরকে সবচেয়ে কঠোর শাস্তি দেয়ার হুমকী দেয়। ফেরাউন তাদের বলে, আমি তোমাদের হাত ও পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দিব, অর্থাৎ, তোমাদের ডান হাত ও বাম পা অথবা বাঁ হাত ও ডান পা কেটে দিব এবং এরপর তোমাদেরকে ফাঁসিতে ঝুলাবো, যাতে অন্যরা এ থেকে শিক্ষা নেয়। কিন্তু জাদুকররা সত্যকে বুঝে শুনেই ঈমান এনেছিল । তাই, তারা ফেরাউনের এসব হুমকীতে ভয় না পেয়ে বললোঃ যদি তা কর এবং আমাদের ফাঁসিতে ঝোলাও, তাহলে আমরা আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হব ও মহান প্রতিপালকের দিকে ফিরে যাব। তুমি আমাদেরকে শাহাদতের ভয় দেখাচ্ছ, অথচ শাহাদত মুমিন বা বিশ্বাসীদের জন্যে সৌভাগ্যের মাধ্যম।

এ আয়াত থেকে আমাদের মনে রাখা দরকার:

এক. তাগুতি বা খোদাদ্রোহী শাসকদের যুক্তি হলো, হুমকী, নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড। অথচ তারা এটা জানে যে, ঈমানদার লোকেরা শাহাদতকে সৌভাগ্য হিসেবে বরণ করে।

দুই. ঈমানদার মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত শাসন ব্যবস্থা ও পরিবেশের কাছে নতজানু বা বশীভূত হয় না। ঈমান ও দৃঢ় ইচ্ছার মাধ্যমে এসব কিছুর বিরুদ্ধেই রুখে দাঁড়ানো সম্ভব।

তিন. ঈমানের অভিজ্ঞতার জন্যে অহংকার করা উচিত নয়, আবার কাফেররা ঈমান আনায় দুঃখিত হওয়া উচিত নয়। মূসা নবীর মোজেজা দেখে জাদুকর কাফেররা এক মুহূর্তে খাঁটি মুমিনে পরিণত হয় ।

সূরা আরাফের ১২৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

وَمَا تَنْقِمُ مِنَّا إِلَّا أَنْ آَمَنَّا بِآَيَاتِ رَبِّنَا لَمَّا جَاءَتْنَا رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَتَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ ((126

"তারা বললোঃ হে ফেরাউন! আমাদের জন্যে আমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যে নিদর্শন ও মোজেজা এসেছে তার প্রতি ঈমান আনার কারণেই তুমি আমাদের শাস্তি দিতে চাচ্ছ। হে পরওয়ারদেগার! আমাদেরকে ধৈর্য দান কর এবং আমাদেরকে মুসলমান তথা আত্মসমর্পণকারী হিসেবে মৃত্যু দান কর।" (৭:১২৬)

হযরত মূসা (আ.)'র মোজেজার কাছে পরাজিত হয়ে ফেরাউন তা ঢাকা দেয়ার জন্যে মূসা নবী ও জাদুকরদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগ আনলো। ফেরাউন বললো যে, তোমরা ক্ষমতা দখলের জন্যে ষড়যন্ত্র করছো। জাদুকররা ফেরাউনের অভিযোগ ও শাস্তির হুমকীর জবাবে বললোঃ ফেরাউন, তুমি নিজেই এটা জানো যে, তোমাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ইচ্ছে আমরা করিনি । আসলে, আমরা মূসার খোদার প্রতি ঈমান এনেছি বলেই তুমি আজ আমাদেরকে কষ্ট দেয়ার ও হত্যা করার কথা ভাবছো । এরপর জাদুকররা মহান আল্লাহর কাছে এ প্রার্থনা করলো যে, তিনি যেন তাদেরকে এতটা ধৈর্য দান করেন যাতে তারা ফেরাউনের ঐসব হুমকী ও অভিযোগের মোকাবেলায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে এবং ঈমান নিয়েই দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে পারে।

এ আয়াত থেকে মনে রাখা দরকার:

এক. শুধু মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করাই যথেষ্ট নয় । আল্লাহর শত্রু পথরোধ করে দাঁড়ানো তথা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলাও জরুরী ।

দুই. প্রকৃত মুমিনরা চেষ্টাও করেন এবং আল্লাহর কাছে বিনীতভাবে প্রার্থনাও করেন । শুধু চেষ্টা ও শুধু প্রার্থনা যথেষ্ট নয় ।

সূরা আরাফের ১২৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

وَقَالَ الْمَلَأُ مِنْ قَوْمِ فِرْعَوْنَ أَتَذَرُ مُوسَى وَقَوْمَهُ لِيُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَيَذَرَكَ وَآَلِهَتَكَ قَالَ سَنُقَتِّلُ أَبْنَاءَهُمْ وَنَسْتَحْيِي نِسَاءَهُمْ وَإِنَّا فَوْقَهُمْ قَاهِرُونَ ((127

"ফেরাউন সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয়রা বললোঃ হে ফেরাউন, আপনি কি মূসা ও তাঁর অনুসারীদেরকে অশান্তি সৃষ্টির জন্যে এদেশে ছেড়ে দেবেন? ফেরাউন বললোঃ ওদের পুত্র সন্তানদেরকে হত্যা করবো এবং তাদের মহিলাদেরকে জীবিত রাখব, নিশ্চয়ই আমরা তাদের ওপর পরাক্রান্ত বা পূর্ণ কর্তৃত্বশীল।" (৭:১২৭)

হযরত মূসা (আ.) ও জাদুকরদের ঘটনার পর ফেরাউন জাদুকরদের হত্যা করার নির্দেশ দিলেও মূসা (আ.)'র জন্যে কোনো শাস্তি নির্ধারণ করেনি। ফেরাউনের দরবারের লোকেরা মূসা (আ.)'র অস্তিত্বকে তাদের স্বার্থের জন্যে হুমকী হিসেবে দেখতে পেয়ে আল্লাহর এ নবীকে শাস্তি দেয়ার জন্যে ফেরাউনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে লাগলো । তারা এটা বোঝানোর চেষ্টা করলো যে, এ পর্যন্ত সৃষ্ট সব সমস্যার জন্যে হযরত মূসাই দায়ী । কারণ, তিনিই ফেরাউনের প্রভুত্বসহ অন্যান্য খোদাদেরকে চ্যালেঞ্জ ও প্রশ্নের সম্মুখীন করেছেন এবং তিনি মানুষকে অন্য খোদার দিকে আহবান জানাচ্ছেন । তাই মূসা (আ.)কে এভাবে ছেড়ে দেয়া হলে বনি ইসরাইল বা ইসরাইল বংশীয়রা বিদ্রোহ করবে এবং এদেশে অরাজকতা সৃষ্টি হবে ।

ফেরাউন দেখলো, হযরত মূসা (আ.) জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন । তাই, তাকে হত্যা করা হলে ফেরাউনের শাসন ব্যবস্থাকে এ জন্যে কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে । আর এ চিন্তা করে ফেরাউন মূসা নবীকে শাস্তি দেয়ার কোনো সিদ্ধান্ত নিল না। কিন্ত সে ঘোষণা দিল, মূসার অনুসারীদেরকে কঠোরতম শাস্তি দেয়া হবে এবং বনি ইসরাইলের যারাই আমাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে তাদেরকে হত্যা করা হবে । এর পাশাপাশি তাদের স্ত্রী ও কন্যাদেরকে দাসী হিসেবে বন্দী করে জীবিত রাখা হবে । কারণ, বনি ইসরাইলের ওপর আমাদের পূর্ণ কর্তৃত্ব রয়েছে, অর্থাৎ, আমাদের শক্তি তাদের চেয়ে অনেক বেশী ।

এ আয়াত থেকে আমাদের মনে রাখা দরকারঃ

এক. খোদাদ্রোহীরা নিজেরা অশান্তি ও অন্যায়ের উৎস বা হোতা হওয়া সত্বেও তারা হযরত মূসা (আ.)'র মতো শান্তিকামী মহাপুরুষকে অশান্তি সৃষ্টিকারী বলে অভিযোগ তুলেছিল। বর্তমানেও বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় জালেম ও দখলদার শক্তিগুলো তাদের জুলুমের বিরোধীতাকারী বিপ্লবীদেরকে সন্ত্রাসী ও অশান্তি সৃষ্টিকারী বলে প্রচারণা চালাচ্ছে এবং নিজেদেরকে শান্তিকামী বলে জাহির করছে।

দুই.যুব প্রজন্মকে নিশ্চিহ্ন করা এবং নারী ও কন্যাদেরকে বন্দী করা ছিল ফেরাউনী নীতির বিশেষ দিক। বর্তমানেও পাশ্চাত্যে যুব সমাজকে মাদকাসক্তি ও সহিংসতায় লিপ্ত রাখা হয়েছে এবং পশ্চিমা নারীদেরকে প্রদর্শনীর সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।


source : alhassanain
0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

আমাকে এ নারীর হাত হতে মুক্তি দাও!: ...
ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘প্রত্যাশা’ ...
বাস্তবতার দর্পনে ওহাবি মতবাদ (১১ - ...
চাকরিতে বাধা হিজাব ; নিরাপত্তা ...
ইরান মুসলিম জাতিগুলোর জন্য আদর্শ ...
সূরা আ'রাফ;(২৬তম পর্ব)
ভারতে যে দাঙ্গা মুসলিম নারীদের ...
সুফীবাদ প্রসঙ্গে
মিয়ানমারে ইমাম হুসাইন (আ.) এর ...
পোপ ও ইয়েমেনের মানুষ হত্যাকারীরা

 
user comment