বাঙ্গালী
Friday 27th of December 2024
0
نفر 0

সূরা আ'রাফ;(২৫তম পর্ব)

সূরা আ'রাফ; আয়াত ১১৭-১২৩ সূরা আ'রাফের ১১৭ ও ১১৮ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন- وَأَوْحَيْنَا إِلَى مُوسَى أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ (117) فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ((118 "মূসাকে আমি ইঙ্গিত করলাম, তোমার লাঠিটা ছুঁড়ে দাও। তার লাঠি ছোঁড়ার সাথে সাথেই তা এক নিমিষেই তাদের মিথ্যা জাদু কর্মগুলোকে গিলে ফেলতে লাগলো।" (৭:১১৭) 'এভাবে যা সত্য ছিল তা সত্য প্রমাণিত হলো এবং যা কিছু তারা বানিয়ে রেখেছিল তা মিথ্যা প্রতিপন্ন হলো।' (৭:১১৮)
সূরা আ'রাফ;(২৫তম পর্ব)

সূরা আ'রাফ; আয়াত ১১৭-১২৩

সূরা আ'রাফের ১১৭ ও ১১৮ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

وَأَوْحَيْنَا إِلَى مُوسَى أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ (117) فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ((118

"মূসাকে আমি ইঙ্গিত করলাম, তোমার লাঠিটা ছুঁড়ে দাও। তার লাঠি ছোঁড়ার সাথে সাথেই তা এক নিমিষেই তাদের মিথ্যা জাদু কর্মগুলোকে গিলে ফেলতে লাগলো।" (৭:১১৭)

'এভাবে যা সত্য ছিল তা সত্য প্রমাণিত হলো এবং যা কিছু তারা বানিয়ে রেখেছিল তা মিথ্যা প্রতিপন্ন হলো।' (৭:১১৮)

আগের পর্বে আমরা বলেছি, মূসা (আ.)কে অপমানিত করতে ফেরাউন মিশরের বিভিন্ন স্থান থেকে বড় বড় সব জাদুকরকে জড়ো করলো এবং মূসা(আ.)কে ওই সব জাদুকরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে বললো। ফেরাউন ভেবেছিল, মূসা (আ.) ওই প্রতিযোগিতায় পরাজিত হবেন। মূল্যবান পুরস্কারের আশায় ফেরাউনের ডাকে জাদুকরেরা তার দরবারে হাজির হলো। এরপর জনসমক্ষে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হলো। ওই সব জাদুকর তাদের উপকরণগুলো মাটিতে ছুঁড়ে দিল এবং মানুষের চোখে সেগুলোকে ছোট-বড় সাপ বলে মনে হলো। এ কারণে সেগুলোকে দেখে উপস্থিত জনতা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লো। হযরত মূসা (আ.) তখন সম্পূর্ণ একা। কিন্তু তিনি আল্লাহর ওপর আস্থা রেখে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং আল্লাহর নির্দেশে তার কাঠের লাঠিটি মাটিতে ফেললেন। সঙ্গে সঙ্গে মূসা (আ.) এর কাঠের লাঠিটি প্রকৃত অজগরের রূপ নিল এবং জাদুকরদের মিথ্যা জাদুকর্মগুলোকে খেয়ে ফেললো। এর ফলে সত্যের জয় হলো এবং মিথ্যা পরাজিত হলো।

এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো:

এক. মিথ্যাবাদীরা নানা কৌশলে সত্যপন্থীদের ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা চালায়। কিন্তু সত্যের সামনে মিথ্যা টিকতে পারে না।

দুই. সত্যের বিজয় অনিবার্য। এ কারণে শত বাধা সত্ত্বেও সত্যের পথে অটল থাকতে হবে।

সূরা আ'রাফের ১১৯ ও ১২০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

فَغُلِبُوا هُنَالِكَ وَانْقَلَبُوا صَاغِرِينَ (119) وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِينَ ((120

"ফেরাউন ও তার সঙ্গীরা মোকাবিলার ময়দানে পরাজিত হলো এবং (বিজয়ী হবার পরিবর্তে) উল্টো তারা লাঞ্ছিত হলো।" (৭:১১৯)

"আর জাদুকরেরা শ্রদ্ধায় সিজ্‌দাবনত হলো।" (৭:১২০)

জাদুকরদের বিরুদ্ধে হযরত মূসার বিজয়ের মধ্যদিয়ে ফেরাউন মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তার সম্মান-মর্যাদায় বড় আঘাত আসে। ফেরাউন জনসমক্ষে হযরত মূসাকে লাঞ্ছিত করে জনগণকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বাস্তবে তার উল্টো ঘটনাটিই ঘটে। যে জাদুকরদের দিয়ে মূসা (আ.) কে মিথ্যা প্রমাণিত করার চেষ্টা হয়েছিল, সেই জাদুকররা পর্যন্ত ফেরাউনের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো এবং মূসা (আ.)এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলো। তারা আল্লাহকে মেনে নিয়ে তার সামনে সিজদাবনত হলো। যেসব জাদুকর কিছু সোনা-কড়ির লোভে ফেরাউনের দরবারে এসেছিল, তারা সব স্বার্থ ত্যাগ করে মূসা (আ.)এর কাছে আত্মসমর্পণ করলো।

এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো:

এক. যেসব মানুষ কুসংস্কারে আচ্ছন্ন নয়, তাদের সামনে সত্য প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা তা মেনে নেয়।

দুই. আল্লাহর সামনে নিজেকে সমর্পণ করার সর্বোত্তম পন্থা হলো সিজদাবনত হওয়া।

সূরা আ'রাফের ১২১, ১২২ ও ১২৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

قَالُوا آَمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِينَ (121) رَبِّ مُوسَى وَهَارُونَ (122) قَالَ فِرْعَوْنُ آَمَنْتُمْ بِهِ قَبْلَ أَنْ آَذَنَ لَكُمْ إِنَّ هَذَا لَمَكْرٌ مَكَرْتُمُوهُ فِي الْمَدِينَةِ لِتُخْرِجُوا مِنْهَا أَهْلَهَا فَسَوْفَ تَعْلَمُونَ ((123

"(তারা বলতে লাগলোঃ আমরা ঈমান আনলাম বিশ্বজাহানের রবের প্রতি।" (৭:১২১)

"যিনি মূসা ও হারুণেরও রব।" (৭:১২২)

"ফেরাউন বললোঃ আমার অনুমতি দেবার আগেই তোমরা তার প্রতি ঈমান আনলে? নিশ্চয়ই এটা কোন গোপন চক্রান্ত ছিল। তোমরা এ রাজধানীতে বসে এ চক্রান্ত এঁটেছো এর অধিবাসীদের ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য। বেশ, এখন এর পরিণাম তোমরা জানতে পারবে।" (৭:১২৩)

জাদুকরেরা হযরত মূসা (আ.) এর মোজেজার সামনে মাথানত করতে বাধ্য হন। তারা এটা মেনে নেন যে, মূসা (আ.) কোন জাদুকর নন, তিনি যা করেছেন, তা সত্য। তিনি কোনো ধোঁকা দেননি। এ কারণে তারা হযরত মূসার মোজেজা দেখার সঙ্গে সঙ্গে সিজদাবনত হয়ে পড়ে এবং সিজদা থেকে ওঠে এ ঘোষণা দেয় যে, মূসা (আ.) হচ্ছেন আল্লাহর রাসূল এবং তার প্রতিপালক আল্লাহই হচ্ছে গোটা বিশ্বের প্রতিপালক। আমরা বিশ্ব জাহানের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছি। এ পরিস্থিতির জন্য ফেরাউন প্রস্তুত ছিল না। সে এ অপবাদ দিতে থাকে যে, মুসা (আ.) এর সঙ্গে মিলে জাদুকরেরা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে।

ফেরাউন বললো, এটা পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। তোমরা মূসার সঙ্গে মিলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছিল। কাজেই তোমরাও মূসার মতো অপরাধী। এমনকি ফেরাউন জাদুকরদেরকে ক্ষমতা কেড়ে নেয়ার জন্য ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে চিহ্নিত করলো। সে বললো, তোমরা আমার পতন ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল করতে চেয়েছিলে। তোমরা চেয়েছিলে, আমরা যারা এ দেশের মূল অধিবাসী,তাদেরকে বিতাড়িত করতে। ফেরাউন হুমকি দিয়ে বললো, তোমরা ফেরাউনকে প্রতিপক্ষ বানিয়েছ? আমি তোমাদেরকে এমন শাস্তি দেব, যা অন্যদের জন্যও শিক্ষা হয়ে থাকবে।

এ আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো:

এক. মানুষকে জোরপূর্বক সত্যের পথ থেকে সরিয়ে রাখা যায় না।

দুই. অত্যাচারী শাসকরা নিজের চিন্তা-বিশ্বাসের বাইরে অন্য কোনো কিছুকেই মেনে নেয় না। তারা মনে করে, মানুষকে ধর্ম ও মাজহাব নির্বাচনের ক্ষেত্রেও তাদের অনুমতি নিতে হবে।

তিন. অত্যাচারী শাসকরা যুক্তির তোয়াক্কা করে না। এ কারণে তারা অন্যদেরকে সব সময় অপবাদ দেয়।

চার. অবৈধ ও গণবিরোধী শাসনযন্ত্র, হত্যার হুমকি ও নির্যাতনের মাধ্যমে ভীতি ছড়িয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়।


source : alhassanain
0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

তাকওয়া হাসিলের উপায়
কোরআন ও চিকিৎসা বিজ্ঞান
আদাবুস সুলূক (আধ্যাত্মিক পথ ...
খলিফা নির্বাচনের পদ্ধতি
হুজুর (সা.)-এর সন্তান-সন্ততিগণ
হযরত ফাতেমার চরিত্র ও কর্ম-পদ্ধতি
হযরত ইমাম মুসা কাযিম (আ.)'র ...
সমাজ কল্যাণে আল-কুরআনের ভূমিকা
মহানবী (স.) হতে বর্ণিত ৪০টি হাদীস (২)
প্রকৃতি ও মানুষের সত্তায় পরকালীন ...

 
user comment