আবনা ডেস্ক: মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটের শীর্ষ সম্মেলন থেকে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি সম্পর্কে যে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে তাকে ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান করেছে তেহরান। ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বাহরাম কাসেমি বলেছেন, শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা নীতির আওতায় নিজের ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা বাড়িয়েছে ইরান এবং এদেশের কোনো ক্ষেপণাস্ত্রে পরমাণু ওয়ারহেড বহনের ব্যবস্থা রাখা হয়নি।
তিনি আরো বলেন, পাশ্চাত্যের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতার সঙ্গে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির কোনো সম্পর্কে নেই; কাজেই ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে তেহরান জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ২২৩১ নম্বর প্রস্তাব লঙ্ঘন করেনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরানের পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়িত হওয়ার পরও তেহরানের ওপর রাজনৈতিক চাপ অব্যাহত রাখার যে অপকৌশল পাশ্চাত্য নিয়েছে তারই অংশ হিসেবে ন্যাটো জোটের শীর্ষ সম্মেলন থেকে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল গত বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) অভিযোগ করেছেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব উপেক্ষা করে ইরান মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন ও পরীক্ষা করে যাচ্ছে। এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে পশ্চিমা নেতারা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে গোটা ইউরোপ মহাদেশের জন্য হুমকি হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। তারা এর মাধ্যমে আরেকটি লক্ষ্যও হাসিল করতে চান। আর তা হলো ইরানের সম্ভাব্য ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অজুহাত তুলে রাশিয়াকে লক্ষ্য করে ইউরোপে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোতায়েন করা।
পশ্চিমা নেতারা এমন সময় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে চিৎকার চেচামেচি শুরু করেছেন যখন এক বছর আগে পর্যন্ত তাদের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল ইরানের পরমাণু কর্মসূচি। গত বছরের জুলাইয়ে পরমাণু সমঝোতা সই হওয়ার আগ পর্যন্ত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কর্মসূচিকে বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে তা নিষিদ্ধ করে রেখেছিল।
তবে পরমাণু সমঝোতা সই হওয়ার পর নিরাপত্তা পরিষদ একটি প্রস্তাব পাস করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণসহ ইরানের গোটা পরমাণু কর্মসূচিকে আইনি বৈধতা দেয়। কিন্তু ওই সমঝোতা সই হওয়ার পর মার্কিন সরকার ইরানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতার লাগাম টেনে ধরার নতুন চেষ্টা শুরু করে। পশ্চিমাদের সে কৌশল উপলব্ধি করে ইরানও পূর্ণ গতিতে নিজের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি চালিয়ে যায়। বর্তমানে নানা ধরনের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন করে ও পরীক্ষা চালিয়ে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র শিল্পের দিক দিয়ে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর কাতারে পৌঁছে গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ক্ষেপণাস্ত্র শক্তির দিক দিয়ে ইরান বর্তমানে এমন একটি জায়গায় পৌঁছেছে যে, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে একটি মূল শক্তি হিসেবে কাজ করছে। এ কারণে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোট ইরানের বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টির অজুহাত হিসেবে দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিকে ব্যবহার করছে।#
source : abna24