আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা –আবনা-: সহিংসতা থেকে ইসলাম ধর্মকে পৃথক জ্ঞান করে মন্তব্য করায় ক্যাথোলিক খ্রিষ্টানদের শীর্ষ নেতা পোপের উদ্দেশ্যে লেখা এক চিঠিতে তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন আয়াতুল্লাহ মাকারেম শিরাজী। শিয়া বিশ্বের বিশিষ্ট মারজা’র ঐ চিঠিটি ইরানের বহুল প্রকাশিত দৈনিক জমহুরি ইসলামি’তে প্রকাশিত হয়েছে।
চিঠির শুরুতে বিশ্বের ক্যাথোলিক খ্রিষ্টানদের নেতার প্রতি সালাম ও শুভেচ্ছার পর বলা হয়েছে: আপনার পোল্যান্ড সফরে এক সাক্ষাতকারে আপনি সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডকে ইসলাম ধর্ম -এমনকি যে কোন ঐশী ধর্ম-এর সাথে সম্পৃক্ত করাকে অগ্রহণযোগ্য বলে আখ্যায়িত করেছেন, আপনার এ মন্তব্যে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। ইসলাম ধর্মের পক্ষে অবস্থান এবং দায়েশের ন্যায় অপর তাকফিরি সন্ত্রাসীদের অমানবিক পদক্ষেপগুলো থেকে ইসলাম ধর্মকে পৃথক জ্ঞান করে করা আপনার মন্তব্য প্রশংসার দাবী রাখে।
চিঠিতে আরো উল্লিখিত হয়েছে, নিঃসন্দেহে সহিংসতার –বিশেষতঃ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ইসলামের নামে যে সব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে- বিরুদ্ধে ধর্মীয় নেতাদের শক্তিশালী ও স্পষ্ট অবস্থান অত্যন্ত জরুরী একটি বিষয়।
আয়াতুল্লাহ মাকারেমের সংযোজন: আমরা ফ্রান্সের গীর্জায় তাকফিরি সন্ত্রাসীদের হামলা এবং ধর্মযাজক হত্যার তীব্র নিন্দা জানাই। যেভাবে আপনার উদ্দেশ্যে লেখা আমার পূর্বের চিঠিতে আমি উল্লেখ করেছিলাম সেভাবেই স্পষ্টভাষায় বলতে চাই যে, মুসলিম বিশ্বের সকল আলেমে’র দৃষ্টিতে এবং অধিকাংশ মুসলমানদের দৃষ্টিতে তাকফিরি সম্প্রদায় ধর্ম থেকে বিচ্যুত এবং বর্তমান যুগের মানবতার সবচেয়ে বড় শত্রু। আমরা বহুবছর যাবত এ হুমকির বিষয়ে সতর্ক করে আসছি।
মূলতঃ ইসলাম ধর্ম দয়া, ভালবাসা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের উপর প্রতিষ্ঠিত। সহিংসতা ও টেররে’র মত পরিভাষা ইসলাম ধর্মের অচেনা। মুসলিম আলেমরা যে কোন প্রকারের সহিংসতাকে কুরআনের নির্দেশ পরিপন্থি বলে জ্ঞান করে। তাই তা বিশ্বের যে প্রান্তেই ঘটুক এর তীব্র নিন্দা জানায়; চাই তা মুসলিম দেশে ঘটুক বা ইউরোপীয় অথবা আমেরিকার কোন দেশে।
চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, আমরা গত দু’বছরে পবিত্র কোম শহরে ‘তাকফিরি সম্প্রদায়ের বিভ্রান্তি ও বিপদ’ সংক্রান্ত দু’টি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেছি। এতে ৮০টি দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমরা আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। ঐ সম্মেলন উপস্থিত সকলে একবাক্যে সকল প্রকার সন্ত্রাসবাদ, সহিংসতা ও নিরাপরাধ মানুষ হত্যাকে অগ্রহণযোগ্য বলে ঘোষণা দিয়ে এ ধরনের পদক্ষেপকে ইসলামের শিক্ষা বিরোধী বলে অভিহিত করেছেন। আর নগন্য সংখ্যক ঐ সকল মূর্খ, নির্দয় ও রক্তপাতকারীদেরকে এ বলে সতর্ক করেছেন যে, তাদের রাস্তা জাহান্নামের দিকেই।
নিঃসন্দেহে কিছু কিছু কর্তৃত্বশীল দেশ নিজেদের বস্তুগত স্বার্থের কারণে তাকফিরি ও সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে সহযোগিতা না করলে এতদিনে তারা সমূলে উৎপাটিত হত।
যেভাবে আপনি বলেছেন, ‘এ সকল সহিংসতা কোন ধর্মের সাথে সম্পৃক্ত নয় বরং কিছু কিছু সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তাদের বস্তুগত হীন স্বার্থ রক্ষা এবং অবৈধ অর্থ উপার্জন করতে যে সকল পরিকল্পনা করে থাকে তা থেকে উৎসারিত’। মহান আল্লাহর কৃপায়, বিশ্বের জনগণের বিরাট একটি অংশ জাগ্রত হয়েছে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড দ্রুত পৃথিবী থেকে বিদায় নেবে বলে আমরা আমরা আশাবাদী।
পরিশেষে এই দোয়াই করতে চাই যে, ভ্রাতৃত্বের শিক্ষা, সন্ধি ও আধ্যাত্মিকতার প্রসারের মত সুউচ্চ কর্তব্য পালনে মহান আল্লাহ্ আপনার তৌফিককে বহুগুণে বাড়িয়ে দিন।#
source : abna24