আবনা ডেস্ক: গ্রেফতার ইউসুফ গুলশান হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আবু ইউসুফ বাঙালি কি-তা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দা
ভারতের বর্ধমানে খাগড়াগড় বিস্ফোরণকাণ্ডে ৬ জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্স। এদের মধ্যে তিনজন বাংলাদেশি বলে নিশ্চিত করেছে ভারতের গোয়েন্দারা। বাকিদের একজন ভারতীয়। অপর দুইজন কোন দেশের নাগরিক তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। গ্রেফতারকৃতদের একজনের সঙ্গে গুলশান হামলার যোগসূত্র রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গোয়েন্দারা বলছেন, জিজ্ঞাসাবাদে বিষয়টি পরিস্কার হবে।
গ্রেফতারকৃতরা হল আনোয়ার হোসেন ফারুক ওরফে ইনাম ওরফে কালুভাই, শহিদুল শেখ ওরফে জাফর ওরফে জাবিরুল, মোহাম্মদ রফিক ওরফে রুবেল ওরফে পিচ্চি, মাওলানা ইউসুফ ওরফে বক্কর ওরফে আবু খেতাব, শাহিদুল ওরফে সূর্য ওরফে শামিম ও আবদুল কালাম ওরফে কলিম। এদের মধ্যে ইউসুফ, রফিক ও কালাম বাংলাদেশের নাগরিক। আনোয়ার ভারতীয় নাগরিক।
এই ছয় জঙ্গির চারজন ২০১৪ সালে বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের ঘটনায় চার্জশিটভুক্ত আসামি। কলকাতা পুলিশের নগরপাল রাজিব কুমার ইত্তেফাককে বলেছেন, গ্রেফতার হওয়া জঙ্গিরা পূর্ব ও উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ?্যগুলোতে জেএমবির স্লিপার সেল চালাচ্ছিল। তারা সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা করছিল বলে পুলিশের তথ্য রয়েছে।
একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, ‘গ্রেফতার ব্যক্তিদের সঙ্গে বাংলাদেশে সামপ্রতিক জঙ্গি হামলা, বিশেষ করে গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার জোগসাজশ আছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া খাগড়াগড় বিস্ফোরণের কুশীলবদের সঙ্গে তাদের কোনও যোগাযোগ আছে কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
জানা গেছে, আজ কলকাতার এনআইএ আদালতে খাগড়াগড় মামলার শুনানির দিন ধার্য আছে। গত ২০ আগস্ট এ মামলার শুনানি শুরু হয়। ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনআইএ) এ মামলার তদন্ত করছে। কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাক্সফোর্স প্রধান বিশাল গর্গ ইত্তেফাককে বলেছেন, গ্রেফতারকৃতদের মধে?্য আনোয়ার হোসেন জেএমবির পশ্চিমবঙ্গ শাখার প্রধান। আর মাওলানা ইউসুফ তার প্রধান সহযোগী এবং পশ্চিমবঙ্গে সংগঠনের সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তাকে ধরিয়ে দিতে ১০ লাখ রুপি পুরস্কার ঘোষণা করেছিল ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থা- এনআইএ। এই ইউসুফই গুলশান হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আবু ইউসুফ বাঙালি কি-তা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছেন গোয়েন্দা।
এছাড়া রফিক, শহীদুল, শাহিদুল শেখ ও আবদুল কালাম খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। কালামকে ধরিয়ে দিতে তিন লাখ এবং রুবেলের জন?্য এক লাখ রুপি পুরস্কারের ঘোষণা ছিল। এদের সঙ্গে বাংলাদেশের শীর্ষ জঙ্গি নেতা বোমারু মিজানের সখ্য রয়েছে বলে গোয়েন্দাদের ধারণা। বোমারু মিজান ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশকে হত্যা করে পালিয়ে যাওয়া তিন জঙ্গির একজন।
কলকাতা পুলিশের তথ?্য অনুযায়ী, রফিককে গত রবিবার আসামের কাসার থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আবদুল কালামকে পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার নিউ কোচবিহার থেকে আটক করে টাস্কফোর্স। এরপর ইউসুফ ও শহীদুলকে বশিরহাটের নতুন বাজার থেকে ধরা হয়। বাকি দু’জনকে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী বাগদা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে টাস্কফোর্স। এদের মধ্যে রফিক বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ।
কলকাতা পুলিশের নগরপাল কমিশনার রাজিব কুমার বলেছেন এটা তাদের জন্য এক বিরাট সাফল্য। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করছি খাগড়াগড় বিস্ফোরণের নেপথ্যে কারা ছিল তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে। পাশাপাশি খাগড়াগড় বিস্ফোরণকাণ্ডের মূল হোতা তালহা শেখ ওরফে বোমারু মিজান আর কৌসরের ব্যাপারেও তথ্য পাওয়া যাবে। এদের সবাইকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার অনুমতি দিয়েছে আদালত।
বিশাল গর্গ গতকাল সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, গ্রেফতার ছয়জনের কাছ থেকে দুই কেজি বিস্ফোরক, ডেটোনেটর, জাল পরিচয়পত্র, একটি ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, বই এবং বাংলাদেশি ও ভারতীয় ভোটার আইডি কার্ড ও মুদ্রা পাওয়া গেছে। বাংলাদেশি তিনজনের কাছ থেকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও ভারতের ভোটার আইডি কার্ড পাওয়া গেছে। এছাড়া এদের কাছে ভুয়া কয়েকটি আইডি কার্ডও মিলেছে।
কলকাতা নগর পুলিশের প্রধান রাজিব কুমার বলেন, পুলিশি হেফাজতে নেয়ার পরই এনআইএর কর্মকর্তারা ছয় জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদি তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে এসটিএফ প্রধান জানান, দুই দিন আগে আসামের কাসার থেকে একটা জাল নোটের মামলায় কলকাতা এসটিএফ জাবিরুলকে গ্রেফতার করে। তাকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে জাবিরুল জেএমবির সদস্য বলে স্বীকার করে। তার দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে রবিবার নিউ কোচবিহার স্টেশন থেকে কালামকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তিনি জানান, জেএমবির এই ছয় সদস্য সাংকেতিক ভাষায় নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখত। সেই ভাষার অর্থ খুঁজে বের করে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
কলকাতা পুলিশ দাবি করেছে, জেএমবি সদস্য কালাম বাংলাদেশ থেকে আসাম হয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকার চেষ্টা করছিল। বাংলাদেশ থেকে তাকে কাসারের সংগঠনের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য পাঠানো হয়েছিল। রফিকের কাছে রাসায়নিক যৌগের একটি বই পাওয়া গেছে। ইউসুফ ও ইনামের কাছে পাওয়া গেছে বিস্ফোরক। ইনামের কাছে একটা সাংগঠনিক ছকও পাওয়া গেছে। রফিকের কাছে বাংলাদেশি ট্রেড লাইসেন্সও মিলেছে। জিজ্ঞাসাবাদে ছয়জন স্বীকার করেছে যে একটি বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা করছিল তারা। তবে কলকাতা নয়, দক্ষিণ বা উত্তর-পূর্ব ভারতের কোনো জায়গায় বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা ছিল তাদের।
source : abna24