বাঙ্গালী
Thursday 2nd of May 2024
0
نفر 0

পবিত্র কুরআন জ্ঞান ও সচেতনতা দান করে

পবিত্র কুরআন জ্ঞান ও সচেতনতা দান করে



'বলো,আল্লাহ আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী৷ আর (এর সবচেয়ে ভালো প্রমাণ হল) এ কুরআন আমার কাছে পাঠানো হয়েছে ওহির মাধ্যমে,যাতে তোমাদের এবং আর যার যার কাছে এটি পৌঁছে যায় তাদের সবাইকে আমি সতর্ক করি (যাতে তারা আল্লাহর নির্দেশের বিরোধিতা না করে)৷'

পবিত্র কুরআন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র এক চিরস্থায়ী মু’জেজা। এ মহাগ্রন্থের বাক্য বা আয়াতগুলো আল্লাহর নির্বাচিত সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল ও মহামানবের প্রতি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকেই নাজিল হয়েছে। পবিত্র কুরআনের বিখ্যাত মুফাসসির আল্লামা মুহাম্মাদ হুসাইন তাবাতাবায়ি ওহির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে লিখেছেন:

ওহি নবীদের ভেতরকার এমন এক বিশেষ চেতনা ও উপলব্ধি যা আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা ছাড়া অন্য কারো পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়।

মানুষ নিজের সব বিষয়ে এবং বিশ্ব সম্পর্কে অবহিত নয়। তাই তারা খোদায়ী বা ঐশী হেদায়েতের মুখাপেক্ষী। মানুষের এই চাহিদা মেটাতেই এসেছে ওহি।

মানুষ তার বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে অনেক কিছু বুঝতে পারে। যেমন,তারা বুঝতে পারে যে সঠিক চিন্তাটি করতে হবে ও করতে হবে সুন্দর বা ভালো আচার-আচরণ। আর দূরে থাকতে হবে নোংরামি থেকে। কিন্তু তারপরও ভালো ও মন্দের দৃষ্টান্ত বা আদর্শ চিহ্নিত করতে গিয়ে ভুল করে। আর এখানেই ওহি বিবেক-বুদ্ধির সহায়তায় ছুটে আসে এবং দৃষ্টান্ত ও বিস্তারিত দিকগুলো স্পষ্ট করে। ফলে মানুষ সঠিক-পথটির বাস্তবতা ভালভাবে বুঝতে ও চিনতে পারে এবং বিচ্যুতি ও অধঃপতন থেকে মুক্তি পায়।

পবিত্র কুরআনের বক্তব্য অনুযায়ী ওহি হল এমন এক পথ বা পদ্ধতি যার মাধ্যমে মহান আল্লাহ মানুষকে জ্ঞান ও সচেতনতা দান করেন। (আনআম-৯১) ওহি মানুষের জন্য জ্ঞান ও তথ্যের অন্যতম খাঁটি এবং মূল উৎস। ওহির মাধ্যমে মানুষ জানতে পেরেছে অনেক বাস্তবতা এবং অজানা বিষয়ের রহস্য। ওহি না থাকলে মানুষের কাছে ঐতিহাসিক অনেক সত্য গোপন থেকে যেত। (আলে ইমরান-৪৪)

অন্য কথায় ওহি হচ্ছে পথের দিশারী আলো এবং ঐতিহাসিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও পরিবর্তনের উৎস।

ওহির মাধ্যমে নবীগণ অদৃশ্যের জ্ঞান জানতে পারেন। ওহিতে তাঁদেরকে উদ্দেশ করে বক্তব্য থাকে। তাঁদের দায়িত্ব হল যে ওহি নাজেল হয়েছে নিজের কাছে তা এমনভাবে প্রতিফলিত করা ঠিক যেভাবে স্বচ্ছ আয়না প্রতিফলন ঘটায়। অর্থাৎ এর ফলে যেন সত্য যথাযথভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে।

পবিত্র কুরআনের দৃষ্টিতে ওহি ছিল একটি চলমান ধারা। সব নবীর কাছে নাজিল হয়েছে ওহি। সুরা নিসার ১৬৩ নম্বর আয়াতে নবী-রাসূলদের আন্দোলনকে বর্ণনা করা হয়েছে এভাবে: আমরা তোমার কাছে ওহি পাঠিয়েছি ঠিক যেভাবে পাঠিয়েছিলাম নুহ ও পরবর্তী নবীদের এবং ইব্রাহিম,ইসমাইল,ইসহাক,ইয়াকুব ও বনি ইসরাইল বা ইয়াকুবের সন্তানদের কাছে এবং ঈসা,আইয়ুব,ইউনুস,হারুন ও সুলাইমানের কাছে ওহি পাঠিয়েছি;আর আমি দাউদকে দিয়েছি জাবুর ৷

অর্থাৎ বিশ্বনবী (সা.)'র পবিত্র হৃদয়ে যা নাজিল হয়েছে তা হল সেই একই ধরনের ওহি বা প্রত্যাদেশ যা নাজিল হয়েছিল পূর্ববর্তী নবীদের কাছে।

মহান আল্লাহ বিশ্বনবী (সা.)'র প্রতি তার বিরোধীদের অবমাননার মোকাবেলায় নিজ রাসুলের পক্ষে বলেছেন:

'কখনও তোমাদের বন্ধু (মুহাম্মাদ) পথচ্যুত হননি ও লক্ষ্যও হারিয়ে ফেলেননি এবং কখনও নিজের খেয়াল-খুশিমত কথা বলে না। যা তাঁর কাছে নাযিল করা হয় তা ওহি ছাড়া আর কিছুই নয়৷'(সুরা নজম,২-৪)

এই আয়াতের আলোকে এটা স্পষ্ট মহান আল্লাহ বিশ্বনবী (সা.)-কে সব ধরনের বিচ্যুতি থেকে মুক্ত বলে মনে করেন।

যখন মক্কায় প্রথমবারের মত কুরআনের আয়াত নাজিল হয়েছিল তখন মহানবী (সা.) বলেছিলেন,কুরআন আমার কথা নয়,বরং আল্লাহর বাণী এবং কোনো মানুষই কুরআনের মত কিছু রচনা করতে সক্ষম নয়। যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে পরীক্ষা করে দেখ এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছে সাহায্য নাও।

সর্বশেষ নবী হিসেবে মুহাম্মাদ (সা.)'র দায়িত্ব ছিল মানুষকে আসমানি কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়া। তাই তিনি কুরআনের আয়াতগুলো মুখস্থ বা হিফজ করার জন্য খুব দ্রুত পদক্ষেপ নিতেন। তিনি এ আশঙ্কা করতেন যে,কোনো একটি শব্দ বা বাক্য হয়তো তিনি ভুলে যেতে পারেন বা বদলে ফেলতে পারেন ভুলবশত। এ অবস্থায় মহান আল্লাহ তাঁকে আশ্বস্ত করেন ও প্রতিশ্রুতি দেন যে,তিনি কুরআনের আয়াতগুলো ভুলবেন না এবং আয়াতের পঠন বা তিলাওয়াত ও অর্থ উপলব্ধি তাঁর জন্য সহজ করে দেবেন।

পবিত্র কুরআন হল সর্বশেষ  ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব। নানা বাস্তবতা ও মুক্তির বাণীতে ভরপুর এই মহাগ্রন্থে কোনো ধরণের মিথ্যার অস্তিত্ব নেই। পবিত্র কুরআন সব ধরনের বিচ্যুতি বা ভুল-ত্রুটি থেকে মুক্ত।

অন্যান্য আসমানি কিতাবের তুলনায় কুরআনের বিশেষত্ব হল এটা যে,কেউ এ পর্যন্ত কুরআনের আয়াতের মধ্যে কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি এবং এ মহাগ্রন্থ শত-সহস্র বছর পরও বিচ্যুতি ও ক্ষতি থেকে থেকে মুক্ত থেকেছে।  প্রায় ১৪০০ বছর পর আজও পবিত্র কুরআনের প্রতিটি শব্দ ও বাক্য রয়েছে প্রথম দিনের মতই অক্ষত এবং অবিকৃত।

কুরআনের রয়েছে ১১৪টি অনুচ্ছেদ বা সুরা। এইসব সুরার কোনোটিতে রয়েছে বহু সংখ্যক আয়াত। আবার কোনো কোনো সুরা বেশ সংক্ষিপ্ত। এইসব সুরার শ্রেণী-বিন্যাস ও নাজিল হওয়ার সময়কাল নিয়ে মহানবী (সা.)'র যুগ থেকে এখন পর্যন্ত অনেক আলোচনা ও বিতর্ক হয়েছে। কোন সুরার প্রথমে কোন বাক্য ও শব্দ রয়েছে তা নিয়েও অনেক গবেষণা হয়েছে।

আয়াত শব্দটির অর্থ হল নিদর্শন বা চিহ্ন। আয়াতের প্রকৃত মর্ম হল আল্লাহর অস্তিত্ব ও তাঁর অতুলনীয় বৈশিষ্ট্যগুলোর প্রামাণ্য বর্ণনা। পবিত্র কুরআনে দিন ও রাত,চাঁদ,সূর্য,পৃথিবীর উদ্ভব,বৃষ্টিপাত,বায়ুপ্রবাহ,মেঘমালার চলাফেরা,মানুষের নানা ধরনের ভাষা,চেহারা ও বর্ণের মধ্যে পার্থক্য- ইত্যাদি বিশ্ব-স্রস্টার নিদর্শন হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে। এ ছাড়াও হযরত সালেহ (আ.)'র উট,মুসা (আ.)'র লাঠি,ঈসা (আ.)'র জন্ম,নুহ নবীর কিশতি ও আরো অনেক মোজেজা বা অলৌকিক ঘটনাকে আয়াত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

মোট কথা মানুষকে নানা বিষয় থেকে শিক্ষা নিতে উদ্বুদ্ধ করা এবং মহান আল্লাহর ক্ষমতা,প্রজ্ঞা ও অলৌকিক শক্তির নিদর্শন বোঝাতে আয়াত শব্দটি ব্যবহৃত হয়।

পবিত্র কুরআনে মানব জীবনের সব দিকের বিধান ও চূড়ান্ত সৌভাগ্যের দিক-নির্দেশনা রয়েছে। তাই এতে রয়েছে সামাজিক জীবন ও ইবাদতের বিধানসহ অনেক বিষয়ের আলোচনা। এ মহাগ্রন্থের অনেক সুরার নামই প্রকৃতির নানা বিষয় ও এমনকি প্রাণী বা জীবজন্তুর নামে করা হয়েছে। যেমন,সুরা কামার বা চাঁদ,সুরা নামল বা পিপড়া,সুরা ফালাক্ব বা প্রভাত,সুরা আনকাবুত বা মাকড়সা ইত্যাদি। কোনো কোনো সুরার নাম পরকাল,খোদা-পরিচিত বা ধর্মীয় বিষয় সম্পর্কিত। যেমন,সুরা আররাহমান,সুরা ওয়াক্বেহ বা কিয়ামত ইত্যাদি। আর কোনো কোনো সুরার নাম সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয় সম্পর্কিত। যেমন,সুরা আহজাব (দলগুলো),সুরা মুনাফিকুন ইত্যাদি। আবার কোনো কোনো সুরা ঐতিহাসিক ঘটনা বা কাহিনী সম্পর্কিত। যেমন,সুরা ইউসুফ,ইউনুস,বনি-ইসরাইল,মারিয়াম,আম্বিয়া ইত্যাদি।

(রেডিও তেহরান)

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

কারবালার বীর নারী হযরত যায়নাব (আ.)
কুরআন ওইমামত সম্পর্কে ইমাম জাফর ...
সূরা হুদ;(২০তম পর্ব)
শিয়া-সুন্নি বিরোধ কেন? শিয়ারা কি ...
ইমাম হুসাইন (আ.)-এর জীবনী-১৩তম পর্ব
হযরত আলীর বীরত্ব ও সাহসিকতা
‘১০ বছরের মধ্যে ব্রিটেন হবে ...
আল কোরআনের অলৌকিকতা (১ম পর্ব)
ইহুদী জাতির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
হুজুর (সা.)-এর সন্তান-সন্ততিগণ

 
user comment