0 বিভিন্ন মতামত 0.0 / 5
প্রবন্ধ ›
কোরআন ›
কোরআনের তাফসীর
প্রকাশিত হয়েছে
2017-04-13 19:27:03
সূরা আত তাওবা; আয়াত ১০৪-১০৭
সূরা তাওবার ১০৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
أَلَمْ يَعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ هُوَ يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهِ وَيَأْخُذُ الصَّدَقَاتِ وَأَنَّ اللَّهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
“তারা কি অবহিত নয় যে, আল্লাহ তার বান্দাদের তাওবা কবুল করেন আর তিনিই সদকা গ্রহণ করেন এবং তিনি তাওবা কবুলকারী পরম দয়ালু।” (৯:১০৪)
আগের আয়াতে যাকাত প্রদানের ব্যাপরে নির্দেশ দেয়ার পর এই আয়াতে বলা হয়েছে, যদিও বাহ্যত আল্লাহর নবী মুসলমানদের কাছ থেকে যাকাত গ্রহণ করে তা দরিদ্র মানুষের মধ্যে বণ্টন করেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই যাকাত মহান আল্লাহই গ্রহণ করে থাকেন। হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, যাকাত-সদকা দরিদ্র মানুষের হাতে পৌঁছার আগেই তা আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়। যারা আল্লাহ- পাকের এই আদেশ বা অন্য কোন বিধান পালন করতে ব্যর্থ হয় তাদের উচিত এজন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা বা তাওবা করা। কারণ অনুতাপ বা তাওবার মাধ্যমে আল্লাহপাকের কাছ থেকে ক্ষমা লাভ করা সম্ভব।
এই আয়াতে দু’টি বিষয় লক্ষ্য করার মত-
এক. যাকাত এমন ধরনের দান বা সাহায্য যা স্বয়ং আল্লাহতায়ালা গ্রহণ করে থাকেন। কাজেই যাকাতের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
দুই. তাওবা শুধু অনুতপ্ত হওয়াকে বোঝায় না। তাওবার ক্ষেত্রে অনুতাপের পাশাপাশি বাস্তবেও নিজের মধ্যে সংশোধন আসতে হবে।
এই সূরার ১০৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
وَقُلِ اعْمَلُوا فَسَيَرَى اللَّهُ عَمَلَكُمْ وَرَسُولُهُ وَالْمُؤْمِنُونَ وَسَتُرَدُّونَ إِلَى عَالِمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَيُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ
“(হে রাসূল! আপনি) বলে দিন, (যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই) কাজ করতে থাক। আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও ঈমানদারগণ অচিরেই তোমাদের কর্ম লক্ষ্য করবেন। আর অচিরেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে এমন সত্ত্বার দিকে যিনি সকল অদৃশ্য ও প্রকাশ্য বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত। তিনি তোমাদেরকে সকল কৃতকর্ম সম্পর্কে জানিয়ে দেবেন।” (৯:১০৫)
এই আয়াতে মূলত মুনাফিক এবং আল্লাহর বিধান অমান্যকারীদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, এমন ভাবা উচিত নয় যে, তাদের কাজ কর্ম আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং ঈমানদারদের অজানা থেকে যাবে। বরং অচিরেই তাদের কৃতকর্ম সকলের সামনে ফাঁস হয়ে যাবে। এছাড়া গোপন ও প্রকাশ্য বিষয়ে অবগত মহান আল্লাহও কেয়ামতের দিন তাদের গোপন কাজগুলো তুলে ধরবেন। বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহর রাসূল তাঁর জীবদ্দশায় যেমন মানুষের কাজ-কর্ম সম্পর্কে অবহিত ছিলেন, তেমনি এখনও তাঁর উম্মতের কাজ কর্মের খবর রাখেন, সবকিছুর তত্ত্বাবধান করেন। অনেক অলি আউলিয়াও এই উচ্চ অবস্থানে উপনীত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারেন। এ অবস্থায় তারা মৃত্যুর পরও আল্লাহর ইচ্ছায় মানুষের ভালো মন্দ সম্পর্কে অবহিত হয়ে থাকেন।
হ্যাঁ, আল্লাহতায়ালা আমাদের সকল ব্যাপারে জানেন কারণ মানুষ গোপনে প্রকাশ্যে যাই করুক কোনো কিছুই তার কাছে অস্পষ্ট থাকে না। কাজেই পাপ-পঙ্কিলতার পথ পরিহার করে সত-কর্ম করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
এই সূরার ১০৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
وَآَخَرُونَ مُرْجَوْنَ لِأَمْرِ اللَّهِ إِمَّا يُعَذِّبُهُمْ وَإِمَّا يَتُوبُ عَلَيْهِمْ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
“আরো কিছু লোক আছে যাদের বিষয়টি আল্লাহর নির্দেশের ওপর নির্ভরশীল। হয় তিনি তাদের শাস্তি প্রদান করবেন অথবা তাদের তাওবা কবুল করবেন। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী প্রজ্ঞাময়।” (৯:১০৬)
এই আয়াতে বলা হচ্ছে, যারা তাওবা করে সত্যের দিকে ফিরে এসেছে, তাদেরকে ছাড়া আরেকটি দল রয়েছে যারা মুনাফিকদের সাথেও নেই আবার অতীত কর্মের জন্য তাওবাও করেনি, তাদের পরিণতি কী হবে সেটি শুধু আল্লাহই জানেন! তিনি তাদেরকে শাস্তিও দিতে পারেন আবার তাদেরকে ক্ষমাও করে দিতে পারেন।
কে শাস্তির উপযুক্ত এবং ক্ষমা লাভের যোগ্য তা কেবল আল্লাহই ভালো জানেন, কারণ তিনি মানুষের মনের কথাও জানেন।
সূরা তাওবার ১০৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-
وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مَسْجِدًا ضِرَارًا وَكُفْرًا وَتَفْرِيقًا بَيْنَ الْمُؤْمِنِينَ وَإِرْصَادًا لِمَنْ حَارَبَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ مِنْ قَبْلُ وَلَيَحْلِفُنَّ إِنْ أَرَدْنَا إِلَّا الْحُسْنَى وَاللَّهُ يَشْهَدُ إِنَّهُمْ لَكَاذِبُونَ
“যারা ইসলামের ক্ষতি সাধন, কুফরী প্রতিষ্ঠা, ঈমানদারদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের এক শক্রর জন্য গোপন আস্তানা বানাবার উদ্দেশ্য মসজিদ তৈরি করেছিল এবং সব সময় শপথ করে বলতো ভালো কাজ ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্য আমাদের নেই। কিন্তু আল্লাহ সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, তারা মিথ্যা বলছে।” (৯:১০৭)
এই আয়াতে মদীনার মসজিদে যারবারের ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। ঘটনাটি হচ্ছে, মুনাফিকরা অসুস্থ ও অক্ষম মানুষকে সাহায্য করার অজুহাতে মসজিদে কুবার সামনে আরেকটি মসজিদ তৈরি করেছিল। আসলে তারা মসজিদের নামে নিজেদের জন্য একটি আস্তানা তৈরি করতে চেয়েছিল। তাবুক যুদ্ধের প্রাক্কালে তারা আল্লাহর রাসূলকে অনুরোধ করেছিল মসজিদটির উদ্বোধন করতে এবং সেখানে নামাজ পড়তে কিন্তু আল্লাহর পক্ষ থেকে এ সম্পর্কে আয়াত নাযিল হয়ে এবং নবী করিম (সা.) কে ওই মসজিদ তৈরির আসল উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত করা হয়। ফলে নবীজি মসজিটটি ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দেন এবং ওই স্থানটিকে আবর্জনা ফেলার স্থানে পরিণত করেন।
এই আয়াত থেকে আমরা বুঝে নিতে পারি যে, মুনাফিকরা ঈমানদার মুসলমানদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতি এবং মসজিদকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। এছাড়া মুসলিম সমাজে মতপার্থক্য সৃষ্টি করা এবং তাদের মধ্যকার ঐক্য নষ্ট করার চেষ্টা করা কুফরীর সমতুল্য। কাজেই কোনো মসজিদও যদি বিভেদ ও অনৈক্যের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তাহলে তা মসজিদে যারবারের মত ভেঙ্গে দেয়া উচিত।