আবনা ডেস্ক: ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী প্রথম রোজার দিনে আয়োজিত কোরান তেলাওয়াতের এক মাহফিলে বলেছেন, "মানবজীবন সম্পর্কে বহু প্রশ্নের ভুল ও বিকৃত ব্যাখ্যার কারণেই বর্তমান মানব সমাজ চরম দুঃখদুর্দশা, বিপথগামিতা ও দুর্ভোগের সম্মুখীন।"
তিনি বলেন, "আল্লাহ তাআলা পারস্পরিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা, সহযোগিতা ও ভালোবাসার পরিবেশ সৃষ্টির জন্যই মানুষকে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। কিন্তু আজ আমরা বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ, রক্তপাত, নিরাপত্তাহীনতা, আতঙ্ক ও বিপথগামিতা দেখতে পাচ্ছি এবং এটি একটি ভয়াবহ বিপর্যয়। তিনি এ বিপর্যয় থেকে মানব সমাজকে রক্ষার জন্য কুরআনের দিকনির্দেশনা অনুসরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।" ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আরো বলেছেন, "দুঃখজনকভাবে অন্যান্য সমাজ ও জনগোষ্ঠীর মতো সারা বিশ্বের মুসলিম সমাজও কঠিন বিপর্যয় ও সংকটের সম্মুখীন এবং বেশকিছু মুসলিম দেশ সৌদি সরকারের মতো অযোগ্য লোকদের হাতে রয়েছে।"
বিশ্লেষকরা বলছেন, পবিত্র মক্কা ও মদিনার রক্ষকের দাবিদার সৌদি আরব গত কয়েক বছর ধরে ইসলাম ও কুরআন হাদিসের শিক্ষার বিপরীতে তৎপরতা চালাচ্ছে এবং এর ফলে মুসলিম সমাজ ভয়াবহ সংকটের মুখে পতিত হয়েছে। সৌদি আরব একদিকে ইসলামের শ্লোগান দিয়ে মুসলমানদের রক্ষার কথা বলছে অন্যদিকে, মুসলমানদের শত্রুদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।
সৌদি আরব মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে একের পর এক বিশ্বাসঘাতকতা করে যাচ্ছে। তারা মুসলিম উম্মাহর সংকট সমাধানের চেষ্টা না করে উল্টো ইরাক ও সিরিয়ার মতো দেশগুলোতে তৎপর সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা করছে। সৌদি আরব কেবল নিজের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ পূরণের জন্যই গত দুই বছর ধরে ইয়েমেনে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। বাহরাইনেও চলমান হত্যাকাণ্ড ও সরকার বিরোধী শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলন দমনে আলে খলিফা সরকারকে সহযোগিতা করছে রিয়াদ। খোদ সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলেও নিরাপত্তা বাহিনী প্রতিবাদী জনতার ওপর গত ২০ দিন ধরে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি আরব নিজ দেশের ভেতরে ও বাইরের মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যে বর্বর আচরণ করছে তা মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে কাফের ও শত্রুদের নৃশংস আচরণের সমতুল্য। সৌদি আরবের সহযোগিতায় বহু মুসলিম দেশের সরকার নিজ দেশের জনগণের অধিকার পদদলিত ও জুলুম নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে সৌদি সমর্থিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোও ধর্মের নামে সাধারণ মানুষ হত্যা করছে। পবিত্র কুরআনের শিক্ষা থেকে দূরে থাকার কারণেই গোটা মুসলিম উম্মাহ আজ ভয়াবহ দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে।
ইসলাম ও মুসলমানদের শত্রু কাফেরদের সঙ্গে সৌদি শাসকরা বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছে অথচ তারা কুরআনে বিশ্বাস করে বলে দাবি করে এবং লাখ লাখ কপি কুরআন ছাপে। কিন্তু বাস্তবে কুরআনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সৌদি শাসকরা নাস্তিকের মতো কাজ করছে। ইসলামী শিক্ষায় মুসলিম ঐক্যের ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়েছে অথচ সৌদি আরব মুসলিম দেশগুলোকে একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে বিভেদ সৃষ্টি করছে।
দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা গড়ে তুলে সৌদি আরব মুসলিম উম্মাহকে আরো ক্ষতির মুখে ফেলে দিয়েছে। সৌদি সরকার একদিকে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে কথা বলছে অন্যদিকে তেলআবিবের সঙ্গে সরাসরি বিমান চলাচল শুরু করেছে।
মোটকথা, সৌদি সরকারের কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই মুসলিম বিশ্বের স্বার্থের অনুকূলে নয় এবং বোকা সৌদি আরবকে ব্যবহার করে আমেরিকা ও ইসরাইল মুসলিম উম্মার ঐক্য বিনষ্ট করার ও তাদের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের চেষ্টা চালাচ্ছে। এরই অংশ হিসাবে আমেরিকা সৌদি আরবের সঙ্গে হাজার হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তি করেছে। এ ব্যাপারে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, "কোনো কোনো দেশের ধারণা শত্রুদের হাতে বিপুল অর্থ তুলে দিয়ে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারবে। তিনি বলেন, সৌদি আরবের কাছ থেকে আমেরিকা ব্যাপক সুবিধা নিলেও তাদের সম্পর্কে কোনো আন্তরিকতা নেই এবং খোদ মার্কিনীরাই সৌদি আরবকে দুধের গাভী মনে করে যতটা সম্ভব দুধ দোহন করার কথা বলেছেন এবং শেষ পর্যন্ত জবাই করবেন।"#