আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): মসুলে চূড়ান্ত বিজয়ের ঘোষণা আসার পর গতরাতে (মঙ্গলবার ১১ জুলাই) বক্তব্য রেখেছেন হিজবুল্লাহ বাহিনী প্রধান সৈয়দ হাসান নাসরুল্লাহ।
নাসরুল্লাহ তার বক্তব্যের শুরুতে মসুলে চূড়ান্ত বিজয় এবং দায়েশের হাত থেকে এ অঞ্চলকে মুক্ত করা উপলক্ষে ইরাকের জনগণ ও সরকারের প্রতি অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, যা কিছু ইরাক ও মসুলে ঘটেছে তা শুধু ইরাক এবং এদেশের জনগণের ভবিষ্যতের সাথে সম্পৃক্ত নয়, বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্যের জনগণের ভবিষ্যতও এর সাথে জড়িত।
লেবাননের হিজবুল্লাহ বাহিনী প্রধান বলেন: ইরাকের প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত মসুলে চূড়ান্ত বিজয়, একটি মহান বিজয়। এর গুরুত্বকে কোনভাবেই খাটো করে দেখার অবকাশ নেই।
সৈয়দ হাসান নাসরুল্লাহ বলেন: দায়েশ (আইএসআইএস)-এর নৃশংসতা ও অপরাধকর্মের ব্যাপকতা দেখে নিরাশ হয়েছিলেন ইরাকিরা। কিন্তু বিশিষ্ট মারজায়ে তাকলিদ আয়াতুল্লাহ সিস্তানি দায়েশের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা ওয়াজিব এবং মহান আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার যে ফতওয়া দিয়েছিলেন তা ইরাকি জাতির বিজয়ের কারণ হয়েছে। প্রকৃত অর্থে আয়াতুল্লাহ সিস্তানি’র ফতওয়া ছিল ইরাকি বাহিনী’র বিজয়ের সূচনা। এরপর তারা একের পর এক বিজয় অর্জন করেছে।
তিনি বলেন: মারজায়ে তাকলিদের ফতওয়া ইরাকি সৈন্যদের মনোবল বৃদ্ধি করে দেয়। আর এ কারণেই হাজার হাজার ইরাকি দায়েশ বিরোধী যুদ্ধে যেতে নিজেদের প্রস্তুতির কথা ঘোষণা করে। যা পরবর্তীতে হাশাদাশ শাবি তথা পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্স নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে।
নাসরুল্লাহ বলেন: ইরাকিরা আরবি, ইসলামি অথবা মার্কিন রেজুল্যুশনের অপেক্ষায় না থেকে প্রতিরোধের রাস্তা বেছে নেন। ইরাকের সুন্নি নেতারাও দায়েশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিশেষ অবস্থান গ্রহণ করেন। কেউ কেউ ইরাকের অভ্যন্তরিন এ সংঘর্ষকে শিয়া ও সুন্নি সংঘাত বলে চালিয়ে দেওয়ারও চেষ্টা করেছেন এ সময়।
নাসরুল্লাহ সংযোজন: ইরাক সরকারের পাশে ইরানের অবস্থান ছিল দৃঢ়। রেভুল্যুশনারী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) সৈন্যরা বাগদাদে উপস্থিত হয়ে ইরাকিদেরকে সাহায্যের জন্য নিজেদের প্রস্তুতির কথা ঘোষণা করে।
তিনি বলেন: মসুলে বিজয়ের বিশেষ কিছু কারণ রয়েছে, ইরাকি জনগণের উচিত সেগুলোকে হাতছাড়া না করা। এর মূলে রয়েছে ইরাকি জনগণের ঐক্য, মারজায়ে তাকলিদের আহবানে যথাযথ সাড়া ও আত্মত্যাগ। আমি মহান এ বিজয়ে আয়াতুল্লাহ আল-উজমা সিস্তানিসহ নাজাফে আশরাফের সকল মারজায়ে তাকলিদ ও যে মারজাগণ ইরাকি বাহিনীর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন তাদের প্রতি এবং ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-এবাদিসহ সকল রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃবৃন্দের প্রতি অভিনন্দন জানাই। দায়েশের হাত থেকে মসুল মুক্ত করা একটি বৃহত অর্জন; কারণ মসুল ছিল দায়েশের স্বঘোষিত খেলাফতের রাজধানী। ইরাকের এ বিজয় বিশ্ব নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার ভূমিকা স্বরূপ।
হিজবুল্লাহ প্রধান বলেন: যদি ইরাকি জনগণ নিরাশ হয় এবং দায়েশ তাদের দেশের উপর পূনরায় নিয়ন্ত্রণ লাভ করে, তবে ইরাকি এবং মধ্যপ্রাচ্যের জনগণ ও সভ্যতার –এমনকি আবু বকর আল-বাগদাদী কর্তৃক দায়েশের খেলাফত ঘোষণার পর উপসাগরীয় অঞ্চলের যে সকল দেশ সন্ত্রস্ত অবস্থায় দিনাতিপাত করছে তাদের- পরিণতি কি হবে? কোন অবস্থাতেই দায়েশকে ইরাকে ফিরে আসার অথবা তাদেরকে সহযোগিতা করার সুযোগ দেয়া যাবে না; বিশেষ করে বর্তমানে যখন দায়েশকে নির্মূলের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি বলেন: ইরাকের শহরগুলোর নিরাপত্তা সন্ত্রাসী ও বর্বর এ দলকে নির্মূল করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হবে। আর এ বিষয়টিকে অন্যান্য বিষয়ের উপর প্রাধান্য দেয়া অত্যন্ত জরুরি; কেননা কেউ কেউ ইরাকিদেরকে এ পথ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে পারে।
সিরিয়াতেও তুমুল যুদ্ধ চলছে। বর্তমানে ইরাক, সিরিয়া, লেবাননসহ মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ ঐতিহাসিক সুযোগের মুখোমুখি। আর ইরাক ও সিরিয়ার মানুষের আত্মত্যাগ এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকদের প্রচেষ্টা এ সুযোগের সৃষ্টি করেছে। এ আত্মত্যাগের কারণেই এ ধরনের বিজয় অর্জিত হয়।
হিজবুল্লাহ্ প্রধান লেবাননে অবস্থানরত সিরিয় শরণার্থীদের কথা উল্লেখ করে বলেন: সিরিয় শরণার্থীরা সমগ্র লেবাননে অবস্থান করছে। তাদেরকে সিরিয়ায় ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য প্রয়োজনীয় সমন্বয় সৃষ্টির জন্য আমি লেবানন ও সিরিয়া সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই সিরিয়ার দূতাবাস রয়েছে। জাতিসংঘেও তাদের প্রতিনিধি রয়েছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সিরিয়ার সাথে সংলাপে বসছে। অতএব, শরণার্থীদের বিষয়ে আলোচনা ও সংলাপের জন্য সিরিয়ার সরকার লেবাননের পক্ষ থেকে অনুমোদন ও বৈধতার প্রয়োজন রাখে না।
সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় লেবাননের নিরাপত্তা ও সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে লেবাননের হিজবুল্লাহ বাহিনী প্রধান সৈয়দ হাসান নাসরুল্লাহ বলেন: সন্ত্রাসীদের একটি অংশ লেবাননের পূর্বাঞ্চলীয় উরসালে লুকিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যে সন্ত্রাসীরা উরসালে অবস্থান নিয়েছে তারা লেবাননের গ্রামবাসীদের জন্য হুমকি। এ হুমকি সমূলে উৎপাটনের সময় এসে গেছে।#