বাঙ্গালী
Sunday 24th of November 2024
0
نفر 0

ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে পবিত্র রজব মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত

ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে পবিত্র রজব মাসের গুরুত্ব ও ফজিলত

রজব মাস চন্দ্র মাসের সপ্তম মাস। আমাদের জানা উচিত যে, রজব, শাবান ও রমজান মাস অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মাস এবং এ মাসগুলির ফজিলত সম্পর্কে অনেক বর্ণনা পাওয়া যায়। স্বয়ং রাসুল (সাঃ) থেকে রেওয়াত বর্ণিত যে, “রজব মাস হলো আল্লাহর বড় মাহত্বপূর্ণ মাস এবং অপরাপর কোন মাসই এ মাসের ফজিলত স্পর্শ করতে পারে না। কাফেরদের সাথে যুদ্ধ এ মাসে হারাম।”তিনি আরো বলেন, “রজব মাস আল্লাহর, শাবান মাস আমার এবং রমজান মাস হলো আমার উম্মতের মাস।

যে ব্যক্তি রজব মাসে একদিন রোজা রাখবে সে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করবে এবং আল্লাহর গজব থেকে দূরে থাকবে এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ থেকে একটি দরজা তার প্রতি বন্ধ করে দেওয়া হবে।”হযরত ইমাম মুসা কাজিম (আঃ) থেকে বর্ণিত যে, “যে ব্যক্তি রজব মাসে একদিন রোজা পালন করবে জাহান্নামের আগুন তার কাছ থেকে এক বছরের পথের সমান দূরে সরে যায় আর যে ব্যক্তি তিন দিন রোজা রাখে তার উপর বেহেশত ওয়াজিব হয়ে যায়। পুনশ্চঃ তিনি এরশাদ করেন, রজব হলো বেহেশতের একটি স্রোতস্বিনী জলধারার নাম যা দুধের চেয়ে অধিক শুভ্র এবং মধুর চেয়ে মিষ্টি। যে ব্যক্তি রজব মাসে একদিন রোজা রাখবে অবশ্যই সে সেই স্রোতস্বিনীর পানি পান করবে।”

ইমাম জাফর সাদেক (আঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুল (সাঃ) এরশাদ করেন, “রজব মাস উম্মতের জন্য ক্ষমার মাস।”সুতরাং এ মাসে বেশী বেশী গুণাহ থেকে ক্ষমা চাও কারণ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অধিক ক্ষমাশীল ও মেহেরবান। রজব মাসকে বরকতের মাসও বলা হয়। কেননা, আমার উম্মতের উপর রহমত এ মাসেই অধিক বর্ষিত হয়।”রাসুল (সাঃ) এর রেওয়াতে বর্ণিত যে, “যে ব্যক্তি রজব মাসে ১০০ বার ‘আসতাগফেরুল্লাহি লা ইলাহা ইল্লা ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু ওয়া আতুবো ইলাইহ্’অতঃপর সদ্বকা দান করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার উপর রহমত বর্ষণ করবেন এবং ক্ষমা প্রদর্শন করবেন। আর যে ব্যক্তি উক্ত দোয়াটি ৪০০ বার পাঠ করবে আল্লাহ তাকে একশত শহীদের পুরস্কার দান করবেন। রাসুল (সাঃ) থেকে বর্ণিত যে, যে ব্যক্তি রজব মাসে এক হাজার বার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’পাঠ করবে আল্লাহতায়ালা তার নামের পাশে হাজারটি নেকী লিখবেন এবং বেহেশতে তার জন্য একশত শহর নির্মাণ করে দিবেন। সৈয়দ ইবনে তাউস রেওয়াত করেন, “যে ব্যক্তি রজব মাসে একদিন রোজা রাখে এবং চার রাকাআত নামাজ আদায় করে যার প্রথম রাকাআতে সূরা ফাতেহার পর ১০০ বার আয়াতুল কুরসী এবং দ্বিতীয় রাকাআতে সূরা ফাতেহার পর ২০০ বার সূরা তাওহীদ পাঠ করে সেই ব্যক্তি ততক্ষণ মৃত্যুবরণ করবে না যতক্ষণ পর্যন্ত সে বেহেশতে তার ঘর নিজের চোখে অবলোকন না করে নেয়।”এ হাদীসটিও সৈয়দ তাউস মহানবী (সাঃ) থেকে রেওয়াত করেছেন যে, “যে ব্যক্তি জুমআর দিন জোহর ও আসরের নামাজের মধ্যবর্তী সময় ৪ রাকআত নামাজ পড়ে, যার নিয়ম হলো প্রতি রাকাআতে সূরা ফাতেহার পর আয়াতুল কুরসী সাতবার এবং সূরা তাওহীদ পাঁচবার পাঠ করে অতঃপর ‘আসতাগফেরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুয়া ওয়া আসআলুহুত তাওবাহ’আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যেদিন থেকে সে নামাজ পড়ছে সেদিন থেকে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত প্রতিটি দিন তার জন্য হাজার নেকী লিখে দিবেন এবং প্রতিটি আয়াতের বিনিময়ে যা সে পাঠ করেছে বেহেশতে লাল ইয়াকুতের শহর তাকে দান করবেন এবং প্রত্যেক হরফের পরিবর্তে শ্বেত শুভ্র দরজা বিশিষ্ট প্রাসাদ দান করবেন এবং তার বিবাহ হুরের সাথে সম্পাদন করবেন। তার প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন এবং তার নাম ইবাদতকারীদের মধ্যে লিপিবদ্ধ করবেন এবং তার সমাপ্তি সৌভাগ্য ও ক্ষমার দ্বারা হবে। এই মাসের বৃহস্পতিবার, জুমআ এবং শনিবার এই তিনদিন রোজা রাখা উচিত কেননা রেওয়াতে পাওয়া যায় যে, যে ব্যক্তি তিনটি মাস হতে যা হারাম মাস হিসেবে গণ্য ঐ দিনগুলিতে রোজা রাখে তাহলে আল্লাহ তাকে ৯০০ বছরের ইবাদতের সওয়াব দান করবেন। যে ব্যক্তি রজব মাসে জুমআর দিন ১০০ বার সূরা তাওহীদ পাঠ করবে তার জন্য কেয়ামতের দিন একটি বিশেষ নূর সৃষ্টি হবে যে তাকে বেহেশতের দিকে টেনে নিয়ে যাবে।

ইতিহাসের পাতায় পবিত্র রজব মাস

রজব মাস পৃথিবীর ইতিহাসে অতি গুরুত্বপুর্ণ মাস। তাৎপর্যমন্ডিত ঐতিহাসিক মাস। আরবী সপ্তম মাস। এ মাসের গুরুত্ব ফজিলত আজ মুসলিম বিশ্বে মুসলিম জনগণের কাছে হারানো অতীত। মুসলিম জাতি রজবের ঐতিহাসিক ঘটনা সম্পর্কে বেখেয়াল হয়ে পড়েছে। ইতিহাস বিচ্যুতির কারনে আজ ইসলামী খেলাফত হারিয়ে গেছে, হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত মুসলমান ইসলামের ইতিহাস থেকে।

১লা রজব : ইমাম মুহাম্মদ বনি আলী আল বাকির (আ.)-এর জন্ম দিন।
২রা রজব: ইমাম আলী বিন মুহাম্মদ আল হাদী (আ.)-এর জন্ম দিন।
৩রা রজব : ইমাম আলী বিন মুহাম্মদ আল হাদী (আ.)-এর শাহাদত দিবস।
৪র্থ রজব : লাইলাতুল রাগাইব বা কামনার ( আশার্পূণ করার রাত, অর্থাৎ বিশেষ নামায পড়ে মনের অব্যক্ত বাসনাগুলো আল্লাহর কাছে চাওয়ার রাত )

 পবিত্র রজব মাসের প্রথম বৃহস্পতিবারে সিয়াম পালন করার জন্য অধিক তাগিদ করা হয়েছে এবং এই রাতে মাগরিব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে সর্বমোট ১২ রাকাত নামায আদায় করার জন্য বলা হয়েছে।

নামাযের নিয়মঃ
দুই দুই রাকাত করে সর্বমোট ১২ রাকাত নামায আদায় করতে হবে যার প্রত্যেক রাকাতে একবার সুরা ফাতেহার পর ৩ বার সুরা ক্বদর এবং ১২ বার সুরা ইখলাস পাঠ করতে হবে।
৭ই রজব: আব্বাসিয় খলিফা মামুন ইমাম রেজা (আ.)-কে তার উত্তরসূরী হওয়া আবদেন করে পত্র পাঠিয়েছিলেন।
১০ম রজব : ইমাম মুহাম্মদ বিন আলী আল যাওয়াদ (আ.)-এর জন্ম দিন।
১০ম রজব: হযরত আলী আসগারের জন্ম দিন ।
১২ই রজব :
১. আমিরুল মুমেনীন ইমাম আলী (আ.) কুফাকে ইসলামী হুকুমতের রাজধানী হিসেবে মননীত করে কুফাতে প্রবেশ করে।
২.আর এদিনেই মানব ইতিহাসের ঘৃণ্যব্যক্তি ইয়াজিদের পিতা মুয়াবিয়া মৃত্যুরবন করে।
১৩ ই রজব : পবিত্র ক্বাবার সন্তান এবং আল্লাহর রাসুলের (স.) পরবর্তি প্রতিনিধি হযরত ইমাম আলী ইবনে আবিতালিবের (আ.)জন্ম দিন।
১৫ই রজব :
১. ইতিহাসের নির্যাতিতা কারবালা আর্দশের পতাকাবাহী বীর নারী হযরত যায়নাবের ওফাত দিবস।
২. আজকের এই দিনে মুসলমানদের কেবলা পরির্বতন হয় ।
৩. এদিনেই দীর্ঘ তিন বছর শা’বে আবিতালিবে বন্দী ও নির্বাসিত জীবন অবসান ঘটে, মুসলমানরা মুক্ত হন।
১৬ই রজব: হযরত ফাতেমা বিনতে আসাদ ক্বাবা ঘরের মধ্য থেকে বের হয়ে আসনে।
১৭ই রজব : ইমাম রেজা (আ.) –কে বিষপানে বাধ্যকারী অভিশপ্ত আব্বাসিয় খলিফা মামুনের মৃত্যু দিবস ।
১৮ই রজব: মহানবীর (স.) সন্তান ইব্রাহীমের ওফাত দিবস।
১৯শে রজব: অভিশপ্ত আব্বাসীয় খলিফা মু’তামিদের মৃত্যু দিবস।
২০শে রজব : প্রথম খলিফা আবুবকর খাইবারের যুদ্ধ থেকে পশ্চাদে ফিরে আসেন ।
২৩শে রজব :
১. জারাহ বিন সানান আসাদী আজকের এদিনে মাদায়ানে ইমাম হাসান (আ.) উরুতে বিষক্তখঞ্জর দিয়ে আঘাত করেন।
২. ইমাম মুসা বিন জাফর (আ.)-কে বিষপ্রয়োগ আক্রান্ত করা হয়।
৩. দ্বিতীয় খলিফা ওমর বিন খাত্তাব খাইবারের যুদ্ধ থেকে পশ্চাদে ফিরে আসেন।
২৪শে রজব :
১. শেরে খোদা আমিরুল মোমনেীন আলী (আ.)-এর হাতে খাইবারের দূর্গ মুসলমানরা জয় করেন।
২. খাইবার বিজয়ের দিনে ইমাম আলী (আ.)এর ভাই জাফর-এ তাইয়ার হাবাশিয়া (ইথোপিয়া)প্রত্যাবর্তন করেন ।
২৫শে রজব: হযরত মুসা বিন জাফর আল কাজিম (আ.)-এর শাহাদত দিবস।
২৬শে রজব: আমিরুল মুমেনিন (আ.)-এর মহান পিতা আবিতালিবের ওফাত দিবস।
২৭শে রজব : মহানবী (স.)-এর নবুয়াত প্রাপ্তি দিবস।
২৮শে রজব : ঐতিহাসিক কারবালা ঘটনার প্রথম যাত্রা ইমাম হোসেন (আ.) মদীনা ত্যাগ করে মক্কার উদ্দ্যেশে রওনা দেন।

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

সালাতে তারাবী না তাহাজ্জুদ ?
দাওয়াতে দ্বীনের গুরুত্ব ও ...
‘ইমাম হুসাইন (আ.)’র বিপ্লবই ...
ফিলিস্তিনি বালিকা
পরকালের জন্য প্রস্তুতি এবং ...
ইমাম হাসান (আ.) মুয়াবিয়াকে কখনও ...
নেয়ামতের হাত ছড়া হওয়ার কারন
হযরত মুসা (আ.)'র মু'জিজার কাছে ...
মহানবী (স.) হতে বর্ণিত ৪০টি হাদীস (২)
গাদিরে খুম

 
user comment