সূরা হুদ; আয়াত ৯৬-১০১
সূরা হুদের ৯৬ ও ৯৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مُوسَى بِآَيَاتِنَا وَسُلْطَانٍ مُبِينٍ (96) إِلَى فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهِ فَاتَّبَعُوا أَمْرَ فِرْعَوْنَ وَمَا أَمْرُ فِرْعَوْنَ بِرَشِيدٍ
"আমি মুসাকে প্রেরণ করি আমার নিদর্শনাদি ও সুস্পষ্ট সনদসহ (১১:৯৬)
“ফেরাউন ও তার পরিষদবর্গের কাছে, তবুও তারা ফেরাউনের নির্দেশ মত চলতে থাকে অথচ ফেরাউনের কোনো কথা ন্যায় সঙ্গত ছিল না।" (১১:৯৭)
সামুদ জাতির পরিণতির বর্ণনার পর এই আয়াত থেকে হযরত মুসা (আ.) ও ফেরাউনের ঘটনা কিছুটা আলোকপাত করা হয়েছে। এখানে লক্ষণীয় একটি বিষয় হচ্ছে, এ পর্যন্ত যে কয়জন নবী বা রাসুলের ব্যাপারে বলা হয়েছে তাদের সবাই গোটা জাতিকে সরাসরি সৎ পথের আহ্বান জানিয়েছেন, কিন্তু হযরত মুসা (আ.) হলেন এর ব্যতিক্রম। তিনি প্রথমে ফেরাউন ও তার পরিষদবর্গকে সৎ পথে আসার আহ্বান জানান। এরপর সাধারণ মানুষকে হেদায়েতের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। বনি ইসরাইল জাতি তখন ফেরাউনের অধিনস্ত ছিল, তাই ফেরাউনকে পাশ কাটিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে সত্যের বাণী পৌঁছানো সহজ ছিল না। ফলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন প্রথমে ফেরাউন ও তার সহযোগী পরিষদবর্গকে দাওয়াত দেয়ার জন্য হযরত মুসা (আ.)কে নির্দেশ দেন। কিন্তু ফেরাউন ও তার পরিষদবর্গ হযরত মুসা (আ.)এর আহ্বান সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছিল। হযরত মুসা (আ.) বনি ইসরাইল জাতিকে ফেরাউনের দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছিলেন, এটাই ছিল সকল পয়গম্বরদের দায়িত্ব।
এ সূরার ৯৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
يَقْدُمُ قَوْمَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَأَوْرَدَهُمُ النَّارَ وَبِئْسَ الْوِرْدُ الْمَوْرُودُ
"ফেরাউন কিয়ামতের দিনে তার সম্প্রদায়ের অগ্রভাগে থাকবে এবং সে তাদের নিয়ে নরকে প্রবেশ করবে, যেখানে তারা প্রবেশ করবে তা কত নিকৃষ্ট স্থান।" (১১:৯৮)
ফেরাউন বা তাগুতের অনুসরণ করে ইহকালেই শান্তি ও কল্যাণ নিশ্চিত করা যায় না, পরকালের কঠিন শাস্তি তো থেকেই যাচ্ছে। যারা যুগের ফেরাউনের অনুসরণ করবে তারা শেষ বিচার বা কিয়ামতের দিন নিজ নিজ নেতার সাথে নরকে প্রবেশ করবে। কিয়ামত হচ্ছে এই দুনিয়ারই প্রতিবিম্ব। এই জগতে যে যেমন কাজ করবে কিয়ামতের দিন হুবহু তাই প্রতিফলিত হবে। ইহকালে যারা তাগুতকে অনুসরণ করবে, পরকালে তাগুতের সাথে তাদের উত্থান ঘটবে।
এ সূরার ৯৯ ও ১০০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
وَأُتْبِعُوا فِي هَذِهِ لَعْنَةً وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ بِئْسَ الرِّفْدُ الْمَرْفُودُ (99) ذَلِكَ مِنْ أَنْبَاءِ الْقُرَى نَقُصُّهُ عَلَيْكَ مِنْهَا قَائِمٌ وَحَصِيدٌ
"এই পৃথিবীতে যাদেরকে অভিশপ্ত করা হয়েছিল এবং কিয়ামতের দিনেও তারা অভিশাপগ্রস্ত হবে। তারা যে পুরস্কার লাভ করবে তা কত নিকৃষ্ট।” (১১:৯৯)
“(হে পয়গম্বর!) এই জনপদসমূহের কিছু সংবাদ যা আমি আপনার নিকট বর্ণনা করছি, ওইগুলোর মধ্যে কিছু এখনও বিদ্যমান এবং কিছু নির্মূল হয়ে গেছে।" (১১:১০০)
ফেরাউন ও তার অনুসারীরা নীল নদে নিমজ্জিত হয়ে ধ্বংস হয়েছিল। ইহকালে এটা ছিল তাদের ঔদ্ধত্য ও নাফরমানীর শাস্তি। এ ছাড়াও পরকালে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা। পবিত্র কুরআন কোনো ইতিহাস বা উপন্যাস গ্রন্থ নয়। মানুষ যাতে অতীত ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে সেজন্যই কুরআন শরীফে অনেক পুরানো কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে।
সূরা হুদের ১০১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
وَمَا ظَلَمْنَاهُمْ وَلَكِنْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ فَمَا أَغْنَتْ عَنْهُمْ آَلِهَتُهُمُ الَّتِي يَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ مِنْ شَيْءٍ لَمَّا جَاءَ أَمْرُ رَبِّكَ وَمَا زَادُوهُمْ غَيْرَ تَتْبِيبٍ
"আমি কিন্তু তাদের প্রতি জুলুম করি নাই বরং তারা নিজেরাই নিজেদের উপর অবিচার করেছে। যখন তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে শাস্তির নির্দেশ এল, তখন তাদের উপাস্যসমূহ অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত তারা যাদের উপাসনা করতো তারা তাদের কোনো কাজেই আসলো না। ধ্বংস ব্যতীত তাদের অন্য কিছু বৃদ্ধি পেল না।" (১১:১০১)
বন্যা, বজ্রপাত ও ভূমিকম্পের মত বিধ্বংসী প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো আল্লাহর গজব বা রোষেরই পরিণতি। কখনো পাপাচারী সমাজের শাস্তি স্বরূপ কখনো কোন জাতির জন্য পরীক্ষা স্বরূপ, এ জাতীয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়। তবে সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ কোন দেশ বা জাতির ওপর জুলুম করেন না বরং মানুষই নানা অপকর্ম ও পাপের মাধ্যমে ঐশী শাস্তির প্রেক্ষাপট তৈরি করে।