বাঙ্গালী
Sunday 24th of November 2024
0
نفر 0

আল্লাহর প্রতি ইমান

আল্লাহর প্রতি ইমান

হান আল্লাহ তাআলা দয়ার সাগর তিনি তার দয়া ও অনুকম্পা দিয়ে বান্দার জীবন ভরিয়ে তুলেছেন। আসমান জমিন, জলে স্থলে সমগ্র মহাবিশ্বে প্রতিটি কোনায় কোনায় বিন্দুতে বিন্দুতে বান্দার জন্য অসংখ্য নেয়ামত ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছেন । তার দয়া ব্যতীত এ মহাবিশ্ব একদিনও টিকে থাকবেনা।
মহান আল্লাহ তাআলা কোরআন মজীদে বলেছেন :
তিনি আল্লাহ, যিনি আকাশমন্ডলী ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন এবং আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন। অতঃপর এর দ্বারা তোমাদের আহার্যের জন্য ফল-মূল উৎপাদন করেন। এবং তোমাদের জন্য জলযানগুলোকে তোমাদের অধীন করেছেন যাতে তাঁর নির্দেশে সমুদ্রে চলাচল করে এবং নদীসমূহকেও তোমাদের কল্যাণে নিয়োজিত করেছেন। (৩৩) এবং তোমাদের জন্য সর্বদা আবর্তনশীল সূর্য-চন্দ্রকেও নিয়োজিত করেছেন এবং রাত-দিনকেও তোমাদের সেবায় নিয়োজিত করেছেন। (৩৪) এবং তোমরা যা কিছু তাঁর নিকট চেয়েছ তিনি তোমাদের সব প্রদান করেছেন এবং তোমরা যদি আল্লাহর নিয়ামতগুলো গণনা করতে চাও, তবে কখনই তার সংখ্যা নিরূপণ করতে পারবে না। নিশ্চয় মানুষ অত্যধিক অবিচারক, অকৃতজ্ঞ।(সূরা ইব্রাহীম :৩২-৩৪)
মহান আল্লাহর প্রতি ইমান হচ্ছে, মণেপ্রানে আল্লাহর অস্তিত্বকে মেনে নেয়া বিশ্বাস করা। এ-বিশ্বাস কোনো অলীক ধারণা প্রসূত নয় বরং এর পক্ষে রয়েছে অসংখ্য দলীল। উদাহরণত আল্লাহ তাআলার সৃষ্টিজগৎ, ও এতে সক্রিয় নিখুঁত পরিচালনা পদ্ধতি আল্লাহ তাআলার অস্তিত্ব নির্দেশক একটি বড় প্রমাণ। স্রষ্টা ছাড়া কোন কিছুই নিজেকে অস্তিত্বে আনতে পারে না। কেননা অস্তিত্বের পূর্বে প্রতিটি জিনিসই থাকে অবিদ্যমান। আর অবিদ্যমান জিনিসের পক্ষে সৃষ্টি করা কল্পনাতীত ব্যাপার। আকস্মিকভাবে কোনো কিছুর অস্তিত্বে আসাটাও অসম্ভব। কারণ সংগঠিত প্রতিটি বস্তু বা সম্পাদিত প্রতিটি কাজের একজন সংগঠক-সম্পাদনকারী থাকা জরুরি। সুতরাং এ-মহাবিশ্ব, ও এতে বিরাজমান বস্তুসামগ্রী স্বসৃষ্ট কোনো বিষয় হতে পারে না। অকস্মাৎ তৈরি হয়েও অস্তিত্বে আসেনি এগুলো। আসা সম্ভব নয়। তাই মহাবিশ্বের সৃষ্টি ও পরিচালনার পেছনে একজন সৃষ্টিকর্তা ও প্রতিপালক রয়েছেন, বিষয়টি অত্যন্ত পরিস্কার। সৃষ্টিজগৎ তার সমগ্র বিশালতা নিয়ে স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রমাণ ঘোষণা করছে দ্ব্যর্থহীন ভাষায়। স্রষ্টার অস্তিত্ব একটি অমোঘ বাস্তবতা। আর যা বাস্তব তা অস্বীকার করাই হল প্রবঞ্চনা। তাই মহাবিশ্বের কঠিন বাস্তবতার নিরেখেই আমরা আল্লাহর অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাস রাখতে বাধ্য।
পবিত্র কোরআনের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইমান এবং সৎকর্ম পাশাপাশি এসেছে। কোরআন মজিদের কোন কোন আয়াতে বিশ্বাসের পরিণাম এবং প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আলোচ্য প্রবন্ধে মানব জীবনে বিশ্বাসের পরিণাম এবং প্রভাব সম্পর্কিত বিষয়সমূহ আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
১.    সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকা : মহান আল্লাহ, তার প্রেরিত নবী রাসূলগণ, আসমানী গ্রন্থসমূহ এবং পুনরুত্থান দিবসের প্রতি বিশ্বাস মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল রাখে মহান আল্লাহ তাআলা বলেছেন :“ আল্লাহ বিশ্বাসীদের শাশ্বত বাণীর সাহায্যে ইহজীবনে ও পরকালে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখেন”।(সূরা ইব্রাহীম:২৭)
২.    সঠিক পথের দিকনির্দেশনা লাভ : নবী রাসূলগণ মানব জাতীকে ইমান আনয়নের জন্য আহবান জানিয়েছেন, যারা এ আহবানে সাড়া দিয়েছে, সন্মতিসূচক উত্তর দিয়েছে তারা আল্লাহর বিশেষ করুণা লাভ করবে এবং আল্লাহ তাআলা তাদেরকে সঠিক পথে চলার জন্য সাহায্য করবেন কোরআনে এভাবে বলা হয়েছে :“ নিশ্চয় যারা বিশ্বাসী আল্লাহ তাদের সরল পথের দিকে পরিচালিত করেন”। (সূরা হাজ্ব:৫৪)
পবিত্র কোরআনের কোন কোন আয়াতে এই হেদায়েতকে অন্তরের হেদায়েত বলে আখ্যা করা হয়েছে বলা হয়েছে : “ এবং যে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে তিনি তার অন্তরকে পথনির্দেশ করেন”।(সূরা তাগাবুন:১১) অর্থাৎ যে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে তিনি তার অন্তরকে পথনির্দেশনা দান করবেন এবং তার হৃদয়কে কোন রকম সন্দেহ সংশয়ে জড়িয়ে পড়ার অবকাশ দিবেননা।
৩.    ঐশী সহযোগিতা : যে আল্লাহর আহবানে সাড়া দিবে এবং তার প্রতি ইমান আনবে, মহান রাব্বুর ইজ্জত এই কাজে তাকে সাহায্য এবং পৃষ্ঠপোষকতা করবেন  তিনি বলেছেন :“নিশ্চয় আমি, আমার নবীদের এবং যারা ইমান এনেছে তাদের এ বৈষয়িক দুনিয়ায় সাহায্য করি এবং  (সেদিন) যেদিন সাক্ষীগণ দন্ডায়মান হবে”।(সূরা গাফির:৫১)
৪.    মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও পুরুস্কার লাভ: আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের ফলে বিশ্বাসীব্যক্তিরা তাদের ত্রুটি বিচ্যুতি থেকে ক্ষমা পাবেন, এছাড়াও মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাদেরকে মহা পুরুস্কার দেয়ার অঙ্গিকার ব্যক্ত করে বলেছেন :“এবং যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান”।(সূরা ফাতির:৭)
৫.    সম্মানজনক জীবিকা : আল্লাহর প্রতি ইমান আনয়নের আরেকটি ফল হল বৈষয়িক ও আধ্যাত্মিক রিযিক বৃদ্ধি। যে ব্যাক্তি বিশ্বাস করে যে, খোদা তাআলা রিযিকদাতা অবশ্যই সে তার মহামূল্যবান জীবিকা দ্বারা লাভবান হবে পবিত্র কোরআন মজীদে বলা হয়েছে :“সুতরাং যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা এবং সম্মানজনক জীবিকা”। (সূরা হাজ্ব:৫০)
৬.    সৎকর্ম পরায়ণদের অন্তর্ভূক্ত হওয়া : ইমান এবং সৎকর্মের অনেক পুরুস্কার রয়েছে । সর্বাপেক্ষা উত্তম হচ্ছে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে “সৎকর্মশীল মানুষ” এই উপাধি লাভ করা।
জেনে রাখা ভাল যে, নেক মানুষের মর্যাদা সৎকর্ম করা থেকে অনেক উপরে, কেননা কেউ ভালকর্ম করে কিন্তু তার সে ভাল কাজ করাটা সার্বক্ষণিকের জন্য নাও হতে পারে। সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তি সেই, সততা ও ন্যায়পরায়ণতা  যার অস্তিত্বে মিশে গেছে এবং সবসময়ই তার সকল কর্ম আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত মানদন্ড অনুযায়ী সম্পাদিত হয়। কিন্তু সৎকর্মপরায়ণদের দলভূক্ত হওয়ার শর্ত হল, ইমান ও সৎকর্ম মহান রাব্বুর আলামিন বলেছেন :“ যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে আমরা তাদের অবশ্যই সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত করব”।(সূরা আনকাবুত:৯) যে ইমান আনে ও সৎকর্ম করে, সে অবশ্যই নেককারদের শ্রেণীভূক্ত হবে।// হাসানাইন

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

আল্লাহর প্রতি ইমান
মৃত্যুর পর মানুষকে কতদিন কবরে ...
শিয়া-সূন্নীর মধ্যে পার্থক্য কি?
নামাজ : আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের ...
মিথ্যা কথা বলা
শিয়া মুসলমানরা কত ওয়াক্ত নামাজ ...
বারজাখের জীবন
সূরা ইউনুস;(১৬তম পর্ব)
দরিদ্রতার চেয়ে মৃত্যু ভাল
দোয়া কবুলের মাস

 
user comment