বারজাখের জীবন
(মৃত্যু ও পুনরুত্থানের অন্তর্বর্তীকালীন জীবন)
ওয়াহাবীদের সঙ্গে সাধারণ মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ মতপার্থক্যের একটি বিষয় হলো বারজাখ বা মৃত্যু পরবর্তী কবরের জীবন। আল্লাহর আউলিয়ার (ওলীদের) রুহ হতে সাহায্য চাওয়া,তাঁদের মৃত্যুর পর তাঁদের উসিলা দিয়ে আল্লাহর নিকট চাওয়া (তাওয়াসসুল) ইত্যাদি বিষয়ে অন্যান্য মুসলমানের সাথে ওয়াহাবীদের মতপার্থক্য উপরিউক্ত মতভিন্নতারই ফলশ্রুতিতেই ঘটেছে। অন্যান্য সকল মুসলমানই বিশ্বাস রাখেন দুনিয়া ও আখেরাতের মধ্যবর্তী সময়ে অর্থাৎ বারজাখে মানুষের,বিশেষত আল্লাহর ওলীদের বিশেষ জীবন রয়েছে। কিন্তু ওহাবিগণ মানুষের মৃত্যু পরবর্তী জীবনে,এমনকি আল্লাহর ওলীদের ক্ষেত্রেও বিশ্বাসী নয়। এ কারণেই তাঁদের নিকট সাহায্য চাওয়া,তাঁদেরকে মাধ্যম বা উসিলা হিসেবে গ্রহণকে জায়েয মনে করে না,বরং এক প্রকার শিরক বলে বিশ্বাস করে। প্রকৃতপক্ষে তারা আল্লাহর ওলীদের প্রতি (মৃত্যুর পরে) আহ্বানকে পাথরের ন্যায় প্রাণহীন বস্তুর প্রতি আহ্বান মনে করে। কারণ তারা বিশ্বাস করে আল্লাহর ওলিগণ মৃত্যুর পর অদৃশ্যের জ্ঞান রাখেন না এবং পৃথিবীর উপর তাঁদের কোন প্রভবই নেই। আমরা এখন এ বিশ্বাস নিয়ে মৌলিক আলোচনা করব।
মানুষ রুহ ও দেহের সমন্বয়ে সৃষ্ট
কালামবিদগণ মানুষকে দুই সত্তার সমন্বয় বলে বিশ্বাস করেন,যথা রুহ (আত্মা) ও দেহ। এই দুইয়ের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে তাঁরা বেশ কিছু প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। এখানে আমরা তার কয়েকটি উল্লেখ করছি :
১। প্রত্যেক মানুষই নিজ কর্মকে এক বাস্তব অস্তিত্বসম্পন্ন সত্তার সাথে সম্পর্কিত করে যাকে ‘আমি’বলে অভিহিত করে থাকে এবং দাবী করে ‘আমি অমুক কাজটি করেছি,‘আমি অমুককে মেরেছি’ইত্যাদি। এই ‘আমি’সত্তাটি কি? এটি কি মানবের সেই সত্তা নয় যাকে ‘রুহ’বা ‘আত্মা’নামে অভিহিত করা হয়,অনুরূপ প্রত্যেক ব্যক্তিই তার দৈহিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে এক বাস্তব সত্তার সাথে সম্পকির্ত করে বলে,আমার হৃদয়,আমার উদর,আমার পদযুগল ইত্যাদি। এই ‘আমি’সত্তাটি কি রুহ বা নাফ্স ব্যতীত অন্য কিছু?
২। প্রত্যেক মানুষ এই অনুভূতিটি ধারণ করে যে,তার ব্যক্তিত্ব ও সত্তা সময়ের পরিবর্তনে অপরিবর্তিত রয়েছে যাতে কোনরূপ পরিবর্তন ও পরিবর্ধন সাধিত হয় না,অথচ তার দেহে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। এই অপরিবর্তিত সত্তাই কি তার আত্মা বা নাফ্স নয়?
৩। কখনো কখনো মানুষ সবকিছু,এমনকি তার দেহ ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সম্পর্কেও অসচেতন হয়ে যায়;কিন্তু সে মুহূর্তেও সে তার ‘আমি’ সত্তা সম্পর্কে অসচেতন নয়। এটি কি তার আত্মা বা নাফ্স নয়? ফখরুদ্দীন রাজী বলেছেন,‘কখনো কখনো আমি নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কে সচেতন,অথচ আমার দৈহিক সত্তা সম্পর্কে অবচেতন থাকি। আমার ঐ আত্মসচেতনতাই আমার আত্মা ও নাফ্স।’১
পবিত্র কোরআনও এই সত্যের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছে :
﴿يَا أَيَّتُهَا النَّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ ارْجِعِي إِلَىٰ رَبِّكِ رَاضِيَةً مَّرْضِيَّةً فَادْخُلِي فِي عِبَادِي وَادْخُلِي جَنَّتِي ﴾
‘হে প্রশান্ত আত্মা! তুমি তোমার প্রভুর দিকে প্রত্যাবর্তন কর এমন অবস্থায় যে,তুমি তোমার প্রতিপালকের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তিনিও তোমার প্রতি সন্তুষ্ট;আমার বিশেষ বান্দাদের (নৈকট্যপ্রাপ্ত) অন্তর্ভুক্ত হও এবং আমার বেহেশ্তে প্রবেশ কর।’২
অন্যত্র বলেছেন :
﴿فَلَوْلَا إِذَا بَلَغَتِ الْحُلْقُومَ وَأَنتُمْ حِينَئِذٍ تَنظُرُونَ﴾
‘অতঃপর যখন তার প্রাণ ওষ্ঠাগত হয় তোমরা (তার শিয়রে দাঁড়িয়ে) তা প্রত্যক্ষ কর।’ (সূরা ওয়াকেয়া :৮৩-৮৪)
পৃথিবী হতে বিদায় নেয়ার পরও জীবনের অব্যাহত থাকা
পবিত্র কোরআনের আয়াত হতে সুস্পষ্ট বোঝা যায় যে,মানুষের মৃত্যু তার জীবনের শেষ নয়,বরং সে অন্য এক জীবনে প্রবেশ করে ও স্থানান্তরিত হয়। মানুষ মৃত্যুর পর বস্তুগত জগতের ঊর্ধ্বে এক নতুন জগতে অধিকতর বিস্তৃত জীবন লাভ করে। যেমন :
১। মহান আল্লাহ বলেছেন :
﴿اللَّـهُ يَتَوَفَّى الْأَنفُسَ حِينَ مَوْتِهَا وَالَّتِي لَمْ تَمُتْ فِي مَنَامِهَا فَيُمْسِكُ الَّتِي قَضَىٰ عَلَيْهَا الْمَوْتَ وَيُرْسِلُ الْأُخْرَىٰ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ﴾
‘আল্লাহ মৃত্যুর সময় প্রাণকে পূর্ণরূপে হরণ করেন এবং (তার প্রাণকে)যে ঘুমন্ত অবস্থায় রয়েছে ও মৃত্যুবরণ করে নি। অতঃপর যার মৃত্যু অবধারিত হয়েছে তার প্রাণকে আবদ্ধ রাখেন এবং অন্যান্যদেরকে (প্রাণ)নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফিরিয়ে দেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য নিদর্শনাবলী (আল্লাহর ক্ষমতার) রয়েছে।’৩
২। অন্যত্র বলা হয়েছে :
﴿وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّـهِ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاءٌ عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ﴾
‘যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়েছে তাদের তোমরা মৃত ভেবো না,বরং তারা জীবিত এবং তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে জীবিকাপ্রাপ্ত।’৪
অন্য একটি আয়াত হতে জানা যায় এই বিশেষ জীবন (বারজাখের জীবন) শুধু শহীদদের জন্যই নয়,বরং আল্লাহর সকল অনুগত ও সৎকর্মশীল বান্দার জন্য নির্ধারিত।
মহান আল্লাহ বলেছেন :
﴿وَمَن يُطِعِ اللَّـهَ وَالرَّسُولَ فَأُولَـٰئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّـهُ عَلَيْهِم مِّنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ وَحَسُنَ أُولَـٰئِكَ رَفِيقًا﴾
‘যারা আল্লাহ ও তাঁর প্রেরিত পুরুষের আনুগত্য করবে তারা সেই সকল ব্যক্তির সঙ্গে থাকবে নবিগণ,সত্যবাদিগণ,শহীদগণ ও সৎকর্মশীলদের মধ্য হতে যাদের তিনি নিয়ামত দিয়েছেন। তারা কতই না উত্তম সঙ্গী!’ ৫
যদি শহীদগণ আল্লাহর নিকট জীবিত থাকেন ও জীবিকা লাভ করেন তবে যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুগত হবে-যেহেতু রাসূল নিজেও তাঁর আনীত নির্দেশের আনুগত্যকারী,সেহেতু তিনিও এর অন্তর্ভুক্ত-সেও শহীদদের সাথে থাকবে,কারণ উপরিউক্ত আয়াতে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যকারী শহীদদের সঙ্গে থাকবে বলা হয়েছে। যদি শহীদরা মৃত্যুর পর আল্লাহর নিকট জীবিত থাকে তবে তারাও আল্লাহর নিকট জীবিত রয়েছে ও বারজাখী জীবনের অধিকারী। যদি বিন বাযের মতো কেউ বলেন,‘তাঁরা আল্লাহর নিকট বেহেশ্তে রয়েছেন এবং এই পৃথিবীর কোন খবর রাখেন না’,এর জবাবে বলব,‘আল্লাহ নিজের সম্পর্কে বলেছেন :
﴿وَهُوَ مَعَكُمْ أَيْنَ مَا كُنتُمْ﴾
‘তোমরা যেখানেই থাক না কেন,তিনি তোমাদের সঙ্গে রয়েছেন।’৬
﴿فَأَيْنَمَا تُوَلُّوا فَثَمَّ وَجْهُ اللَّـهِ ﴾
‘তোমরা যেদিকেই মুখ ফিরাও না কেন,সেদিকেই তিনি আছেন।’৭
﴿نَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيدِ﴾
‘আমরা তার শাহরগ হতেও তার নিকটবর্তী।’৮
যদি আল্লাহ সকল স্থানে সকলের সাথে থাকেন তবে যেহেতু শহীদগণ তাঁর নিকটে অবস্থান করছেন তাঁরাও তাঁর নৈকট্যপ্রাপ্ত হিসেবে সকল স্থানের উপর পূর্ণ দৃষ্টি লাভ করেছেন এবং অদৃশ্যের জ্ঞান রাখেন। আল্লাহর অলী ও অনুগত সৎকর্মশীল বান্দারাও তদ্রুপ। কোরআন বলছে :
﴿يَعْلَمُ خَائِنَةَ الْأَعْيُنِ وَمَا تُخْفِي الصُّدُورُ﴾
‘তিনি (আল্লাহ)চক্ষুসমূহের বিশ্বাসঘাতকতা ও অন্তরসমূহ যা গোপন করে সে সম্পর্কে অবহিত।’৯
যে সর্বজ্ঞ আল্লাহ সবকিছু জানেন তিনিই তাদেরকে অদৃশ্য সম্পর্কে অবগত করেন। তিনিই তাঁর রাসূলকে অদৃশ্য সম্পর্কে অবহিত করেন।
﴿عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلَىٰ غَيْبِهِ أَحَدًا إِلَّا مَنِ ارْتَضَىٰ مِن رَّسُولٍ فَإِنَّهُ يَسْلُكُ مِن بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ رَصَدًا﴾
‘তিনি অদৃশ্যের জ্ঞানী এবং তিনি অদৃশ্য বিষয় কারো কাছে প্রকাশ করেন না। তাঁর মনোনীত রাসূল ব্যতীত। তখন তিনি তার অগ্রপশ্চাতে প্রহরী নিযুক্ত করেন।’১০
বিভিন্ন হাদীসেও এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। বদর যুদ্ধের পর মহানবী (সা.) যখন মুশরিকদের মৃতদেহগুলো একটি গর্তে নিক্ষেপ করলেন তখন সেই মৃত মুশরিকদের প্রতি লক্ষ্য করে বললেন,‘নিশ্চয়ই তোমরা আল্লাহর রাসূলের মন্দ প্রতিবেশী ছিলে,তাকে তোমরা তার গৃহ হতে বহিষ্কার ও তাকে প্রত্যাখ্যান করেই ক্ষান্ত হও নি বরং তার বিরুদ্ধে সমবেতভাবে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলে। আমাকে আমার প্রতিপালক যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা সত্য পেয়েছি।’এক ব্যক্তি মহানবীকে উদ্দেশ্য করে বলল,‘হে আল্লাহর নবী! আপনি কিরূপে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন মাথাগুলোর সাথে কথা বলছেন?’মহানবী তাকে বললেন,‘তুমি তাদের হতে অধিক শুনতে পাও না।’১১
আনাস ইবনে মালিক মহানবী (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন,‘যখন কোন ব্যক্তিকে মৃত্যুর পর কবরে শুইয়ে তার সঙ্গীরা তাকে ত্যাগ করে চলে যায়,তখন সে তাদের পদধ্বনি শুনতে পায়।’১২
মুত্তাকী হিন্দী স্বীয় সূত্রে নবী করিম (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন,যে ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্বে অসিয়ত না করে যায়,তাকে মৃতদের সাথে কথা বলার অনুমতি দেয়া হবে না।’বলা হলো : ‘হে আল্লাহর রাসূল! মৃতরা কি কথা বলে?’তিনি বললেন,‘হ্যাঁ,তারা পরস্পরের সাথে সাক্ষাৎ করে।’১৩
পৃথিবীর জীবন ও মৃত্যু পরবর্তী কবরের জীবনের মধ্যে সংযোগ
পবিত্র কোরআনের আয়াতসমূহ ও হাদীস হতে জানা যায় যে,পৃথিবীর অধিবাসী জীবিত মানুষ ও কবরবাসী মৃত মানুষের মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে এ অর্থে যে,যখন জীবিত কোন মানুষ তাদেরকে ডাকে ও সম্বোধন করে কিছু বলে অথবা চায় তারা আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে তার উত্তর দিয়ে থাকে। এখানে আমরা এ সম্পর্কিত কিছু আয়াত ও হাদীসের প্রতি ইশারা করছি।
ক) আয়াতসমূহ :
মহান আল্লাহ হযরত সালিহ (আ.)-এর জাতি সম্পর্কে বলেছেন,
﴿فَأَخَذَتْهُمُ الرَّجْفَةُ فَأَصْبَحُوا فِي دَارِهِمْ جَاثِمِينَ ۞ فَتَوَلَّىٰ عَنْهُمْ وَقَالَ يَا قَوْمِ لَقَدْ أَبْلَغْتُكُمْ رِسَالَةَ رَبِّي وَنَصَحْتُ لَكُمْ وَلَـٰكِن لَّا تُحِبُّونَ النَّاصِحِينَ﴾
অতঃপর ভূমিকম্প তাদের পাকড়াও করল। ফলে তারা তাদের গৃহে উপুড় হয়ে পড়ে রইল। (হযরত সালেহ) তাদের (মৃতদেহগুলো) হতে মুখ ফিরিয়ে নিলেন ও বললেন : হে আমার সম্প্রদায়! আমি তোমাদের কাছে আমার প্রতিপালকের নির্দেশ ও বাণী পৌঁছিয়েছি এবং তোমাদের মঙ্গল কামনা করেছি,কিন্তু তোমরা মঙ্গলাকাঙ্ক্ষীদের ভালোবাস না।’ ১৪
২। হযরত শুয়াইব (আ.)-এর উম্মত সম্পর্কেও অনুরূপ বর্ণনা এসেছে।
৩। অন্যত্র বলা হয়েছে :
﴿ وَاسْأَلْ مَنْ أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ مِن رُّسُلِنَا أَجَعَلْنَا مِن دُونِ الرَّحْمَـٰنِ آلِهَةً يُعْبَدُونَ﴾
‘আপনার পূর্বে যে সকল রাসূল প্রেরণ করেছি তাদের জিজ্ঞাসা করুন,পরম করুণাময় (আল্লাহ) ছাড়া কি অন্য কোন উপাস্য আমি ইবাদতের জন্য নির্ধারণ করেছিলাম।’ ১৫
৪। অন্যত্র কয়েকটি আয়াতে বিভিন্ন নবীর উপর দরুদ ও সালাম প্রেরণ করে বলেছেন :
﴿سَلَامٌ عَلَىٰ نُوحٍ فِي الْعَالَمِينَ ﴾
‘বিশ্ববাসীদের মধ্যে নূহের উপর সালাম।’১৬
﴿سَلَامٌ عَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ﴾
‘ইবরাহিমের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।’১৭
﴿سَلَامٌ عَلَىٰ مُوسَىٰ وَهَارُونَ﴾
‘মূসা ও হারুনের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।’১৮
﴿سَلَامٌ عَلَىٰ إِلْ يَاسِينَ﴾
‘ইল ইয়াসিনের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।’১৯
﴿سَلَامٌ عَلَى الْمُرْسَلِينَ ﴾
নবিগণের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।২০
উপরিউক্ত আয়াতসমূহ হতে বোঝা যায় পৃথিবীর জীবন ও মৃত্যু পরবর্তী জীবনের মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে এবং কবরে মানুষ ভূপৃষ্ঠের অধিবাসীদের কথোপকথন শুনতে পায় ও তাদের সালামের জবাব দান করে ।
শেখ মাহমুদ শালতুত বলেছেন,‘কোরআন ও হাদীস হতে জানা যায় যখন মানুষের দেহ হতে আত্মা বিচিছন্ন হয় তখন সে মৃত্যুবরণ করে,কিন্তু তখনও তার অনুধাবন ক্ষমতা থাকে (ও অন্যরূপ জীবন নিয়ে সে বেঁচে থাকে) এবং তাকে কেউ সালাম দিলে সে তা শুনতে পায়,তার কবর জিয়ারতকারীকে চিনতে পারে ও কবরে বেহেশ্তী নিয়ামত ও দোযখের আজাবকে অনুভব করে।২১
শাইখুল ইসলাম ইজ্জুদ্দীন ইবনে আবদুস সালাম তাঁর ফতোয়া গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন,‘বাহ্যিকভাবে বোঝা যায় মৃত ব্যক্তি তার জিয়ারতকারীকে (সাক্ষাৎকারী জীবিত ব্যক্তিকে) চিনতে পারে । কারণ শরীয়ত আমাদের নির্দেশ দিয়েছে মৃত ব্যক্তিকে সালাম দেয়ার এবং শরীয়তের প্রবক্তা কখনোই এমন ব্যক্তিকে সম্বোধন করার নির্দেশ দেন নি যে শুনতে পায় না।’২২
খ) হাদীসসমূহ :
১। মহানবী বলেছেন,‘যদি কোন ব্যক্তি মুমিন ভাইয়ের কবরের পাশ দিয়ে যায় এবং সে ব্যক্তি পৃথিবীতে ঐ মৃত ব্যক্তির পরিচিতদের অন্তর্ভুক্ত হয়,তবে মহান আল্লাহ মৃত ব্যক্তির আত্মাকে তার সালাম ও কাঙ্ক্ষিত বিষয়ের জবাব দানের জন্য সজাগ করেন।’২৩
২। মহানবী হতে বর্ণিত হয়েছে যে,মৃত ব্যক্তি তার জানাযায় অংশগ্রহণকারীদের পদধ্বনি শুনতে পায়। ২৪
৩। ইবনে কাইয়্যেম জাওযীয়া তাঁর আররুহ গ্রন্থে বলেছেন,‘সাহাবিগণ ও প্রাচীন আলেমদের মধ্যে এ বিষয়ে ঐকমত্য রয়েছে যে,মৃত ব্যক্তি তার জিয়ারতকারী ব্যক্তিকে চিনতে পারে এবং তার আগমনে আনন্দিত হয়। ২৫
৪। ইবনে আবিদ দুনিয়া তাঁর ‘আল কুবুর’ গ্রন্থে হযরত আয়েশা হতে বর্ণনা করেছেন,মহানবী বলেছেন,‘যদি কোন ব্যক্তি তার মুমিন ভ্রাতাকে জিয়ারত করে অর্থাৎ তার কররের নিকটে যায় ও সেখানে বসে,তবে মৃত ব্যক্তি তার সাহচর্যে আনন্দিত হয় ও তার সালামের উত্তর দেয়,ততক্ষণ তার সাহচর্য অনুভব করে যতক্ষণ না সে সেখান হতে উঠে চলে যায়।২৬
৫। আবু হুরাইরা মহানবী (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন,যখন কোন ব্যক্তি মৃতের কবরের পাশ দিয়ে যায় ও তাকে সালাম দেয় তখন মৃত ব্যক্তি তাকে চিনতে পারে ও তার সালামের জবাব দান করে। ২৭
৬। বায়হাকী সাঈদ ইবনে মুসাইয়ের হতে বর্ণনা করেছেন,তিনি বলেছেন,আমরা আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)-এর সঙ্গে মদীনায় কবরস্থানে পৌঁছলে তিনি উচ্চৈঃস্বরে বললেন,‘হে কবরবাসী! তোমাদের উপর আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক। তোমাদের সংবাদ আমাদের জানাও নতুবা আমাদের খবর শোন।’সাঈদ বলেন,‘তখন তাদের কণ্ঠ শুনতে পেলাম : ওয়া আলাইকুমুস্ সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু ইয়া আমীরাল মুমিনীন! আমাদেরকে আপনাদের সংবাদ জানান। হযরত আলী (আ.) বললেন,‘তোমাদের স্ত্রীরা অন্য স্বামী গ্রহণ করেছে,তোমাদের সম্পদ উত্তরসূরিদের মধ্যে বণ্টিত হয়েছে। তোমাদের সন্তানরা ইয়াতীমদের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তোমাদের নির্মিত গৃহগুলোতে তোমাদের শত্রুরা বাস করছে। আমাদের নিকট এই হলো খবর। তোমাদের কী খবর?’সাঈদ বলেন,‘এক মৃত ব্যক্তি বলল যে,তার কাফনের কাপড় ছিন্নভিন্ন হয়েছে,তার চুলগুলো ঝরে পড়েছে,চর্ম দেহ হতে বিচ্ছিন্ন হয়েছে,চক্ষু অক্ষিকোটর হতে বেরিয়ে মুখের উপর ঝুলে পড়েছে,নাকের ছিদ্র হতে গলিত রস বেরিয়ে আসছে। যা এখানকার জন্য প্রেরণ করেছিলাম তা পেয়েছি এবং করণীয় যা করি নি তার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি।২৮
ইবনে কাইয়্যেম জাওযিয়া মৃত ব্যক্তিরা জীবিত ব্যক্তি কর্তৃক তার কবর জিয়ারতকে অনুভব করতে পারে কিনা প্রসঙ্গে বলেন,‘মৃত ব্যক্তির কবর জিয়ারতকারীকে ‘জায়ের’(সাক্ষাৎকারী) বলা হয়,এর অর্থ মৃত ব্যক্তি তার সাক্ষাৎকারীকে চিনে নতুবা তাকে ‘জায়ের’ বলা হতো না।২৯
৭। বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে,‘যখন মৃত ব্যক্তিকে কবরের ভিতর শোয়ানো হয়,তখন সে তাকে দাফন করতে আসা ব্যক্তিদের পদধ্বনি শুনতে পায়।’৩০
৮। আবু হুরাইরা বলেছেন,‘মহানবী (সা.) যখনই কবর জিয়ারতে যেতেন এরূপে কবরবাসীদের সম্বোধন করতেন , ৩১
السلام علیکم اهل الدیار من المومنین و المسلمین و انا ان شاءالله بکم لاحقون اسال الله لنا ولکم العافية
৯। ইবনে আব্বাস বলেছেন,‘এক সাহাবী একটি কবরের নিকট তাঁবু পাতলেন,কিন্তু জানতেন না সেটি একটি মৃত ব্যক্তির কবর। হঠাৎ করে তাঁর কানে ‘সূরা মুল্ক’ তেলাওয়াতের শব্দ আসল। সূরা পাঠ শেষ হওয়া পর্যন্ত তা তাঁর কানে ভেসে আসছিল। পরবর্তীতে তিনি রাসূল (সা.)-এর নিকট পৌঁছে ঘটনাটি খুলে বললেন। মহানবী বললেন,‘সূরা মুল্ক কবরের আজাবের প্রতিরোধক এবং মানুষকে কবরের আজাব হতে মুক্তি দেয়।৩২
কবরে বা বারজাখে নবিগণের জীবন
নবিগণের বারজাখী জীবন সম্পর্কে আহলে সুন্নাতের হাদীস গ্রন্থসমূহে বর্ণিত কয়েকটি হাদীস :
১. আনাস ইবনে মালিক মহানবী (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন,‘নবিগণ তাঁদের কবরে জীবিত রয়েছেন এবং নামায পড়েন।’এই হাদীসটি হাফিজ হাইসামী তাঁর ‘মাজমায়ুজ জাওয়ায়িদ’৩৩ গ্রন্থে এবং আল্লামা মানাভী তাঁর ‘ফাইজুল ক্বাদীর’৩৪ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। মুহাদ্দিস আলবানী৩৫ হাদীসটির বিশুদ্ধতার স্বীকৃতি দিয়েছেন।
২. মহানবী (সা.) বলেছেন : ‘মৃত্যুর পর আমার অবগতি আমার জীবিতাবস্থার ন্যায়।’৩৬
৩. হযরত আলী (আ.) বর্ণনা করেছেন : ‘এক বছর এক আরব বেদুইন রাসূলের কবরের নিকট এসে বলল : হে আল্লাহর রাসূল! আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। কবরের ভিতর হতে জবাব এল : আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করেছেন।’৩৭
৪. দারেমী তাঁর সুনান গ্রন্থে সাঈদ ইবনে আবদুল আজিজ সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে,তিনি রাসূল (সা.)-এর কবরের মধ্যে হতে জিকরের শব্দ শুনে নামাজের ওয়াক্ত হয়েছে বুঝতে পারতেন।৩৮
দারেমী সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যেব হতে বর্ণনা করেছেন যে,ইয়াযীদের সৈন্যবাহিনী কর্তৃক মদীনার হত্যা ও লুণ্ঠনের দিনগুলোতে তিনি মহানবীর কবর হতে আজান শুনেছেন,আর মসজিদ তখন লোকশূন্য ছিল।৩৯
৫। হাফিজ হাইসামী সহীহ সূত্রে আবূ হুরাইরা হতে বর্ণনা করেছেন যে,মহানবী (সা.) বলেছেন : ‘সেই সত্তার কসম আবুল কাসেম মুহাম্মদের জীবন যাঁর হাতে নিবদ্ধ,ঈসা ইবনে মারিয়াম ন্যায়বিচারক ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠাকারী হিসেবে আবির্ভূত হবেন। তিনি ক্রুশসমূহ নিশ্চিহ্ন করবেন,শুকরসমূহ হত্যা করবেন,সকল কিছুর সংস্কার সাধন করবেন,মানুষের মধ্যে বিদ্যমান শত্রুতার অবসান ঘটাবেন,প্রচুর সম্পদ দান করবেন,কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি আমার কবরে এসে আমাকে সম্বোধন করে জবাব না পাবেন,ততক্ষণ তাঁকে কেউ গ্রহণ করবে না।’৪০
৬. হাফিজ হাইসামী সহীহ হাদীস সূত্রে আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল (সা.) বলেছেন : ‘আমার জীবিতাবস্থা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এ জন্য যে,আমার হতে হাদীস শোন ও বর্ণনা কর। আমার মৃত্যু তোমাদের জন্য কল্যাণকর এ কারণে যে,তোমাদের কর্মসমূহ (আমলনামা) আমার কাছে উপস্থাপন করা হবে এবং আমি তোমাদের সৎকর্ম দেখে আল্লাহর শোকর আদায় করব এবং তোমাদের মন্দ কর্মের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করব।’৪১
ইউসুফ ইবনে আলী জানানী মদীনাবাসী হাশেমী বংশের এক নারী হতে বর্ণনা করেছেন যে,মসজিদের কোন কোন খাদেম তাকে জ্বালাতন করত। তিনি মহানবীর সাহায্য প্রার্থনা করলে তাঁর পবিত্র কবর হতে শুনতে পেলেন : ‘আমি ধৈর্যের ক্ষেত্রে তোমার আদর্শ। তাই ধৈর্যধারণ কর।’ কয়েকদিন পর আপনা আপনিই সমস্যাটির সমাধান হয়ে গেল এভাবে যে,তারা সকলেই মারা গেল।৪২
বারজাখী জীবনে আল্লাহর ওলীদের মর্যাদা
হাকিম নিশাবুরী ইবনে আব্বাস হতে বর্ণনা করেছেন: একদিন মহানবী (সা.) বসেছিলেন এবং আসমা বিনতে উমাইস তখন তাঁর নিকটেই ছিলেন। হঠাৎ করে মহানবী (সা.) কারো সালামের জবাব দিলেন। (আসমা আশ্চর্যান্বিত হলে) তিনি বললেন : ‘হে আসমা! জাফর,জীবরাঈল ও মিকাঈলের সাথে আমাদের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় সালাম দিয়েছিলেন।’৪৩
কাজী সুবুকী বলেছেন : ‘আল্লাহর ওলিগণ তাঁদের জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পর আল্লাহর ইচ্ছায় ও শক্তিতে কোন কিছুর উপর প্রভাব রাখেন। মহান আল্লাহ তাঁদেরকে এ মর্যাদা দিয়েছেন ও তাঁদের হাত ও মুখের মাধ্যমে বিভিন্ন (অলৌকিক) কর্ম সম্পাদন করান।’৪৪
তথ্যসূত্র:
১। মাফাতিহুল গাইব,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ১৪৯।
২। সূরা ফাজর : ২৭
৩। সূরা যুমার : ৪২।
৪। সূরা আলে ইমরান : ১৬৯।
৫। সূরা নিসা : ৬৯।
৬। সূরা হাদীদ : ৪।
৭। সূরা বাকারা : ১১৫।
৮। সূরা কাফ : ১৬।
৯। সূরা মুমিন : ১৬। অন্যত্র সূরা তওবার ১০৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে,‘তোমরা তোমাদের কর্ম কর। অতঃপর আল্লাহ্,তাঁর রাসূল ও মুমিনগণ তোমাদের কর্মকে দেখবেন।’ এ আয়াতে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের পাশাপাশি মুমিনদের কথা বলা হয়েছে অর্থাৎ তাঁরাও মুনাফিক ও কাফেরদের কর্ম দেখেন। নিঃসন্দেহে এ আয়াত শুধু কিয়ামত দিবস সংশ্লিষ্ট নয়,কারণ সেদিন সকল মানুষই,এমনকি মন্দ ব্যক্তিরাও মুনাফিক ও কাফেরদের আমলনামা দেখবে।
১০। সূরা জ্বীন : ২৬-২৭।
১১। সহীহ বুখারী,৫ম খণ্ড,পৃ. ৭৬-৭৭,‘আবু জাহলের হত্যা’ অধ্যায় ।
১২। সহীহ বুখারী,২য় খণ্ড,পৃ. ১২৩,‘মৃত ব্যক্তি জিয়ারতকারীর জুতার শব্দ শুনতে পায়’ অধ্যায় দ্রষ্টব্য ।
১৩। কানজুল উম্মাল,১৬তম খণ্ড,পৃ. ৬১৯-৬২০,হাদীস নং ৪৬০৮০।
১৪। সূরা আরাফ : ৭৮-৭৯।
১৫। সূরা যুখরুফ : ৪৫।
১৬। সূরা সাফফাত : ৭৯।
১৭। সূরা সাফফাত : ১০৯।
১৮। সূরা সাফফাত : ১২০।
১৯। সূরা সাফফাত : ১৩০।
২০। সূরা সাফফাত : ১৮১।
২১। শালাতুত,আল ফাতাওয়া,পৃ. ১৯।
২২। শাইখুল ইসলাম ইজ্জুদ্দীন ইবনে আবদুস সালামের ফতোয়া সমগ্র,পৃ. ৩১
২৩। ইবনে কাইয়্যেম জাওযীয়া,আররুহ,পৃ. ৯।
২৪। ইবনে কাইয়্যেম জাওযীয়া,আররুহ,পৃ. ৯।
২৫। আররুহ,পৃ. ৯।
২৬। প্রাগুক্ত।
২৭। ফাইজুল ক্বাদীর,৫ম খণ্ড,পৃ. ৪৮৭।
২৮। মূসা মুহাম্মদ আলী,হাকীকাতু তাওয়াসসুল ওয়াল ওয়াসিলাহ,পৃ. ২৪২
২৯। আররুহ,পৃ. ৮।
৩০। ফাতহুল বারী,৩য় খণ্ড,পৃ. ২০৫।
৩১। তালখিসুল হাবির,২য় খণ্ড,পৃ. ১৩৭।
৩২। সহীহ তিরমিযী,‘কিতাবে ফাজায়িলুল কুরআন।
৩৩। মাজমাউজ জাওয়ায়িদ,৮ম খণ্ড,পৃ. ২১১।
৩৪। ফাইজুল ক্বাদীর,৩য় খণ্ড,পৃ. ১৮৪।
৩৫। সিলসিলাতুল আহাদীসুস সাহীহাহ,হাদীস নং ৬২১।
৩৬। কানজুল উম্মাল,১ম খণ্ড,পৃ. ৫০৭,হাদীস নং ২২৪২।
৩৭। প্রাগুক্ত।
৩৮। সুনানে দারেমী,১ম খণ্ড,পৃ. ৫৬-৫৭,হাদীস নং ৯৩।
৩৯। মুসা,মুহাম্মাদ আলী,হাকীকাতুত তাওয়াসসুল ওয়াল ওয়াসিলাহ,পৃ. ২৭১।
৪০। মাজমাউজ জাওয়ায়িদ,৮ম খণ্ড,পৃ. ২১১।
৪১। প্রাগুক্ত,৯ম খণ্ড,পৃ. ২৪;সুয়ূতী,আল খাসাইসুল কুবরা,২য় খণ্ড,পৃ. ২৮১।
৪২। সুয়ূতী,আলহাভী লিল ফাতওয়া।
৪৩। হাকিকাতুত তাওয়াসসুল ওয়াল ওয়াসিলাহ্,পৃ. ২৬৫। (হাকিম নিশাবুরী হতে বর্ণিত)
৪৪। প্রাগুক্ত,পৃ. ২৫৭।