আবনা ডেস্ক: ৫৭ হিজরির পয়লা রজব পয়লা রজব ইসলামের ইতিহাসের এক মহাখুশির দিন। কারণ, আজ হতে ১৩৮১ চন্দ্র-বছর আগে এই দিনে পবিত্র মদীনায় জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য তথা তাঁর নাতির নাতি হযরত ইমাম বাক্বির (আ.)।আজ ইরানসহ বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে এই দিবস।
বিশ্বনবী (সা.) তাঁর সাহাবি জাবের (রা.)-কে বলেছিলেন যে তুমি আমার বংশধর বাক্বিরকে দেখতে পাবে এবং তাঁর কাছে আমার সালাম পৌঁছে দিও। জাবের (রা.) সেই দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এই মহান ইমামের পবিত্র জন্মদিন উপলক্ষে সবাইকে জানাচ্ছি মুবারকবাদ এবং এই মহান ইমামের প্রতি জানাচ্ছি অশেষ দরুদ ও সালাম।
কারবালার ঘটনার সময় তিনি সেখানে ছিলেন ও নবী-পরিবারের নারী এবং শিশুদের সঙ্গে তিনিও বন্দী হয়েছিলেন বলে জানা যায়।
ইসলামের সত্যিকার শিক্ষা ও সংস্কৃতিসহ এ ধর্মের সার্বিক দিকগুলোর সংরক্ষণ, ক্রমবিকাশ এবং ক্রম-অগ্রগতি মহান ইমাম বাক্বির (আ.)'র কাছে চিরঋণী। বাক্বির আল উলুম বা জ্ঞান বিদীর্ণকারী ছিল তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত উপাধি। তাঁর দাদা ছিলেন হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) এবং নানা ছিলেন হযরত ইমাম হাসান মুজতবা (আ.)।
তিনি ছিলেন একদিকে শ্রেষ্ঠ আবেদ ও পরহিজগার এবং অন্যদিকে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও শ্রেষ্ঠ নেতা, আইনবিদ ও সংস্কারক। জুলুমের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ছিল অন্যান্য ইমামদের মতই ইমাম বাক্বির (আ.)'র চরিত্রের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। ফলে উমাইয়া শাসক হিশামের নির্দেশে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে শহীদ করা হয় এই মহান ইমামকে। ১১৪ হিজরি সনের ৭ ই জিলহজ ৫৭ বছর বয়সে শাহাদাত বরণ করেন।
ইমাম বাক্বির (আ.)-'র মাধ্যমে অনেক মো'জেজা বা অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে। যেমন, তিনি একবার এক অন্ধ ব্যক্তিকে দৃষ্টি শক্তি দান করেন, একবার এক শত্রুকে তার মৃত্যুর পর জীবিত করেন, সঙ্গীদের মনের কথা বলে দেয়া, নিজের শাহাদতের সময়কাল বলে দেয়া ইত্যাদি। এবারে তাঁর দু’টি মো'জেজার ঘটনা তুলে ধরব:
জাবির বিন ইয়াজিদ জা'ফি বলেছেন, "আমি ইমাম বাক্বির (আ.)'র সঙ্গে হিরাহ নামক অঞ্চলে যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে যখন কারবালায় পৌঁছলাম তখন ইমাম বললেন, 'হে জাবির, এখানে আমাদের জন্য ও আমাদের অনুসারীদের জন্য বেহেশতের একটি বাগান রয়েছে এবং আমাদের শত্রুদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের একটি গর্ত।' এরপর তিনি বললেন, 'তোমার কি কিছু খেতে ইচ্ছে হচ্ছে?' আমি বললাম, 'জি আমার নেতা'। ইমাম তাঁর পবিত্র হাত একটি পাথরের মধ্যে ঢুকিয়ে একটি আপেল বের করে আনলেন। ওই আপেলটির যে সুঘ্রাণ ছিল সেরকম সুঘ্রাণ আমি আর কখনও পাইনি। আপেলটি খেলাম এবং এরপর চারদিন পর্যন্ত ক্ষুধা অনুভব করিনি।
ইমাম মুহাম্মাদ বাক্বির (আ.)’র সমসাময়িক যুগে আবু বাসির ছিলেন একজন অন্ধ ব্যক্তি। এই আবু বাসির থেকে বর্ণিত হয়েছে:
একবার ইমাম মুহাম্মাদ বাক্বির (আ.)’র কাছে গিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করলাম: আপনি কি রাসুলে খোদার (সা.) ওয়ারিশ বা উত্তরসুরি?
ইমাম বললেন: হ্যাঁ।
আমি বললাম: রাসুলে খোদা (সা.) কি নবীগণের উত্তরসুরি? নবীরা যা যা জানতেন তিনি কি তার সবই জানতেন?
ইমাম বললেন: হ্যাঁ।
আমি বললাম: আপনি কি মৃতদের জীবিত করতে ও অন্ধদের অন্ধত্ব দূর করতে পারেন?
ইমাম বললেন: আল্লাহর ইচ্ছায় তা করতে পারি।
এরপর ইমাম বললেন: আমার সামনে এসো হে আবা মুহাম্মাদ!
আমি এগিয়ে যাই। ইমাম তাঁর পবিত্র হাতটি আমার চেহারা ও চোখের ওপর বুলিয়ে নিলেন। আর আমি তখনি সূর্য, আকাশ ও ভূপৃষ্ঠ দেখতে পেলাম ও দৃষ্টিশক্তি লাভ করলাম।
এরপর ইমাম মুহাম্মাদ বাক্বির (আ.) আমাকে বললেন: তুমি কি এ অবস্থাতেই থাকা পছন্দ কর এবং কিয়ামতের দিন বা বিচার দিবসে তোমার সঙ্গে অন্য মানুষের মতই আচরণ করা হবে, নাকি এটা চাও যে আবার অন্ধত্ব বরণ করে নেবে ও বিচার দিবসে বেহেশতবাসী হবে?
আমি বললাম: আমি আগের অবস্থাতেই ফিরে যেতে চাই।
ইমাম আবারও আমার চোখ দু’টির ওপর হাত বুলালেন। ফলে আমি আবারও অন্ধ হয়ে যাই।
উল্লেখ্য, এখন থেকে প্রায় ৯১ বছর আগেও জান্নাতুল বাকিতে টিকে ছিল বিশ্বনবী (সা.)’র ১২ জন নিষ্পাপ উত্তরসূরির মধ্য থেকে তাঁর নাতি হযরত ইমাম হাসান (আ.), অন্য নাতি ইমাম হুসাইন (আ.)'র পুত্র ইমাম জয়নুল আবেদিন (আ.), তাঁর পুত্র ইমাম মুহাম্মাদ বাকির (আ.) ও বাকির (আ.)'র পুত্র ইমাম জাফর সাদিক (আ.)’র সুদৃশ্য মাজার। কিন্তু বর্তমানে এ এলাকায় টিকে রয়েছে একমাত্র বিশ্বনবী (সা.)’র মাজার। ওয়াহাবিরা বিশ্বনবী (সা.)’র পবিত্র মাজার ভাঙ্গার জন্য বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নেয়ার পরও মুসলমানদের প্রতিরোধের মুখে ও ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার ভয়েই তা বাস্তবায়নের সাহস করেনি।#