বাঙ্গালী
Sunday 24th of November 2024
0
نفر 0

‘বাতিলের মুকাবিলায় ঐক্যই কারবালার শিক্ষা’

নিজেদের মধ্যে শত্রুতায় লিপ্ত হওয়ার আগে মুসলমানদেরকে শত্রুদের স্বরূপ চিনতে হবে। যারা মুসলমানদের মধ্যে পরিকল্পিতভাবে দ্বন্দ্ব-সংঘাত সৃষ্টি করছে তাদের ষড়যন্ত্র বুঝতে হবে। আর এক্ষেত্রে মুসলমানদের প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে, নিজেদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করা। আমরা কেন শক্রদেরকে প্রশ্রয় দেব এবং পরস্পরকে কাফের বলব? কেন পরস্পরের রক্ত ঝরানোকে বৈধ বলে মনে করব? এসব কখনই ঠিক নয়।

কোন কাজ যদি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এবং তাঁর উদ্দেশ্যে সম্পাদিত হয় তখন কাজটি পৃথিবীতে  স্থায়ীত্ব লাভ করে। পবিত্র কুরআনে সূরা আর রহমানে আল্লাহ তায়ালা বলছেন, 'পৃথিবীর সব কিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে কিন্তু মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যে কাজ করা হয়; সেটি স্থায়িত্বলাভ করবে।' হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর কুরবানির বিষয়টিকে যদি আমরা বিবেচনা করি তাহলে দেখতে পাই, তিনি ইসমাঈল (আ.)কে কুরবানির মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি আনুতগত্যের চরম পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছিলেন। এ কঠিন কাজটি তিনি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করেছিলেন। আর সে কারণে কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা এ ঘটনাটিকে মানবজাতির জন্য সুন্নত বা  তাদের জন্য পালনীয় একটি প্রথা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। একইভাবে ইমাম হুসাইন (আ.)ও মহান আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন, তাঁর পবিত্র দ্বীনকে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠা এবং সর্বোপরি অন্যায় ও বাতিলের প্রতিবাদ করার জন্য তিনি আন্দোলনে নেমেছিলেন। হযরত হুসাইন (আ.)-তাঁর নানার ধর্মকে যখন ধ্বংসের মুখে যেতে দেখলেন, তখন নিজের জীবন দিয়ে হলেও সেই পবিত্র ধর্মকে রক্ষার জন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এটাই ছিল তাঁর বিপ্লবের উদ্দেশ্য।
 আল্লাহপাক রাসূলুল্লাহ (সা.)কে পবিত্র কুরআনে নির্দেশ দিয়েছেন, হে রাসূল আপনি বলে দিন, ‘তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস তাহলে আমার অনুসরণ কর, তাহলে তোমরা আল্লাহর প্রিয়পাত্র হতে পারবে।’ আল্লাহর বান্দা এবং রাসূল (সা.)-এর উম্মতের মধ্যে যারা যতটা রাসূল (সা.)-এর আনুগত্য করবে তারা ততটাই আল্লাহপাকের প্রিয়পাত্র হতে পারবে। আর যখন কেউ রাসূলেপাকের অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহপাকের প্রিয়পাত্র হবে তখন আল্লাহ তাঁর জন্য সব মানুষের মনে তাঁর প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেবেন। যে প্রতিশ্রুতি আল্লাহ তায়ালা সূরা মারিয়মের ৯৭ নং আয়াতে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন-যে কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সৎ কাজ করবে, তাঁর ওপর ঈমান আনবে-তার জন্য আল্লাহপাক মানুষের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেবেন। ইমাম হুসাইন (আ.)-এর আন্দোলনের মাধ্যমে অমরত্ব লাভের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। কারণ মহান আল্লাহ যদি কোন কিছুকে স্থায়িত্ব না দেন তাহলে মানুষের পক্ষে তাকে স্থায়িত্ব দেয়া সম্ভব নয়।
 আমরা যদি অন্যদৃষ্টিতে অর্থাত সামাজিকভাবে বিষয়টিকে দেখি তাহলে দেখব, মানুষের স্বাভাবিক একটা প্রবৃত্তি হচ্ছে- জুলুম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে অব্স্থান নেয়া। মানুষ জুলুম ও অন্যায়কে পছন্দ করে না। আর এ বিষয়টি যেকোন ধর্মাবলম্বী ন্যায়পন্থী মানুষের প্রতি সমর্থনদানে মানুষকে উজ্জীবিত করে।
 আমরা ইমাম হুসাইন (আ.)র আন্দোলনের মধ্যে লক্ষ্য করি- তিনি জুলুম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। শাসকগোষ্ঠীর কোন ধরনের ভ্রুকুটিকে তিনি মোটেই গুরুত্ব দেননি। আর এ কারণেই হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)র মধ্যে যে বিপ্লবী চেতনা ছিল সেটি আপামর মানুষের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টি করে। আমার দৃষ্টিতে এটিই হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)র অমরত্ব লাভের পেছনে ভূমিকা পালন করেছে।
 পাশাপাশি আপনি যে সম্মানের কথা বলেছেন, সে সম্পর্কে আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনের সূরা তওবায় বলেছেন, 'সব সম্মান হচ্ছে আল্লাহর জন্য।’ একইসঙ্গে সূরা মুনাফিকুনে আল্লাহ বলেছেন, 'সম্মান হচ্ছে আল্লাহর, তাঁর রাসূলের এবং মুমিনদের।'  ইমাম হুসাইন (আ.) যেহেতু একজন মুমিন ছিলেন এবং আল্লাহর প্রতিটি নির্দেশের প্রতি নিজেকে নিবেদিত রেখে নিষ্ঠাপূর্ণভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন সে কারণে আল্লাহ যে সম্মানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেটি হযরত হুসাইন (আ.) এবং তাঁর সঙ্গীরাও লাভ করেছিলেন। আমার দৃষ্টিতে মনে হয়, এ দুটি বিষয়ই ইমাম হুসাইন (আ.) এবং তাঁর সঙ্গীদের কর্মকে স্থায়িত্ব দিয়েছে। আজ পর্যন্ত সারা বিশ্বের প্রতিটি জায়গায় তাঁদেরকে মানুষ স্মরণ করছে।
 বিশ্বনবী (সা.)শহীদদের নেতা হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)কে ‘মুক্তির তরণী’ তথা ‘সাফিনাতুন নাজাত’ বলে উল্লেখ করেছেন আরো বলেছেন যে, ‘হুসাইন আমা থেকে ও আমি হুসাইন থেকে’
হযরত নুহ (আ.) জীবনের দিকে লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই, তাঁর তরণীটি ছিল মুক্তির তরণী। আর এ মুক্তির তরণীতে তারাই আরোহণ করতে পেরেছিল যারা তাঁর প্রতি ঈমান এনেছিল। ইমাম হুসাইন (আ.)কে রাসূল (সা.) মুক্তির তরণী বলেছেন বলে আপনি যে হাদিসের কথা উল্লেখ করেছেন, তার আগে একটি অংশ রয়েছে। সেটি হচ্ছে-ইমাম হুসাইন হচ্ছেন ‘মিসবাহুল হুদা’ বা 'হেদায়েতের প্রতীক' বা পথ প্রদর্শনের জন্য একটা উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা যেটি মানবজাতিকে পথের দিশা দেখাবে। আর এ কারণে ‘মিসবাহুল হুদা’ এবং ‘সাফিনাতুন নাজাত’- এ দুটির মধ্যে একটি অঙ্গাঙ্গি সম্পর্ক রয়েছে। যে হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)র কাছ থেকে আলো গ্রহণ করবে সেই কেবল নাজাতের  তরণীতে আরোহণ করার সুযোগ পাবে।
 
যখন ইমাম হুসাইন (আ.) বিপ্লব শুরু করেছিলেন আমরা যদি সেই সময়ের ইতিহাসের দিকে ফিরে যাই তাহলে দেখতে পাই, বিপ্লবের সময় এমন এক শাসক মুসলমানদের প্রতিনিধি হিসেবে বা খলিফা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল এবং নিজের আসনকে সব রকমের চেষ্টা-প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছিল রাসূল (সা.)র  উত্তরাধিকারি হওয়ার মতো কোন যোগ্যতা যার ছিল না। ইমাম হুসাইন (আ.) কেবল রাসূল (সা.)র নাতি হিসেবেই নন, বেহেশতের যুবকদের নেতা হিসেবেও তাঁর ওপর যে দায়িত্ব ছিল-সেই দায়িত্ব পালনের জন্যই সেই শাসকের বিরুদ্ধে বিপ্লব করেন। রাসূলের উত্তরাধিকারি হিসেবে তাঁর ওপর দায়িত্ব ছিল, এমন অযোগ্য শাসক বা ব্যক্তিকে মুসলমানদের খলিফা হওয়া থেকে বিরত রাখা এবং এ বিষয়টি মুসলিম উম্মাহর কাছে তুলে ধরা যে, কোন ফাসেক ব্যক্তি কখনই মুসলমানদের নেতা হতে পারে না। আর এজন্য হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) বারবার তাঁর বাণীতে উল্লেখ করেছেন, 'আমার মতো লোক’ কখনই ‘ইয়াজিদের মতো লোকের’ হাতে বাইয়াত গ্রহণ করতে পারে না। তিনি বলেননি, ‘আমি হুসাইন- ইয়াজিদের কাছে’ বাইয়াত করতে পারব না। বরং তিনি বলেছেন, ‘আমার মতো লোক’ অর্থাত যে কেউ ইমাম হুসাইনের মতো ন্যায়পন্থী হবে, সত্যের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ হবে; সে কখনই ইয়াজিদের মতো পাপাচারী, যে আল্লাহর নির্দেশকে অমান্য করে, যে সব ধরনের অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয় এবং নিজে তা সম্পাদন করার পাশাপাশি মানুষকে সেই অন্যায় কাজে উদ্ধুব্ধ করে- এ ধরনের ব্যক্তিকে কখনই মুসলিম উম্মাহ’র নেতা হিসেবে গ্রহণ করতে পারে না।
 ইমাম হুসাইন (আ.) তাঁর প্রচেষ্টাতে সেদিন সফল হলেন; যার ফলশ্রুতিতে আমরা দেখি, আজ পর্যন্ত পৃথিবীতে জালেম-ফাসেকদের বিরুদ্ধে যেসব বিদ্রোহ হয়েছে তার পেছনে ইমাম হুসাইনের আন্দোলনের চেতনা কাজ করেছে। আর এটাই হচ্ছে ইমাম হুসাইন (আ.)র মুক্তির তরণী হওয়া।
 রাসূল (সা.) বলেছেন, যখন কোন জালেম শাসক তোমাদের ওপর চেপে বসে তখন যদি তোমরা তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ না করো তাহলে দেখা যাবে, সে তোমাদের ওপর এমনভাবে চেপে বসবে যে সেই অবস্থা থেকে তোমরা কখনই মুক্তিলাভ করতে পারবে না। আর এই পথটিই ইমাম হুসাইন (আ.) আমাদেরকে দেখিয়েছেন। আর এ কারণেই আল্লাহর কাছ থেকে  রাসূল (সা.)র আনা ইসলাম ধর্মকে সঠিক রূপেই দেখতে পাচ্ছি আমরা।
 একজন বিশিষ্ট গবেষক এ কারণে হযরত হুসাইন (আ.)র আন্দোলনকে চিত্রায়িত করেছেন এভাবে: মুহাম্মাদ (সা.)র মাধ্যমে ইসলামের উতপত্তি ঘটেছে এবং ইসলাম প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। ইমাম হুসাইন (আ.)র মাধ্যমে ইসলামকে আল্লাহপাক টিকিয়ে রেখেছেন। হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) সেদিন যদি আন্দোলনের আহবান না জানাতেন এবং ইয়াজিদের মতো লোকের বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়াতেন তাহলে এরকম শাসকরা কিয়ামত পর্যন্ত ক্ষমতায় টিকে থাকত এবং নিজেদেরকে বৈধ হিসেবে মনে করত। আর কেউই তাঁদের বিরুদ্ধে কোনরকম প্রতিবাদ করার সাহস পেত না। ইমাম হুসাইন (আ.)র সমকালীন অনেক বিশিষ্ট সাহাবা ছিলেন (যেমন, ইবনে আব্বাস, ইবনে ওমর) তারা কিন্তু বিষয়টিকে ইমাম হুসাইন যেভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন সেভাবে অনুভব করতে পারেননি। আর তারা উপলব্ধি করতে না পারার কারণে কখনও ইমাম হুসাইন (আ.)কে বলেছেন যে, আপনি এই কাজে যাবেন না। এ কাজে গেলে আপনাকে মৃত্যুর মুখে পড়তে হবে এবং আপনার পরিবার পরিজনকে বন্দিত্ববরণ করতে হবে। কিন্তু ইমাম হুসাইন (আ.) এসব কথার বা কোন কিছুর পরোয়া করেননি। কারণ, তিনি দেখেছেন, তিনি যদি আন্দোলন শুরু না করেন এবং এ সরকারকে বৈধতা দেন তাহলে কেয়ামত পর্যন্ত জালেম সরকারগুলো বৈধতা পেয়ে যাবে। এ কারণে আমরা হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)র কাছে নিজেদেরকে ঋণী বলে মনে করি। তিনি যদি সেদিন আন্দোলন শুরু না করতেন তাহলে ইসলামকে আজ আমরা যে অটুট রুপে দেখতে পাচ্ছি সেটি পেতাম না। আর এটাকেই বলা যেতে পারে মুক্তির তরণী ইমাম হুসাইন (আ.)।
 'হুসাইন আমা থেকে এবং আমি হুসাইন থেকে' এ হাদিসটির ব্যাপারে আমার যে উপলব্ধি সেটি হচ্ছে, ইমাম হুসাইন (আ.)র আন্দোলনের মাধ্যমেই যেহেতু ইসলাম টিকে রয়েছে এবং রাসূল (সা.) যেহেতু ইসলামকে এনেছেন সে কারণেই রাসূল (সা.) বলেছেন, আমি হুসাইন থেকে। রাসূলের কোন স্থানে থাকার অর্থ হচ্ছে ইসলাম টিকে থাকা। যদি ইসলাম টিকে না থাকে তাহলে রাসূল (সা.) টিকে থাকবেন না। ইসলামের টিকে থাকার সঙ্গে রাসূলের টিকে থাকার একটা অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রয়েছে। আর এই সম্পর্কের প্রতি ইশারা করে রাসূল (সা.) বলেছেন, হুসাইন আমা থেকে-অর্থাত হুসাইনের সব বৈশিষ্ট্য আমার বৈশিষ্ট্যের মতো, আমার দ্বীনকে টিকিয়ে রাখার জন্য তাঁর সব প্রচেষ্টা ছিল। আর এসব কারণে রাসূল (সা.) বলেছেন, হুসাইন আমার থেকে এবং আমি হুসাইন থেকে।'
 পবিত্র কুরআনের একটি আয়াতে আল্লাহ পাক রাসূল (সা.)কে নির্দেশ  দিয়েছেন: 'হে রাসূল পৃথিবীর সব ব্যক্তি যদি আপনাকে ত্যাগ করে তাহলেও আপনাকে আপনার দায়িত্ব পালন করার নির্দেশ দিচ্ছি।”
 কিংবা বলা হয়েছে, ‘হে রাসূল আপনাকে যেভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে সেভাবে  আপনি প্রতিরোধ করুন  এবং দৃঢ়তা প্রদর্শন করুন।' এই একই বৈশিষ্ট্য আমরা ইমাম হুসাইন (আ.)র মধ্যে দেখতে পাই। তাঁর প্রকৃত অনুসারি হিসেবে সর্বোচ্চ চেষ্টার মাধ্যমে  তিনি তাঁর দায়িত্ব পৃথিবীতে পালন করেছেন। আর এ কারণে রাসূল (সা.) ইমাম হুসাইনকে নিজের অংশ বলে ঘোষণা করেছেন এবং বলেছেন, যদি হুসাইন থাকে- তাহলে আমিও টিকে থাকব। যদি হুসাইন থাকে তাহলে আল্লাহপাকের কাছ থেকে আমি যে ইসলাম এনেছি, যে ইসলামের জন্য আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি সে ইসলাম টিকে থাকবে। ফলে ইসলাম টিকে থাকার পেছনে ইমাম হুসাইন (আ.)র ঐতিহাসিক ভূমিকারই প্রতি ইংগিত করা হয়েছে ওই বক্তব্যের মাধ্যমে।
মুহররমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ  দর্শন বা প্রধান শিক্ষাঃ
 
মুহররমের দর্শন বা প্রধান শিক্ষাগুলো নিয়ে আলোচনা করতে গেলে অনেক সময় এবং ব্যাপক আলোচনার প্রয়োজন। বলা হয়ে থাকে, মহররম এবং আশুরা নিজেই একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো। এর মধ্যে আমরা ইসলামের সব দিক প্রতিফলিত হতে দেখি। ইসলামের অস্তিত্বের জন্য যা কিছু করা  প্রয়োজন তার সবকিছুই আমরা সেদিন কারবালার প্রান্তরে চিত্রিত হতে দেখেছি। ইসলামের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য ইমাম হুসাইন (আ.) যেমন নিজের জীবন দিয়েছেন তেমনি তাঁর পরিবারের ১৮ সদস্য (ইমাম জয়নুল আবেদিন ওই ১৮ সদস্য সম্পর্কে বলেছেন, সমকালীন সময়ে তাঁদের মতো উত্তম মানুষের অস্তিত্ব পৃথিবীতে ছিল না। তাঁদেরকে ইমাম হুসাইন ইসলামের জন্য উতসর্গ করেছেন) শাহাদাতবরণ করেছেন। আর এটিই কারবালার সবচেয়ে বড় শিক্ষা। আমরা যখনই ইসলামের অস্তিত্বকে সংকটাপন্ন হতে দেখি তখনই তার প্রতিবাদ করা উচিত। শক্ররা যত শক্তিশালীই হোক না কেন তাদের সেই ভ্রুকুটিকে উপেক্ষা করে নিজেদের দায়িত্ব সম্পাদন করাই হচ্ছে কারবালার মহান শিক্ষা, ইমাম হুসাইন (আ.)র শিক্ষা।
 তাছাড়া জুলুম, অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদ করতে হবে, সেখানে সংখ্যার স্বল্পতার কোন অজুহাত দেখানোর যে সুযোগ নেই সেটা হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) কারবালায় দেখিয়েছেন। ৩০ হাজার সৈন্যর মোকাবেলায় মাত্র ৭২ জন সৈন্য নিয়ে তিনি জিহাদ করে আমাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, কোনভাবে দায়িত্বে অবহেলা করার সুযোগ নেই। আমাদের সংখ্যা কম বলে অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধ প্রতিবাদ না করে হাত গুটিয়ে নেব- এই শিক্ষা ইমাম হুসাইন (আ.) আমাদের দেননি।
 সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি আমার কাছে মনে হয়েছে সেটি হচ্ছে, হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) নিজেই তাঁর একটি বাণীতে উল্লেখ করেছেন, আমার নানার উম্মতদের মধ্যে যে বিকৃতি এবং বিপথগামিতা সৃষ্টি হয়েছে সেই জায়গা থেকে তাদেরকে উদ্ধার করাকে আমি আমার দায়িত্ব বলে মনে করছি। আর দায়িত্ব পালনকে আমি আমার নানার মিশনকে সফল করার জন্য অবশ্যকর্তব্য বলে মনে করি। তিনি অন্য একটি স্থানে ইয়াজিদের কর্মকাণ্ডের প্রতি ইঙ্গিত করে জনগণকে উদ্দেশ করে বলেছেন, আল্লাহর নির্দেশিত বৈধ বিষয়কে আমল করা হচ্ছে না। বিপরীতে হারাম বিষয়কে হালাল করা হচ্ছে। তাছাড়া ইসলামের ফরজ বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। অন্যদিকে বেদাত ও  হারাম বিষয়গুলোকে ইসলামের নামে বৈধতা দেয়া হচ্ছে। আর এরকম একটা পরিস্থিতিতে ইমাম হুসাইন (আ.) বসে থাকাকে সমীচীন মনে করেননি। এ কারণেই তিনি এ আদর্শ স্থাপন করে গেছেন যে, আমাদের সমাজে যখন কোন অন্যায়, অবিচার ও অনাচারের ঘটনা ঘটছে, হালাল জিনিষকে হারাম করা হচ্ছে এবং হারাম জিনিষকে হালাল করা হচ্ছে, অবৈধ নানা পথ সৃষ্টি করা হচ্ছে তখন চুপ করে বসে থাকার কোন সুযোগ নেই।
আর ইমাম হুসাইন (আ.)র সঙ্গীদের মধ্যে যে বিষয়টি লক্ষ্য করি সেটি হচ্ছে- ইমাম হুসাইনের প্রতি তাদের পরম আনুগত্য। মাত্র ৭২ জন হওয়া সত্ত্বেও শত্রুর সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখেও তারা শক্রদের বিরাট বহরের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তারা একবিন্দুও পিছপা হননি। হুসাইনকে সাহায্য করা পরম দায়িত্ব মনে করে নিজেদের শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে তা পালন করেছেন। আর এ বিষয়টির শিক্ষা হচ্ছে- আমাদের সমাজে যারা প্রকৃত নেতা  তাদেরকে যেন ত্যাগ না করি। প্রকৃত নেতা সত্যের দিকে আমাদেরকে যে আহবান করেন তা যেন মেনে চলি। কে সেই নেতাকে মানলো এবং কে মানলো না সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। আমরা যেন প্রকৃত নেতার সত্য আহবানকে মেনে নেই এবং তার সঙ্গে থাকি।
 ইমাম হুসাইন (আ.) এর সঙ্গীসাথীদের মধ্যে অনেকের ক্ষেত্রে আমরা যে বিষয়টি লক্ষ্য করি সেটা হচ্ছে, তারা শুধু কারবালায় ইমাম হুসাইন (আ.)র সঙ্গে থেকে যুদ্ধ করেননি, তারা যুদ্ধের ময়দানে সত্যের অবস্থান তুলে ধরে দীর্ঘ বা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য  রেখেছেন। শত্রুদের সামনে সত্য ও সঠিক পথ তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। সুতরাং শক্র যদি ইসলামের অনুসারী হয় তাহলে তাদেরকে বোঝাতে হবে এবং সত্যের দিকে আহবান জানাতে হবে। তাদের ভুল ভাঙানোর চেষ্টা করতে হবে। আমরা দেখেছি, কারবালায় হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)র বক্তব্যে অনেকে প্রভাবিত হয়েছিলেন, যদিও তাদের সংখ্যা ছিল খুবই কম। তারা হুসাইন (আ.)র ব্ক্তব্যের পর তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন।
 ফলে আমাদেরকে চরম সংকটের মধ্যেও শক্রর সামনে ইসলামের প্রকৃত রূপকে তুলে ধরতে হবে। তাদেরকে এটা বোঝাতে হবে, তোমরা যেটা করছ তা ভুল এবং এর মাধ্যমে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইমাম হুসাইন (আ.) সেদিন এ কাজটিই করেছিলেন। তিনি রাসূল (সা.)র পোশাক পরে, মহানবীর পাগড়ী পরে; তাঁর তরবারী হাতে নিয়ে শক্রর সামনে গিয়েছেন এবং বারবার তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, কেন তোমরা আমাকে হত্যা করতে চাও? তোমরা কি জানো না যে আমি রাসূল (সা.) এর নাতি- আমি হযরত ফাতেমা ও আলীর সন্তান? তোমরা কি হযরত আলীর অবদানের কথা জানো না? রাসূল (সা.) আমার মাতা ও পিতার ব্যাপারে কি বলেছেন তা কি তোমাদের জানা নেই? আমার ভাই ও আমার ব্যাপারে তিনি বলেছেন যে, আমরা বেহেশতি যুবকদের সর্দার? এ ব্যাপারে কি তোমরা অবহিত নও? আর এসব কথা তিনি এজন্যই বলেছিলেন যে, এর মাধ্যমে তারা হয়তো সম্বিত ফিরে পাবে এবং ইমাম হুসাইন (আ.)কে হত্যা করা থেকে বিরত থেকে জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে।
 এ ব্যাপারে আমাদেরও মহান দায়িত্ব রয়েছে। যখন আমরা ইসলামের চরম সংকট দেখব তখন ইসলামের প্রকৃত এবং সঠিক রূপ শক্রর সামনে তুলে ধরতে হবে। তাদের সামনে চূড়ান্ত দলিল উপস্থাপন করতে হবে। তাতে যদি তাদের মধ্য থেকে একজন বা দু’জনও হেদায়েতপ্রাপ্ত হয় সেটিও আমাদের জন্য কল্যাণকর এবং তাদের জন্যও মঙ্গলজনক। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন হযরত আলীকে ইয়েমেনে পাঠিয়েছিলেন তখন তাঁকে বলেছিলেন, হে আলী তুমি যদি তাদের মধ্য থেকে একজনকেও হেদায়েত করতে পার তাহলে পৃথিবীর সব মানুষকে হেদায়েত  করার সমান সওয়াব আল্লাহ পাক তোমাকে দান করবেন। আর ইমাম হুসাইন (আ.) সেই চেষ্টাই করেছেন। মহররম আমাদের সেই শিক্ষা দেয় যে, আমরা শুধুমাত্র আমাদের হাত বা অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধ করব না, শুধুমাত্র প্রতিবাদও যথেষ্ট নয় বরং আমাদের যুক্তি, বুদ্ধি, ইসলামের প্রকৃত ও সঠিক রূপ তুলে ধরার চেষ্টা করব। আর এর মাধ্যমেই তাদেরকে হেদায়েতের চেষ্টা করাই আমাদের দায়িত্ব। হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) আশুরা ও কারবালার প্রান্তরে আমাদের  এটাই শিক্ষা দিয়ে গেছেন।
বর্তমানে আমরা মহররম সম্পর্কে সমাজে অনেক বাড়াবাড়ি লক্ষ্য করছি। কুপ্রথা ও বিকৃত ইতিহাস প্রচারের ধারা আমরা লক্ষ্য করছি। এসব বিষয় কারবালা বিপ্লবের  শিক্ষা ও সংস্কৃতি থেকে আমাদেরকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে, কারবালার ঘটনা এবং শহীদদের বক্তব্যগুলোকে  শক্তিশালীভাবে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে আমরা  বাধার মুখে পড়ছি। আমার কাছে মনে হয়, এক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের মধ্যে কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে। কারবালার প্রকৃত ইতিহাস আমরা সমাজের সামনে তুলে ধরতে পারিনি। ‘বিষাদ সিন্ধু’ নামের উপন্যাসকে কারবালার ইতিহাসের একমাত্র তথ্য-উপাত্ত হিসেবে মনে করছি আমরা সবাই। আমরা মনে করছি, কারবালার প্রকৃত ইতিহাস যেন এই বইয়ের মধ্যে নিহিত। অথচ এটি নিছক একটি সাহিত্যকর্ম। এখানে কারবালার ইতিহাসের শতভাগের একভাগও নেই। অন্যভাবে বলা যায়, হয়তো এর একভাগ সত্য বাকি ৯৯ ভাগই অসত্য। এ বিষয়টি আমাদেরকে মনে রাখতে হবে। কারবালার প্রকৃত ইতিহাস জাতির সামনে- সমাজের সামনে তুলে ধরতে হবে। যদি সেক্ষেত্রে আমরা দায়িত্ব পালন না করি তাহলে কেয়ামতের দিন মহান আল্লাহর কাছে আমাদের জবাবদিহি করতে হবে।
 কারবালার ঘটনা সম্পর্কে বিভ্রান্তির ক্ষেত্রে কিছু রচিত হাদিস কাজ করেছে বলে আমার ধারনা। এতে বলা হচ্ছে, শুধুমাত্র আশুরার দিনই কারবালার ঘটনা ঘটেনি- পাশাপাশি আরো কিছু ঘটনা ঘটেছে। বলা হচ্ছে, এই দিনই বিশ্বজগত সৃষ্টি হয়েছে। এ দিন হযরত ইব্রাহিম (আ.) আগুন থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন, লৌহে মাহফুজ সৃষ্টি হয়েছিল কিংবা হযরত নুহ (আ.)র নৌকা এ দিন মুক্তি পেয়েছিল। এ হাদিসগুলোকে আমাদের যাচাই করে দেখা উচিত। আমরা যদি দেখি সিহা-সিত্তা হিসেবে পরিচিত হাদিসগ্রন্থগুলোতে এসব হাদিস নেই তাহলে প্রশ্ন উঠবে তাহলে কেন এ হাদিসগুলো সৃষ্টি করা হয়েছে। যখন আমরা সাধারণ বুদ্ধিবৃত্তিক  চিন্তা দিয়ে হাদিসগুলো নিয়ে ভাবি তখন এদের মধ্যে নানারকম সাংঘর্ষিক বিষয় দেখতে পাই। ফলে হাদিসগুলো সম্পর্কে আমাদের ব্যাপক গবেষণা করা উচিত। ওইদিন বিশ্বজগত সৃষ্টি হয়েছে বলে যে কথা বলা হচ্ছে তা যদি আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক কোন মানুষের সামনে তুলে ধরা হয় তাহলে তিনি হাসবেন।
 দ্বিতীয় যে বিষয়টি আমাদেরকে দেখতে হবে তা হচ্ছে- আশুরার দিন যে ঘটনাগুলোর কথা বলা হচ্ছে বর্তমানে সেগুলো ইসলামকে কতটা উদ্দীপনা যোগাচ্ছে। আমরা যদি ধরেও নেই যে হযরত ইব্রাহিম (আ.) আগুন থেকে মুক্তি পেয়েছেন বা বনি-ইসরাইল জাতি মুক্তি পেয়েছে তারপরও তা আমাদের বর্তমান বাস্তবতায় কতটা ভূমিকা রাখতে পারে? এইসব ঘটনা আমাদের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ? যেখানে কারবালার মতো মর্মস্পর্শী ঘটনা ঘটেছে; যার কথা রাসূলুল্লাহ (সা.) ইমাম হুসাইনের জন্মের সময় হযরত ফাতেমা (সা.আ.)কে বলেছিলেন। ইমাম হুসাইনকে ফাতেমার কোলে তুলে দেয়ার সময় রাসূল (সা.) বলেছিলেন, আমার উম্মতদের মধ্যে কেউ তাকে হত্যা করবে। তিনি ইমাম হুসাইন (আ.)কে বেহেশতের সর্দার বলে গেছেন। ফলে তাঁর শহীদ হওয়ার পাশাপাশি ইসলামকে রক্ষার জন্য তিনি যে ভূমিকা পালন করেছেন তার গুরুত্ব কত? সেদিন তিনি যদি জীবন দিয়ে ইসলামকে রক্ষা না করতেন তাহলে ইসলাম আজ হুমকির মুখে পড়ত। ইসলামকে সেদিন তিনি আমাদের সামনে পুনরুজ্জীবিত করেছেন। ফলে এই ঘটনাটিই তো আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি স্মরণীয় হয়ে থাকার কথা। অন্য যেসব ঘটনার কথা বলা হচ্ছে আমাদের জীবনে সেগুলোর কোন ভূমিকা নেই।
যদি আমরা আল্লাহর ওপর নির্ভর করি এবং তাঁর সাহায্য চাই তাহলে তিনি আগুন থেকে উদ্ধার করতে পারেন, ফেরাউনের মতো ব্যক্তির কাছ থেকে উদ্ধার করতে পারেন। তবে শুধুমাত্র ঐশী সাহায্যই যথেষ্ট নয়। অনেক ক্ষেত্রে আমাদেরকেও ভূমিকা পালন করতে হবে। পবিত্র কুরআনে আমরা পড়েছি- আল্লাহর দ্বীনকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আল্লাহর শত শত নবী শহীদ হয়েছেন। এই পথটিই আমাদের করণীয় নির্ধারণ করে দেয়। আমাদেরকে এজন্য বসে থাকলে চলবে না যে, আমাদের কাছে ঐশী সাহায্য আসবে। ইমাম হুসাইন (আ.) সেদিন কারবালায় শহীদ হওয়ার মাধ্যমে কি আমাদের হৃদয় থেকে মুছে গেছেন? নাকি উল্টো ইয়াজিদ আমাদের কাছে কুলাঙ্গার এবং অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে ? আমরা আমাদের সন্তানদের নাম ইয়াজিদ রাখি না। অথচ আমরা আমাদের সন্তানদের নাম রাখি হুসাইন। আর এ থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে, ইমাম হুসাইন (আ.) সেদিন নিজেকে উৎসর্গ করে তাঁর প্রতি আল্লাহর দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের মাধ্যমে আমাদের জন্য এমন নিদর্শন রেখে গেছেন যে আমাদের অনুসরণ করা উচিত। সুতরাং আশুরার দিনে আরও কি কি ঘটেছে তা থেকে সরে এসে কারবালার বিষয়টির প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত।
শোককে শক্তিতে পরিণত করার উপায় হিসেবে আমি বলব, কারবালার প্রকৃত ইতিহাসকে তুলে ধরতে হবে। পাশাপাশি হযরত ইউসুফ (আ.)কে জাগ্রত রাখার জন্য বা তাঁর স্মরণকে স্থায়ী রাখার জন্য  হযরত ইয়াকুব (আ.) পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন সে পদ্ধতিও  আমাদের গ্রহণ করতে হবে। আমরা কেবল যদি বলি ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাই না- এ বিষয়টি কখনই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি নবীদের নীতির পরিপন্থী। হযরত ইয়াকুব (আ.) এক সময় নিজ সন্তান হযরত ইউসুফ (আ.)কে হারিয়ে ফেলেছিলেন। যদিও তিনি জানতেন, ইউসুফ জীবিত রয়েছেন তারপরও ৪০ বছর ধরে ছেলের জন্য কেঁদেছেন। তাঁর এ ক্রন্দনের বিষয়টি মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ এটিকে সমালোচনা না করে বরং প্রশংসার দৃষ্টিতে দেখেছেন। এটি এ কারণে হয়েছে যে, আল্লাহর কোন ওলি, কোন নবী বা তাঁর কোন প্রিয়-বান্দা যদি আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যান, তাঁকে যদি শোচনীয়ভাবে হত্যা করা হয় সেক্ষেত্রে তাঁকে স্মরণ করা তার তাঁর স্মৃতি জাগ্রত রাখা আমাদের দায়িত্ব। এটা আমাদের নবীদের শিক্ষা। হযরত হুসাইন (আ.)র জন্মের পর তাঁকে কোলে নিয়ে রাসূল(সা.) ক্রন্দন করেছেন এবং তাঁর সাহাবাদের সামনে ভবিষ্যতের শোকাবহ ঘটনা বর্ণনা করেছেন। সে সময় সাহাবারাও কান্নাকাটি করেছেন। এখানেও কিন্তু ক্রন্দন, মর্সিয়া, শোকগাঁথার বিষয়টি আমাদেরকে শিক্ষা দিচ্ছে। আর এটি আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। কিন্তু বর্তমানে তা প্রায় হারিয়ে গেছে বলা চলে। এ বিষয়গুলোকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে এবং আশুরার সংস্কৃতিকে  শ্রোতা-পাঠকদের সামনে তুলে ধরতে হবে।
 
মহররমের শিক্ষাগুলো কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায় বিশেষ করে  কারবালার মহান বিপ্লবের আলোকে ইসলামি চিন্তাবিদদের ও শিক্ষিত মুসলিম সমাজের দায়িত্ব কী?
 
এ বিষয়ে শুধুমাত্র ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের নমুনাই আপনাদের কাছে তুলে ধরব। ইমাম খোমেনী (র.) কারবালার চেতনাকে কিভাবে কাজে লাগিয়েছেন? কারবালার চেতনাকে কাজে লাগিয়েই তিনি ইরানে ইসলামি বিপ্লব করতে পেরেছেন। কারবালার চেতনাকে তিনি গোটা ইরানি জাতির মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে, মহররমের চেতনার অন্তর্নিহিত শক্তিকে কাজে লাগিয়েছেন এবং এদেশের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে তিনি ইরানে ইসলামি বিপ্লব সফল করেছিলেন। এখন ইরানের ইসলামি বিপ্লব ৩৫ বছর অতিক্রম করেছে।  ইসলামের প্রতি নিবেদিত থাকার কারণে আজ পর্যন্ত সেই বিপ্লব টিকে রয়েছে। সাম্রাজ্যবাদ এবং পৃথিবীর অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আপোষহীন থেকেও ইরান তাঁর অস্তিত্বকে শুধু টিকিয়েই রাখেনি বরং অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর মহররমের শিক্ষার মাধ্যমেই ইমাম খোমেনী (র.) এটি অর্জন করেছেন। তিনি নিজেই বলেছেন, আমরা মহররম ও সফর মাস থেকেই  এ শিক্ষা নিয়েছি এবং আমাদের সব অর্জন এই দুই মাসের চেতনা ও শিক্ষার কাছে ঋণী।
আর এই মহররম ও সফর মাসের বিষয়টি আশুরা এবং কারবালার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ইরানের জনগণের মধ্যে ইমাম হুসাইন (আ.)র প্রতি যে ভালোবাসা রয়েছে সেই ভালোবাসাকে তিনি সঠিক খাতে প্রবাহিত করতে পেরেছিলেন।  ইমাম হুসাইন যেমন ইয়াজিদের বিরুদ্ধে বিপ্লব এবং যুদ্ধ করেছেন একইভাবে ইমাম খোমেনী (র.)ও তৎকালীন সময়ের সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে এবং  তাঁর দেশের মধ্যে সেই সাম্রাজ্যবাদীদের দোসর- শাহ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও বিপ্লব করে তাদেরকে তাড়িয়ে দিয়ে সেখানে ইসলামি বিপ্লবের পতাকা উড়িয়েছেন। সারাবিশ্বের মুসলিম চিন্তাবিদগণ তো ইমাম খোমেনীর এই শিক্ষা থেকেও লাভবান হতে পারেন। তারাও এই শিক্ষা থেকে নিজেদের জীবনকে উজ্জীবিত করতে পারেন।
ইমাম হুসাইন (আ.)র প্রতি আমাদেরও তো ভালোবাসা আছে। পৃথিবীর প্রতিটি মুসলমানেরই ইমাম হুসাইনের প্রতি গভীর ভালোবাসা আছে। ইসলামি চিন্তাবিদরা সেই শিক্ষার আলোকে একটা লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঠিক করে নিতে পারে যে কিভাবে তারা তাদের জীবনে মহররমের শিক্ষাকে বাস্তবায়ন করবে যাতে অন্যের কাছে নতজানু হয়ে থাকতে না হয়।
বর্তমান বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের পররাষ্ট্রনীতিতে আমরা লক্ষ্য করি, বেশিরভাগ দেশই আমেরিকা কিংবা পরাশক্তির কাছে আত্মসমর্পন করে আছে। তাদের মধ্যে সেই বিপ্লবী চেতনা নেই যা সেদিন ইমাম হুসাইন (আ.) কারবালার মাধ্যমে আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। আমরা আজ সেই শিক্ষা থেকে দূরে সরে গেছি। ইমাম খোমেনী (র.) সেই শিক্ষাকে কাজে লাগিয়েছিলেন। ইমাম খোমেনী তাঁর জাতির প্রতিটি সদস্যের প্রতি আহবান জানিয়েছিলেন,  ইমাম হুসাইন ইয়াজিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন, প্রতিটি যুগেই ইয়াজিদ রয়েছে। আর সেইসব ইয়াজিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। বিশ্বের প্রতিটি সমাজে, প্রতিটি জাতির মধ্যেই ইয়াজিদের মতো লোকদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। আর এসব লোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা, তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া মুসলমানদের দায়িত্ব। আর এ বিষয়টি ইসলামি চিন্তাবিদদের ভেবে দেখতে হবে। ইরানের ইসলামি বিপ্লব থেকে আমরা সেই শিক্ষা নিতে পারি। মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে যেসব ইসলামি আন্দোলন হচ্ছে সেখানে কিন্তু এই চেতনার অভাব আমরা লক্ষ্য করি। এই চেতনার অভাবেই তারা লক্ষ্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হচ্ছেন। তারা একদিকে জনগণকে বলছেন আমরা ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চাই। অথচ আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে স্পষ্টভাবে বলেছেন, তোমরা জালেমদের দিকে ঝুঁকে পড়ো না। অথচ আল্লাহর সেই নির্দেশকে তারা মেনে চলছেন না। তারা একদিকে ইসরাইল ও আমেরিকার সঙ্গে সমঝোতা করে চলার নীতি গ্রহণ করছেন অন্যদিকে নিজ দেশের জনগণকে নিয়ে তাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে চলতে চান।
আমাদের ইসলামি চিন্তাবিদ ও মুসলিম সমাজকে বিষয়টি গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে। যখন আমরা কারবালার কথা বলব, যখন আমরা ইমাম হুসাইনের কথা বলব –তখন সব ইসলামি আন্দোলনের নেতাকর্মীর দায়িত্ব হচ্ছে, কল্যাণ চিন্তার নামে ইসলামের শক্রর সঙ্গে আপোস করা যাবে না। ইসলামের শক্রর সঙ্গে সন্ধি বা কোয়ালিশন- এ দুটোকে কখনই একচোখে দেখা ঠিক নয়। অনেকে কোয়ালিশন এবং সন্ধির মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন না। সন্ধি হচ্ছে দুটি পক্ষের মধ্যে আপাতত যুদ্ধবিরতির একটি উদ্যোগ। কিন্তু কোয়ালিশন ভিন্ন বিষয়। যে ইসলামের শত্রু তার সঙ্গে মিলেমিশে কখনই কাজ করা সম্ভব নয়।
হুদাইবিয়ার যুদ্ধের সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) যে সন্ধি করেছিলেন সেখানে তিনি কিন্তু কাফেরদের সঙ্গে সমঝোতায়  যাননি এবং একথা বলেননি যে আজ থেকে আমরা একসঙ্গে কাজ করব। বরং সেখানে একটা সিসফায়ার হয়েছিল যে, আমরাও আপনাদের আক্রমণ করব না এবং আপনারাও আমাদেরকে আক্রমণ করবেন না। পাশ্চাত্যের সঙ্গে যদি কোন সন্ধি করতে হয় তাহলে এ ধরনের শর্তে করা উচিত। কিন্তু এভাবে নয় যে, আমরা তাদের সব কথা মেনে নেব। আমরাও তাদের কিছু কথা মেনে নেব, তারাও আমাদের কিছু কথা মেনে নেবে- এ ধরনের কিছু করার অবকাশ ইসলাম রাখেনি। রাসূল (সা.)কে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, 'আপনি কাফেরদেরকে বলে দিন; তোমরা তোমাদের দ্বীন নিয়ে থাক এবং আমরা আমাদের দ্বীন নিয়ে থাকব।’ এখানে কাফেরদের সমালোচনা করা হয়েছে। তাদেরকে বলা হয়েছে, তোমরা আল্লাহকে অস্বীকারকারী। ফলে এখানে ঘোষণা দেয়া হচ্ছে যে, আমাদের ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের মাথা ঘামানোর কোন সুযোগ নেই। আমাদের ইসলাম চিন্তাবিদদের এসব বিষয় ভেবে দেখা উচিত এবং এ থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত। মুসলিম সমাজের দায়িত্ব  ইমাম হুসাইন (আ.)র আন্দোলন নিয়ে গবেষণা করা এবং এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে বর্তমান সমাজে কাজে লাগানো।
 প্রতিটি দিনই আশুরা ও প্রতিটি ময়দানই কারবালাঃ
প্রতিটি দিনই আশুরা এবং প্রতিটি ভূমিই কারবালা- এ হাদিসটির অনেকগুলো অর্থ হতে পারে। তার মধ্যে আমি যে অর্থটির কথা বলতে চাই সেটি হচ্ছে, সারা পৃথিবীর যেখানেই অবস্থান করি না কেন এবং যে সময়ই হোক না কেন- কারবালা এবং আশুরার গুরুত্ব রয়েছে। আশুরার দিন সংঘটিত দুপুর থেকে আসর পর্যন্ত কয়েক ঘন্টার যুদ্ধ এখানে প্রধান বিষয় নয়। আসলে ওই সময়টিতে সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্বেরই একটা চিত্র ফুটে উঠেছে। কারবালার ঘটনা এমন কোন বিষয় নয় যে ১৪০০ বছর আগে হয়েছে; ভবিষ্যতে এর কোন প্রভাব বা প্রতিক্রিয়া নেই। পৃথিবীর যেখানে এবং যে সময়ে আমরা অবস্থান করি না কেন কারবালার ঘটনার গুরুত্ব আমাদের কাছে রয়েছে। আর আশুরার দিনটিকে নিয়ে অবশ্যই আমাদেরকে স্থান ও সময়ের গণ্ডি পেরিয়ে চিন্তা করতে হবে। সৃষ্টির প্রথম থেকেই  হযরত আদম (আ.) ও শয়তানের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব  শুরু হয়েছে সেটি অব্যাহত থাকবে এবং ইমাম মাহদী (আ.)র চূড়ান্ত বিজয়ের মাধ্যমে তার পরিসমাপ্তি ঘটবে।
সত্য ও মিথ্যার মধ্যে এই যে ঐতিহাসিক দ্বন্দ তারই একটি চিত্র আমরা লক্ষ্য করি কারবালার ঘটনার মধ্যে। রাসূল (সা.)র সময় বা তার আগে কারবালার মতো নিষ্ঠুর ঘটনা দেখা যায় না। আশুরার পর থেকে আজ পর্যন্ত এবং ভবিষ্যতেও এরকম হৃদয়বিদারক কোন ঘটনা হয়তো আমরা দেখব না। তবে সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্ব কিন্তু আজও অব্যাহত রয়েছে। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির আলোকে আমি বলব, ইয়াজিদ শুধু একটি বংশ, গোত্র বা সমাজের অন্তর্ভুক্ত নয়। প্রতিটি যুগে এবং প্রতিটি সমাজে ইয়াজিদ রয়েছে;  প্রতিটি যুগেই রয়েছে ফেরাউন এবং নমরুদের উপস্থিতি। আমরা লক্ষ্য করলে দেখতে পাব, বিশ্বের প্রতিটি মুসলিম দেশে কোন না কোন অশান্তি ও অস্থিরতা বিরাজ করছে। এগুলো আসলে কারা করছে? এগুলো ইসলামের শক্ররাই করছে। আর এক্ষেত্রে ইসলামি দেশগুলোর জনগণের দায়িত্ব রয়েছে।
 বর্তমান যুগের ইয়াজিদদের সম্পর্কে আমাদের করণীয়ঃ
 বর্তমান বিশ্বে অশান্তি, বিশৃঙ্খলা ও অস্থিশীলতা  সৃষ্টিকারীরা হচ্ছে ইয়াজিদেরই প্রেতাত্মা। তারা ইয়াজিদের প্রতিনিধি হিসেবে আজ সারাবিশ্বে অন্যায় ও অবিচার চালাচ্ছে। নব্য ইয়াজিদদের বিরুদ্ধে মুসলিম দেশগুলোর জনগণের কি কোন দায়িত্ব নেই? তারা কি চুপ করে বসে থাকবে? মুসলিম চিন্তাবিদ এবং শিক্ষিত সমাজের এক্ষেত্রে দায়িত্ব রয়েছে তাদের জাতি ও সমাজকে সচেতন করা। তাদের সামনে এ যুগের ইয়াজিদদের পরিচয় তুলে ধরতে হবে।  
 আজকের ইয়াজিদ হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো। আর এই সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিটি মুসলিম জাতিকে সচেতন করার দায়িত্ব ইসলামি চিন্তাবিদদের। শুধুমাত্র  ইসলামের বিধি-বিধান- নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত এবং  ব্যক্তিগত আহকাম পালন করার মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেললেই তো দায়িত্ব পালন হয়ে গেল না। আজ কারা মুসলমানদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করছে, কারা আজ শিয়া-সুন্নীর মধ্যে দ্বন্দ লাগাচ্ছে? পাকিস্তান, ইরাক ও আফগানিস্তানে বর্তমানে কি ঘটছে? এসব দেশে শিয়া ও সুন্নী মুসলমানদের মধ্যে দ্বন্দ-সংঘাত সৃষ্টি করে দিয়ে মুসলমানদের মধ্যে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হয়েছে।
আবার আহলে সুন্নাতের মধ্যেও একই রকম অবস্থা দেখতে পাচ্ছি। যেমন- তুরস্কে- কুর্দি এবং তুর্কীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘাত সৃষ্টি হয়েছে। সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। এগুলো মুসলমানদের শক্রদের পরিকল্পনায় তাদের এজেন্টদের মাধ্যমে সৃষ্টি করা হচ্ছে। ফলে নিজেদের মধ্যে শত্রুতায় লিপ্ত হওয়ার আগে  আমাদের শত্রুদেরকে চিনতে হবে যারা আমাদের মধ্যে পরিকল্পিতভাবে দ্বন্দ্ব-সংঘাত সৃষ্টি করছে। আর এক্ষেত্রে আমাদের প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে, মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করা। আমরা কেন শক্রদেরকে প্রশ্রয় দেব এবং পরস্পরকে কাফের বলব? কেন পরস্পরের রক্ত ঝরানোকে বৈধ বলে মনে করব? এসব তো কখনই ঠিক নয়। আমাদের কাজ হচ্ছে শক্রদের পরিকল্পনাগুলো চিহ্নিত করা। তারপর সেসব পরিকল্পনা কিভাবে এবং কাদের মাধ্যমে আমাদের ওপর ব্যবহার হচ্ছে সেটিকেও খুঁজে বের করতে হবে। আর এসব বিষয় সনাক্ত করে তার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আর যদি আমরা এটা করতে ব্যর্থ হই তাহলে আমাদের সামনে অত্যন্ত ভয়াবহ পরিণতি নেমে আসবে। এজন্য আমাদের মুসলিম চিন্তাবিদ, গবেষক, আলেম, শিক্ষিত সমাজ বিশেষ করে যারা মিডিয়ার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন তাদের বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। আর এ বিষয়ে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেই আশুরার শিক্ষাকে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এর অন্যথায় আজ সারাবিশ্বে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র চলছে তা নস্যাৎ করা সম্ভব হবে না।

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

পবিত্র কোরআনের আলোকে কিয়ামত
ইমাম মাহদী (আ.)এর আগমন একটি অকাট্য ...
পিতা মাতার সাথে উত্তম আচরণ
রজব মাসের ফজিলত ও আমলসমূহ
তাসাউফ : মুসলিম উম্মাহর সেতুবন্ধন
শাবে জুম্মা
সালাতে তারাবী না তাহাজ্জুদ ?
দাওয়াতে দ্বীনের গুরুত্ব ও ...
‘ইমাম হুসাইন (আ.)’র বিপ্লবই ...
ফিলিস্তিনি বালিকা

 
user comment