বাঙ্গালী
Sunday 24th of November 2024
0
نفر 0

হিজাব সমাজকে পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রাখে

হিজাব কথাটি শুনলে অনেকে আঁতকে ওঠেন। পর্দা করতে হবে, বোরকা পরতে হবে, স্কার্ফ মাথায় থাকতে হবে, সারাক্ষণ গৃহে বন্দী হয়ে দিন যাপন করতে হবে, পর পুরুষের সাথে কথা বলা যাবে না। এ ধরনের নানা প্রশ্ন-ভীতি মাথায় ভর করে। এটার একমাত্র কারণ পর্দা বা হিজাব কী জিনিস আমরা অনেকে তা বুঝি না। এই অজ্ঞতাই আমাদের অনেক সময় ভুল পথে পরিচালিত করে।
পর্দা করা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য অলঙ্ঘনীয় বিধান: নারী-পুরুষের সমন্বিত প্রচেষ্টায় গঠিত হয় পরিবার, সমাজ, জাতি ও রাষ্ট্র। একটি আদর্শ পরিবার ও সমাজ গঠনে নারীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। পুরুষের ভূমিকার পাশাপাশি নারীর ভূমিকাও মুখ্য। কিন্তু নারী ও পুরুষের সমান অধিকারের নামে অবাধ মেলামেশাকে ইসলাম সমর্থন করে না। তাই ইসলাম পর্দার বিধান ফরজ করে দিয়েছে। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন: হে ঈমানদারগণ! নবী গৃহে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করো না, খাবার সময়ের অপেক্ষায়ও থেকো না। হাঁ যদি তোমাদের খাবারের জন্য ডাকা হয়, তাহলে অবশ্যই এসো কিন্তু খাওয়া হয়ে গেলে চলে যাও, কথাবার্তায় মশগুল হয়ে পড়ো না। তোমাদের এসব আচরণ নবীকে কষ্ট দেয় কিন্তু তিনি লজ্জায় কিছু বলেন না এবং আল্লাহ হককথা বলতে লজ্জা করেন না। নবীর স্ত্রীদের কাছে যদি তোমাদের কিছু চাইতে হয় তাহলে পর্দার পেছন থেকে চাও। এটা তোমাদের এবং তাদের মনের পবিত্রতার জন্য বেশী উপযোগী। তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়া মোটেই জায়েয নয় এবং তাঁর পরে তাঁর স্ত্রীদেরকে বিয়ে করাও জায়েয নয়, এটা আল্লাহর দৃষ্টিতে মস্তবড় গোনাহ। (সূরা আহযাব: ৫৩)
নারী ও পুরুষের প্রত্যেকেরই নিজস্ব অঙ্গনে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। একমাত্র ইসলামই নারীর অধিকার যথার্থভাবে সংরক্ষণ করেছে। তাকে বানিয়েছে গৃহের রাণী। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন : নারী নিজ গৃহের দায়িত্বশীলা, তার গৃহ সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে। তাই বলে ইসলাম তাকে ঘরের আসবাবপত্র বানায় নাই। বরং প্রয়োজনের তাগিদে হিজাব পরিধান করে বা পর্দা সহকারে মার্জিতভাবে বাড়ি থেকে বের হওয়ার এবং প্রয়োজনীয় সকল প্রকার হালাল কাজের অনুমতি দিয়েছে। তবে শর্ত তা-পর্দা সহকারে করতে হবে এবং সৌন্দর্য প্রদর্শন করা যাবে না। পর্দা সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে এমন একটা সংযম, ত্যাগ, শালীনতার সীমারেখা তৈরি করে যা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও সংস্কৃতিকে অসুস্থ প্রতিযোগিতা, অশালীন, অনৈতিক ও অপসংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে রক্ষা করে এবং সেই সাথে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক শৃঙ্খলা, নৈতিক মূল্যবোধ, ব্যক্তি ও পরিবারে শান্তি, মানসিক ও সাংস্কৃতিক স্থিরতা ও সময়ের যথার্থ মূল্যায়নের নিশ্চয়তা প্রদান করে। শরীরভিত্তিক ও বস্তুতান্ত্রিক চিন্তা-ভাবনা থেকে বিরত রেখে সমৃদ্ধ দেশ ও সমাজ গড়ার দিকে ফিরিয়ে আনে। ইসলামী শরীয়তের প্রতিটি ইবাদতের কাযা, কাফ্ফারা ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কসর রয়েছে। কিন্তু পর্দা বা হিজাবের জন্য প্রস্তুত থাকতে হয় সার্বক্ষণিক। তাই ইহার গুরুত্ব অপরিসীম এবং পুরস্কার সুমহান। আর পর্দাহীনতার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ।
মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে হিজাব শব্দটি এসেছে পাঁচবার, যার আভিধানিক অর্থ হলো প্রতিহত করা, ফিরিয়ে আনা, আড়াল করা, আবৃত্ত করা, আচ্ছাদিত করা ইত্যাদি। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় হিজাব বা পর্দা সেই বিধিব্যবস্থা ও চেতনা যার মাধ্যমে ঘর থেকে শুরু করে, রাস্তা-ঘাট, ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রণহীন কথাবার্তা, দর্শন, দৃষ্টিবিনিময়, সৌন্দর্য প্রদর্শন ও বলগাহীন আচরণ থেকে বিরত থাকা যায়। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন: আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনা স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের ওপর টেনে দেয়। এতে করে তাদেরকে খুব কমই চেনা যাবে। ফলে তাদেরকে কেউ ইভটিজিং বা উত্ত্যক্ত করবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব: ৫৯)
পর্দা নারী-পুরুষ সকলের জন্যই ফরজ এবং ইহা বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন: হে নবীপত্নীগণ তোমরা অন্য নারীদের মত নও; তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় কর তবে অন্য পুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না। সে ব্যক্তি কুবাসনা করে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে। তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে এবং নিজ গৃহে অবস্থান করবে, আর জাহেলি যুগের নারীদের ন্যায় সৌন্দর্য প্রদর্শন করবে না। নামাজ কায়েম করবে, জাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে। (সূরা আহযাব: ৩২-৩৩) এ আয়াত দু’টি পুরুষ থেকে নারীর পর্দার আবশ্যকতার সুস্পষ্ট প্রমাণ। উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা’আলা পর্দাকে নারী পুরুষ সকলের হৃদয়ের জন্য অতিপবিত্রতার কারণ বলে দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেছেন। পর্দা অশ্লীলতা, নোংরামি, মন্দকাজ ও তার উপায় উপকরণ থেকে অনেক দূরে রাখে। বেপর্দা ও অবাধ চলাফেরাকে ময়লা আবর্জনা এবং নাপাক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ইসলামী শরীয়তে পর্দার তিনটি উদ্দেশ্য রয়েছে। প্রথমত, নারী ও পুরুষের চারিত্রিক হেফাজত করা এবং অবাধ মেলামেশার কারণে যে ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয় সেগুলো প্রতিরোধ করা। দ্বিতীয়ত, নারী ও পুরুষের কর্মক্ষেত্রকে পৃথক করা, যাতে তাদের ওপর প্রকৃতি যে গুরুদায়িত্ব অর্পণ করেছে তা নিরাপত্তার সাথে পালন করতে পারে। তৃতীয়ত, পারিবারিক ব্যবস্থাকে সুরক্ষিত ও সুদৃঢ় করা। জীবণের অন্যান্য সকল ক্ষেত্রের চেয়ে পারিবারিক ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু গুরুত্বপূর্ণই নয় বরং জীবণব্যবস্থার মূল বুনিয়াদ। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন: মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ্ তা অবহিত আছেন। ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে। (সূরা নূর-৩০/৩১) হজরত জারির (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হঠাত যদি কারো নজর পড়ে যায় তা হলে কী করব? উত্তরে রাসূল (সাঃ) বললেন : দৃষ্টি ফিরিয়ে নাও। (আবু দাউদ)
ইসলামে পর্দার বিধান শুধু নারীর জন্য নয়, নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য। তেমনি পর্দা-বিধান শুধু ব্যক্তিজীবনের বিষয় নয়। পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনেরও বিষয়। পর্দা যে ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান তা মুসলিম-সমাজের সকলেই জানেন। শিক্ষিত-অশিক্ষিত, দ্বীনদার-দ্বীনহীন সবারই জানা আছে যে, বেগানা নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা ইসলামে অপরাধ। সমাজের ব্যাপক পর্দাহীনতার কারণে এই পাপের অনুভূতি ক্রমশ লোপ পেলেও মূল বিধানটি সবারই জানা আছে। এটি ব্যক্তির ঈমান ও ইসলামের মানদন্ড। ইসলাম তো আর কিছু নয়, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি বিশ্বাস ও সমর্পণেরই পারিভাষিক নাম। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের যে বিধান ও শিক্ষা দ্ব্যর্থহীন ও সর্বজনবিদিত তা সমর্পিত চিত্তে মেনে নেওয়া ছাড়া কোনো ব্যক্তি কীভাবে মুমিন-মুসলমান থাকতে পারে? আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন ইরশাদ করেন: যিনার কাছেও যেয়ো না, ওটা অত্যন্ত খারাপ কাজ এবং খুবই জঘন্য পথ। (সূরা বনী ইসরাঈল: ৩২) অর্থাত, যিনার কাছেও যেয়ো না; এ হুকুম ব্যক্তির জন্য এবং সামগ্রিকভাবে সমগ্র সমাজের জন্যও। ব্যক্তির জন্য এ হুকুমের মানে হচ্ছে, সে নিছক যিনার কাজ থেকে দূরে থেকেই ক্ষান্ত হবে না বরং এ পথের দিকে টেনে নিয়ে যায় যিনার এমন সব সূচনাকারী এবং প্রাথমিক উদ্যোগ ও আকর্ষণ সৃষ্টিকারী বিষয় থেকেও দূরে থাকবে। আর সমাজের ব্যাপারে বলা যায়, এ হুকুমের প্রেক্ষিতে সমাজ জীবনে যিনা, যিনার উদ্যোগ আকর্ষণ এবং তার কারণসমূহের পথ বন্ধ করে দেয়া সমাজের জন্য ফরয় হয়ে যাবে। এ উদ্দেশ্যে সে আইন প্রণয়ন, শিক্ষা ও অনুশীলন দান, সামাজিক পরিবেশের সংস্কার সাধন, সমাজ জীবনের যথাযোগ্য বিন্যাস এবং অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যবস্থা অবলম্বন করবে। এ ধারাটি শেষ পর্যন্ত ইসলামী জীবন ব্যবস্থার একটি বৃহত্তম অধ্যায়ের বুনিয়াদে পরিণত হয়। এর অভিপ্রায় অনুযায়ী যিনা ও যিনার অপবাদকে ফৌজদারী অপরাধ গণ্য করা হয়। পর্দার বিধান জারী করা হয়। অশ্লীলতা ও নির্লজ্জতার প্রচার কঠোরভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। মদ্যপান, নাচ, গান ও ছবির (যা যিনার নিকটতম আত্মীয়) ওপর কড়া নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়। আর এ সংগে এমন একটি দাম্পত্য আইন প্রণয়ন করা হয় যার ফলে বিবাহ সহজ হয়ে যায় এবং এ যিনার সামাজিক কারণসমূহের শিকড় কেটে যায়। ইসলামের পর্দা-ব্যবস্থা যদি পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়িত হয় তাহলে মুসলিম নর-নারীর ব্যক্তি জীবনের সাথে সাথে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনও সুস্থ ও পবিত্র হবে। পক্ষান্তরে পর্দা-বিধান কার্যকর না থাকলে যেখানে যেখানে তা অনুপস্থিত সেখানে সেখানেই পঙ্কিলতা ও অস্থিরতার অনুপ্রবেশ ঘটবে। এ কারণে ইসলামের পর্দা বিধান হল ব্যক্তি ও সমাজের রক্ষাকবচ। এই সত্য আমরা যত দ্রুত উপলব্ধি করব তত দ্রুত কল্যাণ লাভ করব। এ কারণেই ইসলামের পর্দা-ব্যবস্থার যারা বিরোধী তারা শুধু দ্বীন-ধর্মেরই বিরোধী নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রেরও বিরোধী; তারা মানব ও মানবতার মুক্তি ও কল্যাণেরও বিরোধী। সঙ্গত কারণেই পর্দা-বিধানকে বলা যায় বর্তমান মুসলিম সমাজের জন্য আসমানী ফুরকান তথা এমন এক ঐশী মানদন্ড যা মুমিন-মুনাফিকের মাঝে টেনে দেয় পরিষ্কার পার্থক্য রেখা। পরিশেষে এ কথা বলা যায় যে, পর্দা এমন একটি ইবাদত যা ধনী-গরিব, নারী-পুরুষ সকলের ওপর ফরজ। ইহা অবিশ্বাস করলে সে কাফির হয়ে যাবে। আর বে-পর্দা হয়ে চলাফেরা করলে দুনিয়াতে তার জন্য লাঞ্ছনা এবং পরকালে কঠিন পীড়াদায়ক শাস্তি রয়েছে। অতএব ইসলামে পর্দার অপরিসীম গুরুত্বের দাবি রাখে। তাই আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত সমাজে শান্তি এবং পরকালে মুক্তির লক্ষ্যে পর্দার অনুশীলন করা। বিশেষ করে আমরা যারা মুসলমান হিসেবে দাবী করি তাদের এবং পরিবারের সদস্যদের আরও বেশি যত্নশীল হওয়া। আজ সকল মুসলিমের ঈমানী কর্তব্য, পর্দার বিধানের দিকে ফিরে আসা। ব্যক্তি ও পরিবার এবং সমাজ ও রাষ্ট্রের শান্তি-শৃঙ্খলা এবং স্বস্থি ও পবিত্রতা রক্ষার এ ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। মেহেরবান আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলকে সত্যকে সত্য জানার এবং সমর্পিত চিত্তে তা অনুসরণ করার তাওফীক দান করুন। আমীন!(সূত্র : ইন্টারনেট)

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

আল্লাহর প্রতি ইমান
মৃত্যুর পর মানুষকে কতদিন কবরে ...
শিয়া-সূন্নীর মধ্যে পার্থক্য কি?
নামাজ : আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের ...
মিথ্যা কথা বলা
শিয়া মুসলমানরা কত ওয়াক্ত নামাজ ...
বারজাখের জীবন
সূরা ইউনুস;(১৬তম পর্ব)
দরিদ্রতার চেয়ে মৃত্যু ভাল
দোয়া কবুলের মাস

 
user comment