বাঙ্গালী
Sunday 24th of November 2024
0
نفر 0

সফলতার অন্যতম একটি কারণঃ ধৈর্য

আপনার জীবন থেকে আপনি এমন একটা মুহূর্তের কথা ভেবে দেখুন যখন আপনি পেয়েছেন “সবর” বা ধৈর্যের পরিণাম। যেমন পাবলিক পরীক্ষা, চাকরির ইন্টারভিউ, সন্তান জন্মের অপেক্ষা, একজন রাঁধুনির ভাল রান্নার চেষ্টা, শিক্ষকের শিক্ষার্থীকে পড়ানোর মুহূর্ত এরকম আরও অনেক কিছু আছে – যে সময় আপনি “সবর” করেছিলেন আর পেয়েছেন কাঙ্ক্ষিত সফলতা। আর আপনি সঠিক কাজটিই করেছিলেন সেই সময়ে। আর আমরা এসব নিয়মিত ব্যপারগুলো থেকে শিক্ষা নিতে পারি কিভাবে ধৈর্য ধরতে হয় জীবনের আরও কঠিন সময়গুলোতে। তাই শুধু দুনিয়ার কাজে “সবর” করলে হবেনা, আমাদের আখিরাতের সফলতার জন্য “সবর”-এর চেষ্টা করতে হবে। আর এর জন্য অনেক বেশী দুআ করতে হবে যেন আল্লাহ আমাদের অন্তরে এই সুন্দরগুনটার আবির্ভাব ঘটিয়ে দেন।
“সবর” বা ধৈর্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রঃ ইসলামি স্কলারদের মতে, “সবর”-এর কিছু মূল ক্ষেত্র আছে; আসুন উদাহারনের মাধ্যমে এই ব্যপারগুলো বুঝার চেষ্টা করিঃ
[১] আল্লাহর আনুগত্যে “সবর” করা সবচেয়ে প্রথম এবং প্রধান কাজ আমাদের জন্য – যেমন আপনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায় করতে ইচ্ছা রাখেন কিন্তু ফজর-এর জামাত আপনার প্রায় সময় ছুটে যায় বিভিন্ন কারণে। আপনি কি হতাশ হয়ে যাবেন? না। আপনাকে আপনার অন্তরের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে হবে এবং সর্বাত্নক চেষ্টা করতে হবে ঘুম থেকে উঠার জন্য, যে কোন উপায়ে। তাও যদি না হয় তাহলে কি করবেন?  “সবর”। অর্থাৎ আল্লাহ আপনাকে একদিন এই সুযোগ করে দিবেন যখন আপনি প্রতিদিন ফজর-এর জামাত মসজিদে পড়তে পারবেন। আর এটাই হচ্ছে “সবর” করার পরিণাম। এরকম আরও অনেক কষ্টকর ইবাদত আছে যেমন হজ্জ, রোজা, অন্তরের সাথে জিহাদ ইত্যাদি ক্ষেত্রে “সবর” করা খুবই জরুরী। ইব্রাহীম (আঃ) যখন তাঁর প্রিয় স্ত্রী আর আদরের সন্তানকে আল্লাহর নির্দেশমত সেই মরুপ্রান্তরে রেখে এসেছিলেন তখন তিনি “সবর” করেছিলেন আল্লাহর এই পরীক্ষা দিতে গিয়ে। আর তাঁর এই “সবর”, কষ্ট আর আল্লাহর সাহায্যের ফলে তিনি নির্মাণ করেছিলেন বায়তুল্লাহ (কাবা ঘর)।
[২] অন্যকে ভাল কাজের উৎসাহ এবং অন্যায় কাজে বিরত থাকার উপদেশ দিতে গিয়ে “সবর” করা – আপনি যদি একজন ইসলামের প্রচারক হয়ে থাকেন, তবে যখন আপনি অন্যদেরকে ইসলামের পথে আসার জন্য আহ্বান করবেন আপনাকে হয়ত অনেক কটু কথা শুনতে হতে পারে। আর এসব ক্ষেত্রে দেখা যায় আপন লোকজন আপনাকে অনেক বেশি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবে। আপনাকে তখন “সবর” করতে হবে। আমরা সবাই জানি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন মক্কার কুরাইশদের ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করলেন তারা নবীজীর উপর কতইনা অত্যাচার করা শুরু করেছিল। আর তায়েফের সেই ঘটনা যেখানে ইসলামের দাওয়াত দিতে গিয়ে শিশুরা তাঁকে পাথর নিক্ষেপ আর বিদ্রূপ করেছিলেন; তিনি চাইলে আল্লাহর কাছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারতেন; কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি “সবর”-এর সাথে উম্মাহকে ভাল কাজের উৎসাহ এবং অন্যায় কাজ হতে বিরত থাকার কথা বলেছেন যা আজও আমরা অনুসরণ করছি। আর এসবই হচ্ছে “সবর”-এর সফলতা।
[৩] হারাম জিনিস দূরে থাকার ক্ষেত্রে “সবর” করা – এটা খুবই স্বাভাবিক, আপনার সামনে যে কোন সময় আসতে পারে হারাম কাজের সুযোগ। যেমন আপনি ইন্টারনেটে বসে ব্রাউজ করছেন আর হঠাৎ আপনার স্ক্রীনে পপআপ করল অশ্লীল কিছু দৃশ্য আর আপনার আশেপাশে কেউ নেই! আপনি খুব সহজেই সেসব ওয়েবসাইটে গিয়ে হারাম আনন্দ নিয়ে আসতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনি কি করবেন? সবর করুন আর ওইসব অযাচিত পপআপ স্ক্রীন বন্ধ করে দিন এবং আপনার পূর্বের কাজে মনোনিবেশ করুন। কিন্তু যদি আপনি রেগে গিয়ে উঠে চলে যান তাহলে কিন্তু আপনার কাজে ব্যঘাত ঘটে যাবে আর আপনিও “সবর”-এর সেই সুন্দর টেস্ট থেকে বঞ্ছিত হবেন। ইউসুফ (আঃ) এর সেই ঘটনা, যখন মন্ত্রীর স্ত্রী তাঁকে হারাম কাজে ফাঁসানোর চেষ্টা করছিল, ইউসুফ (আঃ) “সবর” করেছিলেন আর আল্লাহ তাঁকে সাহায্য করেছিলেন। “সবর” করলে আল্লাহর সাহায্য আপনার জন্য নিশ্চিত, তা আসবেই।
[৪] অন্যায় করার সুযোগ সামনে এলে “সবর” করা – আপনি অফিসের একজন কর্মকর্তা, আপনার কাছে এক সুযোগ এসেছে যখন আপনি চাইলে হাজার হাজার কোটি টাকার ঘাপলা করতে পারেন। আপনার কাছে এই ধরনের সুযোগ যদি আসে প্রথমত নিজেকে তা থেকে বিরত রাখতে হবে। কিন্তু শয়তান আপনাকে কুমন্ত্রণা দিতে পারে, তখন আপনার অন্তরকে বুঝাতে হবে লাইফে কোনো শর্টকার্ট পথ নেই সফলতার জন্য, চাই কষ্ট আর “সবর”। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন খাদিজা (রাঃ)-এর ব্যবসার জন্য অন্য দেশে গিয়েছিলেন তখন তিনি কতইনা সুন্দর করে ন্যায় আর “সবর”-এর সাথে ব্যবসা পরিচালনা করেছিলেন আর তাতে সফল হয়েছিলেন।
[৫] বিপদে-আপদে “সবর” করা – আপনি রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন আর আপনার ব্যাগ ছিনতাই হয়ে গেল বা মূল্যবান জিনিস হারিয়ে গেল তখন খারাপ লাগাটাই স্বাভাবিক। তবে তাই বলে তা নিয়ে আহজারি বা অন্যকে দোষারোপ করলে চলবেনা; করতে হবে সুন্দর এই গুনের ব্যবহার। ইউনুস (আঃ) যখন অতল সমুদ্রে মাছের পেটে চলে গেলেন তিনি সেখানে দুআ করছিলেন আর “সবর” করছিলেন আল্লাহর সাহায্যের জন্য।
তাহলে আমরা বলতে পারি “সবর” একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল আর এর বহিঃপ্রকাশ ঘটবে প্রথমত দুআর মাধ্যমে, মানে আপনি যখন “সবর” করছেন আপনি অবশ্যই দুআ করবেন। পরবর্তীতে আপনি যখন কষ্ট হলেও ভাল কাজ চালু রাখবেন, অন্যায় ও হারাম থেকে নিজেকে দূরে রাখবেন এবং আল্লাহর আনুগত্য চালিয়ে যাবেন নিষ্ঠার সাথে, আপনি বুঝবেন আল্লাহ আপনাকে এই সুন্দর গুনটা উপহার দিয়েছেন।
“সবর” বা ধৈর্যের সাধনার জন্য দরকার চেষ্টা আর অধ্যাবসায়
ইসলামি স্কলারদের মতে “সবর” করতে হলে কিছু জিনিসের প্রতি খেয়াল রাখা এবং অনুসরণ করা উচিতঃ
- দুনিয়ার স্বাভাবিক নিয়ম মেনে নেওয়া (মৃত্যু, অসুস্থতা, দুর্ঘটনা ইত্যাদি)
- সবরের পুরষ্কারের প্রতি বিশ্বাস রাখা (দুনিয়া অথবা আখিরাতে)
- বিপদ একসময় কেটে যাবে এই বিশ্বাস রাখা
- নবী-রাসূলদের কাজকর্মে সবর”-এর উদাহারণ ভরপুর (কিছু উদাহারন উপরে উল্লেখ করার চেষ্টা করেছি)
- নবী পরিবারের সদস্যদের জীবনী থেকে “সবর”-এর শিক্ষা নেওয়া
- রমজান মাসের একটি মূল শিক্ষা হল “সবর”
- হজ্জের কষ্টের পর “সবর” করতে পারাটা অনেক সহজ হয়ে যায়
- সবচেয়ে জরুরী হচ্ছে আল্লাহের কাছে সাহায্য চাওয়া এবং বেশি বেশি দুআ করাঃ
سَلاَمٌ عَلَيْكُم بِمَا صَبَرْتُمْ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ
“‘সালামুন আলাইকুম’(তোমাদের ওপর শান্তিবর্ষিত হোক)যেহেতু তোমরা ধৈর্যধারণ করেছিলে; পরকালের বাসস্থান কতেই না উৎকৃষ্ট!” [১৩ সূরা রা’দঃ আয়াত ২৪]
আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা কুর’আনের অনেক আয়াতে সবর এবং এর প্রতিদান সম্পর্কে বলেছেন।

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

কুরআন ও হাদীসের আলোকে হিংসা ও লোভ
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো ...
ইসলামের দৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠ সম্পদ
ইসলামী বিচার পদ্ধতি
যাকাত
আল্লাহর নবীদের সংখ্যা
ইমামীয়া জাফরী মাজহাব-শেষ পর্ব
কোরআন মজীদের দৃষ্টিতে ছ্বাহাবী ও ...
হামলার আশঙ্কা, পাকিস্তানের ...
শীয়া মাযহাবের উৎপত্তি ও ...

 
user comment