বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর সবচেয়ে প্রিয় ছাত্র ও উত্তরাধিকারী আলী (আ.)-কে সম্বোধন করে বলেছেন:
হে আলী! নিশ্চয় মুমিনের চিহ্ন তিনটি: রোযা, নামায ও যাকাত। আর আত্মকেন্দ্রিক মানুষের চিহ্ন তিনটি: সামনে তোষামোদি, পেছনে বদনাম আর বিপদে গালি-গালাজ করা।
অত্যাচারীর চিহ্ন তিনটি: অধীনকে দমন, ঊর্ধ্বতনকে অমান্য, আর অত্যাচারীদের সাথে আঁতাত করা।
নিজেকে জাহিরকারীর চিহ্ন তিনটি: লোকজনের সামনে তৎপরতা দেখানো, একাকী থাকলে আলসেমি করা আর সবাই তার কাজে বাহবা দিক সেটাই পছন্দ করে।
মুনাফিকের চিহ্ন তিনটি: কারো কথা বর্ণনার সময় মিথ্যারোপ করা, আমানত রাখা হলে তার খেয়ানত করা ও প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা ভঙ্গ করা।
রাসূল (সা.) আলী (আ.)-কে আরো বলেছেন, হে আলী! অলসের চিহ্ন তিনটি: এতটা ঢিলেমি করা যে দায়িত্ব অবহেলায় পর্যবসিত হয়, আর এতটা অবহেলা করা যে (সম্পদ ও সুযোগ) নষ্ট হয়ে যায়, আর এ অবস্থায় পাপীতে পরিণত হওয়া।
আর বিচক্ষণ লোকের জন্য তিনটি উদ্দেশ্য ছাড়া কাজে ব্রত হওয়া মানায় না: জীবন-জীবিকা নির্বাহ অথবা পরকালের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ অথবা হারাম নয় এমন পথে উপভোগ করা।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)আলী (আ.)-কে সম্বোধন করে আরো বলেছেন:
হে আলী! নিশ্চয় মূর্খতার চেয়ে কোনো দারিদ্র্য নেই, বিচক্ষণতার চেয়ে ফলদায়ক সম্পদ নেই, স্বার্থপরতার চেয়ে ভয়ঙ্কর কোনো একাকীত্ব নেই, পরামর্শের চেয়ে ভালো কোনো সহযোগিতা নেই, চিন্তা করার ন্যায় কোনো বুদ্ধিবৃত্তি নেই, সচ্চরিত্রের ন্যায় কোনো বংশ মর্যাদা নেই। আর চিন্তার মতো কোনো ইবাদত নেই। নিশ্চয় কথার রোগ হলো মিথ্যা, জ্ঞানের রোগ হলো বিস্মৃতি, আর দানের রোগ হলো করুণার গর্ব (বলে বেড়ানো ও খোঁটা দেয়া)। সাহসিকতার রোগ অত্যাচার, সৌন্দর্যের রোগ অহংকার আর বংশের রোগ বড়াই।
হে আলী! যখন নতুন চাঁদ দেখবে তখন তিনবার তাকবীর দিবে এবং বলবে : ‘আলহামদু লিল্লাহিল্লাযি খালাকানী ওয়া আলাকাকা ওয়া কাদ্দারাকা মানাযিলা ওয়া জাআলাকা আয়াতাল্লিল আলামীন’ (অর্থ : আল্লাহর প্রশংসা যিনি আমাকে এবং তোমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমার জন্য বিভিন্ন প্রহর নির্ধারণ করেছেন আর গোটা জগতবাসীর জন্য তোমাকে করেছেন নিদর্শন)।
হে আলী! যখন আয়নায় তাকাবে তখন তিনবার তাকবীর দিয়ে বলবে : আল্লাহুম্মা কামা হাসসানতানি খল্কি ফা হাসসিন খুলকি। অর্থ : হে আল্লাহ্! আমার সৃষ্টিকে যেমন সুন্দর করেছেন সেভাবে আমার চরিত্রকেও সুন্দর করুন।
হে আলী! কোনো বিষয় যখন তোমাকে ভীত করে দেয় তখন বলবে : আল্লাহুম্মা বি হাক্কি মুহাম্মাদিওঁ ওয়া আলে মুহাম্মাদিন ইল্লা ফাররাজতা আন্নি। অর্থ : হে আল্লাহ্! মুহাম্মদ এবং আলে মুহাম্মদের উসিলায় আমাকে নিরাপদ করুন।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)আলী (আ.)-কে সম্বোধন করে আরো বলেছেন:
হে আলী! তোমার চলার পথে যদি কোনো সাপ দেখ, হত্যা করবে। কারণ, আমি জ্বিনের সাথে শর্ত করেছি তারা সাপের বেশে আত্মপ্রকাশ করবে না।
হে আলী! দুর্ভাগ্যের চিহ্ন চারটি: শুষ্ক চোখ ( তথা যে চোখ আল্লাহর ভয়ে ও মুমিনদের কষ্ট দেখে ক্রন্দন করে না), কঠিন অন্তর, উচ্চ অভিলাষ, আর দুর্দশাগ্রস্ত হয়েও দুনিয়াকে ভালোবাসা।
হে আলী! যখন তোমার সামনেই তোমার প্রশংসা করা হয়, তখন বলবে: হে আল্লাহ্! তারা আমার সম্পর্কে যেমনটা ধারণা করে, আমাকে তার চেয়ে উত্তম করে দাও আর আমার সম্পর্কে যেগুলো জানে না সেগুলোকে ক্ষমা করে দাও, আর আমার সম্পর্কে যা বলে সে ব্যাপারে আমাকে পাকড়াও করো না।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)আলী (আ.)-কে সম্বোধন করে আরো বলেছেন: হে আলী! যখনই সহবাস করবে তখন বলবে : হে আল্লাহ্! আমাকে শয়তান থেকে দূরে রাখ আর আমাদেরকে যা দান করবে তার থেকে শয়তানকে দূর করে দাও। তা হলে তোমাদের ভাগ্যে যদি কোনো সন্তান লিপিবদ্ধ হয়, তা হলে শয়তান তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
হে আলী! লবণ দিয়ে খাওয়া শুরু করবে এবং লবণ দিয়েই শেষ করবে। কারণ, লবণ ৭০ টি রোগ প্রতিরোধ করে যার মধ্যে ন্যূনতম হলো বুদ্ধি প্রতিবন্ধীত্ব, কুষ্ঠরোগ এবং শ্বেতরোগ।
রাসূল (সা.) আলী (আ.)-কে আরো বলেছেন, হে আলী! শরীরে তেল মালিশ করবে। কারণ, যে ব্যক্তি শরীরে তেল মালিশ করে ৪০ দিন শয়তান (বা জীবাণু) তার কাছাকাছি হয় না।
হে আলী! স্বীয় স্ত্রীর সাথে চন্দ্রের প্রথমা আর মাসের মধ্যরাতে সহবাস করো না। তুমি কি দেখ না যে, যারা বুদ্ধি-প্রতিবন্ধী হয়, তারা অধিকাংশই প্রথমা আর মধ্য মাসের জাতক।
হে আলী! যখন তোমার কোনো পুত্র বা কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করে তখন তার ডান কানে আযান এবং বাম কানে ইকামাত দিবে। তা হলে শয়তান তার কখনো ক্ষতি করবে না।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)আলী (আ.)-কে সম্বোধন করে আরো বলেছেন: হে আলী! আমি কি তোমাকে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি সম্পর্কে অবগত করবো না? বললাম: অবশ্যই, হে রাসূলুল্লাহ্! তিনি বললেন: সে হলো সেই ব্যক্তি যে (অন্যের) পাপকে ক্ষমা করে না এবং বিচ্যুতিকে মেনে নেয় না। আমি কি তার চেয়েও অধম ব্যক্তির সংবাদ তোমাকে দেব? বললাম: অবশ্যই, হে রাসূলুল্লাহ্! তিনি বললেন : সে হলো সেই ব্যক্তি যার অনিষ্টতা থেকে পরিত্রাণ নেই, আর যার থেকে কল্যাণেরও কোনো আশা নেই।
হে আলী! সত্যিই আল্লাহ্ খুশী হন তাঁর বান্দার ওপর যখন সে বলে : হে প্রতিপালক আমার! আমাকে ক্ষমা করো। তুমি ছাড়া পাপ মার্জনা করার আর কেউ নেই। আল্লাহ্ বলেন : হে আমার ফেরেশতারা! আমার এ বান্দা জেনেছে যে, আমি ছাড়া পাপ মার্জনা করার কেউ নেই। তোমরা সাক্ষী থাক, আমি তাকে মার্জনা করে দিলাম।
হে আলী! মিথ্যা পরিহার করো। কারণ, মিথ্যা মুখে কালিমা এনে দেয়, আর সে আল্লাহর কাছে মিথ্যুক হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়। আর সত্য মুখ উজ্জ্বল করে আর আল্লাহর কাছে সত্যবাদী বলে লিপিবদ্ধ হয়। জেনে রাখ, সত্য হলো কল্যাণময়, আর মিথ্যা অমঙ্গলকর।
হে আলী! পরনিন্দা ও একের কথা অপরের কাছে লাগানো থেকে দূরে থাক। কারণ, পরনিন্দা রোযাকে বিনষ্ট করে আর কথা লাগানো কবর আযাবের কারণ হয়।