বাঙ্গালী
Friday 22nd of November 2024
0
نفر 0

আমার বাইয়াত একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

মুআবিয়া হিজরী ৬০ সালের রজব মাসে মারা যায় । ইয়াজিদ মদীনার তৎকালীন গভর্ণর ওলিদ ইবনে ওতবার কাছে এক পত্র লিখল । ঐ পত্রে নির্দেশ ছিল যে আমার আনুগত্যের পক্ষে মদীনার সব লোক বিশেষ করে হোসাইনের কাছ থেকে বাইআত গ্রহণ কর । হোসাইন যদি বাইআত করতে অস্বীকার করে তাহলে তার গর্দান উড়িয়ে দাও এবং আমার কাছে পাঠিয়ে দাও । ওলিদ মারওয়ানকে দরবারে ডেকে পাঠায় এবং এ ব্যাপারে তার পরামর্শ জানতে চায় । মারওয়ান বলল যে, হোসাইন (আ.) শির নত করবে না এবং কিছুতেই ইয়াজিদের হাতে বাইআত করবে না । তবে আমি যদি তোমার স্থানে থাকতাম এবং তোমার মত ক্ষমতার অধিকারী হতাম তাহলে কালবিলম্ব না করে হোসাইনকে হত্যা করতাম । যদি এমন হয় তাহলে আমার কামনা হল, এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার চাইতে দুনিয়াতে আমার না আসাই ভাল ছিল। কেননা, এত বড় বদনামীর বোঝা মাথায় নেয়ার চাইতে সেটাই উত্তম হত ।

এরপর সরকারী দূতকে প্রেরণ করল এবং হযরত হোসাইনকে (আ.) নিজের ঘরে ডেকে পাঠাল । হোসাইন (আ.) তার পরিবার ও বন্ধুদের মধ্য থেকে ৩০ জন সঙ্গী সাথে নিয়ে ওয়ালিদের কাছে আসে । ওয়ালিদ মুয়াবিয়ার মৃত্যুর খবর তাকে জানাল আর ইয়াজিদের হাতে বাইয়াত করার অনুরোধ জানাল । হোসাইন (আ.) বললেন, আমার বাইয়াত একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তা গোপনে ও লোকচক্ষুর অন্তরালে সম্পন্ন হতে পারে না । তবে কাল সকালে জনসাধারণকে যখন বাইয়াতের জন্য আহবান করবে তখন আমাকেও অবহিত করবে । মারওয়ান বলল –হোসাইনের কথায় কর্ণপাত করো না এবং তার অজুহাত গ্রহণ করতে যেওনা । যদি বাইয়াত করতে অস্বীকার করে তবে প্রাণে বাচিয়ে রেখো না । হোসাইন (আ.) অত্যন্ত রাগান্বিত হলেন এবং বললেন – তুমি ধ্বংস হও । হে নষ্টা মেয়ের ছেলে । তুমি কি আমাকে হত্যার আদেশ দিচ্ছ ? আল্লাহর কসম, তুমি মিথ্যা বলেছ । এ কথা বলে তুমি নিজেকে হেয় ও অপমানিত করেছ । এরপর তিনি ওয়ালিদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন – হে আমির! আমরা নবুওতের ঘরের আহলে বাইত, আমরাই রেসালতের খনি । ফেরেশতারা আমাদের ঘরেই আনাগোনা করেন । আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্যই মানুষের দিকে তার রহমতের দরজা খুলে দিয়েছেন । এই রহমতের সমাপ্তি হবে আমাদের নামেই । আর ইয়াজিদ হল একটা মদখোর ফাসেক, খুনী এবং প্রকাশ্যে শরীয়ত লংঘনকারী লোক । আমার মত কোন লোক ইয়াজিদের হাতে বাইয়াত করবে না । তবে কাল ভোর হোক । এ সময়ের মধ্যে আপনিও ভেবে চিন্তে দেখেন । আমিও চিন্তা ভাবনা করে দেখব যে, আমাদের মধ্যে কে খেলাফতের জন্য অধিকতর যোগ্য । এ কথা বলার সাথে সাথে তিনি ওয়ালিদের ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন । মারওয়ান ওয়ালিদকে লক্ষ্য করে বলল, তুমি আমার উপদেশের প্রতি কর্ণপাত করনি । আমার অবাধ্যতা করেছ । ওয়ালিদ বললেন ধ্বংস তোমার জন্য । তুমি কি আমার দ্বীন ও দুনিয়া ধ্বংস করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছ । খোদার কসম আমি চাই না যে, দুনিয়ার রাজত্ব আমার হাতে থাকার জন্য আমি হোসাইনকে (আ.) হত্যা করব । আল্লাহর কসম, আমি বিশ্বাস করি না যে, কেউ হোসাইন (আ.) এর রক্তের বোঝা মাথায় নিয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে । এ ধরনের লোকের অবশ্যই নেক আমলের পাল্লা হালকা হবে এবং তার ক্ষমা পাওয়ার আশাও সুদূর পরাহত । মহান আল্লাহ তার দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না । গোনাহ থেকে তাকে পবিত্র করবেন না । তার জন্য কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে ।
সে রাত কেটে গেল । খুব ভোরে হোসাইন (আ.) ঘর থেকে বেরিয়ে নতুন কোন খবরের অপেক্ষা করছিলেন । মারওয়ান তাকে দেখতে পেল এবং বলল – হে আবু আব্দুল্লাহ, আমি তোমার হিতাকাংখী; তুমি আমার উপদেশ শ্রবণ কর, তাহলে কল্যাণ লাভ করতে পারবে। হোসাইন (আ.) জিজ্ঞেস করলেন তোমার উপদেশ কি ? বল দেখি। বলল- আমি তোমাকে আদেশ করছি যে, তুমি অবশ্যই ইয়াজিদ ইবনে মুআবিয়ার হাতে বাইয়াত কর । কেননা তোমার দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য এ কাজ মঙ্গলজনক হবে । হোসাইন (আ.) বললেন-
انّا لله و انّ الیه راجعون (ইন্নানিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন) যদি তাই হয় আমাকে দ্বীন ইসলাম থেকে বিদায় নিতে হবে । কেননা নবী (সা.) এর উম্মত ইয়াজিদের খেলাফত রাজত্বের হাতে বন্দী হয়ে পড়েছে । আমি আমার নানা আল্লাহর রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি যে, আবু সুফিয়ানের বংশধরদের জন্য খেলাফত হারাম । ইত্যবসরে হোসাইন (আ.) ও মারওয়ানের মধ্যে এ মর্মে বহু কথা কাটাকাটি হয় । শেষ পর্যন্ত ক্রুদ্ধাবস্থায় মারওয়ান চলে গেল ।

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

সৌদি আরবের গ্রান্ড মুফতি কে? (পর্ব ...
সন্ত্রাসীদের হামলা থেকে শোক ...
হোসাইনি দালানে আয়াতুল্লাহ ...
হযরত আলীর (আ.) প্রতি বিশ্বনবী (সা.)এর ...
বেকার সমস্যা আমেরিকায় চীন কীভাবে ...
'অটিস্টিক শিশু সমস্যা নয়, প্রয়োজন ...
পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে ...
পাকিস্তানের একটি কাপড়ের হাটে ...
হিন্দু ও মুসলিমের মধ্যে বিয়ে কি ...
যদি আল-মাজেদ জীবিত থাকতেন...

 
user comment