বাঙ্গালী
Tuesday 26th of November 2024
0
نفر 0

সূরা ইউসুফ; (২১তম পর্ব)



সূরা ইউসুফ; আয়াত ৭৪-৭৭

সূরা ইউসুফের ৭৪ ও ৭৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে ,

قَالُوا فَمَا جَزَاؤُهُ إِنْ كُنْتُمْ كَاذِبِينَ (74) قَالُوا جَزَاؤُهُ مَنْ وُجِدَ فِي رَحْلِهِ فَهُوَ جَزَاؤُهُ كَذَلِكَ نَجْزِي الظَّالِمِينَ

“(রাজ রক্ষীরা বলল!) যদি তোমরা মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হও তাহলে (বল) যে চুরি করেছে তা শাস্তি কি?” (১২:৭৪)

“তারা বলল, যার মালপত্রের মধ্যে পাত্রটি পাওয়া যাবে, তার শাস্তি হবে দাসত্ব। আমরা জালেমদেরকে এভাবেই শাস্তি দেই।" (১২:৭৫)

হযরত ইউসুফ (আ.) যেহেতু চাচ্ছিলেন বেনইয়ামিনকে নিজের কাছে রেখে দিয়ে বাবা-মাকে মিশরে আনার ব্যবস্থা করবেন তাই তিনি বেনইয়ামিনকে জানিয়েই একটি পরিকল্পনা আঁটলেন। তিনি রাজ দরবারের একটি মূল্যবান পানপাত্র বেনইয়ামিনের মালপত্রের মধ্যে রেখে দেন, রাজ রক্ষীরা গোপন এই পরিকল্পনার বিষয়ে অবহিত ছিল না তাই তারা পাত্রটি উদ্ধারের পর বেনইয়ামিনকে চুরির দায়ে আটক করে। এর আগে হযরত ইউসুফ (আ.) এর ভাইয়েরা হারিয়ে যাওয়া পাত্র সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞতার কথা জানায়। তখন রাজ কর্মচারীরা বলেছিল, যদি পাত্রটি তোমাদের মালপত্রের মধ্যে পাওয়া যায় তাহলে তোমরাই বল এর শাস্তি কি হবে? তখন তারা বলল, আমাদের সমাজের নিয়ম ও রীতি হচ্ছে, কেউ চোর হিসেবে সাব্যস্ত হলে সে চুরি যাওয়া বস্তুর যিনি মালিক তার দাসত্ব করবে।

মুফাসসিরদের অনেকেই মনে করেন, সামাজিক যে নিয়ম রীতির কথা বলা হয়েছে, আসলে তা ছিল হযরত ইয়াকুব (আ.) এর শরীয়ত। আল্লাহর বিধানে অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা হয়েছে। অপরাধী যেই হোক শরীয়ত অনুযায়ী তাকে শাস্তি পেতেই হবে। ধনী-গরীব, আমীর-ফকির শরীয়তের আইন সবার জন্যই সমানভাবে প্রযোজ্য।

সূরা ইউসুফের ৭৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

فَبَدَأَ بِأَوْعِيَتِهِمْ قَبْلَ وِعَاءِ أَخِيهِ ثُمَّ اسْتَخْرَجَهَا مِنْ وِعَاءِ أَخِيهِ كَذَلِكَ كِدْنَا لِيُوسُفَ مَا كَانَ لِيَأْخُذَ أَخَاهُ فِي دِينِ الْمَلِكِ إِلَّا أَنْ يَشَاءَ اللَّهُ نَرْفَعُ دَرَجَاتٍ مَنْ نَشَاءُ وَفَوْقَ كُلِّ ذِي عِلْمٍ عَلِيمٌ

“অতঃপর ইউসুফ তাঁর সহোদরের মালপত্র তল্লাশীর পূর্বে তাদের মালপত্র তল্লাশী করতে লাগলো। পরে তার সহোদরের মালপত্রের মধ্যে পাত্রটি পাওয়া গেল। এভাবে আমি ইউসুফকে কৌশল শিক্ষা দিয়েছিলাম। আল্লাহ ইচ্ছা না করলে ( মিশরের) রাজার আইনে তার সহোদরকে সে নিজের কাছে রেখে দিতে পারতো না। আমি যাকে ইচ্ছা মর্যাদায় উন্নত করি। প্রত্যক জ্ঞানবান ব্যক্তির ওপরে রয়েছে অধিকতর জ্ঞানীজন।" (৭৬)

কেউ যাতে কোনো সন্দেহ করতে না পারে সেজন্য হযরত ইউসুফ (আ.) প্রথমে বড় ভাইদের মালামাল তল্লাশী শুরু করেন। শেষে তল্লাশী করেন বেনইয়ামিনের রসদপত্র এবং সেখানেই পেয়ে যান মূল্যবান পাত্রটি। ফলে বেনইয়ামিনকে চোর হিসেবে সাব্যস্ত করা হয় এবং ঘোষণা করা হয়, আগন্তুকদের বক্তব্য এবং সামাজিক রীতি অনুযায়ী বেনইয়ামিন মিশর ত্যাগের অনুমতি পাবে না এবং তাকে রাজার ভৃত্য হিসেবেই থেকে যেতে হবে।

এই আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালাই হযরত ইউসুফ (আ.) কে এই পরিকল্পনার জ্ঞান দান করেছিলেন। তা না হলে মিশরের প্রচলিত আইনের মাধ্যমে হযরত ইউসুফ কিছুতেই বেনইয়ামিনকে চুরির দায়ে নিজের কাছে রেখে দিতে পারতেন না। কাজেই ঘটনাটি এভাবে সাজানো জন্য হযরত ইউসুফের মনে এলহাম বা ঐশী ইঙ্গিত হয়েছিল। আয়াতের শেষ ভাগে বলা হয়েছে, হযরত ইউসুফ (আ.) এর সম্মান ও রাষ্ট্রীয় উচ্চ পদ লাভের পেছনেও ঐশী মদদ ছিল। আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া তা কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না।

নবী রাসূলগণ আল্লাহর নির্দেশ বা এলহাম ছাড়া কোনো কিছু করেন না, কাজেই তাদের কথা ও কর্ম শরীয়তে অন্যতম উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়। আল্লাহর নির্দেশে তাদের জীবনে অনেক ঘটনার অবতারনা হয়, যার আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানব জাতির জন্য শিক্ষা ও আদর্শ তৈরি করা। হযরত (আ.) এর ঘটনা নিছক কোনো গল্প বা কেচ্ছা নয়, এই ঘটনার প্রতিটি দিক এবং বিন্দুতে শিক্ষা ও দিকনির্দেশনা রয়েছে।

এই সূরার ৭৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

قَالُوا إِنْ يَسْرِقْ فَقَدْ سَرَقَ أَخٌ لَهُ مِنْ قَبْلُ فَأَسَرَّهَا يُوسُفُ فِي نَفْسِهِ وَلَمْ يُبْدِهَا لَهُمْ قَالَ أَنْتُمْ شَرٌّ مَكَانًا وَاللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا تَصِفُونَ

“তারা বলল, সে যদি চুরি করে থাকে তার সহোদরও তো পূর্বে চুরি করেছিল। ইউসুফ (এই কথায় মর্মাহত হলো এবং তার মনের অবস্থা) গোপন রাখল এবং তাদের নিকট প্রকাশ করল না। সে মনে মনে বলল, তোমাদের অবস্থা তো হীনতর এবং তোমরা যা বলছ সে সম্বন্ধে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত।" (১২:৭৭)

হযরত ইউসুফের বৈমাত্রেয় ভাইয়েরা যেমন চুরি করেনি, তেমনি তারা এটাও নিশ্চিত ছিল যে, তাদের বৈমাত্রেয় ভাই বেনইয়ামিনও চুরি করতে পারে না। স্বাভাবিকভাবেই তাদের কাছ থেকে এটাই প্রত্যাশিত ছিল যে, তারা ছোট ভাইয়ের পক্ষ অবলম্বন করবে এবং তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ খণ্ডন করার চেষ্টা চালাবে। কিন্তু তারা সেটি না করে উল্টো বলে বসল, ওর সহোদর অর্থাৎ ইউসুফও চোর ছিল। এই কথা শোনার পর রাজ রক্ষীরা বেন ইয়ামিনের চুরির ব্যাপারে নিঃসন্দেহ হলো এবং তাকে মিশরে আটক আখার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে গেল।

আয়াতের শেষ ভাগে বলা হচ্ছে, হযরত ইউসুফ (আ.) রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দু হওয়া সত্ত্বেও বৈমাত্রেয় ভাইদের মিথ্যা অভিযোগ শুনে প্রতিশোধ নেয়ার চিন্তা করলেন না, সবকিছু সহ্য করে নিলেন। শুধু বললেন, তোমরা যা বলছো যে ব্যাপারে আল্লাহই ভালো জানেন। (তোমরা বৈমাত্রেয় দুই ভাই সম্পর্কে যা বলছো) আসলে তোমাদের অবস্থা তার চেয়ে অনেক নিচু।

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

পবিত্র ঈদে গাদীর
হযরত ফাতেমার চরিত্র ও কর্ম-পদ্ধতি
হযরত আলীর নামের শেষে (আ.) ব্যবহার ...
কোরআন বিকৃতি মুক্ত
আদাবুস সুলূক (আধ্যাত্মিক পথ ...
মুহাম্মাদের (সা.) সঙ্গে মুবাহিলা ...
একটি শিক্ষণীয় গল্প :হালুয়ার মূল্য
মহানবী (সাঃ)-এর আহলে বাইতকে ...
বেহেশতের নারীদের নেত্রী- সব যুগের ...
তাওহীদের মর্মবাণী-১ম কিস্তি

 
user comment