সূরা ইউসুফ; আয়াত ১০২-১০৬
সূরা ইউসুফের ১০২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
ذَلِكَ مِنْ أَنْبَاءِ الْغَيْبِ نُوحِيهِ إِلَيْكَ وَمَا كُنْتَ لَدَيْهِمْ إِذْ أَجْمَعُوا أَمْرَهُمْ وَهُمْ يَمْكُرُونَ
“এ সব অদৃশ্যলোকের সংবাদ-যা আমি ঐশীবাণী দ্বারা তোমাকে অবহিত করছি। যখন (ইউসুফের ভাইয়েরা) তাদের কাজের ব্যাপারে মতৈক্যে পৌঁছেছিল এবং চক্রান্ত করেছিল তখন তুমি তাদের সঙ্গে ছিলে না।" (১২:১০২)
হযরত ইউসুফ (আ.) এর কাহিনী পুরোপুরি বর্ণনা করার পর আলোচ্য আয়াতে নবী করিম (সা.) কে সম্বোধন করে বলা হয়েছে,যে কাহিনী বলা হলো তা ঐ সব সংবাদের মত যা আমি ওহীর মাধ্যমে আপনাকে অবহিত করেছি। আপনি ইউসুফের সময়কালে সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। অথবা কোনো গল্পের বই থেকেও আপনি তা বর্ণনা করেন নি। কারণ আপনি যে উম্মি তা সকলেরই জানা আছে। কাজেই আপনি যা বলেছেন তা ঐশী জ্ঞান থেকেই বলেছেন। এতে আপনার নব্যুয়তের সত্যতাই প্রমাণিত হয়।
আল্লাহ তালার কাছে অতীত বর্তমান ভবিষ্যত বলতে কিছু নেই, তিনি সব বিষয়েই জ্ঞান রাখেন। কোনো কিছুই তার অজানা নয়। নবী রাসূলগণকে আল্লাহতালাই অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞান দান করেন। নবী রাসূলদের অলৌকিক কর্ম এবং যাদুকরের যাদু এক নয়।
এ সূরার ১০৩ ও ১০৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
وَمَا أَكْثَرُ النَّاسِ وَلَوْ حَرَصْتَ بِمُؤْمِنِينَ (103) وَمَا تَسْأَلُهُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرٌ لِلْعَالَمِينَ (104)
"(হে রাসূল!) আপনি যতই চান, অধিকাংশ মানুষ ঈমান আনবে না।” (১২:১০৩)
“আপনি (নব্যুয়তের দায়িত্ব পালনের জন্য ) তাদের কাছ থেকে তো কোনো বিনিময় চান না। এ কুরআন তো বিশ্বজগতের জন্য উপদেশ ব্যতীত আর কিছুই নয়।" (১২:১০৪)
হযরত ইউসুফ (আ.) এর কাহিনী বর্ণনার পর এখন ইসলামের প্রতি নবী করিম (সা.) এর আহ্বানের ব্যাপারে মানুষের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বলা হচ্ছে, আল্লাহ বলছেন, হে নবী! মানুষকে সত্যের দাওয়াত দিতে গিয়ে আপনি তো তাদের কাছ থেকে কোনো পারিশ্রমিক দাবি করছেন না। বরং তারা যাতে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে সেজন্য আপনি চেষ্টা করছেন এবং কষ্ট করছেন। তবে আপনি এটা জেনে রাখুন, অনেক মানুষই আছে যারা বিশ্বাস করবে না সত্য গ্রহণ করতে আগ্রহ দেখাবে না। এমনকি আপনি অনেককেই পাবেন যারা আপনার কথা সত্য মনে করলেও তা গ্রহণ করবে না।
আল্লাহর দ্বীন প্রচারের জন্য নবী রাসূলদেরকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। কিন্তু দেখা গেছে অধিকাংশ মানুষ তাদের আহ্বানে সাড়া দেয়নি। এজন্য নবী রাসূলরা দায়ী নন, মানুষকে আল্লাহতায়ালা জ্ঞান ও বিচার বুদ্ধি দিয়েছেন, কাজেই কোনো কিছু গ্রহণ ও বর্জন করার স্বধীনতা তাদের রয়েছে।
এ সূরার ১০৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
وَكَأَيِّنْ مِنْ آَيَةٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ يَمُرُّونَ عَلَيْهَا وَهُمْ عَنْهَا مُعْرِضُونَ
"আকাশ ও পৃথিবীতে অনেক নিদর্শন রয়েছে যার ওপর দিয়ে তারা পথ অতিক্রম করে অথচ এসবের প্রতি তারা উদাসীন।" (১২:১০৫)
আগের আয়াতে বলা হয়েছে, সত্য প্রতিভাত হলেও বহু মানুষ তা গ্রহণ করবে না। এই আয়াতে নবী করিম (সা.)কে সান্ত্বনা দিয়ে বলা হচ্ছে, তারা প্রতিনিয়ত আল্লাহর নিদর্শন প্রত্যক্ষ করে যাচ্ছে অথচ আল্লাহর অস্তিত্ব তাদের বোধগম্য হয় না। কাজেই তারা যদি আপনার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে তাহলে আপনি দুঃখিত হবেন না। আপনার আহ্বান তো বিশ্ববাসীর কল্যাণের উদ্দেশ্যে, এর পেছনে পার্থিব কোনো স্বার্থ নেই। আপনার চিন্তিত বা উদ্বিগ্ন হওয়ারও কোনো কারণ নেই।
আকাশ ও পৃথিবীর সব সৃষ্টিই মহান আল্লাহর অসীম শক্তি ও কুদরতের নিদর্শন বহন করছে। যারা এ ব্যাপারে উদাসীন তারাই সত্যকে গ্রহণ করার সৌভাগ্য লাভ করতে ব্যর্থ হয়।
সূরা ইউসুফের ১০৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
وَمَا يُؤْمِنُ أَكْثَرُهُمْ بِاللَّهِ إِلَّا وَهُمْ مُشْرِكُونَ
“অনেক মানুষ আল্লাহর ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে না, আবার তারা যেন শিরকও করে।” (১২:১০৬)
এই আয়াতে বলা হচ্ছে, অধিকাংশ মানুষ যেমন আল্লাহকেই বিশ্বাস করে না, আবার যারা বিশ্বাস করে তাদের অনেকেরই বিশ্বাস আবার খাঁটি নয়। তারা খাঁটি একত্ববাদী নয়। তারা আল্লাহর পাশাপাশি অন্যের ওপরও নির্ভর করে, আল্লাহর সঙ্গে অংশীস্থাপন করে। আল্লাহর এবাদত করে ঠিকই কিন্তু জীবনে আল্লাহর বিধান পুরোপুরি বাস্তবায়ন করে না।"
ঈমাম সাদেক (আ.) এ সম্পর্কে বলেছেন, এখানে শিরক বলতে মূর্তি পুজাকে বুঝানো হয়নি, আল্লাহ ছাড়া অন্যের ওপর নির্ভর করাকে বুঝানো হয়েছে।