প্রশ্ন: ভারতের অসম প্রদেশের ৮০% মানুষ হিন্দু। আমি একজন মুসলমান এবং আমার ব্যবসার কারণে প্রতিনিয়ত বাধ্য হয়ে বাইরে খেতে হয়। আমি কি কোন হিন্দুর বাড়িতে বা হোটেলে খাবার খেতে বা তাদের বাড়িতে থাকতে পারি? এ সম্পর্কে ইসলামের দিক-নির্দেশনা কি?
উত্তর: মহান আল্লাহ মানুষকে সঠিক পথ প্রদর্শন ও প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেয়ার জন্য যুগে যুগে বহু নবী-রাসূল পাঠিয়েছেন। ওহীর মাধ্যমে পাঠানো আল্লাহর এসব দিক-নির্দেশনা আসমানি কিতাব- তওরাত, ইঞ্জিল (বাইবেল) ও কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। এদের মধ্যে আল্লাহর সর্বশেষ ও পূর্ণাঙ্গ ধর্ম হচ্ছে ইসলাম এবং এ ধর্মের বাণী ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন মজিদে বর্ণিত হয়েছে।
এই মহাগ্রন্থের বাণী আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর নাজিল হয় এবং এতে সব যুগের মানুষের মুক্তির জন্য দিক-নির্দেশনা রয়েছে। এ আসমানি কিতাবে বিভিন্ন বিষয় যেমন ধর্মতত্ত্ব, কেয়ামত বা শেষ বিচারের দিনের হিসাব-নিকাশ, নবুওয়াত, নবী-রাসূলদের ইতিহাস, ভালো ও মন্দ চরিত্র, সৃষ্টিজগত, ইবাদত, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং হালাল ও হারাম কাজসহ মানব জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি বিষয়ে দিক-নির্দেশনা রয়েছে।
পবিত্র কুরআনে মুসলমান ছাড়াও আহলে কিতাবদের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহর প্রেরিত পূর্ববর্তী ঐশী গ্রন্থগুলোকে যারা অবিকৃত অবস্থায় অনুসরণ করে তাদেরকে আহলে কিতাব বলা হয়। তারা ঐশী গ্রন্থের অনুসারী বলে তাদেরকে মুশরিক বা বহু স্রষ্টায় বিশ্বাসীদের থেকে আলাদা করে দেখে ইসলাম। আহলে কিতাবদের সম্পর্কে কুরআনে আয়াত নাজিল হয়েছে।
যেমন সূরা মায়েদার ৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন: “আজ তোমাদের জন্য পবিত্র বস্তুসমূহ হালাল করা হল। আহলে কিতাবদের খাদ্য তোমাদের জন্যে হালাল এবং তোমাদের খাদ্যও তাদের জন্য হালাল।” কুরানের এ আয়াতের উপর ভিত্তি করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন: যেহেতু আহলে কিতাবরা আল্লাহ ও তার নির্দেশাবলী মেনে চলে; কাজেই তাদের দেয়া খাবার খাওয়ায় বাধা নেই।
আহলে কিতাবদের বিপরীতে অনেকে আছেন যারা এক আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বীকার করেন। এদেরকে মুশরেক বলা হয়। অর্থাৎ তারা মনে করেন, আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ এ সৃষ্টিজগতকে সৃষ্টি ও পরিচালনা করছেন। একইভাবে তারা মৃত্যু পরবর্তী জীবন বা কিয়ামতকে বিশ্বাস করেন না। নবী-রাসূলে তাদের বিশ্বাস নেই এবং তারা রাসূলুল্লাহ (সা.)কে আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ হিসেবে স্বীকার করেন না। কুরআনের দৃষ্টিতে এমন বিশ্বাস মানুষকে পথভ্রষ্ট ও বিভ্রান্ত করে।
পবিত্র কুরআনের সূরা নিসার ১৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ آمِنُواْ بِاللّهِ وَرَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِي نَزَّلَ عَلَى رَسُولِهِ وَالْكِتَابِ الَّذِيَ أَنزَلَ مِن قَبْلُ وَمَن يَكْفُرْ بِاللّهِ وَمَلاَئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلاَلاً بَعِيدًا
“হে ঈমানদারগণ,আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন কর এবং বিশ্বাস স্থাপন কর তাঁর রাসূল ও তাঁর কিতাবের উপর,যা তিনি নাযিল করেছেন স্বীয় রাসূলের উপর এবং সে সমস্ত কিতাবের উপর,যেগুলো নাযিল করা হয়েছিল ইতিপূর্বে। যে আল্লাহর উপর,তাঁর ফেরেশতাদের উপর,তাঁর কিতাব সমূহের উপর এবং রসূলগণের উপর ও কিয়ামত দিনের উপর বিশ্বাস করবে না,সে পথভ্রষ্ট হবে।”
এ আয়াতের ভিত্তিতে স্পষ্ট হয় যে, যারা আল্লাহ ও তাঁর একত্ববাদ, রাসূল (সা.) এর নবুয়ত এবং কেয়ামতকে অস্বীকার করবে তারা কাফের। কাফেরদের ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশ তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
আর তাই মুসলমান নারী-পুরুষ কাফের নারী-পুরুষের সঙ্গে বিয়ে করতে পারবে না বা কাফের নারী-পুরুষ কোন মুসলমানের সম্পত্তির উত্তরাধিকার হবে না। ইসলাম মুসলমানদেরকে কাফেরদের কাছ থেকে দূরে থাকতে বলেছে।
একইভাবে একজন মুসলমান কি খাবে এবং কি খাবে না- সে ব্যাপারেও ইসলামে দিক-নির্দেশনা এসেছে। খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে পবিত্রতা রক্ষা করতে বলা হয়েছে। যেমন- যে পশুর গোশত মুসলমানদের জন্য হালাল বলে ঘোষণা করা হয়েছে তার জবাইকারীকেও মুসলমান হতে হবে। পশু জবাইকারী ব্যক্তিকে কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে জবাই করতে বলা হয়েছে। কারণ আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং সব উপভোগ্য উপকরণ তিনিই আমাদের দান করেছে। কাজেই প্রত্যেক কাজের শুরুতে আল্লাহর নাম নিতে হবে।
কুরআনের সূরা আনআ’মের ১১৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন: فَكُلُواْ مِمَّا ذُكِرَ اسْمُ اللّهِ عَلَيْهِ إِن كُنتُمْ بِآيَاتِهِ مُؤْمِنِينَ
“অতঃপর যে জন্তুর উপর আল্লাহর নাম উচ্চারিত হয়,তা থেকে ভক্ষণ কর যদি তোমরা তাঁর বিধানসমূহে বিশ্বাসী হও।”
হিন্দুরা আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও কেয়ামতকে অস্বীকার করে বলে ইসলামের দৃষ্টিতে তারাও কাফেরদের অন্তর্গত। কাজেই তাদের তৈরি খাবার খাওয়া যাবে না। কিন্তু তাদের সঙ্গে থাকা, ঘুমানো ও একসঙ্গে কাজ করতে বাধা নেই। কারণ, ইসলামে হালাল পথে জীবিকা অর্জন করার জন্য ব্যবসা করার ওপর অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: তোমরা ব্যবসা কর তাহলে আল্লাহ তোমাদের বরকত দান করবেন। জীবিকাকে ১০ ভাগে ভাগ করা গেলে তার নয় ভাগ আসে ব্যবসা থেকে এবং বাকি মাত্র এক ভাগ আসে ব্যবসা ছাড়া অন্যান্য খাত থেকে।”
কাজেই, দেখা যাচ্ছে, হিন্দুর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করা বা তার সঙ্গে ওঠাবসায় কোন সমস্যা নেই। কিন্তু মুসলিম আলেমদের মতে, তাদের হাতে তৈরি খাবার খাওয়া যাবে না।
(রেডিও তেহরান)