বাঙ্গালী
Tuesday 26th of November 2024
0
نفر 0

মার্কিন নও মুসলিম শ্যান ক্রিস্টোফার স্টোন (২)

মার্কিন নও মুসলিম শ্যান ক্রিস্টোফার স্টোন (২)

ইউরোপ-আমেরিকা তথা পাশ্চাত্যে ইসলামের প্রতি মানুষের আকর্ষণ ক্রমেই বাড়ছে। চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করেই পশ্চিমারা ইসলাম গ্রহণ করছে। কিন্তু পশ্চিমা প্রচারযন্ত্রগুলো এটা প্রচারের চেষ্টা করছে যে, মুসলমান অভিবাসীদের অভিবাসন ও মুসলমানদের সঙ্গে পশ্চিমাদের বিয়ের কারণেই  পাশ্চাত্যে মুসলমানদের সংখ্যা বাড়ছে। অথচ এটা সত্যকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা মাত্র।
 
শ্যান ক্রিস্টোফার স্টোন পড়াশুনা করেছেন ইতিহাস বিষয়ে। তিনি এমন এক পরিবারের সদস্য যাদের কেউ কেউ খ্রিস্টান ও কেউ কেউ ইহুদি। শ্যানের বাবা অলিভার স্টোন একজন নামকরা মার্কিন চিত্র-পরিচালক। ইসলামের মধ্যে উন্নততর জীবন ও উচ্চতর লক্ষ্য দেখতে পেয়েছেন শ্যান। তাই চিত্র-নির্মাতা, পরিচালক ও অভিনেতা শ্যান স্টোন  সম্প্রতি ইসলামকে বেছে নিয়েছেন নিজের ধর্ম হিসেবে।
 
শ্যান স্টোন ইরানের ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের তেত্রিশতম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ উতসব উদযাপনের দিনগুলোতে ইরানে এসেছিলেন। হলিউড ও চলচ্চিত্র শীর্ষক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্যই তিনি এই সফরে আসেন। ইরানে বিরাজিত আধ্যাত্মিক পরিবেশ ও দেশটির মুসলমানদের পারস্পরিক আন্তরিকতা তাকে মুগ্ধ করেছিল। আর এই সফরই তার জন্য বয়ে আনে জীবনকে লক্ষ্যপূর্ণ করার এক অপূর্ব সুযোগ। স্টোন ইস্ফাহানে আয়াতুল্লাহ নাসিরির দপ্তরে উপস্থিত হয়ে পবিত্র ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
 
নও-মুসলিম স্টোনের মতে ইসলাম সর্বশেষ ঐশী ধর্ম এবং অন্যান্য ঐশী ধর্মগুলোর প্রক্রিয়াকে পূর্ণতা দানকারী। তিনি মনে করেন এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের মধ্যে রয়েছে অলৌকিক এক শক্তি যা মানুষকে দেয়  এক ধরনের আধ্যাত্মিক শক্তি। আর এই শক্তি মানুষকে যোগায় ব্যক্তিত্ব ও পরিচিতি এবং দুঃখ-কষ্ট সহ্য করার অপরিমেয় শক্তি। এভাবে ঈমান বা বিশ্বাস মানুষকে সহায়তা করে। স্টোন এ প্রসঙ্গে বলেছেন:
 
"যে মুহূর্তে আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি সেই মুহূর্তটি ছিল একটি আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার ঘটনা এবং তা ছিল খুবই মধুর ও উল্লেখযোগ্য বিষয়। আসলে সেই মুহূর্তে আমি এক ধরনের ইতিবাচক ও পবিত্র শক্তি অনুভব করেছিলাম। একজন আলেমের উপস্থিতির কারণে সে সময় আল্লাহর সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছিল বলে আমি অনুভব করেছিলাম।"
 
নও-মুসলিম শ্যান ক্রিস্টোফার স্টোন আরো বলেছেন:  "পবিত্র ইসলাম ধর্ম মানুষ ও আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ককে খুব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করে। এ ধর্মে মানুষ ও আল্লাহর মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে, আর এটা খুবই সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমি বিশ্বাস করি ইসলাম হযরত ইব্রাহিম (আ.) থেকে হযরত ঈসা (আ.) পর্যন্ত চলে আসা সব নবী-রাসূলের প্রচারিত মিশনেরই ধারাবাহিকতা। হযরত মুসা (আ.) শরিয়ত বা ধর্মীয় বিধান এনেছিলেন, হযরত ঈসা (আ.) খোদাভীরুতার জন্য খ্যাত এবং হযরত মুহাম্মাদ (সা.) জ্ঞান ও প্রজ্ঞার আদর্শ।"
 
নও-মুসলিম শ্যান ক্রিস্টোফার স্টোন আরো বলেছেন:
"আমি সব সময়ই আল্লাহর ইবাদতে বিশ্বাসী ছিলাম। ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে ইসলামের কোলে এসেছি। আমার দুই কলেমার সাক্ষ্য বা  শাহাদাতাইন আমার ধর্মেরই বিস্তৃতি। এ দুটি বাক্য উচ্চারণ করে আমি বিশ্বনবী (সা.)-কে নবী ও আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ বলে ঘোষণা করছি। আসলে বিশ্বনবী (সা.) অন্য নবী-রাসূলদের মিশনকেই অব্যাহত রেখেছেন এবং সব নবী-রাসূলই একই পথে চলেছেন, তাঁরা একই মিশনের নবায়নকারী।"
 
আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী(আ.) ইতিহাসের এমন এক মহান ব্যক্তিত্ব যার দ্বিতীয় কোনো নজির ইতিহাসে নেই। যারা তাঁর নেতৃত্ব  বা ইমামতে বিশ্বাস করে না তারাও এই মহান ইমামের উচ্চতর মর্যাদা ও অনন্য গুণের কথা অকুণ্ঠ চিত্তে স্বীকার করেছেন। বিখ্যাত আরব খ্রিস্টান চিন্তাবিদ মিখাইল নাঈমা হযরত আলী(আ.) সম্পর্কে বলেছেন: "কোনো লেখক বা ইতিহাসবিদ তা যতই প্রতিভাবান ও অসাধারণ জ্ঞানী হন না কেন হযরত আলী (আ.)এর মত ব্যক্তিত্বের পূর্ণাঙ্গ দিক বা ছবি তুলে ধরার ক্ষমতা রাখেন না, এমনকি তাকে যদি এনিয়ে হাজার পৃষ্ঠার বইও লিখতে দেয়া হয় তবুও আলী (আ.)'এর ব্যক্তিত্বের সমস্ত দিকও তাঁর যুগে সংঘটিত বড় বড় ঘটনাগুলোর ব্যাখ্যা তুলে ধরতে পারবেন না। এই মহান ইমামের যুগের পর বহু কাল গত হয়ে গেছে, কিন্তু আমরা যখনই মহতী ও সৌভাগ্যময় জীবনের ভিত্তি তৈরি করতে চাইব তখনই এই মহান ইমামের জীবন-পদ্ধতির দিকে আমাদের তাকাতে হবে এবং জীবনের পরিকল্পনা ও বিধানগুলো জানতে হবে তাঁরই আদর্শের আলোকে।"
হলিউড-তারকা শ্যান স্টোনও ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আগে হযরত আলী (আ.)এর ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে জানতে পেরেছিলেন। তিনি তাঁকে মানুষ ও একজন মুসলমানের জন্য পরিপূর্ণ আদর্শ নেতা বলে মনে করতেন।  আর এ জন্যই স্টোন মুসলমান হওয়ার পর নিজের  জন্য আলী নামটি বেছে নিয়েছেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন: "আমার শ্যান নামটি সাধারণ ও দুনিয়াবি নাম। ক্রিস্টোফার নামটি আমার খ্রিস্টান পরিচিতি বহন করে এবং স্টোন নামটি ইহুদি পরিচিতি বহন করে। আমার বাবার ওয়ারিশ হিসেবে এই নাম রাখা হয়েছিল আমার। আর আমার ইসলামী ও আধ্যাত্মিক নাম হল আলী যা ন্যায়কামীতার প্রতীক। হযরত আলী (আ.) থেকে আমি এটা শিখেছি যে আল্লাহ ছাড়া আর কারও সামনে সিজদা বা মাথা নত করব না। এই মহাপুরুষের পবিত্র ব্যক্তিত্ব আমাকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করেছে। তাই আমি সব সময় আমার গলায় হযরত আলী (আ.)এর তরবারির প্রতীক ঝুলিয়ে রাখি। কারণ, তার তরবারি ছিল ন্যায় বিচারের প্রতীক। আল্লাহর প্রতি তাঁর ঈমান, রাসূল (সা.)এর প্রতি তাঁর আনুগত্য, তাঁর ন্যায় বিচার, প্রজ্ঞা ও বীরত্ব বা সাহসিকতা-এসবই আমাকে মুসলমানদের মাওলার প্রতি আকৃষ্ট করেছে। আমার মনে হয় এই নামটি যেন আগেই আমার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছিল এবং আমার ভাগ্যেই তা লেখা হয়েছিল।"
স্টোন কৈশর থেকেই ইসলাম সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতেন। এর কারণ, সম্ভবত তার বাবা ইহুদি ও মা খ্রিস্টান হওয়ায় এবং তিনি নিজে কোনো ধর্ম বেছে না নেয়ায় ইসলাম সম্পর্কে তার মধ্যে আগ্রহ জেগেছিল। স্টোন মনে করেন ইসলাম মানব প্রকৃতির ধর্ম, তাই ইরানে এসে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আগেই তিনি মনে মনে মুসলমান হয়েছিলেন। মার্কিন নও-মুসলিম আলী বা সাবেক স্টোন এ প্রসঙ্গে বলেছেন:  আসলে ইসলাম এমন এক ধর্ম যার মাধ্যমে হৃদয়ে আল্লাহকে অনুভব করা যায়। আর এ জন্য কোনো পুরোহিত বা পাদ্রির মধ্যস্থতার দরকার হয় না। ইসলাম সবচেয়ে মুক্ত বা স্বাধীন ধর্ম। এ ধর্ম আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পনের ধর্ম। খ্রিস্ট ধর্মে খ্রিস্টানরা প্রতি সপ্তাহয় একবার গির্জায় যায়। কিন্তু পবিত্র ইসলাম ধর্মের বিধান অনুযায়ী মুসলমানরা দৈনিক কয়েকবার নামাজ ও দোয়া পড়েন। ইসলামী দেশগুলোর এই দৃশ্য খুবই সুন্দর।
 
ইসলাম গ্রহণের পর স্টোন অন্য অনেক নও-মুসলিমের মতই অযৌক্তিক প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনার মতনানা ধরণেরমারাত্মক সমস্যার শিকার হচ্ছেন। ইসলাম গ্রহণের কারণে তিনি একদল সহকর্মীসহ অনেকের কাছেই 'মহাঅপরাধী' ও 'মহাসন্ত্রাসী' কিংবা 'পাগল' বিবেচিত হচ্ছেন।  হলিউডেরে অনেকেই তার সঙ্গে কাজ করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। স্টোনের মতে, এই শ্রেণীর মানুষের বোঝা উচিত ক্রেসিয়াস ক্লে মুসলমান বা মুহাম্মাদ আলী হওয়ার ফলে সন্ত্রাসী হয়ে যাননি।  ফলে পাশ্চাত্যে ইসলাম-বিদ্বেষ যে কত গভীর এ ধরনের আচরণ থেকে তা স্টোনের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে।
 
কিন্তু বর্ণবৈষম্যের শিকার নও-মুসলিম স্টোন সমালোচনা ও নিন্দার প্রবল ঝড়কে তোয়াক্কা করছেন না, ভবিষ্যতেও করবেন না। তিনি সংলাপের মাধ্যমে ইসলাম সম্পর্কে নিন্দুকদের ও অসচেতন পশ্চিমাদের ভুল ধারণা দূর করতে আগ্রহী। স্টোন বলেছেন: আমি নিশ্চিত যে শক্তিমান ও প্রভাবশালী অনেকেই আমাকে ত্যাগ করবে। কিন্তু আমি ইবাদতের পরিভাষার মত ভাষায় তাদের বলতে চাই: এক আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো প্রভু নেই এবং মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর নবী ও রাসূল।(রেডিও তেহরান)

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

কোরআন বিকৃতি মুক্ত
আদাবুস সুলূক (আধ্যাত্মিক পথ ...
মুহাম্মাদের (সা.) সঙ্গে মুবাহিলা ...
একটি শিক্ষণীয় গল্প :হালুয়ার মূল্য
মহানবী (সাঃ)-এর আহলে বাইতকে ...
বেহেশতের নারীদের নেত্রী- সব যুগের ...
তাওহীদের মর্মবাণী-১ম কিস্তি
হাসনাইন (ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন) ...
খেলাফত তথা রাসূল (সা.)-এর ...
নবী (সা.) কিভাবে উম্মী ছিলেন বা কেন ...

 
user comment