ব্রিঙ্কহাম বলেছেন,তিনি বেশ কিছুদিন থেকে ইসলাম গ্রহণের কথা চিন্তাভাবনা করছিলেন। বিশেষ করে ২০০৪ সালে সেঞ্চুরি রিজিওনাল ডিটেনশন সেন্টারে অবস্থানের সময় ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন দেখতে থাকেন। ওই ডিটেনশন সেন্টারে তিনি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত লোকের সংস্পর্শে এসে ইসলাম সম্পর্কে ধারণা লাভ করেন। ইসলাম গ্রহণের মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর অতীতের ক্লেদাক্ত জীবন থেকে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন। জেদ্দায় একটি ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র থেকে তিনি বলেন, ‘আমি জীবনের পরিপূর্ণ শান্তি খুঁজে পেয়েছি। আগে আমি একটি নষ্টা মেয়ে হিসেবে পরিচিত ছিলাম। সে অবস্থার এখন পরিবর্তন ঘটেছে। এই পরিবর্তনের জন্য মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।
মিস হিলটন আগামী সপ্তাহে লস এঞ্জেলসে ফিরে গিয়ে বেভারলি হিলের মধ্যভাগে একটি ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র চালুর পরিকল্পনা করছেন। তার নামও পরিবর্তন করে তিনি ‘তাহিরা' রাখতে চান। তার এই স্কুল তিনি বহু তারকাখ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিকে ধর্মীয় শিক্ষাদানের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতে চান। উল্লেখ্য, প্যারিস হিলটন বিশ্বখ্যাত হিলটন হোটেলের প্রতিষ্ঠাতা কনারাড হিলটনের প্রপৌত্রী।
শোবিজ জগতের সুপার স্টার, স্বপ্নলোকের বাসিন্দা ও পৃথিবীর কোটি মানুষের হৃদয় কাঁপানো এই তারকার এমন ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত বর্তমান প্রজন্মের চিন্তার জগতে ঝড় তোলার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। গত বছরের শেষের দিকে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন মহাকাশবিজ্ঞানী নভোচারী সুনীতা উইলিয়াম সদলবলে ইসলাম গ্রহণ করে বিজ্ঞানীদের দৃষ্টি খুলে দেয়ারও চেষ্টা করেছেন।
পশ্চিমা দুনিয়ায় ইসলাম একটি বিকাশমান ও নন্দিত জীবনব্যবস্থা হিসেবে আত্মপ্রকাশের খবর একেবারে নতুন না হলেও সম্প্রতি পাশ্চাত্যের খ্যাতিমান বেশ কয়েকজন ব্যক্তিত্বের ইসলাম গ্রহণ গোটা বিশ্বের নজর কেড়েছে। বিখ্যাত পপস্টার মাইকেল জ্যাকসনের রহস্যাবৃত মৃত্যুর পর তার মুসলিম পরিচয় নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে প্রচার-প্রোপাগাণ্ডা ও বিচিত্র তথ্য ছড়ানো হয়েছে। অনেকের মতে, তার ইসলাম গ্রহণের খবরটিকে পশ্চিমা মিডিয়া এবং সরকারগুলো প্রকাশ হতে দেয়নি এবং তিনি নিজেও এ ব্যাপারে প্রচণ্ড চাপে ছিলেন।
আফগানিস্তানের তালেবানদের হাতে বন্দি হয়ে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য ও মাহাত্ম্যে বিমুগ্ধ ব্রিটিশ নারী সাংবাদিক র্যাডল তো তার ইসলাম গ্রহণের কথা গোটা দুনিয়ার সামনে সগর্বে ঘোষণা দিয়েছেন। আরেকজন বিখ্যাত নারী সাংবাদিক সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের শ্যালিকার ইসলাম গ্রহণের খবর পুরো পশ্চিমা বিশ্বকে অবাক করেছে। সাড়া জাগানো মার্কিন অভিনেত্রী প্যারিস হিলটন মুক্তির এই মিছিলে সংযোজিত সাম্প্রতিক সময়ের সর্বশেষ নাম।
যারা ইসলামকে সেকেলে, ব্যক্তি-স্বাধীনতা, আধুনিকতা, মানবাধিকার ও প্রগতির প্রতিবন্ধকরূপে চিত্রিত করার পণ্ডশ্রমে সময় ব্যয় করেন উল্লিখিত ব্যক্তিদের ইসলাম গ্রহণে ক্ষণিকের জন্য হলেও আশা করি তারা লজ্জায় মুখ লুকাবেন। গড্ডালিকা প্রবাহে চিন্তার ডিঙ্গি ভাসিয়ে না দিয়ে স্থির হয়ে ভাবতে বসবেন। এক সময়ের হার্টথ্রব নায়িকা, গ্লামার গার্ল এবং বিখ্যাত মিডিয়া ব্যক্তিত্ব যখন ইসলামের শালীন পোশাক তথা বোরকা বা হিজাব পরিহিতা হিসেবে নিজেকে সগৌরবে উপস্থাপন করেন, তখন আধুনিকতা ও নান্দনিকতার নামে অবাধ যৌনতাবাদীদের চেহারায় কালো মেঘের ছায়া নামে। আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন, সচেতন, শিক্ষিতা নারী সমাজ এতে খুঁজে পান জীবনে চলার আলোকিত পথ, নতুন উদ্যম, বিশ্বাসদীপ্ত প্রেরণা। প্রবল আত্মবিশ্বাসে উচ্চারণ করেন-‘আমি মুসলিম, ইসলাম আমার স্বপ্নের ঠিকানা'। অবস্থাদৃষ্টে এটা অনুমিত হওয়া স্বাভাবিক যে, ফ্যাশনের নামে স্বল্পবসন আর শিল্পের নামে নারীর পণ্যায়নসহ অবাধ ভোগের কৌশলগুলোকে হালাল করার জন্য যারা এতদিন নারীসমাজকে বিভ্রান্ত করেছেন; তাদের জগত ছোটো হয়ে আসছে। কারণ নারীরা জাগছে এবং খুঁজে নিচ্ছে নিজেদের নিরাপত্তা, মর্যাদা, স্বকীয়তা ও স্বাধীনতার ঠিকানা ‘ইসলাম'। (রেডিও তেহরান)