বাঙ্গালী
Sunday 24th of November 2024
0
نفر 0

খোদার অস্তিত্বের প্রমাণসমূহ

খোদার অস্তিত্বের প্রমাণসমূহ



ভূমিকা

 

মহান আল্লাহর অস্তিত্বকে প্রমাণের জন্যে একাধিক উপায় বিদ্যমান। দর্শনের বিভিন্ন বইয়ে, কালামশাস্ত্রে, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের বিভিন্ন ভাষ্যে এবং ঐশী কিতাবসমূহেও এগুলো (উপায়) সম্পর্কে ইঙ্গিত করা হয়েছে। এ যুক্তি-প্রমাণসমূহ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে পারস্পরিকভাবে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।  যেমনঃ কোন কোন ক্ষেত্রে  ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ও অভিজ্ঞতালব্ধ বিষয়সমূহ প্রতিজ্ঞা হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে; যেখানে অন্য কোন ক্ষেত্রে খাঁটি বুদ্ধিবৃত্তিক বিষয়সমূহ ব্যবহৃত হয়েছে। আবার কেউ কেউ সরাসরি প্রজ্ঞাবান প্রভুর অস্তিত্ব প্রমাণের চেষ্টা করেন; যেখানে অন্যান্যরা শুধুমাত্র এমন এক অস্তিত্বময়কে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন যার অস্তিত্ব অপর কোন অস্তিত্বময়ের উপর নির্ভরশীল নয় (অর্থাৎ অবশ্যস্তাবী অস্তিত্ব) এবং তার বৈশিষ্ট্যসমূহকে চিহ্নিত করার জন্যে অপর এক শ্রেণীর যুক্তির অবতারণা করে থাকেন।

ঐশী দার্শনিকগণ এবং কালামশাস্ত্র বিদগণ খোদার অস্তিত্ব প্রমাণের জন্যে অসংখ্য যুক্তির অবতারণা করেছেন, যা দর্শন ও কালামশাস্ত্রে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আমরা ঐগুলোর মধ্যে যে প্রমাণটি অপেক্ষাকৃত কম ভূমিকার প্রয়োজন এবং সহজবোধ্য সেটিকে নির্বাচন ও তার ব্যাখ্যা প্রদান করব। তবে একথা স্বরণযোগ্য যে, এ প্রমাণটি খোদার অস্তিত্ব কে শুধুমাত্র "অনিবার্য অস্তিত্ব”  শিরোনামে প্রমাণ করে –অর্থাৎ যাঁর অস্তিত্ব অত্যাবশ্যকীয় এবং কোন অস্তিত্ব প্রদানকারীর উপর  নির্ভরশীল নয়। অনিবার্য অস্তিত্বকে প্রমাণ করার পর তার ‘হ্যাঁ-বোধক’ বৈশিষ্ট্য (الصفة الثبوتية) ও ‘না-বোধক’ বৈশিষ্ট্যকে (لصفة السلبيةا) অপর এক  যুক্তির মাধ্যমে প্রমাণ করতে  হবে। ‘হ্যাঁ-বোধক’ বৈশিষ্ট্যের উদাহরণ হল জ্ঞান, শক্তি ইত্যাদি এবং ‘না-বোধক’ বৈশিষ্টের উদাহরণ হল অশরীরীয় হওয়া, নির্দিষ্ট স্থানে ও কালে সীমাবদ্ধ না হওয়া।

প্রমাণের বিষয়বস্তু

অস্তিত্বশীল বিষয়সমূহ, (বুদ্ধিবৃত্তিক মতে) হয় অনিবার্য অস্তিত্ব অথবা সম্ভাব্য অস্তিত্ব এবং কোন  অস্তিত্বশীল বিষয়ই  বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে এ দু’ধারণার  বর্হিভূত হতে পারে না। সকল অস্তিত্বশীল  বিষয়ই সম্ভাব্য অস্তিত্ব হতে পারে না। কেননা, সম্ভাব্য অস্তিত্ব কারণের মুখাপেক্ষী। সুতরাং যদি সমস্ত  কারণসমূহ সম্ভাব্য অস্তিত্ব হয়ে থাকে, তবে প্রত্যেকটি কারণকেই অপর এক কারণের মুখাপেক্ষী হতে হবে।  ফলে কখনোই কোন অস্তিত্বশীল বিষয় বাস্তব রূপ লাভ করবে না। অন্যভাবে বলা যায়ঃ কারণের ধারাবাহিকতা অসম্ভব। অতএব অস্তিত্বশীল  বিষয়সমূহের কারণসমূহ ধারাবাহিকভাবে এমন এক অস্তিত্বশীল বিষয়ে উপনীত হয়, যা স্বয়ং অপর অস্তিত্বশীল বিষয়ের ফলশ্রুতি নয় অর্থাৎ যা হবে অনিবার্য অস্তিত্ব। এ প্রমাণটি খোদার অস্তিত্বর প্রমাণের জন্যে দর্শনের একটি সরলমত প্রমাণ, যা কয়েকটি খাঁটি বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিজ্ঞা দ্বারা রূপ লাভ করেছে এবং কোন প্রকার ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ও অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের উপর নির্ভরশীল নয়। তবে যেহেতু এ প্রমাণটিতে দার্শনিক পরিভাষা ও ভাবার্থসমূহ ব্যবহৃত হয়েছে, সেহেতু যে সকল প্রতিজ্ঞা ও পরিভাষার মাধ্যমে, উল্লেখিত প্রমাণটি রূপ পরিগ্রহ করেছে তাদের সম্পর্কে আলোকপাত করা অনিবার্য।

সম্ভাব্যতা ও অনিবার্যতা

প্রতিটি প্রতিজ্ঞাই (যতই সরল হোক না কেন) কমপক্ষে দুটি মৌলিক ভাবার্থ যথাঃ উদ্দেশ্য (موضوع)  ও বিধেয় (محمول) নিয়ে গঠিত হয়। যেমনঃ ‘সূর্য্য উজ্জল’ –এ প্রতিজ্ঞাটিতে "সূর্য” হল উদ্দেশ্য আর "উজ্জ্বল” হল বিধেয় এবং প্রতিজ্ঞাটি সূর্যের জন্যে উজ্জ্বলতাকে প্রতিপাদন করে থাকে।

উদ্দেশ্যের জন্যে বিধেয়ের প্রতিপাদন তিনটি অবস্থার ব্যতিক্রম হতে পারে না। হয় তা অসম্ভব যেমনঃ  "৪ অপেক্ষা ৩  বড়” অথবা  অনিবার্য  যেমনঃ "৪ এর অর্ধেক হল ২” নতুবা অসম্ভব বা অনিবার্য এ দুয়ের কোনটি নয় অর্থাৎ সম্ভব যেমনঃ সূর্য আমাদের মাথার উপর অবস্থান করছে।

যুক্তিবিদ্যার পরিভাষায় উপরোক্ত প্রথম ক্ষেত্রে প্রতিজ্ঞার সম্পর্ককে অসম্ভব (امتناع), দ্বিতীয় ক্ষেত্রে প্রতিজ্ঞার সম্পর্ককে "অনিবার্য (ضرورت) বা আবশ্যকীয় (وجوب) তৃতীয় ক্ষেত্রে প্রতিজ্ঞার সম্পর্ককে "সম্ভাবনা” (امكان) (বিশেষ অর্থে) গুণসম্বলিত বলা হয়ে থাকে।

দর্শনে ‘অস্তিত্বশীল বিষয়’ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়ে থাকে। যা কিছু অসম্ভব তা কখনোই বাস্তব রূপ লাভ করে না (তাই এ বিষয়ের আলোচনা দর্শনের অন্তর্ভুক্ত হয় না)। ফলে দর্শনশাস্ত্র, অস্তিত্বশীল  বিষয়সমূহকে বুদ্ধিবৃত্তির ভিত্তিতে অনিবার্য অস্তিত্ব ও সম্ভাব্য অস্তিত্ব এ দু‘ভাগে বিভক্ত করেছে।

অনিবার্য অস্তিত্ব বলতে বুঝায়, যে অস্তিত্বশীল বিষয় নিজ থেকেই অস্তিত্বশীল এবং তার এ অস্তিত্বের জন্যে অপর কোন অস্তিত্বশীল বিষয়ের উপর নির্ভরশীল নয়। ফলে স্বভাবতই এ ধরনের অস্তিত্ব অনাদি ও অনন্ত হবে। কারণ, কোন এক সময় কোন কিছুর অনুপস্থিতির অর্থ হল তার অস্তিত্ব নিজ থেকে নয় এবং অস্তিত্বে আসার জন্যে অপর এমন কোন অস্তিত্বশীলের উপর নির্ভর করতে হয় যে তার উপস্থিতি হল (এর উপস্থিতির জন্যে) শর্ত ও কারণ স্বরূপ; আর তার অনুপস্থিতিতে এর অস্তিত্ব থাকে না।

সম্ভাব্য অস্তিত্ব হল তা, যা নিজ থেকে অস্তিত্বশীল নয় এবং যার অস্তিত্বশীলতার জন্যে অপর কোন  অস্তিত্বের উপর নির্ভর করতে হয়। অস্তিত্বের এ শ্রেণীবিভাগ বুদ্ধিবৃত্তির ভিত্তিতে করা হয়েছে এবং সঙ্গত কারণেই তা অসম্ভব অস্তিত্বকে অস্বীকার করে। তবে বাস্তব অস্তিত্বসমূহ এ দু‘বিভাগের (অনিবার্য অস্তিত্ব ও সম্ভাব্য অস্তিত্ব) কোনটির অন্তর্ভুক্ত সে সম্পর্কে কোন দিকনির্দেশনা নেই। অন্য কথায়, এ ব্যাপারটিকে তিন ভাবে অনুধাবণ করা যেতে পারে। যথাঃ

প্রথমতঃ সকল অস্তিত্বই হল অনিবার্য অস্তিত্ব।

দ্বিতীয়তঃ সকল অস্তিত্বই হল সম্ভাব্য অস্তিত্ব।

তৃতীয়তঃ কোন কোনটি হল অনিবার্য অস্তিত্ব আবার কোন কোনটি হল সম্ভাব্য অস্তিত্ব।

প্রথম ও তৃতীয় ধারণায় ‘অনিবার্য অস্তিত্ব’ বিদ্যমান। অতএব এ ধারণাটিকেই (দ্বিতীয়) আলোচনার বিষয়বস্তুরূপে স্থান দিতে হবে যে, ‘সকল অস্তিত্বই কি সম্ভাব্য অস্তিত্ব হওয়া সম্ভব, না কি অসম্ভব?’ আর এ ধারণাটির অপনোদনের মাধ্যমেই ‘অনিবার্য অস্তিত্বের’ ধারণা চূড়ান্তরূপে প্রতিষ্ঠিত হয় যদিও তার একত্ব এবং অন্যান্য গুণকে প্রতিপাদনের জন্যে অন্য কোন প্রমাণের উপর নির্ভর করা আবশ্যক।

অতএব, দ্বিতীয় ধারণাটিকে পরিত্যাগ করার জন্যে অপর একটি  প্রতিজ্ঞাকে উল্লেখিত প্রমাণের সাথে সংযুক্ত করতে হবে। আর তা হল এই যে, ‘সকল অস্তিত্বই সম্ভাব্য অস্তিত্ব হওয়া অসম্ভব’। তবে এ প্রতিজ্ঞাটি স্বপ্রমাণিত নয়। এ কারণে একে নিম্নরূপে প্রমাণ ও প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যকঃ

সম্ভাব্য অস্তিত্ব কারণের উপর নির্ভরশীল এবং কারণের অসীম ধারাবাহিকতা অসম্ভব। অতএব কারণসমূহ তাদের ধারাবাহিকতায় এমন এক অস্তিত্বে গিয়ে পৌঁছতে হবে যা কারণের উপর নির্ভরশীল নয়। আর তা-ই হল ‘অনিবার্য অস্তিত্ব’। সুতরাং সকল অস্তিত্বই সম্ভাব্য অস্তিত্ব নয়। আর এখান থেকেই অপর এক দার্শনিক বিষয়ের সূত্রপাত ঘটে, যার ব্যাখ্যা দেয়া প্রয়োজন।

কারণ ও কার্য (Cause and Effect)

যদি কোন অস্তিত্বশীল বিষয় অপর কোন অস্তিত্বশীল বিষয়ের উপর নির্ভরশীল হয় এবং তার অস্তিত্ব অপরটির অস্তিত্বের উপর নির্ভর করে, তবে দর্শনের পরিভাষায় নির্ভরশীল অস্তিত্বকে কার্য (معلول) এবং অপরটিকে কারণ (علة) নামকরণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু কারণ সবসময় অনির্ভরশীল নাও হতে পারে, বরং ‘কারণ’ নিজেও নির্ভরশীল ও অন্য কোন অস্তিত্বশীলের কার্য, হতে পারে। আর যদি কোন কারণের (অপর কোন কারণের উপর) কোন প্রকার নির্ভরশীলতা ও নির্ভরতা না থাকে তবে ঐ কারণকে ‘নিরঙ্কুশ কারণ’ এবং ‘সম্পূর্ণরূপে অনির্ভরশীল কারণ’ বলা যেতে পারে।

এ পর্যন্ত আমরা কারণ ও কার্যের দার্শনিক পরিভাষা এবং তাদের সংজ্ঞা সম্পর্কে অবগত হয়েছি। এখন আমাদেরকে এ প্রতিজ্ঞাটি সম্পর্কে ব্যাখ্যা প্রদান করতে হবে যে, ‘সকল সম্ভাব্য অস্তিত্বই কারণের উপর নির্ভরশীল’।

‘সম্ভাব্য অস্তিত্ব স্বয়ংক্রিয়ভাবে অস্তিত্ব লাভ করতে পারে না’ এ বাক্যের আলোকে বলা যায় উহার অস্তিত্ব, অপর কোন অস্তিত্বশীল বিষয় বা বিষয়সমূহের বাস্তব রূপ পরিগ্রহণের উপর নির্ভরশীল হতে বাধ্য। কারণ এ উক্তিটি (قضية) স্বতঃসিদ্ধ যে, প্রত্যেক বিধেয়ই (محمول) যা উদ্দেশ্যের (موضوع) জন্যে বিবেচনায় নেয়া হয় তা হয় নিজ থেকেই বিদ্যমান (সত্তাগতভাবে) অথবা অন্যের মাধ্যমে বা কারণে (পরগতভাবে) বিদ্যমান। যেমনঃ কোন বস্তু হয় নিজ থেকেই আলোকিত হয়ে থাকে অথবা অন্য কোন কিছুর আলোর মাধ্যমে আলোকিত হয়ে থাকে। প্রতিটি বস্তুই হয় নিজে থেকেই তৈলাক্ত অথবা অন্য কোন কিছুর (তৈলের) মাধ্যমে তৈলাক্ত হয়ে থাকে। এটা অসম্ভব যে, কোন কিছু না স্বয়ংক্রিয়ভাবে আলোকিত বা তৈলাক্ত হবে, না অন্য কিছুর মাধ্যমে তৈলাক্ত বা আলোকিত গুণসম্বলিত হবে (বৈশিষ্ট্য দুটি সত্তাবহির্ভূত বা আরোপিত বৈশিষ্ট্য হওয়ার ক্ষেত্রে)?

অতএব, কোন উদ্দেশ্যের (موضوع ) জন্যে অস্তিত্বের প্রতিপাদন হয়, সত্তাগতভাবে অথবা পরগতভাবে  হয়ে থাকে এবং যখন সত্তাগতভাবে না হয়, তখন পরগতভাবে হওয়া অনিবার্য। ফলে যে সকল সম্ভাব্য অস্তিত্ব স্বয়ংক্রিয়ভাবে অস্তিত্বশীল গুণাবলীতে ভূষিত না হয়, সে সকল অস্তিত্ব অপর কোন অস্তিত্বশীলের সহায়তায় অস্তিত্বে আসে এবং তার কার্য রূপে (معلول) পরিগণিত হয়।

কিন্তু অনেকের মতে কার্যকারণ বিধির (Causality) প্রকৃত অর্থ হল সকল অস্তিত্বই কারণের উপর নির্ভরশীল, আর এর ভিত্তিতে সমস্যা সৃষ্টি করে থাকেন যে, খোদার জন্যেও কোন কারণকে বিবেচনা করা আবশ্যক! তবে তারা এ কথাকে বিস্মৃত হয়েছেন যে, কার্যকারণ বিধির উদ্দেশ্য (موضوع) নিরঙ্কুশ ও স্বনির্ভর অস্তিত্ব নয় বরং এর উদ্দেশ্য (موضوع) হল ‘সম্ভাব্য অস্তিত্ব’ ও কার্য। অর্থাৎ সকল নির্ভরশীল বা পরগত অস্তিত্বই কারণের উপর নির্ভরশীল, না সকল অস্তিত্বই।

কারণের অসীম ধারাবাহিকতা অসম্ভব

এ প্রমাণের জন্যে ব্যবহৃত সর্বশেষ প্রতিজ্ঞাটি হল, কারণের  ধারাবাহিকতা এমন এক অস্তিত্বে গিয়ে শেষ হতে বাধ্য যে, ঐ অস্তিত্ব অপর কোন কারণের কার্য (معلول) নয়। অর্থাৎ পারিভাষিক অর্থে কারণের ধারাবাহিকতা অসীম পর্যন্ত অসম্ভব। আর এ প্রক্রিয়ায় সর্বপ্রথম কারণরূপে অনিবার্য অস্তিত্ব অর্থাৎ যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অস্তিত্বশীল এবং অপর কোন অস্তিত্বের উপর নির্ভরশীল নয়, তা প্রতিপাদিত হয়ে থাকে।

দর্শন, কারণের ধারাবাহিকতাকে রহিতকরণের জন্যে একাধিক যুক্তির অবতারণা করেছে। তবে সত্যিকার অর্থে কারণের অসীম ধারাবাহিকতার অসারতা প্রায় স্বতঃসিদ্ধ এবং কিঞ্চিৎ চিন্তা করলেই সুস্পষ্টরূপে প্রতিভাত হয়। অর্থাৎ ‘কার্যের অস্তিত্ব কারণের উপর নির্ভরশীল এবং উক্ত কারণের শর্তাধীন’ যদি এ নিয়মতান্ত্রিকতা সার্বজনীন বলে মনে করা হয়, তবে কখনোই কোন কিছু অস্তিত্ব লাভ করবে না। কারণ, নির্ভরশীল অস্তিত্বের সমষ্টি, অপর কোন অস্তিত্ব অর্থাৎ যার উপর তাদের অস্তিত্ব নির্ভর করে, তা ব্যতীত অস্তিত্বে আসার ধারণা বিবেক সম্পন্ন হতে পারে না।

মনে  করা  যাক, এক দল দৌড় প্রতিযোগী দৌড় শুরু করার জন্যে প্রারম্ভিক রেখায় প্রস্তুতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু প্রত্যেকেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, যদি তার পরবর্তী ব্যক্তি শুরু না করে তবে  সেও শুরু করবে না। যদি তাদের এ সিদ্ধান্ত সার্বজনীন হয়, তবে কখনোই কোন প্রান্ত থেকেই  দৌড় প্রতিযোগিতা বাস্তবায়িত হবে না।

অনুরূপ যদি প্রতিটি  অস্তিত্বই অপর অস্তিত্বের শর্তাধীন হয় তবে কখনোই কোন অস্তিত্ব বাস্তবরূপ লাভ করবে না। বাস্তব অস্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ হল, অনির্ভরশীল ও শর্তহীন অস্তিত্বেরই প্রমাণ বাহক।

যুক্তির অবতারণা

এখন উপরোল্লিখিত প্রতিজ্ঞাসমূহের (مقدمات) আলোকে যুক্তিটিকে উপস্থাপন করবঃ

অস্তিত্বশীল বলে পরিগণিত প্রতিটি বিষয়ই নিম্নলিখিত দু’অবস্থার বহিঃর্ভূত হতে পারে নাঃ হয় অস্তিত্ব তার জন্যে অনিবার্য এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে অস্তিত্বশীল অর্থাৎ ‘অনিবার্য অস্তিত্ব’ অথবা অস্তিত্ব তার জন্যে অনিবার্য নয় এবং অপর কোন অস্তিত্বের মাধ্যমে অস্তিত্বে এসেছে; অর্থাৎ সম্ভাব্য অস্তিত্ব। এটা স্বতঃসিদ্ধ যে, যদি কোন কিছুর অস্তিত্বলাভ অসম্ভব হয়ে থাকে, তবে কখনোই তা অস্তিত্ব লাভ করবে না এবং কোন অবস্থাতেই তা অস্তিত্বশীল বলে পরিগণিত হতে পারে না।

অতএব, সকল অস্তিত্বশীল বিষয়ই (موجود) হয় ‘অনিবার্য অস্তিত্ব’ হবে অথবা ‘সম্ভাব্য অস্তিত্ব’ হবে।

‘সম্ভাব্য অস্তিত্বের’ ভাবার্থের প্রতি নিখুঁতভাবে লক্ষ্য করলে প্রতীয়মান হয় যে, এ অর্থের যথার্থ ভাবের অধিকারী সকল কিছুই হল কার্য (معلول) যেগুলো কারণের উপর নির্ভরশীল। কারণ কোন অস্তিত্বশীল বিষয় যদি স্বয়ংক্রিয়ভাবে অস্তিত্বশীল না হয়ে থাকে, তবে অবশ্যই অপর কোন অস্তিত্বশীলের মাধ্যমে অস্বিত্বে এসেছে। যেমনঃ যদি কোন বৈশিষ্ট্য সত্তাগতভাবে (بالذات) না হয়ে থাকে, তবে অবশ্যই  পরগত ভাবে (بالغير) হবে। আর কার্যকারণ বিধির তাৎপর্যও হল তা-ই যে, প্রত্যেক ‘নির্ভরশীল অস্তিত্ব’ বা ‘সম্ভাব্য অস্তিত্বই’ কারণের উপর নির্ভরশীল, না সকল অস্তিত্বই; যাতে বলার অবকাশ থাকবে যে খোদাও কারণের উপর নির্ভরশীল অথবা কারণবিহীন খোদার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন হল  কার্যকারণ বিধির পরিপন্থী।

অপরপক্ষে, যদি সকল অস্তিত্বশীলই সম্ভাব্য হয় এবং কারণের উপর নির্ভরশীল হয়, তবে কখনোই কোন অস্তিত্ব বাস্তবরূপ লাভ করবে না। আর এ ধরনের ধারণার দৃষ্টান্ত ঐরূপ যে, কোন দলের সকল সদস্যই অপর সদস্যের শুরুকরণের শর্তাধীন এবং ঐ অবস্থায় কোন কিছুই ঘটবে না।

অতএব, বাস্তব অস্তিত্বসমূহের উপস্থিতিই প্রমাণ করে যে, এক ‘অনিবার্য অস্তিত্ব’ (واجب الوجود) বিদ্যমান।

মূল: আয়াতুল্লাহ মিসবাহ ইয়াজদী

অনুবাদ: মোহাম্মাদ মাঈন উদ্দীন

সম্পাদনা ও সঙ্কলন: আবুল কাসেম

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

আল্লাহর প্রতি ইমান
মৃত্যুর পর মানুষকে কতদিন কবরে ...
শিয়া-সূন্নীর মধ্যে পার্থক্য কি?
নামাজ : আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের ...
মিথ্যা কথা বলা
শিয়া মুসলমানরা কত ওয়াক্ত নামাজ ...
বারজাখের জীবন
সূরা ইউনুস;(১৬তম পর্ব)
দরিদ্রতার চেয়ে মৃত্যু ভাল
দোয়া কবুলের মাস

 
user comment