আল্লাহ সকল গুপ্ত বিষয় সম্বন্ধে অবহিত এবং অন্তরের অনুভূতি সম্পর্কে ওয়াকিফহাল আছেন। তিনি সবকিছুকে পরিবৃত করে আছেন। সবকিছুর ওপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমতা রয়েছে। আমাদের প্রত্যেকের উচিত মৃত্যুর আগমনের পূর্বেই যা কিছু করণীয় তা করা,অবসর সময় অবহেলায় নষ্ট না করা এবং শ্বাসরুদ্ধ হবার আগেই এ যাত্রা বিরতির স্থল থেকে স্থায়ী আব্বাসের জন্য রসদ সংগ্রহ করা। হযরত আলী (আ.)বলেছেনঃ
আল্লাহকে স্মরণ কর,হে জনমণ্ডলী,তিনি তার কিতাবে যা বলেছেন তৎপ্রতি যত্নবান হও এবং তোমাদের প্রতি তাঁর যে হক রয়েছে তা সম্পন্ন কর। নিশ্চয়ই,আল্লাহ তোমাদের অহেতুক সৃষ্টি করেননি এবং লাগামহীনভাবে ছেড়েও দেননি; আবার অজ্ঞতা ও অন্ধকারে রেখেও দেননি। কী তোমাদের রেখে যাওয়া উচিত? তিনি তা সংজ্ঞায়িত করেছেন,তোমাদেরকে তোমাদের আমল শিক্ষা দিয়েছেন,তোমাদের মৃত্যুকে নির্ধারিত করেছেন এবং “সবকিছুর ব্যাখ্যাসহ কিতাব নাজেল করেছেন” (সূরা নাহল,আয়াত নং-৮৯)। তিনি তাঁর রাসূলকে দীর্ঘ সময় তোমাদের মাঝে রেখেছিলেন যে পর্যন্ত না কুরআনের মাধ্যমে তোমাদের জন্য তাঁর বাণী তথা তাঁর মনোনীত দ্বীন পরিপূর্ণ করেছিলেন। তিনি তাঁর রাসূলের মাধ্যমে সৎ আমল ও বদ আমল এবং তার আদেশ ও নিষেধের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। তিনি তোমাদের সম্মুখে তার প্রমাণাদি রেখেছেন এবং তোমাদের ওপর তাঁর ওজর নিঃশেষ করেছেন।
তিনি তোমাদের সম্মুখে তার সতর্কবাণী রেখেছেন এবং কঠোর শাস্তির বিষয়েও তোমাদেরকে সতর্ক করেছেন। সুতরাং তোমাদের বাকি দিনগুলোতে পূর্ণভাবে প্রয়াশ্চিত্ত কর এবং ধৈর্য ধারণের অভ্যাস কর । যতটুকু সময় তুমি আল্লাহর আদেশ-নিষেধের প্রতি অমনোযোগিতা ও বিস্মৃতির মধ্যে কাটিয়েছো,সে তুলনায় অবশিষ্ট সময় খুবই অল্প। তোমার নিজের জন্য সময় রেখো না-রাখলে তা তোমাকে অন্যায়কারীদের পথে ঠেলে নিয়ে যাবে। কখনো অলস হয়ে না। কারণ অলসতা তোমাকে পাপাচারিতার দিকে ঠেলে নিয়ে যাবে। হে আল্লাহর বান্দাগণ,সে ব্যক্তি সর্বোত্তম আত্ম-উপদেষ্টা যে আল্লাহর অতি অনুগত এবং সে ব্যক্তি সব চাইতে বড় আত্ম-প্রবঞ্চক যে আল্লাহর অনুগত নয়। সে ব্যক্তিই সব চাইতে বেশি প্রবঞ্চিত যে নিজেকে প্রবঞ্চনা করে। সে ব্যক্তি অতীব ঈর্ষণীয় যার ইমান নিরাপদ। ভাগ্যবান সেই ব্যক্তি যে অন্যদের কাছ থেকে উপদেশ গ্রহণ করে এবং ভাগ্যাহত সে যে কামনা-বাসনার শিকার হয়। মনে রেখো,ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মোনাফেকিও শিরকের সামিল এবং আকাঙ্খা-পূজারীর সঙ্গ ইমানের বিস্মৃতির চাবিকাঠি ও শয়তানের আসন ।
মিথ্যার বিরুদ্ধে নিজেকে সতর্ক রেখো,কারণ মিথ্যা ইমানের বিপরীত। একজন সত্যবাদী মুক্তি ও মর্যাদার শিখরে। অপরপক্ষে একজন মিথ্যাবাদী অমর্যাদা ও হীনতার শেষ সীমায়। কখনো ঈর্ষাপরায়ণ হয়ো না। কারণ হিংসা ইমানকে খেয়ে ফেলে; যেভাবে আগুন শুকনো কাঠকে খেয়ে ফেলে। বিদ্বেষপরায়ণ হয়ো না। কারণ বিদ্বেষ সদগুণাবলীকে মুছে দেয়। জেনে রাখো,কামনা বুদ্ধিমত্তাকে লোপ করে এবং স্মৃতিতে বিস্মরণ ঘটায়। কামনাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা তোমাদের উচিত,কারণ এটা এক প্রকার ছলনা এবং যার কামনা আছে সে ধোকায় লিপ্ত ।
জেহাদুল ইসলাম কর্তৃক অনূদিত নাহজুল বালাঘা থেকে সংকলিত
সম্পাদনা ও সঙ্কলন: এম এফ বারী