মহানবী (সা.) মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের পর আনসার এবং মুহাজিরদের নিয়ে একটি ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা করে এর পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। আর মাসজিদুন্নাবী একদিকে যেমন উপসনালয় ও ঐশী রিসালাতের প্রচার,প্রশিক্ষণ ও আধ্যাত্মিক পরিচর্যার কেন্দ্র ছিল। অপরদিকে তেমনি মুহাজির ও সমাজের বঞ্চিত,নিগৃহীত মানুষের আশ্রয়স্থলও ছিল। এ মসজিদেই তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন ও জীবিকা নির্বাহের কর্মসূচী নেয়া হত। এখানেই বিচার-বিবাদের মীমাংসা এবং সামরিক সিদ্ধান্ত,যুদ্ধের জন্যে সৈন্য প্রেরণ,যুদ্ধের পৃষ্ঠপোষকতা ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গৃহীত হত। মোটকথা মানুষের ধর্মীয় ও পার্থিব সকল বিষয় মহানবী (সা.)-এর মাধ্যমেই পরিচালিত হত। মুসলমনরাও হযরত (সা.)-এর আদেশের আজ্ঞাবহ হওয়াটা নিজেদের নৈতিক দায়িত্ব মনে করতেন। কারণ মহান আল্লাহ রাজনৈতিক বিচার ও রাষ্ট্রীয় বিষয়ে হযরত (সা.)-এর নিঃশর্ত আনুগত্য করার আদেশ প্রদান১ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহেও তার আজ্ঞাবহ হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।২
অন্য কথায় : মহানবী (সা.) নবুয়্যত,রিসালাত এবং ইসলামের আহকাম প্রচার ও প্রশিক্ষণের দায়িত্ব ছাড়াও ইসলামী সমাজের নেতৃত্বের দয়িত্বে ও নিয়োজিত ছিলেন। বিচারকার্য ও সামরিক নেতৃত্ব ইত্যাদি এ থেকেই উৎকলিত হত। যেমনিকরে ইসলামে ইবাদত ও আচরণগত দায়িত্ব ছাড়াও রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক ও অধিকারগত ইত্যাদি কর্তব্যও বিদ্যমান,তেমনিকরে ইসলামের নবী (সা.) প্রচার,প্রশিক্ষণ ও (আধ্যত্মিক) পরিচর্যার দায়িত্ব ছাড়াও মহান আল্লাহর নিকট থেকে ঐশী বিধান প্রয়োগের ক্ষেত্রেও দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং সকল প্রকার প্রশাসনিক মর্যাদার অধিকারী ছিলেন।
এটা অনস্বীকার্য যে,যদি কোন দ্বীন বিশ্বের শেষাবধি সকল প্রকার সামাজিক কর্তব্য পালনের দাবি করে তবে এ ধরনের বিষয়াদি সম্পর্কে উদাসীন থাকতে পারে না। অনুরূপ যে সমাজ এ দ্বীনের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়,সে সমাজ এ ধরনের কোন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্তব্য থেকে নিরুদ্দিষ্ট থাকবে,যা ইমামত নামে অভিষিক্ত,তাও হতে পারে না।
কিন্তু কথা হল মহানবী (সা.) এর তিরোধানের পর,কে এ দায়িত্ব লাভ করবেন ? এবং তা কার কাছ থেকে দায়িত্ব প্রাপ্ত হবেন ? মহান আল্লাহ এ মর্যাদা যেরূপে মহানবীকে (সা.) দিয়েছিলেন সেরূপে অন্য কাউকেও কি দিয়েছেন? এ দায়িত্বভার অন্য কারও গ্রহণের কোন বৈধতা রয়েছে কি ? নাকি মহান আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত এ মর্যাদা মহানবী (সা.)-এর জন্যেই নির্ধারিত ছিল এবং অতঃপর মুসলিম জনতাই তাদের ইমাম নির্বাচন করবে ও তাকে নিজেদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে স্থান দিবে,তা-ও বিধিসম্মত ? মানুষের কি এ ধরনের কোন অধিকার আছে ? না নেই ?
আর এটিই হল শিয়া ও সুন্নী সম্প্রদায়ের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয়। অর্থাৎ একদিকে শিয়াদের বিশ্বাস যে ইমামত হল একটি ঐশী মর্যাদা,যা মহান আল্লাহ কর্তৃকই যথোপযুক্ত ও যোগ্যতম ব্যক্তিদেরকে প্রদান করা আবশ্যক। আর মহান আল্লাহ,মহানবী (সা.) এর মাধ্যমে এ কর্মটি সম্পাদন করেছেন এবং আমীরুল মু’মিনিন আলীকে (আ.) তার উত্তরাধিকারী ঘোষনা করেছেন। অতঃপর তারই সন্তানদের মধ্য থেকে পরম্পরায় বারজনকে ইমামতের মর্যাদায় অভিসিক্ত করছেন। অপরদিকে সুন্নি সম্প্রদায়ের বিশ্বাস যে,ইমামত নবী (সা.)-এর তিরোধানের সাথে সাথে নবুয়্যত ও রিসালাতের মতই যবনিকায় পৌছেছে এবং এর পর থেকে ইমাম নির্বাচনের দায়িত্ব মানুষের উপর অর্পণ করা হয়েছে। এমনকি আহলে সুন্নাতের কোন কোন বিজ্ঞজন সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে,যদি কেউ অস্ত্রের ভয় দেখিয়েও ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়,তবে তার আনুগত্য করাও অন্যান্যদের জন্যে অপরিহার্য!৩ স্পষ্টতঃই প্রতীয়মান হয় যে,এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি স্বৈরাচারী,অত্যাচারী ও প্রতারকদের অপরাধের জন্যে কতটা পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে এবং মুসলমানদের অবক্ষয় ও বিভেদের পথে কতটা সহায়ক হয়েছে!
প্রকৃতপক্ষে আহলে সুন্নাত ঐশী সম্পর্কহীন ইমামতের বৈধতা দিয়ে রাজনীতি থেকে ধর্মের পৃথকীকরণের প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছেন। আর শিয়া সম্প্রদায়ের বিশ্বাস,এটিই হচ্ছে ইসলামের সঠিক ও সত্য সুন্দর পথ থেকে এবং সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর আনুগত্যের পথ থেকে বিচ্যুতির মূল কারণ। অনুরূপ শতসহস্র ধরনের বিচ্যুতি ও বিপথগামিতার সূতিকাগারও এখানেই,যেগুলো মহানবী (সা.) এর পরলোক গমনের পর থেকে মুসলমানদের মাঝে রূপ পরিগ্রহ করেছে এবং করবে।
অতএব প্রতিটি মুসলমানের জন্যেই কোন প্রকার অন্ধ অনুকরণ ও সাম্প্রদায়িক মনোভাব ব্যতিরেকে এ বিষয়টির উপর পরিপূর্ণ গবেষণা ও অনুসন্ধান চালানো অপরিহার্য।৪ আর সেই সাথে সত্য ও সঠিক মাযহাবের শনাক্তকরণের মাধ্যমে এর প্রচার ও প্রসারে সর্বশক্তি নিয়োগ করা উচিৎ।
উল্লেখ্য এ ব্যাপোরে ইসলামী বিশ্বের সামগ্রিক কল্যাণের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং বিভিন্ন মাযহাবের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি করে ইসলামের শত্রুদের জন্যে সুযোগ করে দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এমন কোন কাজ করা যাবে না যা ইসলামী সমাজে ফাটল সৃষ্টি করবে এবং কাফেরদের বিরুদ্ধে নিজেদের পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্র বিনষ্ট হবে। আর এ ক্ষতির অংশীদার মুসলমানরাই হবে,যার ফলশ্রুতি মুসলিম সমাজব্যবস্থার দুর্বলতা বৃদ্ধি ব্যতীত কিছই নয়। কিন্তু মুসলমানদের পারস্পরিক সহযোগিতা ও ঐক্য সংরক্ষণ যেন,সঠিক ও সত্য মাযহাবের অনুসন্ধান ও শনাক্তকরণের জন্যে,অনুসন্ধান ও গবেষনার সুষ্ঠ পথকে রুদ্ধ না করে ফেলে। আর ইমামতের বিষয়সমূহের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের সুষ্ঠ পরিবেশ যেন ব্যাহত না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে,এ বিষয়গুলোর সঠিক সমাধানের উপর মুসলমানদের ভাগ্য এবং ইহ ও পারলৌকিক কল্যাণ নির্ভর করে।
ইমামতের তাৎপর্য :
ইমামতের আভিধানিক অর্থ হল নেতা,পথপ্রদর্শক এবং যে কেউ কোন জনসমষ্টির নেতৃত্বের দায়িত্ব গ্রহন করবে তাকেই ইমাম (امام) বলা হয়ে থাকে -হোক সে সত্য পথের অনুসারী কিংবা মিথ্যা পথের অনুসারী। যেমন : পবিত্র কোরানে কাফেরদের পৃষ্ঠপোষকদের সম্পর্কে (ائمة الکفر) অর্থাৎ কাফেরদের নেতারা (সূরা তওবাহ-১২) কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে। তদনুরূপ মুসল্লীরা নামাজের জন্যে যার পিছনে সমবেত হয়ে থাকেন,তাকে ‘ইমামুল জামা’ত’ নামকরণ করা হয়।
কিন্তু কালামশাস্ত্রের পরিভাষায় ইমামত হল ইহ ও পরলৌকিক সকল বিষয়ে ইসলামী সমাজের সর্বময় ও বিস্তৃত নেতৃত্ব প্রদান। ইহলৌকিক শব্দটি ইমামতের পরিসীমার ব্যাপকতা বুঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে। নতুবা ইসলামী সমাজে ইহলৌকিক বিষয়াদিও দ্বীন ইসলামেরই অন্তর্ভুক্ত।
শিয়া সম্প্রদায়ের মতে এ ধরনের নেতৃত্ব কেবলমাত্র তখনই বৈধ হবে,যখন তা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুমোদিত হবে। আর প্রকৃতপক্ষে (সহকারী হিসেবে নয়) যিনি এ মর্যাদার অধিকারী হবেন,তিনি আহকাম ও ইসলাম পরিচিতির বর্ণনার ক্ষেত্রে সকল প্রকার ভুল-ভ্রান্তি থেকে সংরক্ষিত থাকবেন। অনুরূপ তিনি সকল প্রকার গুনাহতে লিপ্ত হওয়া থেকে পবিত্র থাকবেন। বস্তুতঃ পবিত্র ইমাম,একমাত্র নবুয়্যত ও রিসালাত ব্যতীত মহানবীকে (সা.),মহান আল্লাহ প্রদত্ত সকল মর্যাদার অধিকারী হবেন। ইসলামের বিভিন্ন নিয়ম-কানুন বর্ণনার ক্ষেত্রে তার বক্তব্য যেমন নিঃশর্তভাবে গ্রহণযোগ্য,তেমনি প্রশাসনের বিভিন্ন বিষয়েও তার আদেশ পালন করাও অপরিহার্য।
এভাবে শিয়া ও সুন্নী মাযহাবের মধ্যে ইমামতের ক্ষেত্রে তিনটি পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় :
প্রথমতঃ ইমামকে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্বাচিত হতে হবে।
দ্বিতীয়তঃ ইমামকে আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে এবং সকল প্রকার ভ্রান্তি থেকে মুক্ত থাকতে হবে।
তৃতীয়ত : ইমামকে গুনাহ থেকে পবিত্র থাকতে হবে ।
তবে মা’সুম হওয়াটা ইমামতের সমকক্ষ নয়। কারণ শিয়া মাযহাবের মতে হযরত ফাতিমা যাহরাও (সালামুল্লাহ আলাইহা) মা’সুম ছিলেন,যদিও তিনি ইমামতের আধিকারিণী ছিলেন না। অনুরূপ হযরত মারিয়াম (আ.) ও ইসমাতের অধিকারিণী ছিলেন এবং সম্ভবতঃ আল্লাহর ওলীগণের মধ্যেও অন্য কেউ এ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন,যদিও আমরা তাদের সম্পর্কে অবগত নই। বস্তুতঃ মা’সুম ব্যক্তিগণের পরিচয় মহান আল্লাহ কর্তৃক উপস্থাপিত না হলে তাদেরকে চিনা সম্ভব নয়।
ইমামের প্রয়োজনীয়তা
বিশ্বাসগত বিষয়ে গভীর জ্ঞান রাখেন না এমন অধিকাংশ মানুষই মনে করেন যে,শিয়া ও সুন্নী সম্প্রদায়ের মধ্যে ইমামত প্রসঙ্গে বিরোধ এ ছাড়া আর কিছইু নয় যে শিয়াদের বিশ্বাস : মহানবী (সা.) ‘আলী ইবনে আবি তালিবকে’ (আ.) ইসলামী সমাজের পরিচালনার জন্যে উত্তরাধিকারী নির্বাচন করেছিলেন। কিন্তু আহলে সুন্নাতের বিশ্বাস যে,এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি এবং জনগণ নিজেদের পছন্দ মত নেতা নির্বাচন করেছিল। তিনি (জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত নেতা) তার উত্তরাধিকারীকে ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচন করেছিলেন। তৃতীয় পর্যায়ে নেতা নির্বাচনের দ্বায়িত্ব ছয় সদস্য বিশিষ্ট গোষ্ঠীর নিকট অর্পণ করা হয়েছিল। অপরদিকে চতুর্থ খলিফাও আবার প্রথমবারের মত সাধারণ মানুষ কর্তৃক নির্বাচিত হয়োছিলেন। অতএব মুসলমানদের মধ্যে নেতা নির্বাচনের জন্যে সুনির্দিষ্ট কোন পন্থা ছিল না। ফলে চতুর্থ খলিফার পর যার সামরিক শক্তি অধিক ছিল,সে-ই এ স্থান দখল করেছিল,যেমন : অনৈসলামিক দেশসমূহেও মোটামুটি এ প্রক্রিয়া বিদ্যমান।
অন্যকথায় : তারা এ রকম মনে করেন যে,প্রথম ইমাম নির্বাচনের ক্ষেত্রে শীয়াদের বিশ্বাস সেরূপ ,যেরূপ আহলে সুন্নাত প্রথম খলিফা কর্তৃক দ্বিতীয় খলিফার নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিশ্বাস করেন,পার্থক্য শুধু এটুকুই যে,মহানবী (সা.) এর বক্তব্য মানুষের নিকট গ্রহণযোগ্য হয়নি,কিন্তু প্রথম খলিফার বক্তব্য মানুষ গ্রহণ করেছিল !
কিন্তু প্রশ্ন হল,প্রথম খলিফা এ অধিকার কোথা থেকে পেয়েছিলেন ? আল্লাহর রাসূল (সা.) (আহলে সুন্নাতের বিশ্বাস মতে) ইসলামের জন্যে কেন তার (প্রথম খলিফা) মত আন্তরিকতা প্রদর্শন করেননি এবং নব গঠিত ইসলামী সমাজকে অভিভাবকহীন অবস্থায় রেখে গেলেন অথচ যুদ্ধের জন্যে মদীনা থেকে অন্যত্র যাওয়ার সময়ও একজনকে নিজের স্থলাভিষিক্ত করে যেতেন এবং যেখানে স্বয়ং তিনিই (এ বিষয়ের উপর) তার উম্মতদের মধ্যে মতবিরোধ ও বিভ্রান্তির সংবাদ দিয়েছিলেন ? এছাড়া ও লক্ষ্যণীয় বিষয় হল,শিয়া ও সুন্নী সম্প্রদায়ের মধ্যে মূলতঃ মতবিরোধ সর্বাগ্রে এখানেই যে,ইমামত কি এক ধর্মীয় মর্যাদা,যা ঐশী বিধানের অনুগামী ও আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত বিষয়? নাকি পার্থিব রাজকীয় মর্যাদা,যা সামাজিক নির্বাহকের অনুগামী ? শিয়াদের বিশ্বাস যে,স্বয়ং মহানবীও (সা.) নিজ থেকে তার উত্তরাধিকারী নির্বাচন করেননি। বরং মহান আল্লাহ কর্তৃক আদিষ্ট হয়েই এ কর্ম সম্পাদর্ন করেছেন। প্রকৃতপক্ষে নবুয়্যতের পরিসমাপ্তির দর্শন পবিত্র ইমামগণের নিয়োগদানের সাথে সম্পর্কযুক্ত। আর এ ধরনের ইমামের উপস্থিতিতেই রাসূল (সা.)-এর ইন্তিকালের পর ইসলামী সমাজের অপরিহার্য বিষয়াদির নিশ্চয়তা প্রদান করা যেতে পারে।
এখানেই পরিষ্কার হয়ে যায় যে,কেন শিয়া সম্প্রদায়ের মতে ইমামত ‘মূল বিশ্বাসগত’ বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হয় -শুধুমাত্র একটি ফিকাহগত গৌণ বিষয় নয়। আর সেই সাথে স্পষ্ট হয়ে যায় যে,কেন তারা তিনটি শর্ত (ঐশী জ্ঞান,ইসমাত ও আল্লাহ কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত) বিবেচ্য বলে মনে করেন এবং কেন শিয়া সাধারণের মধ্যে এ ভাবার্থগুলো ঐশী আহকাম,প্রশাসন ও ইসলামী সমাজের নেতৃত্বের ক্ষেত্রে ধর্মীয় নেতৃত্বের ধারনার সাথে এমনভাবে মিশে আছে,যেন ইমামত শব্দটি এ ভাবার্থগুলোর সবগুলোকেই সমন্বিত করে।
এখন শিয়াদের সামগ্রিক বিশ্বাসের ক্ষেত্রে,ইমামতের তাৎপর্য ও মর্যাদার আলোকে এর বৈধতা সম্পর্কে আলোচনা করব।
মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্যের সফলতা,ওহীর মাধ্যমে মহান আল্লাহ কর্তৃক পথপ্রদর্শনের সাথে সম্পকির্ত। আর প্রভুর প্রজ্ঞার দাবি হল এই যে,কোন নবী প্রেরণ করবেন যাতে ইহ ও পরলৌকিক কল্যাণের পথ সম্পর্কে মানুষকে জ্ঞান দান করতে পারেন এবং মানুষের প্রশ্নের জবাব দিতে পারেন,আর সেই সাথে যোগ্যতম ব্যক্তিদেরকে (আধ্যাত্মিক) পরিচর্যা করতে পারেন এবং তাদের যোগ্যতা অনুসারে পূর্ণতার সর্বোচ্চ শিখরে তাদেরকে পৌছাতে সচেষ্ট হতে পারেন। অনুরূপ তারা উপযুক্ত সামাজিক পরিবেশে ইসলামের সামাজিক বিধানের প্রয়োগের দায়িত্বও নিবেন।
ইসলাম হল পবিত্র,চিরন্তন,সার্বজনীন ও অবিস্মৃত ধর্ম এবং ইসলামের নবী (সা.)-এর পর আর কোন নবীর আবির্ভাব ঘটবে না। নবুয়্যতের পরিসমাপ্তির দর্শন,তখনই কেবলমাত্র নবীগণের আবির্ভারের সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করবে,যখন সর্বশেষ ঐশী শরীয়ত মানব সম্প্রদায়ের সকল প্রশ্নের জবাব প্রদানে সক্ষম হবে এবং বিশ্বের অন্তিমলগ্ন পর্যন্ত এ শরীয়তের অটুট থাকার নিশ্চয়তা থাকবে।
উল্লেখিত নিশ্চয়তা পবিত্র কোরানের রয়েছে এবং মহান আল্লাহ স্বয়ং সকল প্রকার বিকৃতি ও বিচ্যুতি থেকে প্রিয় গ্রন্থের সংরক্ষিত থাকার নিশ্চয়তা বিধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু ইসলামের সকল বিধি-বিধান কোরানের আয়াতের বাহ্যিক যুক্তি থেকে প্রকাশ পায় না। যেমন : নামাযের রাকাত সংখ্যা ও পদ্ধতি এবং আবশ্যকীয় ও অনাবশ্যকীয় এমন অসংখ্য বিধান রয়েছে,যেগুলোকে পবিত্র কোরান থেকে উদঘাটন করা অসম্ভব। সাধারণত : পবিত্র কোরানে আহকাম ও কানুন বিশদভাবে বর্ণিত হয়নি। ফলে এগুলোর প্রশিক্ষণ ও সুস্পষ্ট বর্ণনার দায়িত্ব মহানবী (সা.)-এর উপর অর্পণ করা হয়েছে,যাতে তিনি মহান আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানের (কোরানের ওহী ব্যতীত) মাধ্যমে ঐগুলোকে মানুষের জন্যে বর্ণনা করেন।৫ আর এভাবে ইসলাম পরিচিতির প্রকৃত উৎস হিসেবে তার সুন্নাহ বিশ্বস্ত ও প্রামাণ্য রূপে প্রতিষ্ঠিত হয়।
কিন্তু হযরত (সা.)-এর শিবেহ আবি তালিবের কয়েক বছরের বন্দীদশা,শত্রুদের সাথে একদশকাব্দী যুদ্ধ ইত্যাদির মত জীবনের সংকটময় মুহূর্তগুলো সাধারান মানুষের জন্যে ইসলামের বিভিন্ন আহকাম,বর্ণনার পথে ছিল প্রধান অন্তরায়। অপর দিকে সাহাবাগণ যা শিখতেন তা সংরিক্ষত থাকারও কোন নিশ্চয়তা ছিল না। এমন কি অজু করার প্রক্রিয়া যা বর্ষপরম্পরায় মানুষের দৃষ্টি সীমায় সম্পাদিত হত তাও বিরোধপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। অতএব যেখানে এ সুস্পষ্ট বিষয়টি (যা মুসলমানদের নিত্যদিনের কর্মকাণ্ডের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল বা আছে এবং এর পরিবর্তন ও বিকৃতির মধ্যে কোন ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য জড়িত ছিল না) বিরোধপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে,সেখানে মানুষের ব্যক্তিগত ও গোত্রীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট জটিল ও সূক্ষ্ম নিয়মসমূহের বর্ণনার ক্ষেত্রে বিকৃতি ও ভ্রান্তির সম্ভাবনা অবশ্যই অধিকতর ।৬
এ বিষয়টির আলোকে সুস্পষ্ট হয়েছে যে,ইসলাম ধর্ম কেবলমাত্র তখনই এক পূর্ণাঙ্গ ও পরিপূর্ণ ধর্ম হিসেবে পৃথিবীর অন্তিমলগ্ন পর্যন্ত মানুষের সকল প্রয়োজন ও প্রশ্নের জবাবদানে সক্ষম হবে যখন দ্বীনের মূলভাষ্যে,সমাজের এ সকল কল্যাণের নিশ্চয়তা বিধিত হবে,যেগুলো মহানবী (সা.)-এর পরলোক গমণের পর সংকট ও হুমকির সম্মুখীন হয়েছিল। আর এ নিশ্চয়তা বিধানের পথ মহানবী (সা.)-এর যোগ্য উত্তরসুরি নির্বাচন ব্যতীত কিছুই নয়। এ উত্তরসুরিকে একদিকে যেমন ঐশী জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে,যাতে দ্বীনকে এর সকল দৃষ্টিকোণ থেকে উত্তমরূপে বর্ণনা করতে পারেন। অপরদিকে তেমনি দৃঢ়রূপে পবিত্রতার অধিকারী হতে হবে,যাতে কুপ্রবৃত্তি ও শয়তানী প্ররোচনায় প্রভাবিত না হন এবং ইচ্ছাকৃতভাবে দ্বীনের বিকৃতিতে লিপ্ত না হন। অনুরূপ মানব সম্প্রদায়ের আধ্যাত্মিক পরিচর্যার ক্ষেত্রে মহানবী (সা.)-এর দায়িত্ব স্বীয় স্কন্ধে তুলে নিয়ে,উৎকর্ষের সর্বোচ্চ শিখরে যোগ্যতম ব্যক্তিদেরকে পৌছে দিতেও তারা বদ্ধপরিকর। আর অনুকূল পরিস্থিতিতে সমাজের শাসন,পরিচালনা এবং ইসলামী বিধানকে সমাজে প্রতিষ্ঠা করা,বিশ্বে ন্যায়বিচার ও সত্য প্রতিষ্ঠা ইত্যাদির দায়িত্বও তারা গ্রহণ করে থাকেন ।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা এ সিদ্ধান্তে পৌছতে পারি যে,নবুয়্যতের পরিসমাপ্তি কেবলমাত্র তখনই প্রভুর প্রজ্ঞার সাথে সাযুজ্যপূর্ণ হতে পারে,যখন এমন পবিত্র ইমামগণকে নিয়োগ করা হবে,যারা একমাত্র নবুয়্যত ব্যতীত মহানবী (সা.)-এর সকল গুণ ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হবেন।
আর এভাবেই একদিকে যেমন সমাজে ইমাম থাকার প্রয়োজনীয়তা প্রতিভাত হয়,অপরদিকে তেমনি তাদের ঐশী জ্ঞান ও পবিত্র মর্যাদাও। অনুরূপ মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারটিও স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয়। কারণ একমাত্র তিনিই জানেন এ ধরনের জ্ঞান ও মর্যাদা কাকে দিয়েছেন এবং তিনিই বস্তুতঃ তার বান্দাগণের উপর বিলায়াত ও কর্তৃত্বের অধিকার রাখেন। আর তিনিই এর অধিকার অপেক্ষাকৃত হ্রাসকৃত মাত্রায় উপযুক্ত ব্যক্তিগণকে প্রদান করতে সক্ষম।
এখানে স্মরণযোগ্য যে,আহলে সুন্নাত কোন খলিফার ক্ষেত্রেই উল্লেখিত বৈশিষ্ট্যগুলোর কোনটিকেই স্বীকার করেন না। মহান আল্লাহ ও রাসূলের (সা.) পক্ষ থেকে নির্বাচিত হওয়ার দাবি যেমন তারা তুলেন না,তেমনি খলিফাগণের ঐশী জ্ঞান ও পবিত্রতার প্রসঙ্গও তুলেন না। বরং মানুষের বিভিন্ন ধর্মীয় প্রশ্নের জবাব দানের ক্ষেত্রে তাদের অসংখ্য ভুল-ভ্রান্তি ও অযোগ্যতার দৃষ্টান্ত তারা তাদের বিশ্বস্ত গ্রন্থসমূহে তুলে ধরেছেন। উদাহরণস্বরূপ প্রথম খলিফা প্রসঙ্গে উদ্ধৃত হয়েছে যে,তিনি বলেছিলেন :
انّ لی سیطانا یعترنی
আমার পশ্চাতে এমন এক শয়তান বিদ্যমান যে আমাকে বিভ্রান্ত করে ।৭
অনুরূপ দ্বিতীয় খলিফা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে,তিনি প্রথম খলিফার আনুগত্য স্বীকারকে ‘فلته’ (অর্থাৎ অবিলম্বকর্ম ও অবিবেচনাপূর্ণ কর্ম) নামকরণ করেছেন।৮ অনুরূপ দ্বিতীয় খলিফা অসংখ্যবার এ বাক্যটি স্বীয় কন্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন :
لولا علیّ لهلک عمر
যদি আলী না থাকতেন,তবে আমি ওমর ধ্বংস হয়ে যেতাম।
অর্থাৎ যদি আলী (আ.) না থাকতেন তবে ওমর ধ্বংস হয়ে যেতন।৯ এছাড়া তৃতীয় খলিফা১০ এবং বনি উমাইয়্যা ও বনি আব্বাসের ভুল-ভ্রান্তির কথাতো বলারই অপেক্ষা রাখেনা। ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে কেউ ন্যূনতম ধারণা নিলেই এ সম্পর্কে উত্তমরূপে পরিজ্ঞাত হতে পারবেন।
একমাত্র শিয়া সম্প্রদায়ই দ্বাদশ ইমামের ক্ষেত্রে এ শর্তত্রয়ে বিশ্বাসী। উপরোক্ত আলোচনার আলোকে ইমামত প্রসঙ্গে তাদের বিশ্বাসের বৈধতা প্রমাণিত হয় এবং এ ব্যাপারে বিস্তারিত কোন ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই।
ইমামের নিয়োগ
পূর্বে আমরা আলোচনা করেছি যে,পবিত্র ইমামের নির্বাচন ব্যতীত,নবুয়্যতের পরিসমাপ্তি প্রভুর প্রজ্ঞার পরিপন্থী। প্রকৃতপক্ষে বিশ্বজনীন ও চিরন্তন ধর্ম ইসলামের পরিপূর্ণতা এর সাথে সম্পর্কিত যে,মহানবী (সা.)-এর পর তার এমন সকল যোগ্য উত্তরসুরিগণ নির্বাচিত হবেন,যারা নবুয়্যত ও রিসালাত ব্যতীত মহানবী (সা.)-এর সকল ঐশী মর্যাদার অধিকারী হবেন।
এ বিষয়টিকে পবিত্র কোরানের আয়াতসমূহ এবং শিয়া সুন্নী উৎসর তাফসিরে বর্ণিত অসংখ্য রেওয়ায়েতের মাধ্যমে প্রমাণ করা যায় ।
উদাহরণস্বরূপ সূরা মায়িদাহর তৃতীয় আয়াতটির কথা উল্লেখ করা যায় যেখানে বলা হয়েছে :
)الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا(
“আজ তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম।”
এ আয়তটি মহানবী (সা.)-এর পরলোক গমনের কয়েক মাস পূর্বে বিদায় হজ্জের সময় অবতীর্ণ হয়েছে বলে মোফাসসিরগণের মধ্যে মতৈক্য বিদ্যমান। ইসলামের কোন ক্ষতি করতে গিয়ে কাফেররা হতাশ হয়ে পড়েছে এ কথাটির ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে উল্লেখিত আয়াতটির পূর্বেই। যথা
)الْيَوْمَ يَئِسَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ دِينِكُمْ(…
আজ কাফিররা তোমাদের দ্বীনের বিরুদ্ধাচরণে হতাশ হয়েছে ...
অতঃপর গুরুত্ব সহকারে বলা হয়েছে যে,আজ তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ এবং আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম। উপরোক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার স্থান,কাল ও পাত্রের উপর বর্ণিত অসংখ্য রেওয়ায়েতের আলোকে সুস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয় যে,এ পরিপূর্ণতা (اکمال) ও সম্পূর্ণতা (اتمام),যা ইসলামের ক্ষতি করতে কাফেরদের হতাশার সাথে সংশ্লিষ্ট তা মহানবী (সা.)-এর উত্তরসুরি নির্বাচনের মাধ্যমে বাস্তব রূপ লাভ করেছে। কারণ ইসলামের শত্রুদের প্রত্যাশা ছিল মহানবী (সা.)-এর পরলোকগমণের পর (যেহেতু তার কোন পুত্র সন্তান ছিল না) ইসলামের কোন পৃষ্ঠপোষক থাকবে না এবং ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে বিলুপ্তিতে পতিত হবে। কিন্তু তার উত্তরাধিকারী নির্বাচিত হওয়ায় ইসলাম ধর্ম এর পরিপূর্ণতা ও ঐশী অনুগ্রহের সম্পূর্ণতায় পৌছেছে। ফলে কাফেরদের সকল আশা ভস্মীভূত হয়েছে।১১
আর এর ঘটনাপ্রবাহ ছিল এরূপ : মহানবী (সা.) বিদায় হজ্জ থেকে ফেরার পথে ‘গাদীরে খুম’ নামক স্থানে সকল হাজীদেরকে একত্রিত করলেন এবং বিস্তারিত বক্তব্য দেয়ার পর উপস্থিত লোকদেরকে বিজ্ঞাসা করলেন :
الست اولی بکم من انفسکم
ওহে আমি কি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের উপর বিলায়াত প্রাপ্ত নই?১২
সকলেই একবাক্যে ইতিবাচক জবাব প্রদান করল। অতঃপর আলী (আ.)-এর বাহু ধরে তাকে সকল মানুষের সম্মুখে উঁচু করে প্রদর্শন করলেন এবং বললেন :
من کنت مولاه فعلی مولاه
আমি যার মাওলা,আলীও তার মাওলা।
এভাবে ঐশী বিলায়তকে হযরত আলী (আ.)-এর জন্যে মহানবী (সা.) ঘোষণা করলেন। অতঃপর উপস্থিত সকলেই তার [আলী (আ.)] আনুগত্য স্বীকার করলেন। তাদের মধ্যে দ্বিতীয় খলিফাও আমীরুল মু’মিনিন আলী (আ.)-এর আনুগত্য স্বীকারোত্তর অভিনন্দন জানাতে গিয়ে বলেছিলেন :
بخّ بخّ لک یا علیّ اصبحت مولای و مولی کلّ مومن و مومنة
হে আলী,তোমাকে অভিনন্দন ! অভিনন্দন ! (আজ থেকে) তুমি আমার মাওলা হয়ে গেলে এবং মাওলা হলে সকল মু’মিন নর-নারীরও।১৩
আর এ দিনেই এ আয়তটি অবতীর্ণ হয়েছিল :
)الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا(
“আজ তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম আর তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত করলাম।”
মহানবী (সা.) তাকবীর দিলেন এবং বললেন :
تمام نبوتی و تمام دین الله و لایة علی بعدی
আমার পরে আলীর বেলায়াতই হচ্ছে আল্লাহর দ্বীনের পূর্ণতা এবং আমার নবুয়্যতীর পূর্ণতা স্বরূপ।
এছাড়া আহলে সুন্নাতের কোন কোন মনীষীও (حموینی) বর্ণনা করেছেন যে,আবু বকর ও ওমর ‘জাবিরের’ নিকট চেয়েছিল রাসূলকে (সা.) জিজ্ঞাসা করতে যে,এ বিলায়াত কি একমাত্র আলীর জন্যেই নির্ধারিত? হযরত (সা.) বললেন : বিশেষকরে আলী এবং কিয়ামত পর্যন্ত আমার ওয়াসিগণের জন্যেই নির্ধারিত। অতঃপর ওয়াসি কারা এ প্রশ্নের উত্তরে বললেন :
علیّ اخی و وزیری و وارثی و وصیّی و خلیفتی فی امّتی و ولیّ کلّ مومن من بعدی ثمّ ابنی الحسن ثمّ ابنی الحسین ثمّ تسعة من ولد ابنی الحسین واحد القران معهم و هم مع القران لا یفارقونه و لا یفارقهم حتّی یردوا علیّ الحوض
আলী (আ.) আমার ভাই,উজির,উত্তরাধিকারী,ওয়াসি এবং আমার উম্মতের জন্যে খলিফা ও আমার পর মু’মিনগণের অভিভাবক। অতঃপর হাসান (আ.) অতঃপর হুসাইন (আ.) অতঃপর হুসাইনের (আ.) সন্তানগণের মধ্য থেকে নয়জন,উত্তর উত্তর ওয়ালী হবেন। কোরান তাদের সাথে এবং তারাও কোরানের সাথে। আর এ কোরান তাদের নিকট থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না এবং তারাও এ কোরান থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না,যতক্ষণ পর্যন্ত না হাউজে কাওছারে আমাদের সাথে মিলিত হবে।১৪
বিভিন্ন রেওয়ায়েত থেকে যতটুকু জানা যায়,তাতে দেখা যায় মহানবী (সা.) পূর্বেই আলী (আ.)-এর ইমামতের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে আদিষ্ট হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি এতে সন্ত্রস্ত ছিলেন যে,হয়ত মানুষ এ বিষয়টিকে হযরত (সা.)-এর ব্যক্তিগত মতামত বলে মনে করবে এবং একে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানাবে। এ দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি যথাযথ সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন,যাতে এ ঘোষণার জন্যে উপযুক্ত ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। ফলে নিম্নলিখিত আয়াতটি অবতীর্ণ হয়:
)يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ(
হে রাসূল ! তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রচার কর;যদি না কর তবে তো তুমি তার বার্তা প্রচার করলে না। আল্লাহ তোমাকে মানুষ হতে রক্ষা করবেন। (সুরা মায়িদাহ -৬৭ )১৫
এ বিষয়টির প্রচারের আবশ্যকতার উপর গুরুত্বারোপ করতঃ (যে এ বিষয়টি অন্যান্য সকল বাণীর মতই এবং এর প্রচার না করা সমস্ত রিসালাতের প্রচার থেকে বিরত থাকার শামিল) হযরতকে (সা.) এ সুসংবাদ দেয়া হয়েছিল যে,মহান আল্লাহ তাকে সকল অনাকাংখিত প্রতিক্রিয়া থেকে রক্ষা করবেন। আর এ আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার সাথে সাথে মহানবী (সা.) অনুধাবন করলেন যে,সে শুভলগ্ন উপস্থিত হয়েছে এবং এর অধিক বিলম্ব করা সঠিক নয়। অতএব ‘গাদীরে খুম’ নামক স্থানে এ দায়িত্ব সম্পন্ন করতে উদ্যোগী হলেন।১৬
তবে এ দিনটির বিশেষত্ব হল এই যে,এ দিনে আলীর (আ.) জন্য ইমামতের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ও বাইআত বা আনুগত্যের স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছিল। নতুবা রাসূল (সা.) তার রিসালাতের সময়কালে এশাধিকবার ও একাধিকরূপে আলী (আ.)-এর উত্তরাধিকারিত্বের কথা বর্ণনা করেছিলেন। নবুয়্যতের প্রারম্ভিক বছর ,গুলোতে যখন وَأَنْذِرْ عَشِيرَتَكَ الْأَقْرَبِينَ অর্থাৎ এবং তোমার নিকটাত্মীয়দেরকে ভয় প্রদর্শন কর। (সূরা শুয়ারা-২১৪) এ আয়াতটি নাযিল হয়েছিল এবং মহানবী (সা.) তার সকল নিকটাত্মীয়দেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন : সর্বপ্রথমে যে আমার আহবানে সাড়া দিবে,সেই আমার উত্তরাধিকারী হবে। দলমত নির্বিশেষে সকলেই এ ব্যাপারে একমত যে,সর্বপ্রথমেই যিনি ইতিবাচক সাড়া দিয়েছিলেন তিনি আলী ইবনে আবি তালিব (আ.) ব্যতীত আর কেউ নন। ১৭ অনুরূপ,
)يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ(
হে ঈমানদারগণ! আনুগত্য কর আল্লাহকে এবং আনুগত্য কর আল্লাহর রাসূল তার ঊলুল আমরদেরকে (উত্তরসুরিগণ)। (নিসা-৫৯)
উল্লেখিত আয়াতটি যখন নাযিল হয়োছিল এবং “ঊলূল আমর হিসাবে যার পরম আনুগত্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে আর তার আনুগত্য করাকে নবী (সা.)-এর আনুগত্য করার সমকক্ষ বলে বর্ণনা করা হয়েছে’’ তখন ‘জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী’ হযরত (সা.)-এর কাছে জানতে চেয়েছিলেন এই ঊলূল আমর কারা,যাদের আনুগত্য করা আপনার আনুগত্যের সমকক্ষ বলা হয়েছে ? তিনি বললেন :
هم خلفائی یا جابر و ائمة المسلمین من بعدی اوّلهم علیّ بن ابی طالب ثمّ الحسن ثمّ السحین ثمّ علی بن الحسین ثمّ محمّد بن علی المعروف فی التوراة بالباقر- ستدرکه یا جابر فاذا لقیته فاقرأه منی السلام- ثمّ الصادق جعفر بن محمد ثمّ موسی بن جعفر ثم علی بن موسی ثم محمد بن علی ثم علی بن محمد ثم الحسن بن علی ثم سمیّی و کنیّی حجة الله فی ارضه وبقیّته فی عباده ابن الحسن بن علی........
হে জাবির! তারা হলেন আমার পর,আমার খলিফা ও মুসলমানদের ইমাম। তাদের প্রথম ব্যক্তি হলেন আলী ইবনে আবি তালিব,অতঃপর হাসান,অতঃপর হুসাইন,অতঃপর আলী ইবনে হুসাইন,অতঃপর মুহাম্মাদ ইবনে আলী,যিনি তৌরাতে বাক্বির বলে পরিচিত,হে জাবির! যখন তার সাক্ষাৎ লাভ করবে,আমার পক্ষ থেকে তাকে সালাম জানাবে অতঃপর সাদিক জাফর ইবনে মুহাম্মাদ,অতঃপর মূসা ইবনে জাফর,অতঃপর আলী ইবনে মূসা,অতঃপর মুহাম্মাদ ইবনে আলী,অতঃপর আলী ইবনে মুহাম্মাদ,অতঃপর হাসান ইবনে আলী,অতঃপর আমার নাম ও কুনীয়াতধারী পৃথিবীতে আল্লাহর হুজ্জাত তার (মনোনিত) বান্দাগণের মধ্যে সর্বশেষ হাসান ইবনে আলী ।১৮
এবং রাসূল (সা.) এর ভবিষদ্বাণী অনুসারে জাবির (রা.) হযরত ইমাম বাক্বির (আ.) পর্যন্ত জীবিত ছিলেন এবং হযরতের (সা.) সালাম তার নিকট পৌছে দিয়েছিলেন।
অপর একটি হাদীসে আবু বাসির থেকে বর্ণিত হয়েছে যে,ঊলূল আমর প্রাসংগিক আয়াতটি সম্পর্কে ইমাম সাদিক (আ.)-এর নিকট প্রশ্ন করেছিলাম। তিনি বললেন : (আয়াতটি) আলী ইবনে আবি তালিব (আ.) হাসান (আ.) ও হোসাইন (আ.)-এর সম্মানে অবতীর্ণ হয়েছে। সবিনয়ে নিবেদন করলাম,মানুষ জানতে চায় পবিত্র কোরানে আলী (আ.) ও আহলে বাইতগণকে (আ.) তাদের নাম উল্লেখ পূর্বক পরিচয় দেয়নি কেন ? তিনি বললেন : তাদেরকে বল,নামাযের যে আয়াত নাযিল হয়েছে তাতে তিন রাকাত বা চার রাকাতের কোন উল্লেখ করা হয়নি এবং মহানবীই (সা.) ঐগুলো মানুষের নিকট ব্যাখ্যা করেছিলেন। অনুরূপ যাকাত,হজ্জ ইত্যাদি সম্পর্কিত আয়াতসমূহ ও মহানবীকে (সা.) ব্যাখ্যা করতে হয়েছে এবং তিনিই এরূপ বলেছিলেন,
من کنت مولاه فعلی مولاه
আমি যার মাওলা আলীও তার মাওলা।
এছাড়াও তিনি বলেছিলেন,
اوصیکم بکتاب الله و اهل بیتی فانی سألت الله عزّوجلّ ان لا یفرق بینهما حتّی یورد هما علیّ الحوض فأعطانی ذالک
অর্থাৎ তোমাদের নিকট আল্লাহর কিতাব এবং আমার আহলে বাইতের (সান্নিধ্যে) থাকার জন্যে সুপারিশ করছি বাস্তবিকই মহীয়ান,গরীয়ান আল্লাহর কাছে এ আবেদন জানিয়েছিলাম যে,তিনি যেন কোরানকে আহলে বাইত থেকে পৃথক না করেন,যতক্ষণ পর্যন্ত না আমাদের সাথে হাউজে কাওছারে মিলিত হয়,এবং মহান আল্লাহ আমার আবেদন গ্রহণ করেছেন। অনুরূপ বললেন :
لا تعلموهم فإنهم أعلم منكم، أنّهم لن يخرجوكم من باب هدى، ولن يدخلوكم في باب ضلال
অর্থাৎ তাদের জ্ঞান সম্পর্কে অবহিত হতে তোমরা সক্ষম নও,তারা প্রকৃতই তোমাদের থেকে অধিকতর জ্ঞাত। বস্তুতঃ তারা তোমাদেরকে কখনোই হিদায়াত থেকে বঞ্চিত করবেন না এবং পথভ্রষ্টতার দিকে ধাবিত করবেন না।
এছাড়া মহনবী (সা.) একাধিকবার (বিশেষকরে তার জীবনের অন্তিম দিন গুলোতে) বলেছিলেন :
انی تارک فیکم الثقلین کتاب الله و عترتی اهل بیتی فانّهما لن یفترقا حتّی یردا علی الحوض
বস্তুতঃ আমি তোমাদের মাঝে দু’টি গুরুভার রেখে গেলাম : আল্লাহর কিতাব এবং আমার আহলে বাইত। প্রকৃতপক্ষে এতদ্ভয় পরস্পর থেকে কখনোই বিচ্ছিন্ন হবে না,যতক্ষণ পর্যন্ত না হাউজে কাওছারে আমাদের সাথে মিলিত হয়।১৯
আরও বলেছিলেন :
الا انّ مثل اهل بیتی فیکم مثل سفینة نوح من رکبها نجا و من تخلّف عنها غرق
অর্থাৎ জেনে রাখ,বস্তুতঃ আমার আহলে বাইতের উদাহরণ হল নূহের তরীর মত -যে কেউ এতে আরোহণ করবে নিস্তার পাবে,আর যে কেউ একে ত্যাগ করবে নিমজ্জিত হবে।২০
অনুরূপ আলী ইবনে আবি তালিবকে (আ.) উদ্দেশ্য করে মহানবী (সা.) একাধিকবার বলেছিলেন:
انت ولیّ کل مومن بعدی
‘তুমি হলে আমার পর সকল মু’মিনের ওয়ালী’ ।২১
এছাড়াও এমন অনেক হাদীস বিদ্যমান যেগুলো সম্পর্কে আলোকপাত করা ক্ষুদ্রপরিসরে সম্ভব নয়।২২
তথ্যসূচী:
১। আল ইমরান-৩২,১৩২,নিসা-১২,১৪,৬৯,৮০,মায়িদাহ-৯২,আনফাল-১,২০,৪৬,তওবাহ-৭১,নূর-৫১,৫৪,৫৬,আহযাব-৬৬,৭১,হুজরাত-১৪,ফাতহ-১৬,১৭,মুহাম্মাদ-৩২,মুজাদিলাহ-১২,মুমতাহিনাহ-১২,তাগাবুন-১২,জিন-২৩।
২। আল ইমরান-১৫২,নিসা-৪২,৫৯,৬৫,১০৫,মায়িদাহ-৪৮,হাজ্জ-৬৭,আহযাব-৬,৩৬,মুজাদিলাহ-(৮-৯),হাশর-৭।
৩। আল আহকামুল সালতানিয়াহ,লিখেছেন আবু ইয়ালা এবং‘ আস সাওয়াদুল আ’যাম’ লিখেছেন আবুল কাশিম সামারকান্দি,পৃঃ ৪০-৪২।
৪। সৌভাগ্যবশতঃ বিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ এ বিষয়ের উপর একাধিক ভাষায় ও একাধিক পদ্ধতিতে শতসহস্র গ্রন্থ রচনা করে সত্যানুসন্ধিৎসুগণের জন্যে গবেষণার পথকে বিস্তৃত করেছেন। উদাহরণতঃ আবাকাতুল আনওয়ার,আল গাদির,দালায়িলুস সিদক,গায়াতুল মারাম এবং ইসবাতুল হুদাহ ইত্যাদি গ্রন্থের নাম উল্লেখ যোগ্য । যারা পড়াশুনার যথেষ্ট সুযোগ পান না তারা‘ আল মুরাজিয়াত’নামক একটি বই,যা শিয়া ও সুন্নী দু’জন মনীষীর মধ্যে বিনিময়কৃত পত্রসমূহের সমাহার,তা পড়তে পারেন। সৌভাগ্যবশতঃ বইটি বাংলায় অনুদিত করা হয়েছে।
৫। বাকারা : ১৫১,আল-ইমরান-১৬৪,জুমুআ’-২,নাহল-৬৪,৬৪,আহযাব-২১,হাশর-৭।
৬। আল্লামা আমিনি (রঃ) সাতশতজন মিথ্যা হাদীস বর্ণনাকারীর নাম তার“ আল গাদীর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এক লক্ষেরও অধিক হাদীসের বর্ণনাকারী রয়েছে (আল গাদীর,খণ্ড-৫ পৃঃ-২০৮)।
৭। শারহে নাহজুল বালাগাহ : ইবনে আবিল হাদিদ,খণ্ড-১,পৃষ্ঠা-৮৫ খণ্ড-৪,পৃঃ-২৩১-২৬২,এবং আল গাদীর : খণ্ড-৭,পৃঃ-১০২-১৮০।
৮। শারহে নাহজুল বালাগাহ : খণ্ড-১,পৃঃ-১৪২-১৫৮ ,খণ্ড-৩,পৃঃ-৫৭।
৯। আল গাদীর : খণ্ড-৬,পৃঃ-৯৩ ও পরবর্তী পৃষ্ঠাগুলো।
১০। আল গাদীর : খণ্ড-৮,পৃষ্ঠা-৯৭ ও পরবর্তী পৃষ্ঠাগুলো।
১১। এ আয়াতের বিস্তারিত ব্যাখ্যার জন্যে‘ তাফসীর আল মিজান’দ্রষ্টব্য।
১২। ইঙ্গিত করা হয়েছে সূরা আহযাবের ৬নং আয়াতের প্রতিالنَّبِيُّ أَوْلَى بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنْفُسِهِمْ
১৩। এ হাদীসের সনদের বৈধতার চূড়ান্ত দলিলের জন্যে“ আবাকাতুল আনওয়ার এবং আল গাদীর”গ্রন্থ দ্রষ্টব্য।
১৪। গায়াতুল মারাম,অধ্যায়-৫৮,হাদীস নং-৪ (ফারায়িদ হামভীনি )।
১৫। বিস্তারিত জানার জন্যে‘ তাফসির আল মিজানের’-এ আয়তটি দ্রষ্টব্য।
১৬। এ বিষয়টি আহলে সুন্নাতের মনীষীগণ মহানবী (সা.) এর সাতজন সাহাবী থেকে বর্ণনা করেছেন। তারা হলেন : যাইদ ইবনে আরকাম,আবু সাঈদ খুদরী ইবনে আব্বাস,জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী,বারা’ইবনে আযিব,আবু (হারায়রা ও ইবনে মাসউদ (আল গাদীর : খণ্ড-১)।
১৭। আবাকাতুল আনওয়ার’আল গাদীর,আল মুরাজিয়াত।
১৮। গায়াতুল মারাম,খণ্ড-১০,পৃঃ-২৬৭ ,ইসবাতুল হুদা,খণ্ড-৩,পৃঃ-১২৩,ইউনাবিউল মুয়াদ্দাহ,পৃঃ-৪৯৪।
১৯। এ হাদীসটিও বহুল প্রচারিত হাদীসসমূহের একটি যা তিরমিযি,নাসাঈ ও মোস্তাদরাকের লেখক কর্তৃক মহানবী (সা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে।
২০। মোস্তাদরাকে হাকিম,খণ্ড-: ৩,পৃঃ-১৫১।
২১। মোস্তাদরাকে হাকিম,খণ্ড-৩,পৃঃ-১৩৪,পৃঃ-১১১,সাওয়ায়িকে ইবনে হাজার,পৃঃ-১০৩,মুসনাদে ইবনে হাম্বল,খণ্ড-১,পৃঃ-৩৩১,খণ্ড-৪,পৃঃ-৪৩৮।
২২। মরহুম সাদুকের কামালুদ্দিন ও তামামুন্নিয়ামাহ,বিহারুল আনওয়ার : মাজলিসি।
এ প্রবন্ধটি মুহাম্মদ মাঈন উদ্দিন কর্তৃক অনুদিত “আক্বায়েদ শিক্ষা দ্বিতীয় খণ্ড” গ্রন্থ থেকে সংকলিত