আশুরার রাতের ভাষণ
হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) আশুরার রাতে অর্থাৎ ৬১ হিজরির নয়ই মুহররম দিবাগত রাতে কারবালা প্রান্তরে তাঁর সঙ্গীসাথীদের এক জায়গায় সমবেত করেন এবং তাঁদের উদ্দেশে নিম্নোক্ত সংক্ষিপ্ত ভাষণ প্রদান করেন :
‘সর্বোত্তম প্রশংসা সহকারে আল্লাহ্ তা‘আলার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং আনন্দ ও দুঃখ-কষ্ট উভয় অবস্থায়ই তাঁর প্রশংসা করছি। হে আমার রব! যেহেতু তুমি আমাদের নবুওয়াতের দ্বারা সম্মানিত করেছ,কুরআন ও দীনের জ্ঞান দ্বারা মর্যাদামণ্ডিত করেছ এবং আমাকে শোনার মত কান,দেখার মত চোখ ও সচেতন অন্তঃকরণ প্রদান করেছ সে জন্য তোমার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। হে আল্লাহ্! আমাকে তোমার প্রশংসাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করে নাও।
আমার সঙ্গীসাথীদের তুলনায় আন্তরিক ও একনিষ্ঠ সঙ্গীসাথী (আর কারও) ছিল বা আছে বলে আমার জানা নেই। আর আমার আহলে বাইতের (পরিবারের) তুলনায় অধিকতর অনুগত আহলে বাইতের কথাও আমার জানা নেই। তেমনি আত্মীয়- স্বজনদের খোঁজখবর নেওয়ার ক্ষেত্রেও আমার আহলে বাইতের তুলনায় নিষ্ঠাবান আহলে বাইত আছে বলে জানি না। আমাকে সাহায্য-সহায়তা করার জন্য আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের উত্তম পুরস্কার প্রদান করুন।
আমি জানি যে,আগামীকাল তাদের (ইয়াযীদী পক্ষের) সাথে আমাদের ব্যাপারটা যুদ্ধে পর্যবসিত হবে। তাই আমি আমার অনুকূলে তোমাদের কৃত বাই‘আত তুলে নিচ্ছি। আমি তোমাদের অনুমতি দিচ্ছি,তোমরা পথ চলার জন্য ও এখান থেকে দূরে চলে যাওয়ার জন্য রাতের অন্ধকারকে ব্যবহার কর এবং বিভিন্ন গ্রাম ও শহরে বিক্ষিপ্ত হয়ে যাও যাতে আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের জন্য বেরিয়ে যাওয়ার পথ বের করে দেন এবং তোমরা মুক্তি লাভ করতে পার। ঐ লোকগুলো আমাকে চায়। অতএব,তারা আমাকে পেলে তোমাদের সাথে তাদের কোন কাজ নেই।’১
হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) তাঁর সঙ্গীসাথীদের ওপর থেকে বাই‘আতের দায় তুলে নেওয়া সত্ত্বেও তাঁদের মধ্য থেকে কেউই তাঁকে ত্যাগ করে চলে যাননি।
আশুরার দিনে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর প্রথম ভাষণ
আশুরার দিন সকালে হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) তাঁর ঘোড়া আনতে বললেন এবং তা আনা হলে তিনি তার ওপর আরোহণ করলেন। এরপর তিনি ইয়াযীদের অনুগত সেনাপতি ওমর বিন সা‘দের নেতৃত্বাধীন বাহিনীর দিকে মুখ করে উচ্চৈঃস্বরে এমনভাবে আহ্বান করে তাঁর ভাষণ শুরু করলেন যে,তাদের মধ্যকার অধিকাংশ লোকই তা শুনতে পেল। ইমাম বলতে লাগলেন : ‘হে লোকসকল! আমার কথা শোন এবং (আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য) তাড়াহুড়া কর না যতক্ষণ না আমি তোমাদের সেই বিষয়ে উপদেশ প্রদান করি যে ব্যাপারে আমার ওপর তোমাদের অধিকার আছে এবং যতক্ষণ না আমার পক্ষ থেকে প্রকৃত বিষয় তোমাদের কাছে পেশ করি। অতঃপর তোমরা যদি আমার ওযর কবুল কর,আর আমার কথার সত্যতা স্বীকার কর এবং আমার প্রতি তোমাদের পক্ষ থেকে ইনসাফ কর তাহলে এ কারণে তোমরা অধিকতর সৌভাগ্যের অধিকারী হবে। সে ক্ষেত্রে আমার ব্যাপারে তোমাদের আর কোন দায়িত্ব থাকবে না। আর তোমরা যদি আমার ওযর কবুল না কর এবং তোমাদের পক্ষ থেকে ইনসাফের পরিচয় না দাও তাহলে (আমি হযরত নূহের ভাষায় বলব :)
فَأَجْمِعُوا أَمْرَكُمْ وَشُرَكَاءَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُنْ أَمْرُكُمْ عَلَيْكُمْ غُمَّةً ثُمَّ اقْضُوا إِلَيَّ وَلَا تُنظِرُونِ
“...অতঃপর তোমরা তোমাদের ও তোমাদের শরীকদের কাজকর্ম গোছগাছ করে নাও যাতে তোমাদের কাজ তোমাদের কাছে অস্পষ্ট না থাকে,অতঃপর আমার ব্যাপারে তোমাদের সিদ্ধান্ত কার্যকর কর এবং আর অপেক্ষা কর না।”২
إِنَّ وَلِيِّيَ اللَّـهُ الَّذِي نَزَّلَ الْكِتَابَ ۖ وَهُوَ يَتَوَلَّى الصَّالِحِينَ
“নিঃসন্দেহে আমার অভিভাবক হচ্ছেন আল্লাহ্,যিনি কিতাব (কুরআন) নাযিল করেছেন এবং তিনি পুণ্যবানদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করবেন।”৩
এরপর হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) প্রতিপক্ষের কয়েক জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নাম ধরে উচ্চৈঃস্বরে সম্বোধন করে বললেন : ‘হে শাবাছ্ বিন রাব‘ঈ! হে হাজ্জার বিন আবজার! হে কায়স্ বিন আশ‘আছ! হে ইয়াযীদ বিন হারেছ্! তোমরা কি আমাকে এ বলে পত্র লিখনি যে,‘ফল পেকে গেছে এবং যমিন সবুজে ঢেকে গেছে;আপনি যদি আসেন,তাহলে আপনার খেদমতে একটি সুসজ্জিত বাহিনী দেখতে পাবেন?’
তখন কায়স্ বিন আশ‘আছ জবাব দিল : ‘আমরা বুঝতে পারছি না আপনি কী বলছেন। তবে আপনি যদি আপনার চাচার গোত্রের৪ ফরমানের কাছে আত্মসমর্পণ করেন তাহলে কল্যাণ ব্যতীত অন্য কিছু দেখবেন না।’
হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)-এর খিমার (তাঁবুর) নারী ও কন্যারা যখন তাঁর ভাষণ শুনতে পেলেন তখন তাঁরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। হযরত ইমাম (আ.) তাঁদেরকে থামতে বলার জন্য তাঁর ভাই আব্বাস ও স্বীয় পুত্র আলী আকবারকে নারীদের তাঁবুতে পাঠালেন। তিনি বলে পাঠালেন : ‘আমার প্রাণের শপথ,এরপরে তোমরা আমার জন্য অনেক বেশি ক্রন্দন করবে।’
মহিলারা ও বালিকারা নীরব হলে হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) আল্লাহ্ তা‘আলার দরবারে শুকরিয়া আদায় করলেন। অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় আল্লাহ্ তা‘আলাকে স্মরণ করলেন এবং হযরত রাসূলে আকরাম (সা.),পূর্ববর্তী নবী-রাসূলগণ ও ফেরেশতাগণের প্রতি দরূদ পাঠালেন। এরপর তিনি তাঁর ভাষণের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখলেন :
‘তোমরা আমার নসবের (বংশ পরম্পরার) বিষয়টি স্মরণ কর,ভেবে দেখ,আমি কে। তোমাদের হুঁশ হোক;তোমরা নিজেদের ধিক্কার দাও এবং ভেবে দেখ যে,আমাকে হত্যা করা এবং আমার মর্যাদা বিনষ্ট করা কি তোমাদের জন্য জায়েয?’
‘আমি কি তোমাদের রাসূলের কন্যার পুত্র নই? আমি কি তাঁর (রাসূলের) স্থলাভিষিক্ত ও চাচাত ভাইয়ের পুত্র নই-যিনি সকলের আগে ঈমান এনেছিলেন এবং রাসূলুলাহ্ (সা.) যা এনেছিলেন তার সত্যতা স্বীকার করেছিলেন?’‘সাইয়্যেদুশ্ শুহাদা হামযাহ্ কি আমার চাচা৫ নন?’‘জা‘ফর তাইয়ার-আল্লাহ্ তা‘আলা যাঁকে কারামতস্বরূপ দু’টি পাখা দিয়েছেন যাতে তিনি তা দিয়ে বেহেশ্তের ভিতরে উড়তে পারেন,তিনি কি আমার চাচা নন?’‘তোমরা কি জান না যে,রাসূলুল্লাহ (সা.) আমার ও আমার ভাই সম্পর্কে এরশাদ করেছেন : ‘এ দু’জন হচ্ছে বেহেশ্তে যুবকদের নেতা।’?’
‘তোমরা যদি আমার কথায় বিশ্বাস করতে না পার এবং আমার কথার সত্যতায় সন্দেহ পোষণ করে থাক,তাহলে আল্লাহ তা‘আলার শপথ করে বলছি,যখন থেকে জেনেছি যে,আল্লাহ্ তা‘আলা মিথ্যাবাদীকে তাঁর দুশমন হিসাবে গণ্য করেন তখন থেকে কখনই মিথ্যা কথা বলিনি। তোমাদের মধ্যে এমন লোকও আছে যারা তাদের সত্যবাদিতার জন্য সুপরিচিত,তারা আমার কথার সত্যতা স্বীকার করবে। তোমরা জাবের বিন আবদুল্লাহ আনসারী,আবু সা‘ঈদ খুদরী,সাহল্ বিন সা‘দ,যায়দ বিন আরক্বাম ও আনাস্ বিন মালেকের কাছে জিজ্ঞাসা কর যাতে তারা আমার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছ থেকে যা শুনেছেন তা তোমাদের কাছে বর্ণনা করেন। তাহলে তোমাদের কাছে আমার কথার সত্যতা প্রমাণিত হবে। এসব সাক্ষ্য কি আমার রক্তপাত ঘটানো থেকে তোমাদের বিরত থাকার জন্য যথেষ্ট নয়?’৬
ইমাম হুসাইন (আ.)-এর সাথে শিমরের কথোপকথন
এ সময় ইয়াযীদের সেনাদলের অন্যতম সেনাপতি শিমর বিন যিল্ জাওশান্ বলল : ‘তুমি যা বললে তা-ই যদি হয়ে থাকে,তাহলে আমি কখনই মজবুত ‘আক্বীদাহ্ সহকারে আল্লাহর ইবাদাত করিনি।’
তখন ইমামের অন্যতম সঙ্গী হাবীব বিন মাযাহের বললেন : ‘আল্লাহর শপথ,আমি দেখতে পাচ্ছি যে,তুমি নড়বড়ে ‘আক্বীদাহ্ ও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সহকারে আল্লাহর ইবাদাত করছ। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,তুমি এখন সত্য বলছ;আসলে তুমি বুঝতে পারছ না যে,ইমাম কী বলছেন। আল্লাহ্ তা‘আলা তোমার অন্তঃকরণের ওপর গাফলাতের মোহর মেরে দিয়েছেন।’
ইমাম হুসাইন শিমরকে বললেন : ‘তোমার কি এ ব্যাপারেও কোন সন্দেহ আছে যে,আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কন্যার সন্তান? আল্লাহর শপথ,এ বিশ্বে পূর্ব ও পশ্চিমের দুই প্রান্তের মধ্যবর্তী ভূখণ্ডে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর কন্যার পুত্র আমি ছাড়া আর কেউ নয়। তোমার জন্য পরিতাপ! আমি কি তোমার কাউকে হত্যা করেছি যে,আমার কাছ থেকে তার রক্তের বদলা আদায় করতে চাচ্ছ? আমি কি তোমার কোন সম্পদ বিনষ্ট করেছি,নাকি আমার কাঁধে কারও কেসাসের দায় রয়েছে যা তুমি কার্যকর করতে চাচ্ছ?’
এ সময় ইয়াযীদী পক্ষের লোকেরা চুপ করে থাকল। কারণ,তখন তাদের বলার মত কোন কথাই ছিল না। এরপর ইমাম হুসাইন পুনরায় ইয়াযীদের দলের কয়েক জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নাম ধরে উচ্চৈঃস্বরে সম্বোধন করে বললেন : ‘হে শাবাছ্ বিন রাব‘ঈ! হে হাজ্জার বিন আবজার! হে কায়স্ বিন আশ‘আছ! হে ইয়াযীদ বিন হারেছ্! তোমরা কি আমাকে এ বলে পত্র লিখনি যে,‘ফল পেকে গেছে এবং যমিন সবুজে ঢেকে গেছে;আপনি যদি আসেন তাহলে আপনার খেদমতে একটি সুসজ্জিত বাহিনী দেখতে পাবেন।’?’
ইমাম হুসাইন (আ.) এরপর ইয়াযীদী বাহিনীর সামনে দাঁড়িয়ে নিজের সম্বন্ধে বলতে লাগলেন :
‘হে কুফাবাসী! তোমাদের মায়েরা তোমাদের শোকে ক্রন্দন করুক। তোমরা আল্লাহ তা‘আলার এ নেক বান্দাহকে দাওয়াত করেছিলে এবং বলেছিলে : আমরা আপনার পথে জীবন বিলিয়ে দেব। কিন্তু এখন তোমরা তার বিরুদ্ধে তোমাদের তলোয়ারগুলোকে উন্মুক্ত করেছ এবং তাকে সকল দিক থেকে অবরুদ্ধ করে ফেলেছ। তোমরা তাকে এ বিশাল পৃথিবীর যেখানে ইচ্ছা চলে যাবার জন্য সুযোগ দিচ্ছ না। এখন সে বন্দীর মত তোমাদের হাতে আটকা পড়ে আছে। তোমরা তাকে এবং তার পরিবারের নারী ও কন্যাদের ফোরাতের পানি পান করতে বাধা দিয়েছ,অথচ ইহুদী ও খ্রিস্টান গোত্রসমূহের লোকেরাও সেখান থেকে পানি পান করছে। এমনকি পিপাসায় আমাদের পশুগুলোর প্রাণও ওষ্ঠাগত হয়েছে এবং সেগুলো ছটফট করছে ও গড়াগড়ি দিচ্ছে। তোমরা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বংশধরদের ব্যাপারে তাঁর বর্ণিত মর্যাদার সীমারেখাকেও রক্ষা করনি। মহাপিপাসার দিনে আল্লাহ্ তোমাদের পরিতৃপ্ত না করুন।’
তখন কায়স্ বিন আশ‘আছ পুনরায় জবাব দিল : ‘আমরা বুঝতে পারছি না,আপনি কী বলছেন। তবে আপনি যদি আপনার চাচার গোত্রের ফরমানের কাছে আত্মসমর্পণ করেন তাহলে কল্যাণ ব্যতীত অন্য কিছু দেখবেন না।’
জবাবে হযরত ইমাম হুসাইন বললেন : ‘আল্লাহর শপথ,আমি তোমাদের দিকে হীন- লাঞ্ছিতের হাত বাড়িয়ে দেব না এবং (তোমাদের সামনে থেকে) ক্রীতদাসের ন্যায় পালিয়েও যাব না।”৭
এরপর ইমাম বললেন : ‘হে আল্লাহর বান্দাহ্গণ! আমি তাঁর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি যিনি আমার রব এবং তোমাদেরও রব। কিন্তু যে সব উদ্ধত লোক কিয়ামত দিবসের ওপর ঈমান রাখে না তাদের ওপর আমি অসন্তুষ্ট। আর তাদের হিংস্রতা থেকে আমি তাঁরই কাছে আশ্রয় চাচ্ছি।’
এরপর ইমাম তাঁর বাহন ঘোড়াটিকে শোয়ালেন এবং সেটির পা বাঁধার জন্য উক্ববাহ্ বিন সিমআনকে নির্দেশ দিলেন।৮
আশুরার দিনে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর দ্বিতীয় ভাষণ
দুশমন বাহিনী নীরব হলে হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) তাদেরকে সম্বোধন করে পুনরায় বলতে লাগলেন :
‘হে লোকসকল! ধ্বংস ও দুঃখ তোমাদের ঘিরে ফেলুক;কারণ,(মনে করে দেখ,)কেমন বর্ণনাতীত আগ্রহ ও উচ্ছ্বাস সহকারে তোমরা আমাকে দাওয়াত করেছিলে! আর এ কারণেই আমি এখানে এসেছি। আমি খুব দ্রুত তোমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে এখানে এসেছি। কিন্তু আমরা তোমাদের হাতে যে তলোয়ার অর্পণ করেছিলাম৯ তা-ই আমাদের বিরুদ্ধে কোষমুক্ত করেছ। আর আমরা আমাদের দুশমন ও তোমাদের দুশমনদের বিরুদ্ধে যে অগ্নি প্রজ্বলিত করেছিলাম তোমরা তাকেই আমাদের বিরুদ্ধে প্রচণ্ডতর করে তুলেছ। তোমরা তোমাদের বন্ধুদের বিরুদ্ধে ও দুশমনদের সপক্ষে যুদ্ধের জন্য দাঁড়িয়ে গিয়েছ,যদিও তারা না তোমাদের সাথে ইনসাফ ও সুবিচারের সাথে আচরণ করেছে,না তাদের দ্বারা তোমাদের কোন কল্যাণ হবে বলে আশা করা যায়,আর না আমরা এমন কোন কাজ করেছি যে কারণে আমাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের শত্রুতা ও আগ্রাসনের সঙ্গত কারণ থাকতে পারে।
পরিতাপ তোমাদের জন্য;তোমাদের তলোয়ারগুলো যখন খাপে বদ্ধ ছিল,আর তোমাদের হৃদয়গুলো শান্ত ছিল এবং তোমাদের চিন্তাশক্তি সুশঙ্খল ছিল তখন কেন তোমরা আমাদের পরিত্যাগ করনি? তোমরা মাছির মত ফিতনার দিকে উড়ে গিয়েছ,প্রজাপতিদের (আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ার) মত একজন আরেক জনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছ। হে ক্রীতদাসীর দাসগণ! হে আহযাবেরর১০ অবশিষ্ট লোকেরা! হে কিতাব (কুরআন) পরিত্যাগকারীরা! হে আল্লাহর কালাম বিকৃতকারীরা১১! হে রাসূলের সুন্নাতকে বিস্মৃতির অতলে নিক্ষেপকারীরা! হে নবী-রাসূলগণের বংশধরদের ও তাঁদের অছিদের (মনোনীত প্রতিনিধিদের) বংশধরদের হত্যাকারীরা১২! হে জন্মপরিচয়হীনদের জন্মপরিচয়ের অধিকারীদের সাথে সংযুক্তকারীরা১৩! হে মু’মিনদের কষ্ট প্রদানকারীরা! হে ‘কুরআনকে ছিন্ন করে ফেলল’ বলে চিৎকারকারীদের নেতারা১৪! তোমরা ধ্বংস হও।
আমি বলছি,তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমাকে হত্যা কর না। কারণ,আমাকে হত্যা করা বা অবমাননা করা তোমাদের জন্য জায়েয নয়। আমি তোমাদের রাসূলের কন্যার সন্তান,আর আমার নানী খাদীজাহ্ তোমাদের রাসূলের স্ত্রী। হয়ত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সেই কথা তোমাদের কাছে পৌঁছে থাকবে যে,তিনি এরশাদ করেছেন : ‘হাসান ও হুসাইন হচ্ছে বেহেশতবাসী যুবকদের দুই নেতা।’
হ্যাঁ,আল্লাহর শপথ,ওয়াদা ভঙ্গ করা,বিশ্বাসঘাতকতা ও চুক্তি ভঙ্গ করা তোমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তোমাদের (তোমরা হচ্ছ এমন বৃক্ষতুল্য যার) মূল ধোঁকা,প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতার সাথে মিশে গেছে। তোমাদের শাখা-প্রশাখাসমূহ এর ওপর ভিত্তি করেই প্রসারিত হয়েছে। তোমরা হচ্ছ সর্বাধিক নোংরা-নিকৃষ্টতম ফল;তাই তোমরা স্বীয় বাগান-মালিকের গলায় আটকে যাও এবং আত্মসাৎকারী ও লুণ্ঠনকারীদের জন্য সুস্বাদু ও সুখাদ্য হয়ে যাও।
আল্লাহর পক্ষ থেকে লা`নত বর্ষিত হোক সেই অঙ্গীকার ভঙ্গকারীদের ওপর যারা মজবুত করে অঙ্গীকারাবদ্ধ হবার পরও তা ভঙ্গ করেছে। তোমরা (তোমাদের অঙ্গীকারের ব্যাপারে) আল্লাহকে সাক্ষী করেছিলে এবং তাঁ র নামে শপথ করেছিলে;তোমরা হচ্ছ সেই অঙ্গীকার ভঙ্গকারী গোষ্ঠী। এখন পিতৃপরিচয়হীনের পুত্র পিতৃপরিচয়হীন১৫ আমাকে দু’টি বিষয়ের মধ্যে একটি বেছে নিতে বলেছে : হয় যুদ্ধ নয়ত লাঞ্ছিত জীবন। দূর হোক লাঞ্ছনা আমা থেকে;আমি কখনই লাঞ্ছনা মেনে নেব না। আল্লাহ্,রাসূল (সা.) ও মু’মিনগণ কখনই আমাদের জন্য কাপুরুষতা পছন্দ করেননি। যে সব পবিত্র কোল আমাদের লালন-পালন করেছেন তাঁরা এবং আত্মমর্যাদাবান লোকেরা কখনই হীন ও নীচদের আনুগত্যকে নিহত হওয়ার ওপর অগ্রাধিকার প্রদান করবেন না। আমি এ স্বল্পসংখ্যক লোক নিয়ে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব,এমনকি আমার সঙ্গীসাথীরা যদি আমাকে একা ফেলে যায় তবুও।১৬
এরপর হযরত হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) একটি কবিতা আবৃত্তি করেন যার অর্থ নিম্নরূপ :
“যদি আমি বিজয়ী হই তো আমি অনেক আগে থেকেই বিজয়ী হয়ে আছি,আর আমি যদি পরাজিত হই,তবুও আমি পরাজিত নই। আমরা ভয়ে অভ্যস্ত নই;বরং আমাদের নিহত হওয়া অন্যদের ধনসম্পদের অধিকারী হওয়ার প্রায় সমার্থক।”
এরপর তিনি তাঁর ভাষণের ধারাবাহিকতায় বলেন : ‘আল্লাহর শপথ,হে কুফরী অবলম্বনকারী গোষ্ঠী! আমার পরে খুব বেশিদিন না যেতেই-খুব অল্প দিনের মধ্যেই-একজন আরোহী তার বাহনের ওপর আরোহণ করবে১৭ এবং তোমাদের জীবনে এমন এক অবস্থা নিয়ে আসবে যেন তোমরা যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হচ্ছ। সে তোমাদের গভীর দুশ্চিন্তা,আতঙ্ক ও দিশেহারা অবস্থার মধ্যে নিক্ষেপ করবে। আর এ হচ্ছে আমার নানার পক্ষ থেকে আমার পিতার মাধ্যমে আমার সাথে কৃত অঙ্গীকার। অতএব,তোমরা তোমাদের নিজেদের ও তোমাদের সঙ্গীসাথীদের সিদ্ধান্ত নিয়ে আরেক বার পর্যালোচনা ও চিন্তাভাবনা করে দেখ যাতে কালের প্রবাহ তোমাদের ওপর দুঃখ ও দুশ্চিন্তা বর্ষণ না করে। আমি আমার বিষয়টি আল্লাহ্ তা‘আলার ওপর সোপর্দ করেছি। আর আমি জানি যে,এ ধরণীর বুকে এমন কোন কিছুই ঘটে না যা তাঁর কুদরাতী হাতের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকতে পারে।
হে আল্লাহ্! তুমি এদের ওপর আসমান থেকে বারি বর্ষণ বন্ধ করে দাও। এদের ওপর লাঞ্ছনা ও দুর্ভিক্ষ চাপিয়ে দাও। আর সেই ছাক্বাফী গোলামকে১৮ এদের ওপর প্রতিষ্ঠিত করে দাও যাতে সে এদের বিষের পেয়ালার আস্বাদন করাতে পারে এবং তাদের বিরুদ্ধে আমার,আমার সঙ্গীসাথিগণ,আহলে বাইত ও আমার অনুসারীদের (হত্যার-যা হতে যাচ্ছে) প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারে। কারণ,তারা আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং অসহায় করে ফেলেছে। তুমি আমাদের রব;আমরা তোমার দিকেই মুখ করেছি এবং তোমার ওপর তাওয়াক্কুল করেছি,আর আমাদের প্রত্যাবর্তন তোমারই দিকে।১৯
ওমর বিন সা‘দের পরিণতি সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী
এরপর হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) ইয়াযীদী বাহিনীর সেনাপতি ওমর বিন সা‘দের খোঁজ করলেন,বললেন : ‘ওমর বিন সা‘দ কোথায়? ওকে আমার সামনে আসতে বল।’
ওমর বিন সা‘দ যদিও ইমামের সামনে আসতে ইচ্ছুক ছিল না,তথাপি ইমাম তাকে আহ্বান করায় সে ইমামের সামনে এল। ইমাম হুসাইন তাকে বললেন : ‘তুমি আমাকে হত্যা করবে? আমি মনে করি না যে,পিতৃপরিচয়হীনের পুত্র পিতৃপরিচয়হীন২০ রেই ও গোরগানের শাসনক্ষমতা তোমাকে অর্পণ করবে।২১ আল্লাহর শপথ,কখনই তা ঘটবে না। আমার এ অঙ্গীকার এমন এক অঙ্গীকার যেন তা বাস্তবায়িত হয়েই আছে। তুমি যা চাও তা করতে পার,কিন্তু জেনে রেখ,আমার (শাহাদাতের) পরে তুমি না দুনিয়ায়,না আখেরাতে-কোথাও আনন্দের মুখ দেখতে পাবে না। আমি যেন দেখতে পাচ্ছি,কুফার বুকে তোমার মাথা বর্শার ডগায় গেঁথে রাখা হয়েছে এবং শিশুরা তার ওপর পাথর নিক্ষেপ করছে ও সেটিকে লক্ষ্যস্থল বানিয়ে লক্ষ্যভেদ করছে।”২২
এতে ওমর বিন সা‘দ ক্রুদ্ধ হল এবং ইমাম হুসাইনের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল। সে তার সৈন্যদের উদ্দেশে বলল : ‘কিসের অপেক্ষা করছ? সবাই একযোগে ওর বিরুদ্ধে হামলা চালাও;ওরা মুষ্টিমেয় সংখ্যক বৈ তো নয়।’২৩
আশুরার দিনে ইমাম হুসাইনের তৃতীয় ভাষণ২৪
ইমাম হুসাইন (আ.) শত্রুবাহিনীর সামনে দাঁড়িয়ে তাদের সারিগুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করলেন। তারা তখন তরঙ্গের মতো গর্জন করছিল। এ সময় শত্রুবাহিনীর মধ্যে ওমর বিন সা‘দ্সহ কুফার বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এক জায়গায় অবস্থান করছিল। ইমাম হুসাইন তার দিকে তাকিয়ে বললেন :
‘আমি আল্লাহ্ তা‘আলার প্রশংসা করছি,যিনি এ দুনিয়াকে সৃষ্টি করেছেন এবং একে অস্থায়ী ও ধ্বংসশীল গৃহ বানিয়েছেন,আর দুনিয়াবাসীকে বিভিন্ন অবস্থার অধিকারী করেছেন। যে ব্যক্তি দুনিয়ার প্রতারণার শিকার হয়েছে,প্রকৃতপক্ষে সে অজ্ঞ,আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট ও তার দ্বারা সম্মোহিত হয়েছে,প্রকৃতপক্ষে সে হতভাগ্য। দুনিয়া যেন তোমাদের ধোঁকা না দেয়। কারণ,যে ব্যক্তিই দুনিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ে দুনিয়া তারই আশাকে নিরাশায় পরিণত করে এবং যে ব্যক্তি তার লোভে পড়ে,দুনিয়া তাকে হতাশ করে দেয়। আমি দেখতে পাচ্ছি,তোমরা একটি কাজ সম্পাদনের জন্য এখানে একত্র হয়েছ যার মাধ্যমে তোমরা আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করেছ ও তাঁর ক্রোধ সঞ্চারের কারণ হয়েছ। তাই তিনি তোমাদের প্রতি বিরূপ হয়েছেন এবং তোমাদের জন্য তাঁর শাস্তি নাযিল (-এর সিদ্ধান্ত গ্রহণ) করেছেন,আর স্বীয় রহমত থেকে তোমাদের দূরে সরিয়ে দিয়েছেন।
আমাদের রব অত্যন্ত মহান। কিন্তু তোমরা অত্যন্ত খারাপ বান্দাহ্। তাই তাঁর আনুগত্যের অঙ্গীকার করেও এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনলেও রাসূলের পরিবার-পরিজন ও বংশধরদের ওপর চড়াও হয়েছ এবং তাদের হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছ। শয়তান তোমাদের ওপর বিজয়ী হয়েছে,তাই তোমরা মহান আল্লাহর কথা ভুলে গিয়েছ। তোমরা ধ্বংস হও। তোমরা যা চাচ্ছ সে ব্যাপারে আমি বলছি : ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজি‘উন্।২৫
এরা হচ্ছে এমন একটি জনগোষ্ঠী যারা ঈমান আনার পরে কাফের হয়েছে। দূর হোক আল্লাহর রহমত যালেমদের কাছ থেকে।’
এ সময় ওমর বিন সা‘দ কুফার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উদ্দেশে বলল : ‘আফসোস তোমাদের জন্য যে,তোমরা তার সাথে কথোপকথন করছ! আল্লাহর শপথ,এ হচ্ছে সেই পিতার পুত্র যে,পুরো একদিনও যদি কথা বলতে চায়,কথা বলতে অক্ষম হবে না।’
তখন শিমর ইমামের দিকে এগিয়ে এল এবং বলল : ‘হে হুসাইন! তুমি এ কী সব কথা বলছ? তুমি আমাদের বুঝিয়ে দাও যাতে আমরা বুঝতে পারি।’
তখন ইমাম হুসাইন (আ.) বললেন : ‘আমি বলছি যে,তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আমাকে হত্যা কর না। কারণ,আমাকে হত্যা করা ও আমার অবমাননা করা তোমাদের জন্য জায়েয নয়। আমি তোমাদের রাসূলের কন্যার সন্তান এবং আমার নানী তোমাদের রাসূলের স্ত্রী খাদীজাহ্। হয়ত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর এ উক্তি তোমাদের কাছে পৌঁছে থাকবে যে,তিনি এরশাদ করেছেন : হাসান ও হুসাইন বেহেশতে যুবকদের নেতা।’২৬
তথ্যসূত্র:
১. কিতাবুল ইরশাদ : শেখ মুফীদ,পৃ. ৯৩
২. সূরা ইউনুস : ৭১
৩. সূরা আল্-আ‘রাফ : ১৯৬
৪.অর্থাৎ বনি উমাইয়্যাহর।-অনুবাদক
৫.স্মর্তব্য,হযরত হামযাহ্ ছিলেন ইমাম হুসাইন (আ.)-এর পিতার চাচা,আর আরব রীতি অনুযায়ী পিতার চাচাকেও ‘চাচা’বলা হয়।- অনুবাদক
৬.হায়াতুল ইমামিল্ হুসাইন,৩য় খণ্ড,পৃ. ১৮৪ .
৭.و الله لا اعطیکم بیدی اعطأ الذلیل و لا افر فرار العبید. বাক্যের শেষাংশের পাঠান্তর :
.و لا اقر قرار العبید -‘আর আমি গোলামের অঙ্গীকারে অঙ্গীকারাবদ্ধ হব না।’
৮.কিতাবুল ইরশাদ : শেখ মুফীদ,২য় খণ্ড,পৃ. ৯৭
৯.এখানে ইমাম হুসাইন (আ.) তাঁর পিতা হযরত আলী (আ.)-এর খেলাফতের যুগের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন যখন কুফা ছিল তাঁর রাজধানী এবং কুফার লোকেরা তাঁর অনুগত ছিল।- অনুবাদক
১০.ইমাম হুসাইন এখানে আহযাবের যুদ্ধের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন যে যুদ্ধে আরবের বিভিন্ন মুশরিক গোষ্ঠী (احزاب -দলসমূহ) ঐক্যবদ্ধভাবে হযরত রাসূলে আকরাম (সা.)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল যাতে অবশ্য তারা সফল হয়নি।- অনুবাদক
১১.এখানে ইমাম (আ.) ইয়াযীদী পক্ষভুক্ত সাবেক ইয়াহুদী ও সাবেক খ্রিস্টানদের বুঝাতে চেয়েছেন বলে মনে হয়।- অনুবাদক
১২.এখানেও তিনি সাবেক ইয়াহুদী ও সাবেক খ্রিস্টানদের বুঝাতে চেয়েছেন বলে মনে হয়।- অনুবাদক
১৩.স্মর্তব্য,জারজ সন্তানের পিতৃপরিচয়ে পরিচিত করা নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও আবু সুফিয়ানের জারজ সন্তান (কারবালার ঘটনার সময় কুফার প্রশাসক ওবায়দুল্লাহর পিতা) যিয়াদকে আমীর মু‘আবিয়াহ্ তাঁর ভাই বলে পরিচয় দিতেন;সম্ভবত ইমাম এ দিকেই ইঙ্গিত করেছেন।- অনুবাদক
১৪.এখানে ইমাম হুসাইন (আ.) সিফ্ফীনের যুদ্ধের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন বলে মনে হয় যখন হযরত আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার মুখে আমীর মু‘আবিয়াহর নির্দেশে তাঁর সৈন্যরা বর্শার মাথায় কুরআন ঝুলিয়ে যুদ্ধবিরতির জন্য আবেদন জানায় এবং হযরত আলীর সৈন্যদের মধ্যকার একটি বিরাট অংশ অজ্ঞতাবশত এতে প্রতারিত হয়ে তাঁকে,তাদের ভাষায়,‘কুরআনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’না করার জন্য চাপ দেয় এবং এর ফলে তিনি যুদ্ধ বন্ধ করতে বাধ্য হন- যে যুদ্ধবিরতির বিষময় পরিণতি মুসলিম উম্মাহ্ আজও বহন করে চলেছে। এভাবে যুদ্ধ বন্ধের জন্য হযরত আলী (আ.)-এর ওপর চাপ সৃষ্টিকারীরা পরবর্তীকালে তাঁকে পরিত্যাগ করে যায় এবং ‘খারেজী’নামে পরিচিত হয়।- অনুবাদক
১৫.কারবালার ঘটনার সময় কুফার প্রশাসক ওবায়দুল্লাহ্ বিন যিয়াদ।-অনুবাদক
১৬.তুহাফুল ‘উকূল্,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ১৭৪;আল্-ইহ্তিজাজ্,২য় খণ্ড,পৃ. ৯৯;মাক্বতালুল্ হুসাইন : খারাযমী,২য় খণ্ড,পৃ. ৬।
১৭.ইমাম হুসাইন এখানে তাঁর শাহাদাতের পরে অচিরেই মুখতার ছাক্বাফী যে অভ্যুত্থান করেন এবং কারবালার যালেমদের বিরুদ্ধে নির্মম প্রতিশোধ গ্রহণ করেন সে সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন।- অনুবাদক
১৮.অর্থাৎ মুখতারকে।- অনুবাদক
১৯.বিহারুল আনওয়ার,৪৫তম খণ্ড,পৃ. ৯
২০.কুফার প্রশাসক ওবায়দুল্লাহ্ বিন যিয়াদ।
২১.ওবায়দুল্লাহ্ বিন যিয়াদ ওমর বিন সা‘দকে এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এবং এ লোভেই সে হযরত ইমামের হুসাইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল।- অনুবাদক
২২.ইমাম হুসাইনের এ ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়িত হয়েছিল।- অনুবাদক
২৩.বিহারুল আনওয়ার,৪৫তম খণ্ড,পৃ. ১০
২৪.আশুরার দিনে ইমাম হুসাইন (আ.) কয় বার রণাঙ্গনে আসেন এবং শত্রুবাহিনীর উদ্দেশে ভাষণ দেন ইতিহাসে তা পুরোপুরি সুস্পষ্ট নয়। আমরা এখানে তাঁর তিনটি ভাষণ উদ্ধৃত করেছি। কিন্তু এটা নিশ্চিত করে বলা কঠিন যে,তিনি কি যথেষ্ট পরিমাণে বিরতি সহকারে বিভিন্ন সময় এসে এ ভাষণগুলো দিয়েছেন,নাকি এগুলো একই ভাষণেরই বিভিন্ন অংশ এবং ঐতিহাসিকগণ এগুলোকে তিন ভাগে বিভক্ত করেছেন। কেউ কেউ মনে করেন যে,তিনি আশুরার দিনে শত্রুবাহিনীকে সম্বোধন করে তিন বারের বেশি ভাষণ প্রদান করেন। (ওয়াসিলাতুদ্-দারাইন : ২৯৮)
২৫.‘নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য (সৃষ্ট হয়েছি) এবং নিশ্চয়ই আমরা তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনরত।’(সূরা আল্-বাক্বারাহ্ : ১৫৬)
২৬.বিহারুল আনওয়ার,৪৫তম খণ্ড,পৃ. ৫
(সূত্র: প্রত্যাশা, বর্ষ ১,সংখ্যা ৩)