মহান আল্লাহ সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস :
আমরা বিশ্বাস করি যে,মহান আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়,কোন কিছুই তার মত নয়,তিনি অনাদি ও অনন্ত,যার কোন শুরু বা শেষ নেই,তিনিই প্রথম এবং তিনিই শেষ,তিনি সর্বজ্ঞ,প্রজ্ঞাময়,ন্যায়-পরায়ণ,অস্তিত্বময়,সর্বদ্রষ্টা। সৃষ্টির কোন গুণ দিয়ে তাকে গুনান্বিত করা যায় না। তার কোন দেহ নেই,কোন অবয়ব নেই,তিনি বস্তুসত্তা (জাওহার) নন এবং উপজাত (আরাজ) নন,তিনি হাল্কা নন ও ভারী নন,তিনি স্থিতিশীল নন ও গতিশীল নন,তার কোন স্থান নেই,কোন কাল নেই,কেউই তার দিকে নির্দেশ করতে পারে না,যেহেতু কোন কিছুই তার মত নয়,কিছুই তার সমান নয়,তার কোন বিপরীত নেই,তার কোন স্ত্রী নেই,কোন কিছুই তার তুল্য নয়। দৃষ্টিগুলো তাকে নিবদ্ধ করতে পারে না বরং তিনিই দৃষ্টিগুলোকে নিবদ্ধ করেন। যারা আল্লাহর রূপ,মুখবায়ব,হাত ও চোখ ইত্যাদি আছে বলে তুলনা করেন অথবা আকাশ থেকে তিনি পৃথিবীতে অবতরণ করেন কিংবা বেহেশতবাসীকে তিনি চন্দ্ররূপে দর্শন দিবেন ইত্যাদি বলে থাকেন,তারা প্রকৃতপক্ষে তার সম্পর্কে কুফরি করেন। কারণ সর্বপ্রকার ঘাটতি থেকে পবিত্র আল্লাহর স্বরূপ সম্পর্কে তারা অজ্ঞ। আমরা যা কিছুই ধারণা করি না কেন সবই আমাদের মত সৃষ্টি। ইমাম বাকের (আ.) বলেন-
“তিনি বিজ্ঞদের ব্যাখ্যার উর্ধে এবং তিনি সূক্ষ্ম জ্ঞানের নাগালের বাইরে।”
এরূপ সেব্যক্তি আল্লাহকে অস্বীকারকারীদের অন্তর্ভূক্ত বলে পরিগনিত হবে যে বলে-আল্লাহ কিয়ামত দিবসে তার সৃষ্টিকে দর্শন দিবেন। যদিও মুখে তারা বলে থাকে যে,আল্লাহর দেহ নাই। এ ধরনের দাবী করার কারণ হলো তারা কোরআন এবং হাদীসের বাহ্যিক অর্থকে গ্রহণ করেছে। তারা তাদের বুদ্ধিবৃত্তিকে অস্বীকার করেছে। সত্যিই তারা তাদের অজ্ঞতার আড়ালে কোরআনের অন্তর্নিহিত তাৎপর্যকে অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে সঠিক দলিল,ভাষাতত্ত্ব ও ব্যকরণের সাহায্য গ্রহণ করতঃ বাহ্যিক অবয়ব ভেদ করে এর গভীরে প্রবেশ করার চেষ্ঠা করেনি।
তাওহীদ বা একত্ববাদ সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস :
আমরা মহান আল্লাহর সর্বময় একত্ববাদে বিশ্বাস করি। তার সত্তাগত (জাতগত) একত্ব থাকা আবশ্যক। আমাদের বিশ্বাস তিনি সত্তাগতভাবে এক এবং অত্যাবশ্যকীয় অস্তিত্ব। তেমনি (দ্বিতীয়তঃ) তার গুণগত একত্ববাদের আবশ্যকতা রয়েছে। এ কারণে আমাদের বিশ্বাস মতে তার গুণ,তার সত্তা ভিন্ন কিছু নয় যার বিস্তারিত আলোচনা পরবর্তীতে আসছে। আমরা বিশ্বাস করি যে,তার সত্তাগত গুণের ক্ষেত্রেও তিনি অতুলনীয়। যেমন- তার জ্ঞান ও ক্ষমতার তুলনা কিছুই হতে পারে না। অনুরূপ তার সৃজনে বা সৃষ্টজীবের জীবিকা দানের ক্ষেত্রে তার কোন শরীক নেই। তার যে কোন পুর্ণতার ক্ষেত্রেই কোন কিছুই তার সমতুল্য নয়। এরূপভাবে আবশ্যক হলো (তৃতীয়তঃ) তার উপাসনার ক্ষেত্রে একত্ববাদ। সুতরাং তিনি ভিন্ন অন্য কারো উপাসনা বৈধ নয়। তদ্রূপ যে কোন প্রকার এবাদতে-হোক সে আবশ্যক যেমন (নামায) কিংবা অনাবশ্যক যেমন দোয়া- ইত্যাদি কোন এবাদতের ক্ষেত্রেই তার শরীক করা যাবে না। যদি কেউ এবাদতের ক্ষেত্রে তাকে ভিন্ন অন্য কাউকে শরীক করে তবে সে মোশরেক বলে পরিগণিত হবে। যেমন- কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই এবাদত করল কিন্তু আল্লাহ ভিন্ন কোন কিছুর নৈকট্য কামনা করল (যেমন- দারিদ্র বিমোচন)। ইসলামের দৃষ্টিতে সে মোশরেক এবং মূর্তি পূজা বা অন্য কোন কিছুর পূজার সাথে তার এবাদতের কোন পার্থক্য নেই। তবে কবর জিয়ারত করা ও শোক প্রকাশ বা মাতম করা আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো এবাদতকরণ বলে পরিগণিত হবে না,যার অপবাদ দিয়ে কিছু লোক ইমামীয়া অর্থাৎ শীয়াদেরকে আক্রমন করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে তারা কবর যিয়ারতের অর্ন্তনিহিত তাৎপর্যকে অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে। উপরন্তু কিছু কল্যাণকর্ম সম্পাদন করে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য এগুলো হলো কিছু পন্থা। যেমন- অসুস্থকে দর্শন করে,জানাযাকে সমাধিস্থ করে,দ্বীনের ভাইদের সাথে সাক্ষাৎ করে ও দরিদ্র মুসলমানকে সাহায্য করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। সুতরাং অসুস্থের সাথে সাক্ষাৎ করা হলো স্বয়ং একটি কল্যাণব্রত যার মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায়। অসুস্থের দর্শন,আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো এবাদত বলে পরিগনিত হওয়ার কারণ নয় বা এবাদতের ক্ষেত্রে শিরক নয়। অনুরূপভাবে অন্যান্য কল্যাণব্রত যেমন-কবর যিয়ারত,শোক পালন,জানাযা সমাধিস্থকরণ এবং মুসলিম ভাইদের সাথে সাক্ষাৎকরাও শিরক নয়।
যাহোক কবর যিয়ারত ও শোক পালন যে শরীয়তগতভাবে কল্যাণকর্ম তা ফিকাহশাস্ত্রে প্রমানিত হয়েছে। এখানে তা প্রমানের সুযোগ নেই। সংক্ষেপে এ ধরনের কর্ম সম্পাদন কোন ভাবেই শিরক নয় যা কেউ কেউ ধারণা করে থাকে। ইমামদের (আ.) মাযার যিয়ারতের ক্ষেত্রে তাদের এবাদত করার কোন উদ্দেশ্য এখানে থাকে না। প্রকৃতপক্ষে সেখানে উদ্দেশ্য থাকে ইমামগণের (আ.) আদেশসমূহ পূনর্জীবিত করা। তাদেরকে নতুন করে স্মরণ করা এবং আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান প্রদর্শন করা। পবিত্র কোরআনের ভাষায়-
“যারা আল্লাহর নিদর্শন সমূহকে সম্মান প্রদর্শন করে তবে তা তাদের অন্তরের তাকওয়ার বহিঃপ্রকাশ।” (সূরা-হজ্জ-৩২)
শরীয়তে এ কর্মগুলো মুস্তাহাব বলে পরিগনিত। সুতরাং মানুষ যদি এগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর তুষ্টি অর্জন করতে,তার নৈকট্য লাভ করতে চায় তবে সে তার প্রতিদান তার (আল্লাহর) নিকটই পাবে এবং সে অবশ্যই পুরস্কৃত হবে।
মহান আল্লাহর গুণাবলী (সিফাত) সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস :
আমরা বিশ্বাস করি যে,মহান আল্লাহর প্রকৃত ও হ্যাঁ-বোধক গুণগুলোকে পূর্ণতাগুণ (কামাল) ও সৌন্দর্যগুণ (জামাল) বলে নামকরণ করা হয়। যেমন -জ্ঞান (এলম),শক্তি (কুদরাত),ঐশ্বর্যবান (গনি),প্রত্যয় (এরাদা) ও চিরঞ্জীব (হায়াত)। এগুলোর সবই হলো তার সত্তা,সত্ত্বাবহির্ভূত কিছু নয় এবং আল্লাহর সত্তার অস্তিত্ব ব্যতীত এগুলোর কোন অস্তিত্ব নেই। সুতরাং তার শক্তিই তার জীবন,আবার তার জীবনই তার শক্তি। যখন তিনি পরাক্রমশালী তখন তিনি চিরঞ্জীব,আবার যখন তিনি চিরঞ্জীব তখন তিনি পরাক্রমশালী। তার অস্তিত্ব আর গুণের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই এবং তার অন্যান্য পূর্ণতাগুণগুলোও এরূপ।
হ্যাঁ অর্থ ও ভাবার্থগত দিক থেকে এগুলোর (গুণ ও সত্তা) মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান,তবে বাস্তব ও অস্তিত্বগত ক্ষেত্রে নয়। যদি অস্তিত্বগত দিক থেকে তারা পৃথক হয় তবে আবশ্যকীয় অস্তিত্বের (ওয়াজীবুল ওজুদ) একাধিক্য অপরিহার্য হয়ে পড়ে। যেমন-ধরা যাক অনাদিও আবশ্যকীয় অস্তিত্ব। অথচ তার কোন দ্বিতীয় নেই। সুতরাং এ ধরনের ধারণা একত্ববাদের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করে। হ্যাঁ-বোধক সংযুক্তি (এজাফী) গুণগুলো যেমন-সৃজনগত (খালেকিয়াত),অন্নদানগত (রাজেকিয়াত),প্রাচীণগত (তাকাদ্দুম),কারণগত (ইল্লিয়াত) গুণগুলো প্রকৃত (হাকীকী) গুণের অন্তর্ভূক্ত এবং একই। আর তা হলো তার স্বতঃ অস্তিত্বমান (কাইয়্যমিয়াত) হওয়া। যখন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিভিন্ন ফলাফল থেকে বিবেচনা করা হয় তখন বর্ণিত গুণগুলো এ একটি গুণ থেকে উৎসারিত হয়। আবার না-বোধক গুণ যেগুলো সিফাতে জালাল (মহিমা গুণ) নামে পরিচিত,এগুলোর সবই একটি না-বোধক গুণের অন্তর্ভূক্ত। আর তা হলো তার সৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাকে না করা। সুতরাং এ সম্ভাবনাকে প্রত্যাখ্যানের অর্থ হলো,তার শরীর নেই,তার চেহারা নেই,তার গতি নেই,স্থিতি নেই,এবং তিনি ভারী নন,হালকা নন এবং এ ধরনের অন্যান্য বিষয়াবলী। অর্থাৎ সমস্ত ঘাটতি থেকে মহান আল্লাহ মুক্ত। পুনরায় বলা যায় সৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাকে না করার প্রকৃত অর্থ হলো তিনি আবশ্যকীয় অস্তিত্ব (ওয়াজিবুল ওজুদ) যা হ্যাঁ-বোধক পূর্ণতা গুণের অন্তর্ভূক্ত।
সুতরাং না-বোধক গুণগুলো অবশেষে হ্যাঁ-বোধক গুণেরই অন্তর্ভূক্ত হয়। অতএব মহান আল্লাহ সর্বদিক থেকেই এক ও অদ্বিতীয়। তার পবিত্র সত্তাকে খণ্ড করা যায় না। তিনি অংশ সমাহার নন। এটা আশ্চর্যের বিষয় যে,কেউ কেউ বলে যে,হ্যাঁ-বোধক গুণগুলো যেন না-বোধক গুণের দিকে প্রত্যাবর্তন করে। তারা এটা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছেন যে,তার গুণ হলো তারই সত্তা। ফলে তারা আল্লাহ সত্তাগতভাবে এক ও অদ্বিতীয়-এ বক্তব্যের নিশ্চয়তা দিতে গিয়ে ধারণা করে যে,আল্লাহর হ্যাঁ-বোধক গুণগুলো না-বোধক গুণের উপর নির্ভরশীল। এভাবে তারা এক মারাত্মক ভ্রান্ত পথে পতিত হয়েছে। কারণ এভাবে তারা আল্লাহর অস্তিত্ব- যে সত্তা সকল প্রকার অপূর্ণতার সম্ভাবনা থেকে মুক্ত সেই সত্তাকে- পূর্ণরূপে অস্বীকার করে ফেলে। আর তার অর্থ দাড়ায় আল্লাহর অনস্তিত্বশীলতা।
অনুরূপ আশ্চর্যের বিষয় হলো তাদের কথা যারা বলে যে,আল্লাহর গুণগুলো হলো তার অস্তিত্ববর্হিভূত। তারা বিশ্বাস করে যে আল্লাহর গুণগুলো তার সত্তার মতই প্রাচীন। ফলে তার গুণগুলো তার কর্মের অংশীদার। এভাবে তাদের বিশ্বাসে আল্লাহর (যিনি হলেন আবশ্যকীয় অস্তিত্ব) শরীক করে। আবার অন্যরা বলে আল্লাহ হলেন তার গুণগুলোর সমাহার। কিন্তু মহান আল্লাহ এ ধরনের ধারণার উর্ধে। আমাদের মাওলা আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) যিনি একত্ববাদীদের সর্দার বলেন-
“পূর্ণ ইখলাস হলো তার উপর কোন বিশেষণ আরোপ না করা। কারণ প্রত্যেকটি বিশেষণই তার বিশেষ্য থেকে পৃথক এবং প্রত্যেক বিশেষ্যই এর বিশেষণ থেকে স্বতন্ত্র। সুতরাং যে কেউ তাকে বিশেষায়িত করল সে যেন তার সদৃশ বানালো,আর যে তার সদৃশ বানালো সে তার দ্বিতীয় বানালো,যে তার দ্বিতীয় বানালো সে তাকে অংশ সমাহার বানালো,আর যে তাকে অংশ সমাহার বানালো সে তাকে ভুলভাবে গ্রহণ করলো। (নাহাজুল বালাগা খুতবা-১)
আল্লাহর ন্যায়পরায়ণতা সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাসঃ
আমরা বিশ্বাস করি যে,আল্লাহর একটি হ্যাঁ-বোধক পূর্ণতাগুণ হলো- তিনি সকল অন্যায়ের মোকাবেলায় ন্যায়পরায়ণ। তিনি ন্যায়পরায়ণতা ব্যতীত তার সৃষ্টিকে লালন করেন না। তিনি ক্রোধভরে শাসন করেন না। তিনি তার অনুগতকে পুরস্কৃত করেন। পাপীদেরকে শাস্তি প্রদান করেন। তিনি তার বান্দাদেরকে তাদের সামর্থ্যরে অধিক দায়িত্ব প্রদান করেন না। তাদের পাপের ফলে প্রাপ্ত শাস্তির অধিক কোন শাস্তি তিনি তাদেরকে প্রদান করেন না।
আমরা বিশ্বাস করি মহান আল্লাহ সুকর্ম সাধন থেকে বিরত থাকেন না। তিনি কখনো কুৎসিত কর্ম করেন না। কারণ,তিনি তার জ্ঞানের কারণে সুকর্ম সাধন করতে সক্ষম ও কুৎসিত কর্ম করা থেকে বিরত থাকতে সক্ষম। অসীম জ্ঞানের আলোকে সুকর্মের সুদিক ও কুৎসিত কর্মের কুদিক তার নিকট স্পষ্ট। তিনি সুকর্ম করতেও সক্ষম আবার কুৎসিত কর্ম করতেও সক্ষম। যেহেতু কোন সুকর্মই তার কাজের কোন ক্ষতি করতে পারে না তাই তার তা ত্যাগ করার প্রয়োজন নেই। অনুরূপভাবে কোন কুৎসিত কর্মই তার প্রয়োজন হয় না। তাই তিনি তা করতে বাধ্য হন না। মহান আল্লাহ হলেন প্রজ্ঞাবান,সুতরাং তার কর্মকান্ড কখনোই তার প্রজ্ঞা বহির্ভূত হয় না এবং তা সর্বোত্তম কল্যাণময় পন্থায় সম্পন্ন হয়।
সুতরাং যদি তিনি অন্যায় ও কুৎসিত কর্ম সম্পাদন করেন (প্রকৃতপক্ষে তিনি এগুলো থেকে পবিত্র) তবে তা নিম্নলিখিত চারটি কারণে হবে-
১। তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অজ্ঞ থাকার কারণে এর কুৎসিত দিক সম্পর্কে অনবহিত।
২। তিনি বিষয়টি সম্পর্কে জানেন। কিন্তু কাজটি করতে বাধ্য এবং তা ত্যাগ করতে অপারগ।
৩। তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত এবং কাজটি করতে বাধ্য নন কিন্তু কাজটি করা তার প্রয়োজন।
৪। তিনি ঐ সম্পর্কে অবগত,তিনি তা করতে বাধ্য নন এবং তার প্রয়োজনও নেই,কিন্তু তিনি তার খেয়াল খুশীর জন্য কোন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছাড়াই কাজটি করেছেন।
কিন্তু উপরোল্লিখিত কোনটিই মহান আল্লাহর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় এবং অসম্ভব। কারণ এর অনস্বীকার্য অর্থ দাড়ায়,তার ঘাটতি রয়েছে। অথচ তিনি চুড়ান্তরূপে পরিপূর্ণ।
সুতরাং আমরা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি যে,তিনি সকল প্রকার অন্যায় ও কুৎসিত কর্ম থেকে পবিত্র। মুসলমানদের মধ্যে একটি ক্ষুদ্র অংশ মনে করে যে,আল্লাহ কুৎসিত কর্ম সম্পাদন করতে পারেন। তারা বলেন যে,আল্লাহ তার অনুগতদের শাস্তি দিতে পারেন,আবার পাপীষ্ঠদেরকে বেহেশতে প্রবেশ করাতে পারেন এমনকি কাফেরদেরকেও। তারা আরো বলে যে,আল্লাহ মানুষকে তার সাধ্যের অধিক দায়িত্ব চাপিয়ে দিতে পারেন। আর এমতাবস্থায় তিনি তাদেরকে উক্ত কর্ম সম্পাদন না করার জন্য শাস্তিও দিতে পারেন। তিনি অন্যায়,অত্যাচার,প্রতারণা করতে পারেন কিংবা মিথ্যা ও প্রজ্ঞাহীন,উদ্দেশ্যবিহিন ও কল্যাণবিহীন নিষ্ফল কর্মও সম্পাদন করতে পারেন। আর এ ক্ষেত্রে দলিল হলো-
“তিনি তার কর্মের জন্য জিজ্ঞাসিত হবেন না। কিন্তু তারা (মানুষ) জিজ্ঞাসিত হবে।” (সুরা আম্বিয়া -২৩)
তাদের এ নষ্ট বিশ্বাস অনুযায়ী মহান আল্লাহ অন্যায়কারী,অবিজ্ঞ রং তামাশাকারী,মিথ্যাবাদী এবং প্রতারক (মহান আল্লাহ এগুলো থেকে পবিত্র)। আর এ ধরনের বিশ্বাস কুফরী ব্যতীত কিছুই নয়। মহান আল্লাহ তার পবিত্র কোরআনে (যাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই) বলেন-
“মহান আল্লাহ তার বান্দাদের জন্য কোন প্রকার অন্যায় কামনা করেন না।”(সুরা আল-মুমীন-৩১)
“মহান আল্লাহ ফেসাদ (অনাচার) পছন্দ করেন না।”(সুরা আল-বাকারা- ২০৫)
“আমরা আকাশসমূহ ও পৃথিবী এবং এতদ্ভয়ের মধ্যে যা কিছু আছে তাকে খেলার ছলে সৃষ্টি করিনি।” (সুরা আম্বিয়া- ১৬)
“আমি জ্বীন ও মানুষকে কেবলমাত্র আমার এবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি।” (সুরা আজ-জারিয়াত-৫৬)
এ ধরনের আরো অনেক আয়াত আছে যে গুলোর মাধ্যমে মহান আল্লাহ সম্পর্কে উল্লেখিত নষ্ট বিশ্বাসগুলোকে প্রত্যাখ্যান করা যায়।
মানুষের প্রতি অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস :
আমরা বিশ্বাস করি যে,মহান আল্লাহ মানুষকে কোন দায়িত্ব প্রদান করেন না যদি না এ সম্পর্কে চুড়ান্ত দলিল (হুজ্জাত) উপস্থাপন করেন। তিনি মানুষকে তার সাধ্যের অধিক দায়িত্ব প্রদান করেন না। যা কিছু তার বোধগম্য নয়,যা সে জানেনা তাও তিনি তার উপর অর্পণ করেন না। কারণ অক্ষমকে দায়িত্ব প্রদান করা জুলুম বা অন্যায়। অনুরূপভাবে অন্যায় হলো কাউকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে পূর্বেই অবগত না করে দায়ী করা।
তবে আহকাম ও দায়িত্ব সম্পর্কে জ্ঞাত না হওয়ার কারণে মানুষ মহান আল্লাহর নিকট দায়ী হবে এবং তার এ ভুলের জন্য সে শাস্তি পাবে। কারণ প্রত্যেক মানুষের জন্যই তার নিজের প্রয়োজনীয় শরীয়তের হুকুমগুলো জেনে নেয়া আবশ্যক।
আমরা বিশ্বাস করি যে,মহান আল্লাহ মানুষকে দায়িত্ব দিয়েছেন এবং তার সার্বিক ও চির কল্যাণের পথে তাকে পরিচালিত করার জন্য বিধান দিয়েছেন এবং এ গুলোকে তার জন্য বর্ণনা করেছেন। আবার অনাচার,ক্ষতিকর এবং খারাপ পরিণতির পথ থেকে তাদেরকে বিরত রেখেছেন। এগুলো হলো মহান আল্লাহ কর্তৃক তার বান্দাদের জন্য দয়া ও রহমতের দৃষ্টান্ত। তবে তারা তাদের ইহ ও পরকালীন অনেক কল্যাণ সম্পর্কে অনবগত। আবার এমন অনেক কিছু সম্পর্কে তারা জানে না যেগুলো তাদের জন্য ক্ষতিকারক। মহান আল্লাহ তার স্বভাবগতভাবেই হলেন পরম দয়ালু ও দাতা। তিনি চুড়ান্তভাবে পরিপূর্ণ আর তা হলো স্বয়ং সত্তাগত এবং তার থেকে এগুলোকে পৃথক করা অসম্ভব। এ দয়া ও করুনা এমনকি তার অবাধ্য বান্দার অবাধ্যতার ফলে তাদের নিজের দূর্ভাগ্য ডেকে আনলেও তুলে নেয়া হয় না।
ক্বাজা ও ক্বাদর সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস :
জাবরি নামক একদল মনে করে যে,মহান আল্লাহ সৃষ্টির সমস্ত কার্যকলাপের কর্তা। তিনিই মানুষকে তার পাপ কাজের জন্য বাধ্য করেন এবং এমতাবস্থায় তিনিই তাদেরকে শাস্তি দেন;আবার তিনিই সৎকর্মে তাদেরকে বাধ্য করেন,তথাপি তিনিই ঐ কাজের জন্য তাদেরকে পুরস্কৃত করেন। জাবরিরা বলে যে,মহান আল্লাহই মানুষের কর্মকাণ্ডের প্রকৃত সংগঠক। তথাপি এ কাজের জন্য মানুষকে দায়ী করা হয়। জাবরিদের এরূপ ধারণার কারণ হলো তারা বস্তুর মধ্যকার প্রাকৃতিক কারণকে (আস-সাবাবিয়াহ আত্তাবিয়্যাহ) অস্বীকার করে। আর তারা বলে মহান আল্লাহ হলেন প্রকৃত কারণ (আস্-সাবাবুল হাকীকী),তিনি ব্যতীত অন্য কোন কারণ নেই।
তারা বস্তুর মধ্যে বিদ্যমান প্রাকৃতিক কারণকে অস্বীকার করার কারণ হলো,তাদের ধারণামতে মহান আল্লাহ যে শরীক বিহিন সৃষ্টিকর্তা- এ কথার দ্বারা তা ব্যহত হয়। কিন্তু এরূপ কথা দ্বারা আল্লাহর উপর জুলুম আরোপ করা হয়। অথচ মহান আল্লাহ কখনোই জুলুম করেন না।
আবার অন্য একদল হলো পূর্ণ স্বাধীনতাবাদী (মাফবিজাহ)। তাদের মতে মহান আল্লাহ তার সৃষ্টিকে তাদের কর্মের ব্যাপারে সম্পূর্ণ রূপে স্বাধীন করে দিয়েছেন এবং এ ক্ষেত্রে ‘আল্লাহর শক্তির’পালনীয় কোন ভূমিকা থাকে না। তাদের এরূপ বিশ্বাসের যুক্তি হলো- মানুষের কর্মকাণ্ডকে আল্লাহর উপর আরোপ করার অর্থ হলো তার উপর ঘাটতি আরোপ করা। অথচ প্রত্যেক অস্তিত্বময় জিনিসেরই এক নির্দিষ্ট কারণ আছে এবং প্রত্যেক কারণই ফিরে যায় প্রথম কারণের দিকে,আর তিনিই হলেন মহান আল্লাহ। যাহোক যদি কেউ এরূপ (তাফবীজ) মতবাদ ব্যক্ত করে,তবে সে মহান আল্লাহকে তার রাজত্বের বাইরে চিন্তা বা ধারণা করেছে এবং সৃজনের ক্ষেত্রে তার সাথে অন্যকে শরীক করেছে।
আর এক্ষেত্রে পবিত্র ইমামগণের (আ.) শিক্ষা থেকে আমাদের বিশ্বাস হলো মধ্যপন্থী- প্রাগুক্ত দুটি মতামতের মাঝামাঝি। এটি কালাম শাস্ত্রের এমন এক বিষয় যে,বিবাদরত কোন পক্ষই এর প্রকৃত তাৎপর্যকে অনুধাবন করতে পারে না। সুতরাং একদল একদিকে প্রান্তিক ধারণা পোষণ করে আবার অন্যদল অন্যদিকে শত শত বছর পর্যন্ত জ্ঞান ও দর্শন এর নিগূঢ় রহস্য উন্মোচন করতে পারিনি।
এটা আশ্চর্যের বিষয় নয় যে,আমাদের ইমামগণের (আ.) প্রজ্ঞা ও বক্তব্যের সাথে পরিচিত নয় এমন কেউ ধারণা করবে যে,আমাদের এ বক্তব্য (আমরু বাইনাল আমরাইন) হলো আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শনের জন্মজ। অথচ আমাদের ইমামগন (আ.) দশ শতাব্দীকাল পূর্বে এ সমস্যার সমাধান করেছিলেন।
ইমাম সাদিক (আ.) এ বিষয়টিকে তার বিখ্যাত মধ্যপন্থী বক্তব্য দ্বারা পরিষ্কার করেছেন-
“কোন জাবর নয়,কোন তাফবীজ নয় বরং এ দু'য়ের মাঝামাঝি বিষয়।”
সত্যিই কত সুন্দর দিকনির্দেশনা লুকিয়ে আছে এ বক্তব্যের মাঝে,কত সূক্ষ্ম এবং বাস্তব অর্থ এখানে সজ্জিত আছে। সংক্ষেপে আমাদের কর্মগুলো একদিক থেকে সত্যিই আমাদের নিজেদের কাজ (আফআলীনা হাকীকী) এবং আমরা এর প্রাকৃতিক কারণ (সাবাবুত তাবিয়াত)। তা আমাদের ইচ্ছা ও ক্ষমতাধীন। আবার অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে তা মহান আল্লাহ কর্তৃক আদেশিত এবং তার ক্ষমতাধীন। কারণ তিনিই হলেন অস্তিত্ব দানকারী। তিনি আমাদেরকে আমাদের কাজে বাধ্য করেননি যে পাপ করলে শাস্তি দিলে তার অন্যায় হবে। কারণ কাজটি করার ক্ষেত্রে আমাদের ঐচ্ছিক স্বাধীনতা (এখতিয়ার) ও শক্তি ছিল। অপরদিকে আমাদের কর্মকে অস্তিত্ব দিতে তিনি আমাদেরকে অধিকার দেননি কারণ তা তার রাজত্বে সংগঠিত হয়। কারণ সৃষ্টির মালিক,হুকুম ও আদেশের মালিক একমাত্র তিনিই। তিনি সব কিছুর উপর সর্বশক্তিমান এবং তিনি তার সমস্ত বান্দার উপর ক্ষমতাবান।
যাহোক আমরা বিশ্বাস করি যে,ক্বাজা ও ক্বাদর হলো আল্লাহর আওতাধীন একটি নিগূঢ় রহস্য। সুতরাং যদি কেউ কোন প্রকার প্রান্তিক ধারণা ব্যতীত এ বিষয়টিকে অনুধাবন করার সামর্থ্য রাখে তবে সে এ বিষয়টির গভীরে প্রবেশ করতে পারে। নতুবা এ বিষয়টি জোর পূর্বক সূক্ষ্ম অনুধাবনের কোন প্রয়োজন নেই,কারণ তা তাকে অন্ধকারের পথে পরিচালিত করতে পারে এবং তার বিশ্বাস নষ্ট করে দিতে পারে। এটি একটি অতি সূক্ষ্ম বিষয়। এমনকি দর্শনের জটিলতম বিষয় সমূহের একটি যা কেবলমাত্র মুষ্টিমেয় কিছু লোক অনুধাবন করতে পারে। এর কারণেই অনেক কালামবিদ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। এটা সাধারণ মানুষের বোধগম্যের উর্ধে। তাদের জন্য আমাদের পবিত্র ইমামগনের (আ.) বাণী অনুসারে এ সামগ্রিক ধারণা রাখাই যথেষ্ট। প্রকৃতপক্ষে এটি হলো ঐ দু’টিবিষয়-জাবরি (অক্ষম বা বাধ্য) ও তাফবীজ (পূর্ন স্বাধীন)- এর মাঝামাঝি (আমরু বাইনাল আমরাইন)। আর এটি মৌলিক বিশ্বাসের অন্তর্ভূক্ত এমন কোন বিষয় নয় যে,সূক্ষ্মভাবে বা সম্যকভাবে একে অনুধাবন করতে হবে।
বাদা সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস :
মানুষের ক্ষেত্রে বাদা হলো- কোন ব্যাপারে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া বা পরিবর্তন করা যা পূর্বে ছিল না (পূর্বোক্ত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে নতুন সিদ্ধান্ত নেয়া)। তার এ সিদ্ধান্ত পবির্তনের কারণ হলো এমন কিছু বিষয়ের অবতারনা যা তার জ্ঞান ও সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনে। সুতরাং কাজটি করার আগেই সে তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে এবং পূর্বোক্ত সিদ্ধান্তের কারণে অনুশোচনা করে। তার জন্য কোনটি কল্যাণকর সে সম্পর্কে তার অজ্ঞতার ফলেই এমনটি ঘটে।
বাদার প্রাগুক্ত অর্থ মহান আল্লাহর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কারণ এটি হলো অজ্ঞতা ও ঘাটতির ফল। আর এগুলো মহান আল্লাহর ক্ষেত্রে অসম্ভব। ইমামীয়ারা উল্লেখিত অর্থে (যা মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য) বিশ্বাসী নয়। ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেন-
“যারা মনে করে যে,কোন কোন ক্ষেত্রে আল্লাহ কর্তৃক বাদা সংগঠিত হয় এবং এ জন্য আল্লাহকে অনুশোচনা করতে হয়,আমাদের দৃষ্টিতে তারা অবিশ্বাসী বা কাফের।”
তিনি আরো বলেন-
“আমি তাদের নিকট থেকে দূরত্ব বজায় রাখি যারা মনে করে যে,এমন কিছু ক্ষেত্রে আল্লাহ কর্তৃক বাদা সংগঠিত হয় যেগুলো সম্পর্কে তিনি ইতিপূর্বে জানতেন না।”
আমাদের পবিত্র ইমামগণের (আ.) কিছু বাণীও এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট যার ফলে লোকজন মনে করে আমরা বর্ণিত অর্থে বাদায় বিশ্বাস করি। উদাহরণ স্বরূপ ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেন-
“মহান আল্লাহর এমন কোন বাদা নেই যা আমার পুত্র ইসমাইলের ক্ষেত্রে হয়েছে।”
এ ধরনের বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে মুষ্টিমেয় কিছু মুসলিম লেখক ইমামীয়াদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলে যে,ইমামীয়ারা বর্ণিতার্থে বাদায় বিশ্বাস করে। আর এভাবে তারা শীয়া মাযহাবের ও আহলে বাইতের (আ.) পথের বদনাম ও নিন্দা করে। এক্ষেত্রে মহান আল্লাহ যা বলেন তা-ই সঠিক। তিনি বলেন-
“তিনি বিনাশ করেন ও প্রতিষ্ঠিত করেন যা তিনি চান,আর তার নিকটই রয়েছে মূল কিতাব (উম্মুল কিতাব)।” (সুরা রাদ-৩৯)
আর এর অর্থ হলো- মহান আল্লাহ কখনো কখনো কোন কল্যাণময়ী কারণবশতঃ তার নবী ও ওয়ালীদের মাধ্যমে বাহ্যিকভাবে কোন কিছুর প্রকাশ ঘটান। অতঃপর তা অপনোদন করেন এবং প্রথমোক্ত ক্ষেত্রের পরিবর্তে অন্য কিছু ঘটান যদিও এ সম্পর্কে তার জ্ঞান রয়েছে। যেমন- হযরত ইসমাইলের (আ.) কাহিনীতে আমরা দেখতে পাই যে হযরত ইব্রাহীম (আ.) স্বপ্নে দেখলেন তার পুত্র ইসমাইলকে কোরবানী করতে। আর এটাই হলো ইমাম জাফর সাদিকের (আ.) কথার অর্থ যে মহান আল্লাহ ইতিপূর্বে এমন কোন কিছু প্রকাশ করেন না যা তার পুত্র ইসমাইলের ব্যাপারে করেছেন। তার পূর্বেই তার পুত্রের জীবন নিয়ে নিয়েছেন। কারণ যাতে মানুষ জানতে পারে যে,তিনি (ইসমাইল) ইমাম নয়। যদিও অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মানুষের নিকট মনে হয়েছিল যে তিনি ইমাম হবেন কারণ তিনি (ইসমাইল) ছিলেন সর্বজ্যেষ্ঠ পুত্র সন্তান।
বাদার এ অর্থটি হযরত মোহাম্মদ (সা.) এর শরীয়তের পূর্বেকার শরীয়তসমূহের রদ করণের অর্থ প্রকাশ করে,এমনকি মোহাম্মদ (সা.) এর কিছু শরীয়তকে রদ করা হয়েছিল তার কাছাকাছি অর্থ প্রকাশ করে।
দ্বীনের আহকাম সম্পর্কে আমাদের বিশ্বাস :
আমরা বিশ্বাস করি যে,বান্দারা তাদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে যাতে নিজেদের কল্যাণ সাধন করতে পারে তদানুসারেই মহান আল্লাহ শরীয়তের ওয়াজীব,হারাম ও অন্যান্য বিধানসমূহ প্রণয়ন করেছেন। সুতরাং যা কিছু একান্তই আমাদের জন্য কল্যাণকর তাকে তিনি বাধ্যতামূলক করেছেন। আর যার সিংহভাগ আমাদের জন্য অকল্যাণকর তাকে নিষিদ্ধ করেছেন। আর অনুরূপভাবে অন্যান্য বিধান। এটা হলো বান্দাদের প্রতি মহান আল্লাহর করুণা ও ন্যায়পরায়ণতা। স্পষ্টতঃই তাকে সর্বক্ষেত্রে কোন না কোন হুকুম প্রদান করতে হয়েছে (ঐ দয়া বা ন্যায়ের কারণে)। এমন কোন কিছু নেই যে সম্পর্কে তিনি বিধান দেননি যদিও আমাদের নিকট তার জ্ঞান লাভের পন্থা জানা নেই।
আমরা আরও বলি যে,যাতে অকল্যাণ রয়েছে তা করার আদেশ প্রদান এবং যাতে কল্যাণ রয়েছে তা নিষিদ্ধ করা অবাঞ্ছিত কাজ। কিন্তু মুসলমানদের মধ্যেই কোন কোন মাযহাব মনে করে যে,কুৎসিত বা অবাঞ্ছিত হলো তা যা মহান আল্লাহ নিষেধ করেন। আর সুন্দর বা বাঞ্চিত হলো তা যা মহান আল্লাহ পালন করতে আদেশ করেন। সুতরাং কল্যাণ ও অকল্যাণ স্বয়ং বা সত্তাগতভাবে যথাক্রমে সুন্দর ও অসুন্দর নয়। এমনকি সুন্দর এবং অসুন্দরও সত্তাগতভাবে সুন্দর ও অসুন্দর নয়। এ ধরনের বক্তব্য স্পষ্টতঃই বুদ্ধিবৃত্তি পরিপন্থী। এরাই বলে যে,আল্লাহ কুৎসিত ও অবাঞ্ছিত কাজও করতে পারেন। যেমন- যা অসুন্দর তিনি তা করতে আদেশ দিতে পারেন। আবার যা সুন্দর তা করতে নিষেধ করতে পারেন। ইতিপূর্বে আমরা প্রমাণ করেছি যে এটি একটি মহাভ্রান্ত ধারণা। কারণ এর অর্থ হলো আল্লাহ অজ্ঞ ও অক্ষম (মহান আল্লাহ এগুলোর উর্ধে)।
সংক্ষেপে এ প্রসংগে সঠিক ভাবে বলা যায় যে,আমাদের কর্মকান্ডের আবশ্যকতায় ও নিষেধে মহান আল্লাহর কোন কল্যাণ বা অকল্যাণ নেই,বরং সমস্ত কর্মকান্ডের কল্যাণ বা অকল্যাণ আমাদের দিকেই ফিরে আসে। সুতরাং আদিষ্ট ও নিষিদ্ধ কর্মকান্ডের কল্যাণ ও অকল্যাণকে অস্বীকার করার কোন অর্থই থাকতে পারে না। মহান আল্লাহ অহেতুক ও লক্ষ্যহীন কোন কিছু আদেশ বা নিষেধ করেন না। তিনি তার বান্দাদের মুখাপেক্ষী নন।