বাঙ্গালী
Friday 22nd of November 2024
0
نفر 0

মানুষের ঐশী প্রতিনিধিত্ব-২য় অংশ

মানুষের ঐশী প্রতিনিধিত্ব-২য় অংশ

খেলাফতের প্রকারভেদ

মোটামুটিভাবে খেলাফতকে তিনভাগে ভাগ করা যায় :

১. ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তুসমূহের ক্ষেত্রে প্রতিনিধিত্ব (বস্তুজগতের প্রতিনিধিত্ব);

২. বিধানগত বিষয়ে প্রতিনিধিত্ব ও

৩. অতিপ্রাকৃতিক বাস্তব বিষয়ে প্রতিনিধিত্ব (অবস্তুজাগতিক প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব)।

কখনও কখনও প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি দৃশ্যমান বস্তুসমূহের ক্ষেত্রে উপস্থাপিত হয়। যেমন পবিত্র

  কুরআনে এসেছে:

 وَهُوَ الَّذِي جَعَلَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ‌ خِلْفَةً ….

‘আর তিনি (আল্লাহ্) হলেন সেই সত্তা যিনি রাত্রি ও দিবসকে একে অপরেরস্থলাভিষিক্ত করেছেন….।’

কখনও কখনও প্রণীত কোন বিষয়ে স্থলাভিষিক্তের বিষয়টি উত্থাপিত হয়। যেমন মহান আল্লাহ্ বলেন : ‘হে দাউদ! আমরা তোমাকে পৃথিবীতে স্থলাভিষিক্ত করেছি,সুতরাং মানুষের মধ্যে ন্যায়সঙ্গতভাবে বিচার কর।’ আবার কখনও স্থলাভিষিক্তের বিষয়টি অতি প্রাকৃতিক বাস্তব বিষয়ে প্রযোজ্য। যেমনটি হযরত আদম (আ.)-এরঐশী প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে হয়েছে- যা সূরা বাকারার ৩০ নং আয়াতে উল্লিখিতহয়েছে।

পবিত্র কুরআনে মানুষের প্রতিনিধিত্ব বাস্তবভিত্তিক ও সত্তাগত এক প্রতিনিধিত্ব। পূর্ণমানব সৃষ্টিগত পূর্ণতার সকল বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। তাই তার প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি সত্তাবহির্ভূত আরোপিত বা প্রণীত কোন কিছু নয়। আমরা এ পর্যায়ে মানুষের ঐশী প্রতিনিধিত্বের প্রকৃত অর্থ ও স্বরূপ নিয়ে আলোচনা করব।

একদিকে মানুষের ঐশী প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি একটি প্রকৃত ও সত্তাগত বিষয়,নিছক প্রণীত ও বিধানগত বিষয় নয় (যেমনটি মানুষের মধ্যে বিচার করা ও তাকে দিকনির্দেশনা দানের দায়িত্ব লাভের ক্ষেত্রে ঘটে থাকে),অন্যদিকে মানুষের সৃষ্টিগত প্রতিনিধিত্বের অর্থ হল আল্লাহর ঐশী নামসমূহের প্রকাশস্থল হওয়া ও তার মাধ্যমে স্রষ্টার গুণাবলির প্রকাশ ঘটা অর্থাৎ মানুষ কর্তৃক সৃষ্টিগত কর্তৃত্বের অধিকারী হওয়া। সুতরাং মানুষের এ স্থলাভিষিক্তের অপরিহার্য অর্থ হল অস্তিত্ব জগতে সৃষ্টিগতভাবে সে ক্ষমতা প্রয়োগের অধিকারী হবে। মহান আল্লাহ্ মানুষকে এ মর্যাদা দান করেছেন যাতে সে বিশ্বজগতে সৃষ্টিগতভাবে তার ইচ্ছার প্রয়োগ করতে পারে। প্রতিনিধিকে অবশ্যই সে যার প্রতিনিধিত্ব করছে বা স্থলাভিষিক্ত হয়েছে তার বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত হতে হবে অর্থাৎ তার আলোর প্রতিচ্ছবি ও প্রতিবিম্ব হতে হবে।

মানুষ ঐশী গুণাবলির প্রকাশস্থল। অসীম হওয়ার কারণে যে সত্তার প্রকৃত স্বরূপ মানুষ কর্তৃক অনুধাবন করা অসম্ভব,অস্তিত্বসমূহের মধ্যে সে সত্তার এমন এক অস্তিত্ব থাকবে যা ঐ ঐশী সত্তার প্রকাশস্থল হবে এবং ঐশী আলোকমালার অন্যতম হিসাবে স্রষ্টার নিদর্শনধারী দিক নির্দেশক অস্তিত্ব হবে। এ বৈশিষ্ট্য অর্জনের ক্ষেত্রে অপরিহার্য উপাদান হল ঐশী নামসমূহ সম্পর্কে অবহিতি যা তাকে সমগ্র অস্তিত্ব জগতের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করে এবং অন্য সকল সৃষ্টিকে তার সামনে নত করে।

আল্লামা হাসান যাদেহ আমূলী ঐশী প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে বলেন : ‘পবিত্র কুরআনের

 إِنِّي جَاعِلٌ فِي الْأَرْ‌ضِ خَلِيفَةً  ‘নিশ্চয়ই আমি পৃথিবীতে স্থলাভিষিক্ত নির্ধারণকারী’- আয়াত অনুযায়ী ঐশী নামসমূহের বহুত্বের বিষয়টি এবং প্রতিনিধি ও স্থলাভিষিক্ত সত্তা কর্তৃক প্রতিনিধিত্ব দানকারী সত্তার বৈশিষ্ট্যসমূহের অধিকারী হওয়া পৃথিবীতে পূর্ণমানবের অস্তিত্বের অপরিহার্যতা ও অব্যাহত থাকার বিষয়টিকে প্রমাণ করে। অর্থাৎ সকল অবস্থায় ও সময়ে বিশ্বজগতে বিদ্যমান অস্তিত্ব সমূহের মধ্যে পূর্ণতম এমন সত্তার অস্তিত্ব থাকা অপরিহার্য যা অস্তিত্বজগতের সকল নাম ও পূর্ণতার (সৌন্দর্য ও শক্তিমত্তার) বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হবে যাতে সে ঐশী সত্তার স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধি  হতে পারে। যেমন মহান আল্লাহর এক ও অদ্বিতীয় হওয়ার বিষয়টি পূর্ণতার ক্ষেত্রে তাঁর সত্তার একত্বের প্রমাণবাহী,তেমনি মানবজাতির পূর্ণতম ও শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির মধ্যেঐশী পূর্ণ সত্তার নমুনা ও নিদর্শন (প্রকাশস্থল) থাকতে হবে যা পূর্ণতার ক্ষেত্রে অদ্বিতীয় ও অনুপম।’  

ইমাম খোমেইনী (রহ.) ঐশী খেলাফতের অর্থ,স্বরূপ ও অপরিহার্যতা সম্পর্কে বলেন : ‘যখন অন্তঃকরণের অভ্যন্তরে এ বিষয়টি প্রকাশিত হয় যে,ঐ অদৃশ্য বাস্তব সত্তা সকল গভীর দৃষ্টিধারীর চিন্তার এতটা ঊর্ধ্বে যে,কেউই তাঁর পবিত্র সান্নিধ্য থেকে কিছু লাভে সক্ষম নয় এবং নাম ও বৈশিষ্ট্যসমূহ তাদের নির্দিষ্ট ও অস্তিত্বগত স্বাতন্ত্র্যের কারণে তাঁর গোপনীয়তার একান্ত সঙ্গী নয় এবং উল্লিখিত সত্তাসমূহ (নামও বৈশিষ্ট্যসমূহ) তাঁর গোপন বিষয় সম্পর্কে অবহিত হওয়ার অনুমতিপ্রাপ্ত নয়,তখন নামসমূহের প্রকাশ হওয়া ও মহান আল্লাহর ভাণ্ডারের গোপন রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য অদৃশ্য জগতের ঐশী স্থলাভিষিক্ত ও প্রতিনিধি প্রয়োজন যে নামসমূহকে প্রকাশের ক্ষেত্রে তাঁর প্রতিনিধি হবে এবং তাঁর আলোকে দর্পণসমূহকে প্রতিফলিত করবে এবং এর মাধ্যমে অনুদানের ও অনুগ্রহের দ্বারসমূহ উন্মোচিত হবে এবং কল্যাণের ফল্গুধারা প্রবাহিত হবে অর্থাৎ আদির ঊষা প্রতিভাত হবে এবং প্রারম্ভের সাথে সমাপ্তির যোগসূত্র সৃষ্টি হবে। এ কারণেই অদৃশ্যের উৎস থেকে অদৃশ্য কণ্ঠে বৃহত্তম পর্দা ও পূর্ণতম আলোকের পবিত্রতম কিরণ ও বিচ্ছুরণের প্রতি নির্দেশ হল নামসমূহ ও গুণাবলির পোশাক ও স্বাতন্ত্র্যের আবরণে প্রকাশিত হওয়ার। তখন সে তাঁর নির্দেশ পালন করল ও অদৃশ্যের নির্দেশকে বাস্তবায়িত করল।’

ইমাম খোমেইনী (রহ.) অন্যত্র বলেন : ‘খেলাফতের (ঐশী প্রতিনিধিত্বের) প্রকৃতস্বরূপ হল সত্তাগত নির্ভরতা বা নিরঙ্কুশ দারিদ্র্য যার প্রতি তিনি (রাসূল সা.) ‘দারিদ্র আমার অহংকার’ বাণীটিতে ইঙ্গিত করেছেন।

সমগ্র বিশ্বজগৎ (পূণ) মানবের অধীন এবং তার সামনে অবনত ও তার ইচ্ছার্রঅধীন। তেমনি সমগ্র সৃষ্টি তার অস্তিত্বের ছায়ায় রয়েছে। এ সম্পর্কে ইমাম খোমেইনী বলেন : ‘এটি তার স্বীয় স্থানে প্রমাণিত যে,পূর্ণ মানবের অপরিবর্তনীয় স্থায়ী রূপ হল আল্লাহর মহৎ নামের প্রকাশস্থল যা নির্দেশক ও পরিচালক শীর্ষস্থানীয় নামসমূহের পুরোধা। অন্যান্য অস্তিত্বের রূপসমূহ জ্ঞান ও রূপসমূহের জগতে পূর্ণমানবের রূপের ছায়ায় রূপ লাভ করে ও বাস্তব জগতে অস্তিত্ব লাভ করে।

সুতরাং সমগ্র অস্তিত্ব বলয়ের রূপসমূহ রূপসমূহের জগতে পূর্ণ মানবের রূপের প্রকাশস্থল এবং প্রকাশমান জগতে বিদ্যমান সৃষ্টিসমূহ তাঁর সত্তার সৌন্দর্য ও শক্তির প্রতিচ্ছবি ও প্রকাশিত রূপ।

মানুষের ঐশী প্রতিনিধিত্বের যোগ্যতার মানদণ্ড

এ সম্পর্কিত আয়াতসমূহের ভাবার্থ থেকে বোঝা যায় হযরত আদম (আ.)-এর ঐশী খেলাফত প্রাপ্তির যোগ্যতার মানদণ্ড ছিল ঐশী নামসমূহ সম্পর্কে তাঁর অবহিতি। যেমন নিম্নোক্ত আয়াতে বলা হয়েছে :

وَعَلَّمَ آدَمَ الْأَسْمَاءَ كُلَّهَا ثُمَّ عَرَ‌ضَهُمْ عَلَى الْمَلَائِكَةِ فَقَالَ أَنبِئُونِي بِأَسْمَاءِ هَـٰؤُلَاءِ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ ‘আর তিনি (আল্লাহ্) আদমকে নামসমূহ শিক্ষা দিলেন,অতঃপর তাকে ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন এবং বললেন : আমাকে এ নামসমূহ সম্পর্কে অবগত কর যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক।’

এ আয়াত থেকে বোঝা যায় হযরত আদম (আ.)-এর ঐশী প্রতিনিধিত্বের মানদণ্ড ছিল নামসমূহ সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান যে জ্ঞান ফেরেশতাদের ছিল না। যথার্থভাবে বললে ফেরেশতারা তাঁদের মহা পবিত্রতা ও মহান মর্যাদা সত্ত্বেও সে জ্ঞান অর্জনের যোগ্যতা রাখতেন না। আল্লামা তাবাতাবায়ী এ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন : ‘হযরত আদম (আ.) নামসমূহ সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান থাকার কারণেই ঐশী প্রতিনিধিত্ব লাভ করেন,শুধু সে সম্পর্কে খবর দানের কারণে নয়।

নামসমূহ শিক্ষাদানের অর্থ

পবিত্র কুরআনে ‘নামসমূহ’ কী এবং তার স্বরূপ কী সে বিষয়ে স্পষ্ট বর্ণনা আসেনি। তবে নিঃসন্দেহে বলা যায়,উক্ত নামসমূহ মানুষের মধ্যে সাধারণভাবে প্রচলিত নামকরণের মত কোনো বিষয় ছিল না। তাই এ নামসমূহ শিক্ষাদানের অর্থ কিছু শব্দও বর্ণমালার মাধ্যমে মস্তিষ্ক পূর্ণ করা নয়;বরং এর অর্থ বস্তুগত প্রকৃত পরিচয়,সত্তা ও স্বরূপ সম্পর্কে অবহিতি এবং ঐশী নামসমূহ সম্পর্কে আত্মনির্ভর দিব্য জ্ঞান (علم شهودی)।

 নামসমূহ কী

এ সম্পর্কে বিভিন্ন মত বর্ণিত হয়েছে। যেমন :

ক. হযরত কাতাদা বলেন : ‘নামসমূহ বলতে আলোচ্য সত্তার অর্থ ও বাস্তবতাকে (স্বরূপকে) বুঝানো হয়েছে। কারণ,নিঃসন্দেহে শুধু নাম জানা ও শব্দমালাকে মুখস্ত করার মধ্যে কোন মর্যাদা নেই। তাই আলোচ্য সত্তাসমূহের অর্থ ও স্বরূপকে জানাইএখানে উদ্দেশ্য। যখন মহান আল্লাহর নির্দেশে হযরত আদম (আ.) অন্তর্নিহিত কারণ বর্ণনা করলেন তখন ফেরেশতারা স্বীকার করলেন যে,এ বিষয়ে তাঁরা অবগত নন এবং আল্লাহ্ তাঁদের না জানালে তাঁরা সে সম্পর্কে অবহিত হতে পারেন না।’

খ. হযরত ইবনে আব্বাস,সাঈদ ইবনে যুবাইর এবং অধিকাংশ মুফাস্সিরের মতে নামসমূহ বলতে সকল পেশা,শিল্পকর্ম,কৃষিকাজের মূলনীতি,উদ্যানতত্ত্ব,বৈষয়িক ও পারলৌকিক (ধর্মীয়) জ্ঞান বুঝানো হয়েছে।

গ. কেউ কেউ বলেছেন,তখন পর্যন্ত সৃষ্ট এবং ভবিষ্যতে সৃষ্টি হবে এমন সব বস্তুর নাম হযরত আদমকে শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল।

ঘ. হযরত আলী ইবনে ঈসা বলেন : ‘হযরত আদম (আ.)-এর সন্তানরা তাঁর নিকট থেকে বিভিন্ন ভাষা শিক্ষা করেছিলেন এবং তাঁরা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ার পর যেযে ভাষা শিক্ষা লাভ করেছিলেন ও তা বলতে অভ্যস্ত ছিলেন সে ভাষায় কথাবলতেন,তবে তাঁরা কমবেশি সকল ভাষা সম্পর্কেই অবহিত ছিলেন ও কথা বলতে পারতেন। কিন্তু হযরত নূহ (আ.)-এর বন্যার সময় অধিকাংশ মানুষ মৃত্যুবরণ করলে জীবিতদের যারা যে ভাষায় পারদর্শিতা রাখত শুধু সে ভাষায়ই কথা বলতে শুরু করল। ফলে অনেক ভাষা হারিয়ে গেল।

ঙ. কোন কোন বর্ণনায় (আহলে বাইতের সূত্রে বর্ণিত হাদীসে) নামসমূহ বলতে নবিগণ এবং চৌদ্দজন মাসুমকে (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম,হযরত ফাতিমা সহ বারো জন পবিত্র ইমাম) বুঝানো হয়েছে।

কোন কোন মুফাস্সির বিশ্বাস করেন নামসমূহ বলতে ফেরেশতাদের ও ঊর্ধ্বজগতের সাথে সম্পর্কিত বিষয় যা সম্পর্কে ফেরেশতারাও অবহিত নন এবং এ নামসমূহের জগৎ সকল বস্তু এবং সত্তার মূল ও উৎস। প্রকৃতপক্ষে এ জগতের সকল কিছু ঐ জগতের অবনমিত ও স্তিমিত রূপ। নিম্নোক্ত আয়াতে এ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত করাহয়েছে :

وَإِن مِّن شَيْءٍ إِلَّا عِندَنَا خَزَائِنُهُ وَمَا نُنَزِّلُهُ إِلَّا بِقَدَرٍ‌ مَّعْلُومٍ

‘এমন কিছু নেই যার ভাণ্ডার আমাদের নিকট বিদ্যমান নয় এবং আমরা তা থেকে নির্ধারিত পরিমাণেই শুধু অবতীর্ণ করি।’

আয়াতুলাহ জাওয়াদী আমূলী মহান আল্লাহর নামসমূহ সম্পর্কে বলেন : ‘নামসমূ’ বলতে বিশ্বজগতের অদৃশ্য বাস্তবতা বুঝানো হয়েছে। মহান আল্লাহর নিদর্শন ও প্রতীক স্বরূপ হওয়ার কারণেই তাকে (ইসম) বা নাম বলা হয়েছে। এ নামসমূহ বুদ্ধিবৃত্তি ও জ্ঞানসম্পন্ন এমন এক বাস্তব সত্তা যা অদৃশ্য জগতে (পর্দার অন্তরালে) রয়েছে এবং মহান আল্লাহর নিকট সংরক্ষিত। তারা জগতের বস্তুসমূহের ভাণ্ডার এবং এ কারণেই দৃশ্যমান ও অদৃশ্য উভয় জগতের সকল বস্তুকে ধারণ করছে। এ সত্তার সাথে পরিচিত হওয়ার অর্থ যেমন এর বাস্তবতার পরিচয়বাহী চিন্তাগত একটি রূপের সাথে পরিচিতি তেমনি ঐ নামসমূহের সাথে পরিচিতি যা ঐ চিন্তাগত রূপকে প্রকাশ করে। তাই প্রথমটিকে নামসমূহ এবং দ্বিতীয়টিকে নামসমূহের নাম বলা যায়।’

ছ. কারও কারও মতে নামসমূহের অর্থ আল্লাহর সুন্দরতম নামসমূহ যার মাধ্যমে সমগ্র সৃষ্টিজগৎ সৃষ্টি হয়েছে।

জ. কেউ কেউ নামসমূহ বলতে আল্লাহর নাম,বস্তুসমূহ ও ফেরেশতাদের নামসমূহ বুঝানো হয়েছে বলেছেন।

নামসমূহের বৈশিষ্ট্যাবলি

সূরা বাকারার ৩১ নং আয়াতে উল্লিখিত নামসমূহের নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্য রয়েছে বলাযায় :

১.এ নামসমূহ মহান আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত অর্থাৎ তারা আল্লাহর নামসমূহের ও জগৎসমূহের প্রকাশস্থল এবং বিশ্বজগতের বাস্তবতা ও প্রকৃতরূপ প্রকাশিত ঐশী রূপেরই নাম।

২. এ নামসমূহ অদৃশ্য জগতের সাথে সম্পর্কিত,দৃশ্যমান জগতের অংশ নয়। কারণ,মহান আল্লাহ্ ফেরেশতাগণ কর্তৃক অক্ষমতা প্রকাশের পর বলেন :

أَلَمْ أَقُل لَّكُمْ إِنِّي أَعْلَمُ غَيْبَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْ‌ضِ

‘আমি কি তোমাদের বলিনি যে,নিশ্চয় আমি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর অদৃশ্যের জ্ঞান রাখি...।’

৩. নামসমূহ হল অদৃশ্য জগতের ভাণ্ডার।

৪. নামসমূহ বলতে বাস্তব এক অস্তিত্ব বুঝানো হয়েছে,তা চিন্তা ও ধারণাগত কোন বিষয় বা শব্দাবলি নয়।

৫. আল্লাহর নামসমূহ নির্দিষ্ট ও অপরিবর্তনীয় এ অর্থে যে,প্রতিটি নাম ও বাস্তবতাই কার্যকারণ ব্যবস্থায় নির্দিষ্ট অবস্থানে স্থায়ীভাবে বিদ্যমান এবং তাদের সকলের নির্দিষ্ট অস্তিত্বগত পর্যায় অথবা নির্দিষ্ট প্রকাশ রয়েছে।

৬. এ নামসমূহ নিখাদ কল্যাণ বৈ কিছু নয় এবং তা সকল প্রকার ত্রুটিমুক্ত।

৭. এ নামসমূহ আল্লাহ্ যাঁদের পরিশুদ্ধ করেছেন ও নিজের জন্য মনোনীত করেছেন তাঁদের ব্যতীত অন্যদের নাগালের বাইরে।

তথ্যসূত্র

১. সূরা ফুরকান : ৬২

২. সূরা বাকারা : ৩১

৩. সূরা হিজর : ২১

৪. সূরা বাকারা : ৩৩

 (সূত্র:প্রত্যাশা,১ম বর্ষ,৩য় সংখ্যা)

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

কোরআনের ঐতিহাসিক অলৌকিকতা
শিয়া-সূন্নীর মধ্যে পার্থক্য কি?
ইসলামের দৃষ্টিতে কর্ম ও শ্রম (২য় ...
মানুষ তার কর্মের ব্যাপারে ...
শীয়া মাযহাবের উৎপত্তি ও ...
ঈদুল ফিতর: ইসলামী ঐক্য ও ...
আল কোরআনের অলৌকিকতাঃ পৃথিবী
Apakah manusia dalam perbuatannya memiliki pilihan? Bila benar, sejauh manakah batas ...
শিয়া-সুন্নি বিরোধ কেন? শিয়ারা কি ...
ধর্মে কোন জোর-জুলুম নেই

 
user comment