মানসিক এবং আত্মিক বিভিন্ন দিক থেকে কাজ এবং চেষ্টা প্রচেষ্টার বহু রকম কল্যাণ রয়েছে। কাজে নিয়োজিত হওয়া এবং বিশেষ পেশা মানুষকে বস্তুগত প্রশান্তি দেওয়া ছাড়াও মানুষের আত্মাকেও প্রশান্ত করে তোলে। কাজ করার ফলে মানুষ তার বস্তুগত ও আত্মিক প্রয়েজনীয়তা মেটানোর পাশাপাশি নিজের যোগ্যতা এবং পারদর্শিতার বিষয়টিও অনুভব করে। বিশেষ করে কাজ যদি হয় সৃজনশীল বা নতুন কোনো উদ্ভাবনীমূলক-তাহলে তো আর কথাই নেই। আমাদের জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ জুড়ে রয়েছে কাজ, তবে কাজ কেবল অর্থ উপার্জনের জন্যেই করা হয় না। কাজ জীবনকে অর্থবহ করে তোলে,জীবনকে লক্ষ্যমুখি করে। মানুষের পরিচয় গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে কাজ। যোগ্যতা আর সামর্থকে সক্রিয় করে তোলার মাধ্যম এই কাজের মধ্য দিয়েই নিজেকে মর্যাদার অধিকারী ভাবতে শেখে মানুষ। চেষ্টা-প্রচেষ্টা এমন একটি চালিকাশক্তি যা মানুষকে তার ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষাগুলো বাস্তবায়নে কিংবা নিজের লক্ষ্যে পৌঁছতে সাহায্য করে।
ইমাম আলী (আ) সবাইকে কর্মপ্রচেষ্টার দিকে আহ্বান জানিয়ে বলেছেনঃ ‘কর্মপ্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই! কেননা সত্য এই চেষ্টা প্রচেষ্টা ছাড়া অর্জিত হয় না'। তিনি তাঁর সন্তান ইমাম হাসান (আ) কে উপদেশ দিতে গিয়ে আরো বলেছেনঃ ‘কাজ বা চেষ্টা প্রচেষ্টাকে চূড়ান্তভাবে জীবনের অনুষঙ্গী করো! কেননা যে কোনো কিছু করতে চায় এবং কিছু একটা করার পেছনে লেগে থাকে সে পুরো কিংবা কমপক্ষে কিছুটা হলেও তার নাগাল পায়'। বেকারত্ব কিংবা নিষ্ক্রিয় থাকা অথবা অবাঞ্ছিত কোনো চিন্তায় ডুবে থাকা-ইত্যাদি আত্মিক অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। যে সৃজনশীল এবং উত্তম কাজকর্ম করা থেকে বিরত থাকে সে তো নিশ্চয়ই বসে থাকে না,ফলে ক্ষতিকর সব বিনোদন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আজকাল মানসিক রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কাজকর্ম, সুস্থ বিনোদন এবং সক্রিয় হওয়াকে কাজে লাগানো হচ্ছে।কাজ যে কেবল শানসিক অশান্তিকেই রোধ করে তাই নয় বরং ব্যক্তিত্বের সঠিক বিকাশ ও প্রতিভার লালন পালনের ক্ষেত্রে কাজ অপরিহার্য একটি উপাদান।
মানুষের মানসিক সুস্থতার একটি দৃষ্টান্ত হলো পেশাগত সন্তুষ্টি। পেশাগত সন্তুষ্টি কাজের দক্ষতা এবং কাজকর্মে ভুলভ্রান্তি হ্রাস করে। কাজের ব্যাপারে সন্তুষ্টির বিষয়টি পরিচালকদের জন্যেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কেননা যে কর্মকর্তা বা কর্মচারী তার নিজের কাজের ব্যাপারে সন্তুষ্ট থাকে সে দক্ষতার সাথে কাজ করে এবং তার কাজের ফলাফল ভালো হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, কমকর্তাদের কাজের ফলাফল এবং কাজের প্রতি তাদের সন্তুষ্টিহীনতার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। যেসব কর্মকর্তা পেশাগতভাবে অসন্তুষ্ট কিংবা যথার্থভাবে সন্তুষ্ট নন,তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মনোদৈহিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।
কখনো কখনো কাজ কেবলমাত্র দায়িত্ব পালনের জন্যেই করা হয়, আবার কখনোবা ঐ কাজের প্রতি ভালোবাসা থাকার কারণে কাজ করা হয়।দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে কাজ করার মূল্য যদিও ব্যাপক তবু ভালোবাসাময় কাজের সাথে তার তুলনা হয় না। যিনি আন্তরিকতার সাথে কোনো কাজ করেন তিনি ক্লান্ত হন না।এ অবস্থায় সৃজনশীলতা,নতুন উদ্ভাবনী ইত্যাদির বিকাশ ঘটে এবং কাজও সবোর্ত্তমভাবে করা হয়।‘সোনালী সড়কের প্রতিটি ফুটপাত' নামক বইয়ের লেখক উ চুং কিম লিখেছেনঃ‘এটা খুবই চিন্তার বিষয় যে মানুষেরা কাজ বা নিজস্ব পেশাকে কেবল উদরপূর্তির মাধ্যম হিসেবে মনে করে,তারচেয়ে আরো দুঃখজনক হচ্ছে উত্তাল যৌবনকালে আশা উদ্দীপনা আর মানসিক প্রফুল্লতা নিয়ে কাজ করার পরিবর্তে যুবকেরা কাজের ব্যাপারে ক্লান্তি বোধ করে। অথচ যদি পেশাগত দায়িত্ব সন্তুষ্টির সাথে পালন করা হয় তাহলে ঐ পেশা বা কাজ করার মধ্যে একধরনের আনন্দ ও প্রফুল্লতা আসবে। যিনি সবসময় চান যে তাঁর সময়টা বেকার না কাটুক এবং যিনি তাঁর কাজের সীমারেখা টানতে চান না তিনি অবশ্যই দায়িত্বের সীমারেখার মধ্যে আবদ্ধ ব্যক্তির চেয়ে অনেক বেশি সাফল্য অর্জন করবেন'।
কাজ যদি মজা করে অর্থাৎ আনন্দের সাথে করা হয় এবং যদি ‘কাজ করছি' এরকম ভাবা না হয়,তাহলে ঐ কাজে ক্লান্তি আসবে না। মনে করতে হবে কাজটা যেন একটা মজার এবং আনন্দের ব্যাপার। টমাস এডিসনের জীবনের গল্পে আমরা পড়েছি, তিনি একজন পত্রিকা বিক্রেতা ছিলেন। স্কুলে যেতেন না। তিনি প্রায়ই তাঁর ল্যাবরেটরিতে খাবার খেতেন এবং সেখানেই ঘুমাতেন। দৈনিক আঠারো ঘণ্টা কাজ করতেন তিনি। কিন্তু এই কাজ তাঁর জন্যে কষ্টকর কিংবা বিরক্তিকর ছিল না।এডিসন বলেছেন জীবনে একদিনও তিনি বেকার ছিলেন না। ল্যাবরেটরিতে তাঁর সারাটা দিন বেশ আনন্দের মধ্যেই কাটতো। মানুষ কাজের মধ্যে তখনই সফলতা লাভ করে যখন অপরিসীম আশা ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে কাজটি করে। ইরানের বিখ্যাত মরমী কবি মাওলানা রুমিও তাঁর এক কবিতায় ইঙ্গিতে বলেছেন,সকল মানুষ একই রকম মেধা ও প্রতিভার অধিকারী নয়,বরং একেকজন একেক ধরনের প্রতিভা ও যোগ্যতার অধিকারী। এখন যার যেই প্রতিভা রয়েছে সে সেই কাজ নিয়ে অগ্রসর হলে সাফল্য আসবে। যার যে কাজের যোগ্যতা বা অভিজ্ঞতা নেই,সে সেই কাজে হাত দিলে তার সফল হবার সম্ভাবনা কম।
এডিসনকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিলঃ কেন অধিকাংশ যুবক সফল হতে পারে না? জবাবে তিনি বলেছিলেন-‘কেননা নিজেদের পথ তারা চেনে না এবং যে পথে তারা অগ্রসর হয় সেটা অন্যদের। এ ধরনের লোকেরা সমাজের দুই রকম ক্ষতি করে।প্রথমত যে কাজের যোগ্যতা তাদের রয়েছে সেই কাজ তারা করে না। দ্বিতীয়ত যে কাজ তারা করে সে কাজের যোগ্যতা তাদের নেই'।
একজন বিখ্যাত শিল্পীর জীবনীতে এসেছেঃ তিনি স্কুলে খুবই অমনোযোগী ছিলেন এবং একদম পড়ালেখা করতেন না। একদিন তাঁর এক শিক্ষক এসে তাকেঁ বোঝানোর সময় খেয়াল করে দেখলেন তাঁর ছাত্রটি মাটির ওপরে কয়লা দিয়ে ছবি আঁকছে-পাতাভর্তি শাখে একটি পাখির ছবি। শিক্ষক বুঝতে পারলেন এই ছেলের মেধায় ছবি আঁকা আসে গণিতের মতো জটিল পড়ালেখা নয়। তিনি ছাত্রের অভিভাবককে বিষয়টি জানিয়ে বললেনঃ আপনার ছেলেকে আর্ট স্কুলে দিলে ও ভালো করবে। কালের পরিক্রমায় সেই ছাত্র একদিন বিখ্যাত শিল্পী হয়ে তার শিক্ষকের সম্মান রেখেছিল।
বিন্দুমুখী চিন্তাধারা এবং অস্থিরতা থেকে দূরে থাকা মানব মন ও আত্মার ওপর কাজের আরেকটি ইতিবাচক প্রভাব। মানুষ যদি ভালো কোনো বিষয় কেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা করে তাহলে বাজে চিন্তা করার ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে না।এমনকি যারা অনৈতিক ও মন্দ চিন্তায় নিমজ্জিত হয়ে গেছে,তাদেরকেও সুন্দর চিন্তা ও কাজের মাধ্যমে ধ্বংসাত্মক পথ থেকে ফেরানো সম্ভব। এভাবেই কাজ মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে।
ফ্রান্সের বিখ্যাত গণিতবিদ ও দার্শনিক পাসকাল বলেছেনঃ ‘চিন্তা-চেতনা ও নৈতিকতার অবক্ষয়ের মূল হলো বেকারত্ব। বিশ্বের যে দেশই সমাজ থেকে অবক্ষয়ের মতো বিশাল এই ত্রুটি দূর করতে চায় তাদেরই উচিত জনগণকে কাজ দেওয়া এবং কাজ করতে বাধ্য করা,যাতে জনগণের অন্তরে গভীর প্রশান্তি আসে এবং এর প্রভাব ব্যক্তির অস্তিত্বের ওপর পড়ে'। বর্তমানে বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করা সুদূরপ্রসারী ও দূরদর্শী পরিচালকদের উৎকণ্ঠার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যনীতি মেনে চলা হলে পেশাগত সন্তুষ্টি আসে এবং কাজের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়।আজকাল কর্ম ও পেশার জগতে অনেক বৈচিত্র্য এসেছে। পরিবার, সংসারের ব্যয় নির্বাহ করা তথা জীবিকার যোগান দেওয়ার জন্যে মানুষ বহুরকমের পেশার সাথে নিজেদের জড়াচ্ছে।কিন্তু তারা যে তাদের পেশার ব্যাপারে কতোটুকু সন্তুষ্ট তা তাদের কাজ থেকে উৎপন্ন পণ্যের পরিমাণ থেকেই বোঝা যায়। যে তার পেশার ব্যাপারে সন্তুষ্ট, তার কাজেকর্মে তার নিজস্ব মেধা ও সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটবে। সেইসাথে যে কাজটি করতে সে ভালোবাসে ঐ কাজটি করতে সে কোনোরকম ক্লান্তি বা বিষন্নতা বোধ করবে না।
তবে যদি কেউ তার কাজ বা পেশার ব্যাপারে সন্তুষ্ট না থাকে, তাহলে সে নিজে যেমন বিষন্নতায় ভুগবে তেমনি তার কাজের পরিমাণও খুব বেশি হবে না। এ অবস্থায় ঐ ব্যক্তির পরিবার এবং তার সমাজও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই পেশাগত সন্তুষ্টি বিধানের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হচ্ছে উপযুক্ত পেশা নির্বাচন করা। তবে এই নির্বাচনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত এবং সামাজিক দিক থেকে অনেক বিষয় দেখার আছে।যেমন ব্যক্তিগত ব্যাপারে শারীরিক উপযুক্ততা,শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রত্যাশিত পেশার ব্যাপারে অভিজ্ঞতা ও সামর্থ, পেশা নির্বাচনে ব্যক্তির পছন্দ ইত্যাদি।এসব বিষয় পেশাগত সন্তুষ্টি বিধানের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।আর সামাজিক দিকের মধ্যে রয়েছে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ,প্রত্যেক সমাজের নিজস্ব সুযোগ সুবিধার পরিমাণ ইত্যাদি। সেইসাথে পেশা নির্বাচন করার ক্ষেত্রে লৈঙ্গিক বা শ্রেণীগত দিক,বেকারত্ব ও দারিদ্র্য বিমোচনের মতো অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি ইত্যাদিও বিবেচনায় রাখতে হবে।কেননা এগুলো পেশার ওপর প্রভাব ফেলে।
পেশা বা কাজের ধরন ছাড়াও আরো বহু বিষয় মানসিক সুস্থতার ওপর প্রভাব বিস্তার করে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো কাজের পরিবেশে ন্যায়ানুগ থাকা,কাজের সুস্থতা ও নিরাপত্তা, কাজের সময়সীমা,পেশাগত নিশ্চয়তা ও নিরাপত্তা ইত্যাদি। গবেষণায় দেখা গেছে, যেখানেই কোনো সংস্থার কর্মকর্তাগণ নিজেদের পেশাগত সন্তুষ্টির কথা বলেছেন,সেখানেই দেখা গেছে কাজের ফলাফল সন্তোষজনক তথা উৎপাদনের পরিমাণ বেশি। সেইসাথে পেশাগতভাবে সন্তুষ্ট কর্মকর্তাদের শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি তাদের আয়ুও বেশি বলে পর্যালোচনায় দেখা গেছে। তাঁরা তাদেঁর পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট নতুন নতুন দায়িত্বগুলো খুব দ্রুত আয়ত্ত্ব করেন এবং পেশাগত বিপদ বা হুমকির সম্মুখিন হন কম। মোটকথা একজন কর্মকর্তা বা কর্মচারী যতো বেশি পরিমাণ শক্তিমান হবেন তাঁর পেশার প্রতি নিজস্ব দৃষ্টি ততোই ইতিবাচক হবে এবং তাঁর কাজের ফলাফলও হবে উচ্চমানের।
কর্মকর্তা কর্মচারীদের মানসিক সুস্থতা সম্পর্কে আরেকটি বিষয় হুমকির সৃষ্টি করে তাহলো কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ এবং টেনশন। মানসিক চাপ বৃদ্ধির ফলে অবসাদগ্রস্ততা বা বিষন্নতা দেখা দেয়, মানসিক অশান্তি দেখা দেয়, উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। আর এসবের ফলে চিন্তাশক্তি ও মেধা যথাযথভাবে কাজ করে না। অধিকাংশ পেশাজীবীই কমবেশি কাজের ক্ষেত্রে মানসিক চাপের সম্মুখিন হয়েছেন। দায়িত্বের ব্যাপারে সতর্কতার জন্যে যদি এই চাপ পড়ে থাকে তাহলে তা মন্দ নয়।অনেকের ক্ষেত্রে বরং এই চাপ কাজের গতি বাড়াতে সাহায্য করে। কিন্তু কাজের আত্মিক ও মানসিক চাপ বৃদ্ধি পেলে কর্মকর্তা কর্মচারীগণ বিষন্নতায় ভোগেন। কাজের চাপ কখনো কখনো মানসিক ক্লান্তি বয়ে আনে, নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি হয় এমনকি অন্যদের ব্যাপারেও এই নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করে। কাজের চাপ থেকে সৃষ্ট সমস্যা রাগ, বিষন্নতা, মানসিক অস্থিরতা ইত্যাদির পাশাপাশি দেহের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এসবের ফলে কাজে ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়, যার ফলে উৎপাদনও হ্রাস পায়।
যেহেতু কর্মক্ষেত্রে লোকজনকে অনেক সময় কাটাতে হয়, সেজন্যে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ মনোদৈহিক সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপের প্রভাবে একজন কর্মচারী জাগ্রত অবস্থা থেকে ঘুমানো পর্যন্ত এমনকি যখন সে কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত থাকে না তখনো একরকম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ভোগেন। পক্ষান্তরে কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ না থাকলে অর্থাৎ মানসিক সুস্থতা বিরাজ করলে কেউই মানসিক সমস্যায় ভোগেন না। এজন্যেই সকল পেশাজীবীকে নিজের কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে সন্তুষ্টি বোধ করতে হবে এবং কর্মক্ষেত্রের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি করতে হবে। বেশ কিছু বিষয় পেশাজীবীদের মানসিক অস্থিরতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়,যেমন-বর্তমান পেশার ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা,পারিবারিক বিচিত্র সমস্যা, পরিবারের সদস্যদের পারস্পরিক দূরত্ব,পেশাজীবীদের অবস্থার ব্যাপারে তাদের মায়ের উদ্বেগ,অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সমস্যা, ইত্যাদি। মনোবিজ্ঞানীগণ এগুলো দূর করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। কেননা এসবের ফলে স্বাভাবিক দায়িত্ব পালনেও অনীহা দেখা দেয়,অনেক সময় অপারগ হয়ে পড়ে। ফলে চাকুরীজীবী এবং চাকুরীদাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সমস্যার সৃষ্টি হয়।
প্রতিষ্ঠানের পরিচালকগণ সাধারণত বেশি মানসিক চাপে ভোগেন, সেজন্যে তাদেঁর উচিত নিজেদের মনোদৈহিক পরিস্থিতির ব্যাপারে বেশি বেশি সতর্ক থাকা। সেক্ষেত্রে পরিচালকদেরকে আরো বেশি ধৈর্যশীল হবার চেষ্টা করতে হবে, পেশাজীবীদেরকেও। অপ্রত্যাশিতভাবে কর্মক্ষেত্রে উত্তেজনায় যে এনার্জি ব্যয় হয় তাকে কাজের গুণগত মানের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা উচিত। মানসিক স্বাস্থ্যনীতি সম্পর্কে সচেতন একজন পরিচালক জানেন যে বিষন্নতা এবং কর্মক্লান্তি কর্মচারীদের মনোযোগের পরিমাণের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। সেজন্যে একজন পরিচালকের উচিত কর্মক্ষেত্রে যেন মানসিক স্বাস্থ্যসম্মত সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকে সেই ব্যবস্থা নেওয়া। একজন পরিচালক যদি মানসিক স্বাস্থ্যনীতি মেনে চলেন তাহলে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ উন্নত হবে এবং কর্মক্ষেত্র থেকে টেনশন দূর হয়ে যাবে।
পারস্পরিক সহযোগিতা,বিশ্বস্ততা,আন্তরিকতার আবহ প্রতিষ্ঠা করা,সহকর্মীদের মাঝে পারস্পরিক সম্মান,কোনো কাজ করানোর ব্যাপারে জোর করা বা বাধ্য করার অভ্যাস ত্যাগ করা,সহকর্মীদের মেধা ও যোগ্যতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখা এবং তাদের মেধা বিকাশের পরিবেশ সৃষ্টি করা,তাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে কাজে লাগানো এবং তাদেরকে অনুপ্রাণিত করা ইত্যাদি কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যসম্মত সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টিতে সাহায্য করবে। এ ব্যাপারে একজন পরিচালকের দায়িত্ব অপরিসীম।(রেডিও তেহরান)