প্রশ্ন : আল্লাহ্ কেন শয়তানকে সৃষ্টি করেছেন?
উত্তর : আল্লাহ্ কেন শয়তান সৃষ্টি করেছেন- এটি অনেকেরই প্রশ্ন বটে। আল্লাহ্ তো জানতেন যে, শয়তানই সকল কুমন্ত্রণা, প্রলোভন, পথভ্রষ্টতা ও ধোঁকাবাজির উৎস। আর মানুষের সমস্ত দুর্ভাগ্য ও দুর্দশা তার থেকেই ঘটবে। তাহলে কেন আল্লাহ্ তাকে সৃষ্টি করলেন? আল্লাহ্ যদি মানুষকে ইবাদাত-বন্দেগীর মাধ্যমে পূর্ণতা ও সৌভাগ্যে পৌঁছানোর জন্য সৃষ্টি করে থাকেন, তাহলে ধ্বংসাত্মক ও পূর্ণতার বিরুদ্ধ অস্তিত্ব শয়তানকে সৃষ্টি করার কী যুক্তি থাকতে পারে?
প্রথমত : আল্লাহ্ শয়তানকে মানব সৃষ্টির শুরু থেকে সৃষ্টি করেননি। কারণ, প্রথম থেকে তার সৃষ্টি ছিল পবিত্র ও ত্রুটিমুক্ত। আর এ কারণেই সে দীর্ঘকাল ধরে আল্লাহ্র ঘনিষ্ঠ ফেরেশেতাদের কাতারভুক্ত ছিল। যদিও সৃষ্টির দিক দিয়ে সে তাদের অংশ ছিল না। কিন্তু পরবর্তীকালে স্বাধীনতার অপব্যবহার করে অবাধ্যতা ও বিদ্রোহের সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে আল্লাহ্র দরবার ও ফেরেশতাদের মাঝ থেকে বিতাড়িত হয়। তখন ‘শয়তান’ কুখ্যাতি লাভ করে।
দ্বিতীয়ত : যদি আমরা সামান্য চিন্তা করি তাহলে জানব যে, শয়তান এই বিপজ্জনক শত্রুর উপস্থিতিও মানুষের পূর্ণতা ও উন্নতির জন্য একটি সহায়ক উপাদান। যারা ঈমানের অধিকারী এবং সত্যের পথে চলতে চায়, তাদের জন্য শয়তানের উপস্থিতি ক্ষতিকর নয়; বরং তাদের উন্নতি ও পূর্ণতা লাভে সহায়ক।
এ বিষয়ে কারও সন্দেহ থাকার কথা নয় যে, সব সময় প্রতিরোধ ক্ষমতাগুলো জেদী শত্রুর মোকাবিলায় উজ্জীবিত হয় এবং স্বীয় পূর্ণতার পথ পাড়ি দেয়। মানুষের সামনে এক শক্তিশালী শত্রুর উপস্থিতি তার প্রতিপালন ও উৎকর্ষ অর্জনে সহায়ক হয়। কারণ, সব সময় বিরোধ ও প্রতিকূলতার মধ্যে উৎকর্ষ ও বিকাশ অর্থবহ হয়ে ওঠে।
শক্তিশালী শত্রুর মোকাবিলা করা ব্যতীত কোন সৃষ্টিই পূর্ণতার পথে এগিয়ে যেতে পারে না। অন্য কথায় বলা যায়, মানুষ যতক্ষণ না শক্তিশালী ও ক্ষমতাধর শত্রুর মোকাবিলায় অবতীর্ণ হবে ততক্ষণ তার শক্তি ও প্রতিভার স্ফূরণ ঘটে না এবং সক্রিয় হয় না। এই শত্রুই মানুষের কর্মচাঞ্চল্য ও উৎকর্ষের কারণ হয়। এ কারণে শক্তিশালী ও প্রতিভাবান সেনাধিনায়ক ও সৈনিক তারাই, যারা বড় বড় যুদ্ধে শত্রুদের সাথে কঠিন মোকাবিলায় অবতীর্ণ হয়েছে। অভিজ্ঞ ও শক্তিমান রাজনীতিক হলো তারাই, যারা কঠিন রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে শত্রুর সাথে সমান তালে লড়াই করেছে।
তারাই বীর, যারা নামযাদা প্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে শক্তির পরীক্ষায় জয়ী হয়েছে। কাজেই, এটি কোন আশ্চর্যের ব্যাপার নয় যে, আল্লাহ্র মহান বান্দাগণ শয়তানের মোকাবিলায় নিরন্তর নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামের মাধ্যমে দিন দিন আরও শক্তিমান ও ক্ষমতাধর হয়ে ওঠেন। বিজ্ঞানীরা আজ ব্যাঘাত সৃষ্টিকারী জীবাণুসমূহের অস্তিত্বের প্রয়োজনীয়তা ও দর্শন সম্পর্কে বলেন, যদি এগুলো না থাকতো তাহলে মানুষের দেহের কোষগুলো এক শৈথিল্য ও নিষ্কর্মা অবস্থার মধ্যে ডুবে যেত এবং সম্ভবত মানুষের বৃদ্ধি ৮০ সেন্টিমিটারের বেশি হতো না। সব মানুষই পরিণত হত লিলিপুটিয়ান সাইজে। কিন্তু মানুষের দেহ ঠিকই ব্যাঘাত সৃষ্টিকারী জীবাণুসমূহের সাথে এক দৈহিক যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে অনেক বেশি বৃদ্ধি ও বিকাশ লাভ করেছে।
এই একই কথা শয়তানের সাথে মানুষের রূহের সংগ্রামের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যদিও সে তার মন্দ ও গর্হিত কাজের জন্য জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে, কিন্তু তার প্রলোভন ও কুমন্ত্রণা আল্লাহ্র সে সকল বান্দা, যারা সত্য পথে হাঁটতে চায়, তাদের কোনই ক্ষতি করবে না; বরং পরোক্ষভাবে তাদের জন্য সুফলদায়ক হবে।