বিশিষ্ট মারজায়ে তাক্বলিদ আয়াতুল্লাহ আল উজমা নাসের মাকারেম শিরাজী আব্দুল আযিয আলুশ শেইখের প্রতি একটি খোলা চিঠি প্রদান করে তার (আব্দুল আযিয) কর্তৃক ভিত্তিহীন অপবাদ ও শিয়াদের তাকফির করাকে ইসলামের শত্রুদের বিশেষতঃ আমেরিকা ও ইসরাইলের প্রতি বৃহৎ খেদমত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা আবনার রিপোর্ট: সৌদি আরবের গ্রান্ড মুফতির উদ্দেশ্যে লেখা আয়াতুল্লাহ আল উজমা মাকারেম শিরাজী’র এ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মহোদয়! সম্প্রতি আপনি যে মন্তব্য করেছেন তা অত্যন্ত অবমাননাকর, নোংরা ও ঘৃণ্য। যা জ্ঞানী ব্যক্তিদের জন্য শোভনীয় নয়। আপনি শিয়াদেরকে ‘সাফাভিয়াহ ও মাজুস (অগ্নি উপাসক)’ এবং মুসলমানদের শত্রু হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং মুসলমানদেরকে তাদের হতে সতর্ক করে দিয়েছেন (!)
এ ধরণের যুক্তিহীন ও অন্যায় অপবাদ ওয়াহাবি ওলামাদের মুখ থেকে এই প্রথম বারের মত শুনছি না, যার মাধ্যমে তারা বিচ্ছেদ ও বিভেদের বীজ ছড়ায় এবং শত্রুদেরকে আনন্দিত করে। হযরত ইমাম মাহদী (আমাদের আত্মা তাঁর প্রতি উত্সর্গিত) এর প্রতি এবং শিয়াদেরকে যুগের ইমাম (আ. ফা.) এর প্রতি বিশ্বাসী হওয়ার কারণে এ ধরণের নোংরা ও অবমাননাকর অপবাদ আরো একটি অপছন্দনীয় কাজ, যা নতুন কিছু নয়। এ হতে প্রমাণিত হয় যে, ওয়াহাবী মুফতিরা দলিল ও যুক্ত ভিত্তিক আলোচনা হতে দূরে সরে সর্বদা অবমাননার আশ্রয় নিয়ে থাকেন।
আয়াতুল্লাহ মাকারেম তার এ পত্রে আরো লিখেছেন: এ পত্রে আপনাদেরকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্মরণ করিয়ে দিতে চাই:
১। এমন পদে থাকা সত্ত্বেও এটা আশ্চার্যের বিষয় যে, কেন আপনারা পবিত্র কোরআনের শিক্ষাকে ভুলে গেছেন, যাতে নম্রতা ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি আহ্বান জানানোর উপদেশ দেয়া হয়েছে। তদস্থলে আপনারা অবমাননা ও মিথ্যা অপবাদের শরণাপন্ন হন, যা হতে ইসলাম সন্তুষ্ট নয়।
২। আপনারা ইসলামি ইতিহাস, এমনকি আপনাদের গ্রন্থের ব্যাপারেও সঠিকভাবে অবগত নন। কেননা হযরত আলী (আলাইহিস সালাম) এর অনুসারী ও তার প্রতি ভালবাসা পোষণকারীদের জন্য শিয়া নামটি স্বয়ং আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি) প্রদান করেছিলেন। এ নামটি সেই যুগ হতে প্রচলিত। ইসলামি ইতিহাসের প্রতি দৃষ্টি দেয়া আপনাদের জন্য উত্তম। (ইতিহাসের প্রতি দৃষ্টি দিলে এ বিষয়টি জানতে পারবেন যে,) সাফাভিয়া সরকারের যুগের শত শত বছর আগে হতেই হযরত আলী (আ.) এর শিয়ারা (অনুসারীরা) মক্কা, মদিনা, ইরাক, শাম, মিসর, ইরান ও অন্যান্য স্থানে বসবাস করত এমনকি তারা বিভিন্ন অঞ্চলে শাসন ব্যবস্থাও প্রতিষ্ঠা করেছিল।
৩। আপনি ওয়াহাবীদের শীর্ষ মুফতি হওয়া সত্ত্বেও এ কথা ভুলে গেছেন যে, যদি ইরান ও লেবাননের শিয়ারা না থাকতো তবে ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যর সমস্ত অঞ্চলের উপর আধিপত্য বিস্তার করত। আর এটা জানা নেই যে, ঐ সময় (যখন আগ্রাসী ইসরাইল মুসলমানদের উপর হামলা চালাচ্ছিল) আপনাদের মুফতিরা কি করছিলেন এবং কোথায় ছিলেন?!
৪। যখন ইসরাইল গাজার মুসলমানদেরকে –যাদের অধিকাংশই সুন্নি- গণ হারে হত্যা করছিল তখন ইরান ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের শিয়ারা অন্যদের তুলনায় তাদের (ফিলিস্তিনীদের) প্রতি নিজেদের সমর্থন ব্যক্ত করেছিল। যদি (ফিলিস্তিনীরা) এ সমর্থন না পেত তবে ইসরাইল নিজের হত্যাযজ্ঞ অব্যাহত রাখতো।
৫। ওয়াহাবী ওলামাদের উচিত উলুমে ইসলামি তথা ইসলামি জ্ঞানসমূহের প্রবত্তকদের সম্পর্কে অধ্যায়ন করা। যাতে তাদের জন্য স্পষ্ট হয় যে, ইসলামি জ্ঞানসমূহের প্রবত্তকেরা অধিকাংশই ছিলেন আহলে বাইত (আলাইহিমুস সালামের) অনুসারী। আর তাদের লেখা বিভিন্ন গ্রন্থ ঐ যুগ হতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রসিদ্ধ গ্রন্থাগারে মজুত রয়েছে, শুধুমাত্র আপনাদের গ্রন্থাগারগুলো ছাড়া!
৬। এ সত্য বিষয়টি হতে গাফেল হবেন না যে, এ সকল অন্যায় ও ভিত্তিহীন অপবাদ এবং শিয়াদেরকে কাফের আখ্যায়িত করার অর্থ হল ইসলামের শত্রুদেরকে বৃহৎ সহযোগিতা প্রদান করা, বিশেষতঃ যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলকে। কেননা এর প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বের শিয়াদের মনে ওয়াহাবীদের সম্পর্কে ঘৃণার জন্ম দেবে আর ইসলামের শত্রুরা এটাই চায় যে মুসলমানদের মাঝে সাম্প্রদায়িক যুদ্ধ সৃষ্টি হোক যাতে এ অঞ্চলের অঢেল সম্পদ তারা সহজে লুট করতে পারে।
৭। মহোদয়ের এ বিষয়টি ভুলে গেল চলবে না যে, বিভিন্ন সময়ে ওয়াহাবী ওলামারা শিয়াদের কাফেরকে কাফের আখ্যায়িত করে ফতওয়া প্রদান করেছেন। এ পুরাতন ও মরিচা ধরা অস্ত্র তাদেরকে (শিয়াদেরকে) দূর্বল করার ক্ষেত্রে কোন প্রভাবই ফেলতে পারেনি। বরং তারা দিনের পর দিন মুসলিম বিশ্বে সাংস্কৃতিক উন্নয়ন সাধন করে চলেছে।
এ পত্রের শেষে উল্লিখিত হয়েছে: বারংবার আমরা বলেছি যে, যদি আমাদের ও আপনাদের উপস্থিতিতে একটি সভা অনুষ্ঠিত হত, তবে এ বিষয়ে আপনাদের ভুলগুলোকে আপনাদের গ্রন্থ হতেই আমরা প্রমাণ করতাম, যাতে আপনারা ইসলামি সমাজের ঐক্যের প্রতি এরচেয়ে বেশী আঘাত না করেন, যা মূলতঃ ইসলামের শত্রুদেরই আনন্দের কারণ হয়।
আসুন অপবাদ, তাকফির (অন্যকে কাফের আখ্যায়িত করা) ও অবমাননার মত দূর্বল পথকে পরিহার করে পরস্পরের প্রতি বন্ধুত্বের হাত বাড়াই এবং ইসলাম ও মুসলমানদের উন্নতির জন্য চিন্তা করি।#