আর তাই তো আমিরুল মু’মিনীন আলী ইবনে আবি তালিব (কা.), ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন (আ.), সালমান ফারসী (রা.), হুযাইফা ইয়েমেনী (রা.), মেকদাদ (রা.) প্রমূখ ব্যতীত আর কাউকে এ জানাযার নামাযে অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়া হয়নি এবং তার ওসিয়ত মোতাবেক রাতের আঁধারেই অজানা এক স্থানে তাঁকে দাফন করা হয়েছিল। আর তাই তো আজও তার মাজারের চিহ্নটুকু আমাদের জানা নেই....
আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): আদি পিতা হযরত আদম (আ.) এর এ পৃথিবীতে আগমনের পর থেকে অসংখ্য নারীর আগমন ঘটেছে এ গ্রহে। যাদের কারো কারো কর্ম মহান আল্লাহর এতটাই পছন্দনীয় ছিল এবং যারা মহান আল্লাহর এতটাই অনুগত ছিলেন যে, এ পৃথিবীতেই তাঁরা বেহেশতের সুসংবাদ প্রাপ্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন হযরত মারইয়াম (আ.) ও হযরত আসিয়া (আ.)সহ আরও অনেকে।
কিন্তু এমন এক ব্যক্তিত্বের নাম আমরা ভুলে গেছি যাকে মহান আল্লাহ বেহেশতের সুসংবাদের চেয়েও উর্ধ্বে, বেহেশতে যত রমনীই প্রবেশ করবেন তাদের সকলের সম্রাজ্ঞী হিসেবে সুসংবাদ প্রদান করেছেন।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, তাঁর জীবন বৃত্তান্ত নিয়ে আলোচনা খুবই কম হয়। মহানবী (স.) এর ওফাতের পর তার জীবন কিভাবে কেটেছে তা নিয়ে আদৌ কোন আলোচনা আমরা করি না।
আমরা আদৌ কোনদিন জানতে চেষ্টা করেছি কি, তিনি কিভাবে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছিলেন? তাঁর পিতা আল্লাহর রাসূল (স.) এর ওফাতের পর তিনি কতদিন বেঁচে ছিলেন হয়তবা আমাদের দেশের বেশীরভাগ মানুষের মনেই এমন প্রশ্ন জাগে না। কেননা হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.) এর জীবনের উপর বয়ে যাওয়া বিপর্যয়ের কথা আমাদের সমাজে আজও উত্থাপন করা হয় না। তাই এ বিষয়টি আমাদের আজও অজানা।
সুপ্রিয় পাঠক আপনারা ধর্মপ্রাণ; মহানবি (স.) কে মনেপ্রাণে ভালবাসেন। আর তাই নবী করিম (স.) এর সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিত্ব হযরত ফাতেমা সম্পর্কে অধিক গবেষণা করার প্রয়োজনীয়তা কি বিন্দু পরিমাণে বোধ করেন না? মহানবি (স.) হযরত ফাতেমা (সা. আ.) সম্পর্কে বলেছেন: ‘ফাতেমা আমার অংশ স্বরূপ যে তাকে কষ্ট দেয় সে আমাকে কষ্ট দেয়’।তিনি আরও বলেছেন: যে ব্যক্তি ফাতেমাকে সন্তুষ্ট রাখে সে আমাকে সন্তুষ্ট রাখে’।
মহানবি (স.) নারী সমাজের জন্য হযরত ফাতেমা যাহরা (সা. আ.) কে আদর্শ হিসেবে উল্লেখ করলেও বর্তমানে মুসলিম নারীরা তাঁকে বাদ দিয়ে আদর্শের সন্ধানে ঘুরেফেরে। অথচ উচিত ছিল নারীরা তাঁর জীবনী নিয়ে গবেষণা করবে এবং নিজেদের জীবনের পথ চলার শক্তি এ মহীয়সী নারীর জীবনকে ফলো করে সঞ্চায়িত করবে।
বন্ধুরা প্রকৃত ইসলামকে চিনতে হলে ফাতেমাকে চেনার বিকল্প নেই। একসময় মক্কার আবু জেহেল, আবু লাহাব, আবু সুফিয়ানরা হযরত মহানবি (স.) কে আবতার তথা লেজকাটা বা নির্বংশ বলে মশকরা করতো। মহান আল্লাহ্ নবি করিম (স.) কে ফাতেমা দান করলেন। আজ আওলাদে রাসুল বা নবিবংশের সাথে সংযুক্ত হওয়ার দাবীদার সকলেই এই ফাতেমা (সা. আ.)এর মাধ্যমে আল্লাহর রাসুলের সাথে সম্পৃক্ত। বেহেশতের যুবকদের সর্দার ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন (আ.) এর মাও হলে এই খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমা যাহরা (স.)।এছাড়া ইমাম হুসাইন (আ.) এর বংশ ধারায় ইমাম যায়নুল আবেদিন, ইমাম বাকের, ইমাম জাফর সাদিক, ইমাম মুসা কাযিম, ইমাম আলী রেজা, ইমাম মুহাম্মাদ তাকি ইমাম আলী নাকি এবং ইমাম হাসান আসকারী (আ.)ও হযরত ফাতেমার বংশধারায় পৃথিবীতে এসেছেন।
আর এটা অনস্বীকার্য যে, মানবজাতিকে মুক্তি দানকারী, বিশ্বব্যাপী ইসলামি শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠাকারী, জুলুমকে সমূলে উৎপাটকারী মহান নেতা হযরত ইমাম মাহদি (আ.) ও আসবেন এই ফাতেমার বংশ ধারায়।
অনেকে ইসলামের প্রাথমিক যুগে মুসলমানদের বিভেদ-বিচ্ছেদের কারণ খোঁজেন। এজন্য বিভিন্ন গবেষণাও তারা করেন। এক্ষেত্রে বিশ্লেষকদের মত হল যারা হযরত ফাতেমা যাহরা (স.) কে সঠিকভাবে চিনতে পারবেন তারাই রাসূল (স.) এর ওফাতের পর মুসলমানদের মাঝে সৃষ্ট বিভেদের মূল কারণ উদ্ঘাটনে সক্ষম হবেন।
প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ লেখা নানা বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন ওয়েব সাইটে আপলোড করা হলেও হযরত ফাতেমা যাহরা (সা. আ.) এর উপর খুব কম লেখাই পাওয়া যায় পেয়েছি।
আজ তাঁর কথা স্মরণ করে মনটা দুঃখে ভরে এল। কেননা আজ যে তার শাহাদত বার্ষিকী। রাসূল (স.) এর ইন্তেকালের মাত্র ৯৫ দিনের মাথায় বেহেশতের যুবতিদের সম্রাজ্ঞী মহিয়সী হযরত ফাতেমা যাহরা (আ.) শত্রুদের দ্বারা আঘাত প্রাপ্ত হয়ে ভাঙ্গা পাঁজড় নিয়ে এ দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। ঐ আঘাতে তাঁর গর্ভে থাকা সন্তানটিও শহাদাত বরণ করেন যার নাম ছিল মুহসিন।
তাকে কি পরিমাণে কষ্ট দেয়া হয়েছিল তা তিনি কয়েকটি বাক্যে প্রকাশ করে গেছে। ইতিহাস যা চিরকাল স্মরণ রাখবে। তার মধ্যে দু’টি লাইন হল
‘আমার উপর যে বিপদ চাপিয়ে দেয়া হয়েছে তা যদি দিনের উপর পড়ত তবে তা রাতে পরিণত হত’
তিনি তার জানাযাতে মুষ্টিমেয় কিছু সাহাবী ব্যতীত অপর কাউকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেননি, এমনকি তৎতকালীন যুগের খলিফাকেও। কেননা তিনি তাদের উপর অসন্তুষ্ট ছিলেন। আর বিদায়ের আগে হযরত আলী কে দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ওসিয়ত করেছিলেন: 'হে আলী আমাকে রাতের আধারে গোসল দিও, রাতের আধারে কাফন পরিয়ো এবং রাতের আঁধারে দাফন করো।'
আর তাই তো আমিরুল মু’মিনীন আলী ইবনে আবি তালিব (কা.), ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন (আ.), সালমান ফারসী (রা.), হুযাইফা ইয়েমেনী (রা.), মেকদাদ (রা.) প্রমূখ ব্যতীত আর কাউকে এ জানাযার নামাযে অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়া হয়নি এবং তার ওসিয়ত মোতাবেক রাতের আঁধারেই অজানা এক স্থানে তাঁকে দাফন করা হয়েছিল। আর তাই তো আজও তার মাজারের চিহ্নটুকু আমাদের জানা নেই....
বন্ধুরা আজ ঐ মহিয়সীর পবিত্র শাহাদাত বার্ষিকী। সকল বেহেশত আকাঙ্খীদেরকে সমবেদনা জানাই। আল্লাহ আমাদের সকলকে ঈমানের সাথে সুস্থ রাখুন। এবং ঈমানের সাথে তাঁর দিদারের তওফিক দান করুন। ওয়াস সালাম।