মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বৌদ্ধ ধর্মানুসারী রাখাইন ও ইসলাম ধর্মানুসারী রোহিঙ্গাদের মধ্যে ফের টানা ছয় দিনের দাঙ্গার পর পরিস্থিতি এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে বলে দাবি করা হলেও মঙ্গলবারও নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে একজন নিহত ও অপর একজন আহত হয়েছে।
বার্তা সংস্থা আবনা : রামরি দ্বীপের কাইয়াউকনিমাওতে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে রাখাইন রাজ্যের প্রধান শহর সিত্তুয়ির সরকারি সূত্রগুলো। এদিকে রাখাইন-রোহিঙ্গা জাতিগত দাঙ্গার পর রাজ্যটিতে এখন চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। অধিবাসীদের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস, সন্দেহ আর ভয় দেখা দিয়েছে। বুধবার রয়টার্সের খবরে একথা বলা হয়েছে।
অন্যদিকে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে মিয়ানমারের বিরোধীদলীয় নেত্রী অং সান সুচি রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর গণহত্যার ব্যাপারে কোন কথা বলছেন না বলে অভিযোগ তুলেছেন মিয়ানমার বিষয়ক বিশিষ্ট রাজনৈতিক ভাষ্যকার লিন দিন। ভিয়েতনামি বংশোদ্ভূত মার্কিন ভাষ্যকার লিন দিন আরও বলেছেন, নির্বাচনে বৌদ্ধদের ভোট পাওয়ার আশায় রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে নীরব রয়েছেন সুচি। মিয়ানমারের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হওয়ার বাসনা সুচিকে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে বলে মনে করেন লিন দিন। ইরানের স্যাটেলাইট নিউজ চ্যানেল প্রেস টিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে লিন দিন আরও বলেছেন, পশ্চিমাদের সঙ্গে নিজের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককেও গুরুত্ব দিচ্ছেন তিনি। মিয়ানমারের মুসলমানদের ওপর আজ অত্যাচারের যে স্টিমরোলার চলছে পশ্চিমা দেশগুলো এতদিন তা-ই চেয়েছিল। কাজেই মানবাধিকারের ধ্বজাধারী পাশ্চাত্য বিশ্ব মিয়ানমারে মুসলিম গণহত্যা দেখেও না দেখার ভান করছে। আর পাশ্চাত্যের এ মনোভাব সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবহিত সুচি শান্তিতে নোবেল পেলেও রোহিঙ্গা মুসলমানদের অশান্তি সম্পর্কে কোন কথা বলছেন না। মিয়ানমার বিষয়ক এই ভাষ্যকার আরও বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের মিয়ানমার সফর এবং দেশটির ওপর থেকে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলোর নিষেধাজ্ঞা একের পর এক উঠে যাওয়ার ঘটনা একই সুতোয় গাঁথা। এসব কাজের মাধ্যমে পশ্চিমা দেশগুলো রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর গণহত্যা চালাতে মিয়ানমারের আধা-সামরিক সরকারকে সবুজ সংকেত দিয়েছিল। সে সংকেতের সদ্ব্যবহার করেছে মিয়ানমার সরকার। এছাড়া হিলারি সুচিকে মিয়ানমারের মুসলিম নিধনের ব্যাপারে চুপ থাকতে বলেছেন; যে নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করছেন সুচি। রাখাইন রাজ্যে জাতিগত দাঙ্গা থেকে সৃষ্ট বিস্ফোরক পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে। অপরদিকে ভীত রাখাইন ও রোহিঙ্গারা ঘরে তৈরি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পরবর্তী দাঙ্গার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। ওদিকে রোববার রাতে মিয়ানমারের পূর্বাঞ্চলীয় কারেন রাজ্যে দুটি মসজিদে গ্রেনেড ছোড়া হয়েছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে। তবে এতে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনায় মিয়ানমারের অন্যান্য অঞ্চলেও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ার আশংকা তৈরি হয়েছে। সরকারি হিসাবে ২১ অক্টোবর থেকে রাখাইন ও রোহিঙ্গাদের মধ্যে দাঙ্গায় এ পর্যন্ত ৮৪ জন নিহত ও ১২৯ জন আহত হয়েছে। এ পরিস্থিতি মিয়ানমারের ১৮ মাস বয়সী বেসামরিক সংস্কারবাদী সরকারকে অগ্নিপরীক্ষার মুখে ঠেলে দিয়েছে। রাখাইন রাজ্য কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র উয়িন মায়িং বলেন, সরকার দাঙ্গাকবলিত সব এলাকায় পুলিশ ও সেনাসদস্যের সংখ্যা বাড়িয়েছে। বিবদমান পক্ষগুলো আইন মেনে চললে আর কোন দাঙ্গা হবে না। এদিকে চলমান দাঙ্গার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের মহাসচিব সুরিন পিটসুয়ান। দাঙ্গা অব্যাহত থাকলে তা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে অস্থিরতা তৈরি করবে বলে তিনি সতর্ক করেন। সমস্যা সমাধানে এ বিষয়ে মনোযোগ দেয়ার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।# দৈনিক যুগান্তর