আজ থেকে ৯৬ বছর আগে ১৯১৬ সালের এই দিনে (২রা নভেম্বর) ব্রিটিশ সরকারের উস্কানিতে মক্কা ও মদীনাসহ হিজাজের আরো কয়েকটি শহরের ততকালীন শাসক শরিফ হোসাইন নিজেকে আরবের সুলতান বলে ঘোষণা করেন।
এর আগে ৫ই জুন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী সরকারের নির্দেশে শরিফ হোসাইন ওসমানীয় খেলাফতের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন যাতে তুর্কি মুসলমানরা দুর্বল হয়ে পড়ে। এর বিনিময়ে যুদ্ধ-শেষে শরিফকে গোটা আরব অঞ্চলের রাজা করা হবে বলে ব্রিটিশরা তাকে প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু তারা সেই অঙ্গীকার রক্ষা করেনি। বহুমুখী কূটচালে অভ্যস্ত ব্রিটিশরা নজদের ওয়াহাবি সর্দার আবদুল আজিজ ইবনে সউদকেও সমর্থন দিয়ে যাচ্ছিল যাতে তারা বুঝতে পারে যে ব্রিটিশদের এই দুই সেবাদাসের মধ্যে কে বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। উল্লেখ্য সে যুগে সব আরব অঞ্চলই ছিল তুর্কি খেলাফতের অন্তর্ভুক্ত। ইরান ও আফগানিস্তান ছিল আলাদা মুসলিম রাষ্ট্র।
ওয়াহাবিরা শরিফ হোসাইনের বাহিনীকে পরাজিত করতে থাকলে লন্ডন আবদুল আজিজের দিকেই ঝুঁকে পড়ে। কিন্তু একইসঙ্গে আরবদের মধ্যে প্রভাব ধরে রাখার জন্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বৃহত্তর সিরিয়ার মধ্য থেকে জর্দান নামের একটি নতুন দেশ সৃষ্টি করে শরিফ হোসাইনের ছেলে আবদুল্লাহকে দেশটির রাজা বানায়। ব্রিটিশরা শরিফ হোসাইনের আরেক ছেলে ফয়সালকে করেছিল ইরাকের রাজা। এর ফলে ইরাকে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ হারায়। (ইরাকে তুর্কি শাসনের ব্যাপারে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ থাকা সত্ত্বেও ব্রিটিশ সেনারা ১৯১৪ সালে ইরাক দখল করতে থাকলে সেই থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত ইরাকের শিয়া ও সুন্নি আলেমসহ দেশটির জনগণ অবিস্মরণীয় ঐক্য সৃষ্টি করে ব্রিটিশ সেনাদের বার বার বিপর্যস্ত করতে সক্ষম হয়েছিল।)
এভাবে ব্রিটিশদের “ভাগ ও শাসন কর” নীতির কূটচালে ও কোনো কোনো আরব নেতার ব্যক্তি স্বার্থের যূপকাষ্ঠের বলি হয় তুরস্কের ওসমানিয় খেলাফত। তুর্কি খেলাফতভুক্ত দেশগুলোকে ভেঙ্গে বহু টুকরা করার কারণে এ অঞ্চলের ইসলামী ঐক্য বিনষ্ট হয় এবং দুর্বল হয়ে পড়ে মুসলমানরা।
যাই হোক, আবদুল আজিজের বর্বর ওয়াহাবি সেনারা হেজাজ (বর্তমান সৌদি আরব) দখল করে শরিফ হোসাইনকে বিতাড়িত করে। তারা মক্কা, মদীনা, জেদ্দা ও তায়েফে অন্ততঃ বিশ হাজার মুসলমানকে হত্যা করে এবং মদীনায় রাসূল (সা.)’র মাজার ও মসজিদে নববী-সংলগ্ন জান্নাতুল বাকি ও জান্নাতুল মোয়াল্লা কবরস্থানের পবিত্র মাজারগুলো ধ্বংস করে। ব্রিটিশরা নতুন দেশ সৌদি-আরবকে উপহার দেয় আবদুল আজিজের কাছে এবং তাকে রাজা বলে সম্মাননা জানায়। এইসব ঘটনাই ছিল ব্রিটিশদের কারসাজির ফসল যাতে মুসলমানরা শতধা-বিভক্ত হয় এবং আরবদের মধ্যেও অঞ্চল ও মাজহাবভিত্তক নানা বিভেদ দেখা দেয়। ব্রিটিশরা এমন পরিবেশ সৃষ্টি করে যাতে মুসলমানদের কাঁধের ওপর চাপিয়ে দেয়া যায় অবৈধ রাষ্ট্র ইহুদিবাদী ইসরাইল।
যদি তুর্কি খেলাফত বহাল থাকত তাহলে মুসলমানরা এত দুর্বল হয়ে পড়ত না। কারণ, তুর্কি খেলাফত সত্যিকার অর্থে ইসলামী খেলাফত না হওয়া সত্ত্বেও মুসলমানদের ঐক্য ধরে রাখার গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহ্যবাহী মাধ্যম হিসেবে কাফের শক্তিগুলোর জন্য আতঙ্কের কারণ হিসেবে বিবেচিত হত।# রেডিও তেহরান