বার্তা সংস্থা আবনা : চোখের সামনে নিজ কিশোরী মেয়ের ওপর প্রতিবেশী হিন্দু দুর্বৃত্তদের পাশবিক অত্যাচারের কথা মনে উঠতেই বুকটা ভারী হয়ে ওঠে ফাতিমার। ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের মুজাফফরনগরে গতমাসের কথিত হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সময় গণধর্ষণের শিকার হয় ফাতিমার ১৭ বছরের মেয়ে। হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা বলা হলেও ওই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন মূলত মুসলমানরাই।
একটি ত্রাণকেন্দ্রে আশ্রয় নেয়া ফাতিমা অশ্রু ভারাক্রান্ত চোখে বলেন, “তারা ছিল ছয়জন। তারা আমাকে চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে চোখের সামনে আমার মেয়ের ওপর একের পর এক চড়াও হয়। আমি তার (সতীত্ব) রক্ষা করতে পারিনি।”
আজও সেই দুঃসহ পাশবিকতার কথা পুলিশকে জানাতে পারেননি ফাতিমা। একদিকে আরো বড় ধরনের হামলার আশঙ্কা অন্যদিকে লোকলজ্জার ভয় তাকে মামলা করা থেকে বিরত রেখেছে। ফাতিমা এ সম্পর্কে বলেছেন, “আমার মেয়ে গণ-ধর্ষণের শিকার হয়েছে একথা জানতে পারলে কে তাকে বিয়ে করবে বলুন? সমাজ তাকে নষ্টা মেয়ে বলে প্রত্যাখ্যান করবে।”
মুজাফফরনগর দাঙ্গার পর উত্তর প্রদেশের মালাকপুর ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন প্রায় ১০,০০০ মুসলমান। তাদেরই একজন ফাতিমা। ৭ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া তিনদিনব্যাপী দাঙ্গায় যে শুধু মুসলমানদের হত্যা এবং তাদের ঘর-বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে তাই নয়, সেই সঙ্গে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ফাতিমার মেয়ে মতো অসংখ্য মুসলিম নারী। ওই দাঙ্গায় নিহত হয়েছে প্রায় ৫০ জন যাদের বেশিরভাগই মুসলমান।
কিন্তু পুলিশের কাছে ফৌজদারি অপরাধ জমা পড়েছে মাত্র ২৮২টি; এর মধ্যে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে মাত্র পাঁচটি। কিন্তু বেশিরভাগ আক্রান্ত মানুষ যে বিচার চাইতে পুলিশের দ্বারস্থ হননি তার একটি ছোট উদাহরণ ফাতিমার সাত সদস্যের পরিবার। তারা জানেন, পুলিশের কাছে অভিযোগ জানালে আরো অনেক বেশি হেনস্থা হতে হবে, সমাজে মাথা কাটা যাবে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হবে না। ১১ বছর আগের গুজরাট দাঙ্গার প্রধান অভিযুক্ত নরেন্দ্রমোদি আজ ভারতের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী।
অবশ্য উত্তর প্রদেশের সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা কল্পনা সাকসেনা দাবি করেছেন, প্রতিটি অভিযোগই তারা আন্তরিকতার সঙ্গে তদন্ত করছেন।
সেপ্টেম্বরের গোড়ার দিকে একজন মুসলিম পুরুষের হত্যাকাণ্ডের মধ্যদিয়ে মুজাফফরনগর দাঙ্গা শুরু হয়েছিল। প্রভাবশালী জাত হিন্দুরা তাদের একজন নারীকে উত্যক্ত করার অভিযোগে ওই মুসলিম পুরুষকে হত্যা করে।