হযরত ইমাম হুসাইন(আ.)-এর ক্ষেত্রে আমরা কিছু ব্যতিক্রমী বিষয় লক্ষ করি; আর এটির নেপথ্য কারণ হচ্ছে ইমাম হুসাইন(আ.)-এর অতুলনীয় সম্মান ও মর্যাদা। যেমন: তুরবাতে ইমাম হুসাইন তথা কারবালার মাটি খাওয়া এবং ইমাম হুসাইন(আ.)-এর চল্লিশার শোকানুষ্ঠান পালন সেগুলোর অন্তর্ভুক্ত।
বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও ধর্ম বিশেষজ্ঞ হুজ্জাতুল ইসলাম কায়েম মাকামী শুধুমাত্র ইমাম হুসাইন(আ.)-এর চল্লিশার শোকানুষ্ঠান পালিত হওয়ার কারণ সম্পর্কে বলেন: হযরত ইমাম হুসাইন(আ.)-এর ক্ষেত্রে আমরা কিছু ব্যতিক্রমী বিষয় লক্ষ করি; আর এটির নেপথ্য কারণ হচ্ছে ইমাম হুসাইন(আ.)-এর অতুলনীয় সম্মান ও মর্যাদা। এ মহান ইমামের(আ.)-এর কিছু বিশেষ ও নির্দিষ্ট বিধান যেমন: তুরবাতে ইমাম হুসাইন তথা কারবালার মাটি খাওয়া বৈধ, ইমাম হুসাইন(আ.)-এর জিয়ারত পাঠ করা এবং তার জিয়ারতের জন্য কারবালায় যাওয়ার বিশেষ তাগিদ। এমনকি অনেকে এই গুরুত্বারোপ থেকে ইমাম হুসাইন(আ.)-এর জিয়ারতে যাওয়াকে ওয়াজিব মনে করেন। অর্থাৎ যেমনভাবে জীবনে একবার হজ্জে যাওয়া প্রত্যেক সমর্থবান ব্যক্তির জন্য ওয়াজিব তেমনিভাবে যারা একবারও ইমাম হুসাইনের জিয়ারতের জন্য যায় নি তাদের জন্য কারবালায় যেয়ে ইমাম হুসাইন(আ.)-এর জিয়ারত করা ওয়াজিব। এ কারণেই অনেকে ইমাম হুসাইন(আ.)-এর জিয়ারতকেও ওয়াজিব বলে উল্লেখ করেছেন। আর এটা (জিয়ারত ওয়াজিব হওয়া)অন্য কোন পবিত্র ইমাম এমনকি রাসূল(সা.)-এর জিয়ারতের জন্যও বলা হয় নি।
হুজ্জাতুল ইসলাম কায়েম মাকামী বলেন: ইমাম হুসাইন(আ.)-এর বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার কারণেই তার সম্পর্কে এমন গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কেননা ইসলামকে বাচাতে তার ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশী।
ইমাম হুসাইন(আ.)-এর নজিরবিহীন আত্মত্যাগ ও ধৈর্যের কারণেই মহান আল্লাহ তাকে এ বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা দান করেছেন।
আশুরার সত্যতা ইমামের (আ.) চেতলুম তথা চল্লিশায় উদ্ভাসিত হয়
হুজ্জাতুল ইসলাম কায়েম মাকামী বলেন: এসব থেকে বোঝা যায় যে, ইমাম হুসাইন(আ.)-এর জন্য বিশেষ কিছু বিধান থাকাও জরুরী আর তার মধ্যে আরও একটি হচ্ছে প্রতি বছর ইমাম হুসাইন(আ.)-এর চল্লিশার শোকানুষ্ঠান পালন করা। আজ প্রায় চৌদ্দ শত বছর ধরে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা প্রতি বছর এ চল্লিশা পালন করে নিজেদের ধর্মীয় দায়িত্ব সম্পন্ন করছেন।
তিনি বলেন: চল্লিশ সংখ্যাটির বিশেষ গুরুত্ব আছে এবং কোন ঘটনার চল্লিশ দিন অতিবাহিত হওয়ার অর্থ হচ্ছে বিষয়টি তার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আর এ জন্যই ইমাম হুসাইন(আ.)-এর চল্লিশার শোকানুষ্ঠান পালন করে কারবালার ঘটনাকে আবারও পর্যালোচনা করার একটি দারুণ সুযোগ।
মাসুমগণের জিয়ারত, খোদার জিয়ারতের সমতুল্য
হুজ্জাতুল ইসলাম কায়েম মাকামী বলেন: প্রতিটি মানুষের চল্লিশা একবারই পালিত হয়; এক্ষেত্রে তিনি যত বড় মহামানবই হোন না কেন। কিন্তু ইমাম হুসাইন(আ.)-এর বিশেষ মর্যাদা ও কারবালার ঘটনার গুরুত্বকে সামনে রেখে ইমাম হুসাইন(আ.)-এর চল্লিশার শোকানুষ্ঠান প্রতি বছর পালিত হয়।
তিনি বলেন: আপনারা পবিত্র ইমামগণের জিয়ারতের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে মহান আল্লাহকেই জিয়ারত করেন। কেননা মাসূম ইমামগণ আল্লাহর সাথে মিশে একাকার হয়ে গেছেন। আর তাদের রওজা মোবারকও আল্লাহর নূরের মধ্যে নিমজ্জিত। আর আমরা যখন ইমামগনের রওজা জিয়ারত করি তখন মূলত আল্লাহর ইসম(নাম) ও নূরকেই জিয়ারত করি। আর আল্লাহর নাম ও নূর যেহেতু আল্লাহর সাথে একাকার তাই যারা ইমামগণের মাজার জিয়ারত করেন, তারা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহকেই জিয়ারত করেন। বিশেষ করে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর জিয়ারত; কেননা ইমাম হুসাইন(আ.)-এর জিয়ারত সম্পর্কে রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে:
«من زار الحسین بکربلا فقد زار الله فی عرشه»
যে ইমাম হুসাইনকে কারবালায় জিয়ারত করল সে মূলত আল্লাহকে তার আরশে জিয়ারত করল।
হুজ্জাতুল ইসলাম কায়েম মাকামী আরও বলেন: জিয়ারতেরও বিশেষ গুরুত্ব ও দর্শন রয়েছে এবং তার মধ্যে চল্লিশার জিয়ারতের বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। যেমন বছরের কিছু বিশেষ দিন রয়েছে এবং সে দিনে বিশেষ কোন ঘটনা ঘটেছে ১৮ই জিলহজ্জে আল্লাহ তার বান্দাদের কাছ থেকে শপথ নিয়েছেন। চল্লিশার দিনও জিয়ারতের বিশেষ দিন এবং বিশেষ করে ইমাম হুসাইন(আ.)-এর জিয়ারতের বিশেষ দিন।
তিনি বলেন: চল্লিশার গুরুত্ব সম্পর্কে হযরত ইমাম হাসান আসকারী (আ.) বলেছেন: মুমিনের অন্যতম চিহ্ন বা নিদর্শন হচ্ছে চল্লিশার জিয়ারত পাঠ করা।
আরবাইন তথা চল্লিশা হচ্ছে একটি ঐশী মহড়া যা সারা বিশ্বে পালিত হয়
হুজ্জাতুল ইসলাম কায়েম মাকামী বলেন: কারবালার ঘটনা বর্তমানে আর ইরাকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই বরং সারা বিশ্বের মানুষ আজ ইমাম হুসাইন(আ.)-এর চল্লিশার শোকানুষ্ঠান পালন করছে। বিশেষ করে সাদ্দামের পতনের পর থেকে ইরাকসহ সারা বিশ্বের মানুষ কারবালায় উপস্থিত হয়ে শহীদদের নেতা ইমাম হুসাইন(আ.)-এর চল্লিশার শোকানুষ্ঠান পালন করছে। এটা সত্যিই একটি ঐশী মহড়া যা সারা বিশ্বে পালিত হচ্ছে।
তিনি বলেন: এই যে সবাই পায়ে হেটে কারবালায় আসছে এটাই প্রমাণ করে যে, সারা বিশ্ব বর্তমানে কারবালা ও ইমাম হুসাইনের দিকে প্রত্যাবর্তন করছে।
হ্যাঁ, সারা বিশ্ব এখন সত্য তথা ইমাম হুসাইনের দিকে ফিরে আসছে এবং ইমাম হুসাইন(আ.) সেই আত্মত্যাগের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে আজও সত্য পথে হেদায়েত করছেন। আর চল্লিশার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে।
হুজ্জাতুল ইসলাম কায়েম মাকামী বলেন: জিয়ারতে আরবাইনের একাংশে বর্ণিত হয়েছে: «لیستنقذ العباد» ইমাম হুসাইন(আ.) জনগণকে অপমান থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন।
ইসলাম আসার পর মানুষ আবারও নফসের তাড়নায় পড়ে নতুন জাহেলিয়াতের মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিল, যার ফলে ৬১ হিজরির ১০ই মুহররম বিশ্বের সর্বাপেক্ষা যন্ত্রনাদায়ক, মর্মান্তিক ও অমানবিক ঘটনা ঘটে। কিন্তু এই ঘটনার পর মানুষ তাদের ভুল বুঝতে পেরে চেতনা ফিরে পায় এবং সম্মান ও মর্যাদার পথে চলতে শেখে।
source : http://shabestan.net