বিশ্ব-কুদস দিবসের শোভাযাত্রায় কেবল মুসলমানরাই নয়, অনেক অমুসলিম দেশের বিবেকবান অমুসলমানরাও অংশ নিচ্ছেন। কুদস-দিবস এ বাস্তবতা তুলে ধরছে যে, ফিলিস্তিনে ইসরাইলি দখলদারিত্ব ও অপরাধযজ্ঞের অবসান ঘটানো মুসলিম উম্মাহসহ বিশ্ব-জনমতের কাছে এখনও শীর্ষস্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে ব্যাপক গুরুত্ব পাচ্ছে যদিও অনেক মুসলিম ও আরব সরকার এ সংকটকে ছোট ও প্রান্তিক বিষয় হিসেবে তুলে ধরছে।
আবনা ডেস্কঃ মুসলমানদের প্রথম কিবলার শহর বায়তুল মুকাদ্দাসকে ইহুদিবাদী ইসরাইলের দখলদারিত্ব থেকে মুক্ত করতে ঢাকা ও তেহরানসহ বিশ্বের ৮০০'রও বেশি বড় বড় শহরে আজ ইসরাইল-বিরোধী সভা-সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ইসরাইল ও মার্কিন-বিরোধী নানা শ্লোগানে মুখরিত ছিল এসব মিছিল। কোনো কোনো অঞ্চলে ও খোদ ফিলিস্তিনে ইসরাইলের প্রতি প্রকাশ্য সমর্থন ঘোষণাকারী সৌদি সরকারের বিরুদ্ধেও নানা শ্লোগান উচ্চারিত হয়েছে।
নিরস্ত্র ও মজলুম ফিলিস্তিনিদের ওপর প্রায়-নিয়মিত হয়ে পড়া ইসরাইলি গণহত্যা অভিযান বন্ধের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবিও জানানো হয়েছে আজকের নানা সমাবেশ ও মিছিলে। ফিলিস্তিন মুক্তির প্রসঙ্গটি যে এখনও জীবন্ত বরং আগের চেয়েও জোরালো রয়েছে তা আজ আবারও প্রমাণ হল।
এবার এমন সময় বিশ্ব-কুদস দিবস পালন করা হচ্ছে যখন মার্কিন সরকার পূর্ব বায়তুল মুকাদ্দাস তথা জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সম্প্রতি মার্কিন দূতাবাসকে তেলআবিব থেকে এই ঐতিহাসিক শহরে সরিয়ে এনেছে। সব আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন সরকার তার ইহুদিবাদি চেহারাকে আরও স্পষ্ট করে। আর এই লজ্জাজনক ধৃষ্টতার প্রতিবাদে বিক্ষোভরত ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি হানাদার সেনাদের হামলায় কেবল এক দিনেই শহীদ হয়েছে ৬০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি। ফিলিস্তিনিরা জেরুজালেম তথা পূর্ব বায়তুল মুকাদ্দাসকে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ ও রাজধানী বলে প্রচার করে আসছে।
বিশ্ব-কুদস দিবসের শোভাযাত্রায় কেবল মুসলমানরাই নয়, অনেক অমুসলিম দেশের বিবেকবান অমুসলমানরাও অংশ নিচ্ছেন। কুদস-দিবস এ বাস্তবতা তুলে ধরছে যে, ফিলিস্তিনে ইসরাইলি দখলদারিত্ব ও অপরাধযজ্ঞের অবসান ঘটানো মুসলিম উম্মাহসহ বিশ্ব-জনমতের কাছে এখনও শীর্ষস্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ নৈতিক দায়িত্ব হিসেবে ব্যাপক গুরুত্ব পাচ্ছে যদিও অনেক মুসলিম ও আরব সরকার এ সংকটকে ছোট ও প্রান্তিক বিষয় হিসেবে তুলে ধরছে।
কুদস দিবসে বিশ্বের নানা অঞ্চলে ফিলিস্তিনি জাতির প্রতি জনগণের সমর্থন তাদের প্রতি খুব বড় ধরনের নৈতিক সহায়তার উৎস। বিশ্বের মুক্তিকামী জনগণ এ দিনে এটাই বলছেন যে বর্ণবাদী ইসরাইল ৭০ বছর ধরে ফিলিস্তিনকে জবর-দখলের নাগপাশ বন্দি করে রাখলেও আমরা মজলুম এই জাতির মুক্তি সংগ্রামের সমর্থক।
মরহুম ইমাম খোমেনী কুদস দিবসকে ইসলামের দিবস বলে ঘোষণা করেছিলেন। মুসলমানদের জন্য এটা খুবই লজ্জাজনক যে তাদের অনৈক্যের কারণে মুসলমানদের প্রথম কিবলা এখনও ইসরাইলের অবৈধ দখলে রয়েছে। অথচ ইমাম খোমেনীর ভাষায় মুসলমানরা বা কেবল আরবরা যদি এক বালতি করেও পানি ঢালে তবে ইসরাইল তথা ইসরাইলি দখলদাররা ভেসে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। ফিলিস্তিন ও কুদসের প্রসঙ্গটি মুসলিম বিশ্বের ঐক্যের বড় মাধ্যম হওয়া সত্ত্বেও সেবাদাস আরব সরকারগুলোর ইসরাইল ও মার্কিন তোষণ নীতি এ পথে এখনও বড় বাধা হয়ে বিরাজ করছে।
ফিলিস্তিনকে দখলমুক্ত করা ও মুসলমানদের প্রথম কিবলা উদ্ধারে ব্যর্থতা জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর এবং বিশেষভাবে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা-ওআইসি আর আরব লিগের মত বড় বড় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর অকার্যকারিতা তুলে ধরছে।
ইসরাইলি শাসকগোষ্ঠী গণহত্যা ও যুদ্ধ-অপরাধসহ যেসব অপরাধ করে যাচ্ছে তাতে আন্তর্জাতিক আদালতে তাদের বিচার হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু জারজ-রাষ্ট্র ইসরাইল তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি মার্কিন সরকারের সর্বাত্মক অন্ধ সহায়তা ও মার্কিন সরকারের লেজুড় ব্রিটেনসহ কিছু পশ্চিমা সরকার এবং মুসলিম ও আরব সেবাদাস সরকারগুলোর একই ধরনের সহায়তা পেয়ে আসছে বলেই দিনকে দিন তেল-আবিবের দম্ভ আর বর্বরতা বেড়েই চলেছে।
সংগ্রামী ফিলিস্তিনি নেতা ইসমাইল হানিয়া সম্প্রতি বলেছেন, মার্কিন সরকারের নেতৃত্বাধীন কিছু বিজাতীয় শক্তি ন্যায়বিচারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ইসরাইলি জল্লাদগুলোকে সর্বাত্মক সহায়তা দিচ্ছে।
ফিলিস্তিনিরা বস্তুগত ও আইনি সহায়তা থেকে বঞ্চিত হলেও তারা বিশ্ব-কুদস দিবস ও বিপর্যয় দিবসের মত দিনগুলোতে ব্যাপক নৈতিক সমর্থন পাচ্ছে বলে আতঙ্কিত ইসরাইলি দখলদার গোষ্ঠী। আর তাই গত এক বছর ধরে ফিলিস্তিনিদের স্বদেশে ফেরার শান্তিপূর্ণ গণ-বিক্ষোভকে পৈশাচিক কায়দায় দমনের চেষ্টা করেছে ইহুদিবাদী দানব-সরকার। তাই গত ত্রিশে মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইলি হামলায় শিশু ও নারীসহ শহীদ হয়েছে প্রায় ১৫০ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার।
কুদস-দিবসের প্রাক্কালে ইহুদিবাদী দখলদার সেনারা পবিত্র আল-আকসা মসজিদের চারদিক ঘিরে রেখেছে এবং এ অঞ্চলকে সেনা-নিবাসে পরিণত করেছে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) ইসরাইলি হানাদাররা হামলা চালিয়ে বহু ফিলিস্তিনি মুসল্লিকে আহত করেছে। আর নির্বিচার গ্রেফতার তো আছেই। কিন্তু দেখা গেছে ইসরাইল যতই দমন অভিযান জোরদার করছে ফিলিস্তিনি জাতির সংগ্রাম ও মনোবল ততই ইস্পাত-কঠিন হয়ে উঠছে।
ফিলিস্তিনি সংগ্রামীরা সম্প্রতি তাদের শরণার্থীদের স্বদেশে ফেরত আনার অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে গাজা ও পশ্চিম তীরে অভূতপূর্ব শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের মাধ্যমে খালি হাতে যে বীরত্ব দেখিয়েছেন তা বিশ্বব্যাপী মুক্তিকামী মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছে। ফলে আতংক বাড়ছে ইসরাইলি শাসকগোষ্ঠী ও তার তাবেদার এবং সহযোগী সরকারগুলোর মধ্যে।
মার্কিন সরকার ফিলিস্তিন সংকট বিষয়ে এতকাল নিজেকে নিরপেক্ষ বলে দাবি করে আসলেও মুসলমানদের প্রথম কিবলার শহরকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণাকে দূতাবাস স্থানান্তরের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করায় তার সেই দাবি হাস্যকর হয়ে পড়েছে। তাই এটা স্পষ্ট কথিত আপোষকামী ফিলিস্তিনি ও আরব নেতাদের সামনেও ন্যায্য অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে সংগ্রামের পথ ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা নেই এবং নেই শান্তি বা সংলাপের নামে বিশ্বাসঘাতকতা বজায় রাখার কোনো অজুহাত।
ইরাক, ইরান, সিরিয়া ও লেবাননসহ কোনো কোনো অঞ্চলে কুদস দিবসের একটি জনপ্রিয় শ্লোগান হল: খাইবার খাইবার ইয়া ইয়াহুদ জাইশু মুহাম্মাদ সাওফাইয়ায়ুদ'। অর্থাৎ, হে ইহুদিরা সাবধান! খাইবারের পরাজয়ের কথা স্মরণ করো, মুহাম্মাদ-সা.'র সেনারা শিগগিরই ফিরে আসছেন! খাইবার অঞ্চলটি ছিল মদিনার অদূরে। কিন্তু আজ মহানবীর (সা) মক্কা ও মদিনাসহ গোটা হিজাজই ইহুদিবাদীদের সহযোগী বা সেবাদাস সরকারের কর্তৃত্বাধীনে রয়েছে। #