ইমাম রেজা (আ.) নিজ শাহাদাতের সংবাদ দিয়েছিলেন / যেভাবে শহীদ হন ইমাম (আ.) / ইমাম (আ.) এর হত্যায় মা'মুনের উদ্দেশ্য / ইমাম (আ.) এর সর্বশেষ কথা / শাহাদাত পরবর্তী ঘটনা...
আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা আবনা'র সাংস্কৃতিক বিভাগ :
১৪ খণ্ডের এ'লামুল হেদায়াহ' গ্রন্থটি ফার্সি, ইংরেজী, উর্দু, তুর্কি (ইস্তাম্বুলি) ও মালয়ুসহ বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে; আহলে বাইত (আ.) বিশ্বসংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থসমূহের অন্যতম এ গ্রন্থ। লেখক গ্রন্থটিতে বিশ্বস্ত শিয়া ও সুন্নি সূত্র হতে ১৪ মাসুম (আ.) এর জীবনীর উপর আলোকপাত করেছেন।
এ গ্রন্থের ১০ খণ্ড অষ্টম ইমাম হযরত আলী ইবনে মুসা আর-রেজা (আ.) এর উপর রচিত হয়েছে। আগামীতে যা কিছু আপনারা অধ্যয়ন করবে তা ঐ গ্রন্থ হতে ইমাম রেজা (আ.) এর শাহাদাত সম্পর্কে সংকলিত কিছু বিষয়।
নিজ শাহাদাতের সংবাদ দিয়েছিলেন ইমাম (আ.)
মানব ইতিহাসে এমন অনেক পরহেজগার ও তাকওয়াবান বান্দার দৃষ্টান্ত রয়েছে যারা স্বপ্ন বা অন্য কোন মাধ্যমে তাদের জীবনের সমাপ্তি সম্পর্কে আগাম সংবাদ লাভ করেছেন। এমনকি তারা তাদের মৃত্যুর মাস, দিন ও সময় সম্পর্কেও আগাম সংবাদ দিয়েছেন। সুতরাং যদি সাধারণ একজন মানুষের মর্যাদার এমন উঁচু পর্যায়ে পৌঁছুতে পারে তবে এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই যে, নিষ্পাপ ইমামগণ (আ.) জানবেন যে, তারা কবে, কোথায় এবং কিভাবে পৃথিবী থেকে বিদায় নেবেন।
ইমাম রেজাও (আ.) ছিলেন নিষ্পাপ ইমামদের একজন। অন্যান্য ইমামদের ন্যায় তিনিও এক মুহুর্তের জন্যও মহান আল্লাহ্ হতে গাফিল হননি। পাশাপাশি ঐশী ইলহাম এবং যে সকল রেওয়ায়েত তার সম্মানিত পূর্বপুরুষ মারফত হযরত মহানবী (স.) হতে শুনেছেন তারই ভিত্তিতে তিনি নিজের শাহাদাতের সময় ও স্থান এমনকি দাফনের স্থানটি সম্পর্কেও অবগত ছিলেন। তিনি এ বিষয় সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে ইঙ্গিত করেছেন। যেমন :
* একদা ‘হারুনুর রশিদ' মসজিদুল হারামের একটি দরজা দিয়ে বাইরে আসলো এবং ইমাম রেজা (আ.) অপর একটি দরজা দিয়ে। এ সময় তিনি বললেন : ‘বাড়ীগুলো কতই না দূরে আর সাক্ষাত কতই না নিকটে। অল্পদিনের মধ্যেই আমি এবং সে তুসে (ইরানের একটি শহর) এক স্থানে একত্রিত হব।' [উয়ুনু আখবারির রেজা, খণ্ড ২, পৃ. ২১৬; আ'লামুল ওয়ারা খণ্ড ২, পৃ. ৫৯ এবং আল-ইত্তিহাফ বিহুব্বিল আশরাফ, পৃ. ১৫৮ এর উদ্ধৃতি দিয়ে কাশফুল গাম্মাহ, খণ্ড ৩, পৃ. ১০৫।]
* যখন হারুন মদিনায় মসজিদুন নাবী'তে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি) খোতবা পড়ছিলো, ইমাম রেজা (আলাইহিস সালাম)ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন : ‘তোমরা দেখতে পাবে আমাকে এবং তাকে (হারুন) একই ঘরে দাফন করা হবে।' [উয়ুনু আখবারির রেজা, খণ্ড ২, পৃ. ২১৬; কাশফুল গাম্মাহ, খণ্ড ৩, পৃ. ৯৩; আ'লামুল ওয়ারা খণ্ড ২, পৃ. ৫৯ ও আল-ইত্তিহাফ বিহুব্বিল আশরাফ, পৃ. ১৫৮।]
* ইবনে হাজার লিখেছেন : তিনি (ইমাম রেজা আ.) এ কথা বলতেন যে, তিনি ‘মা'মুনের পূর্বে মারা যাবেন এবং তাকে হারুনের পাশে দাফন করা হবে। তাঁর মৃত্যুর পর তাই ঘটেছিল।' [আস-সাওয়ায়েকুল মুহাররেকাহ, পৃ. ৩০৯।]
* মা'মুন ইমাম রেজা (আলাইহিস সালাম) কে খোরাসানে তলব করার পর যখন তাকে মদিনা থেকে খোরাসানের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন তিনি স্বীয় আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারকে একত্রিত করে তাদের উদ্দেশ্যে বললেন : আমার জন্য কান্নাকাটি ও বিলাপ করো। অতঃপর কিছু অর্থ তাদের মাঝে বিতরণ করে বললেন : ‘আমি আর আমার পরিবারের নিকট ফিরে আসবো না।' [উয়ুনু আখবারির রেজা, খণ্ড ২, পৃ. ২১৮ ও আ'লামুল ওয়ারা, খণ্ড ২, পৃ. ৫৯-৬০।]
যেভাবে শহীদ হলেন
যেভাবে ইমাম রেজা (আ.) পূর্বেই স্বীয় অনুসারীদেরকে অবগত করেছিলেন সেভাবেই মা'মুন কর্তৃক বিষপ্রয়োগে শহীদ হন।
ইমাম রেজা (আলাইহিস সালাম) এর ওফাত/শাহাদাত সম্পর্কে যে সকল রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে সেগুলোতে মতপার্থক্য পরিলক্ষিত।
প্রথম দলটি ইমাম (আলাইহিস সালাম) এর ওফাতকে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং অপর দলটি লিখেছেন, বিষপ্রয়োগে তাঁর শাহাদাত হয়েছিল। অবশ্য অধিকাংশ রাবি (হাদীস বর্ণনাকারী) ও ঐতিহাসিক দ্বিতীয় মতটিকে গ্রহণ করেছেন।
এখানে ঐ সকল রেওয়ায়েতের কয়েকটি উল্লেখ করবো যাতে বিষপ্রয়োগে ইমাম (আলাইহিস সালাম) এর শাহাদাতের বিষয়টি স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
* সালাহুদ্দীন সাফাদী বলেছেন : ‘মা'মুনের সাথে তার শেষ পরিণতি ছিল এমন যে, মা'মুন তাকে বিষাক্ত ডালিম খেতে দিয়েছিল... যাতে এ কর্মের মাধ্যমে সে বনি আব্বাসের মনে সান্ত্বনা দিতে পারে।' [আল-ওয়াফি বিল ওয়াফিয়াত, খণ্ড ২২, পৃ. ২৫১।]
* ইয়াকুবি এ সম্পর্কে বলেছেন : ‘বলা হয়, আলী ইবনে হিশাম তাকে বিষাক্ত আনার খাইয়েছিল।' [তারিখে তাবারী, খণ্ড ৫, পৃ. ১৪৮ ও রুইদাদহায়ে সালে ২০৩।]
* ইবনে হাব্বান স্বীয় গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন : ‘তুস (নগরীতে) মা'মুন যে পানীয় আলী ইবনে মুসা আর-রেজা [আ.] কে পান করিয়েছিল তা পান করে ঐ স্থানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।' [আস-সিকাত, খণ্ড ৪, পৃ. ৪৫৭।]
* এ বিষয়ে কিছু কথা উল্লেখ করার পর ‘শাহাবুদ্দীন নুভাইরী' লিখেছেন : ‘আর বলা হয়েছে, মা'মুন বিষাক্ত আঙ্গুর প্রদানের মাধ্যমে তাকে বিষ প্রয়োগ করেছিল, কিন্তু কেউ কেউ এটাকে অসম্ভব বলে প্রত্যাখ্যন করেছেন।' [নিহায়াতুল এরাব, খণ্ড ২২, পৃ. ২১০]
* ‘কালকাশান্দি' হতেও এ সম্পর্কে রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন : ‘বলা হয় যে, বিষাক্ত ডালিম খাওনোর মাধ্যমে তাকে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছিল।' [মায়াসুরুল ইনাফাহ ফি মায়ালিমিল খিলাফাহ, খণ্ড ১, পৃ. ২১১।]
* মা'মুনই ইমাম (আ.) কে বিষপ্রয়োগ ও হত্যা করেছে বলে তুসের জনগণ মনে করত। খোদ মা'মুনই এ বিষয়টি স্বীকার করেছে যে, জনগণ তার সম্পর্কে এমন কথা বলতো। আর এ কারণেই বিষক্রিয়া শরীরে ছড়িয়ে পড়ার পর এবং শাহাদাতের পূর্বে সে ইমাম (আলাইহিস সালাম) এর নিকট এসে বলে : হে আমর নেতা! জানি না যে, কোন মুসিবত আমার জন্য সবচেয়ে কঠিন ও অপ্রিয় হবে; আপনাকে হারানোর বেদনা এবং আপনার পরের একাকীত্ব নাকি জনগণের অপবাদ; তারা আমাকেই আপনার হত্যাকারী হিসেবে আখ্যায়িত করবে?!' [উয়ুনু আখবারির রেজা, খণ্ড ২, পৃ. ২৪১।]
* ইমাম রেজা (আলাইহিস সালাম) এর শাহাদাতের একদিন অতিবাহিত হওয়ার পর জনগণ সমবেত হয়ে বলছিল : ‘এ (মামুন)-ই তাকে হত্যা করেছে।' [প্রাগুক্ত]
কেন ইমাম (আ.) কে হত্যা করেছিল মা'মুন
বনি আব্বাসের খেলাফতের সামনে আহলে বাইত (আ.) কে সবচেয়ে বড় হুমকি বলে মনে করতো মা'মুন। আর তাই ইমাম রেজা (আ.) কে নিজের ভবিষ্যত উত্তরাধিকারী হিসেবে নিযুক্ত করার মাধ্যমে ইমাম (আ.) এর জনপ্রিয়তা নষ্ট করতে এবং তাঁর সম্পর্কে জনগণের মনে ঘৃণার জন্ম দেয়ার অপচেষ্টা চালিয়েছিল। সে বনি আব্বাসের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে বলেছিল : ‘আমি জানি যে, তার (ইমাম রেজা) বিষয়টিকে হাল্কাভাবে ধরা কোন অবস্থাতেই ঠিক নয়; কিন্তু আস্তে আস্তে তার মর্যাদা ও সম্মানে হ্রাস ঘটাতে হবে, যাতে মানুষ তাকে এমনভাবে দেখতে শুরু করে যে, তিনি ইমামতের পদের জন্য যোগ্য নন। আর তখনই তার থেকে পরিত্রাণ লাভ এবং তার পক্ষ থেকে যে হুমকির আমরা সম্মুখীন তার বিহিতের সন্ধানে যাব। [ফারায়েদুস সামতাইন, খণ্ড ২, পৃ. ২১৪-২১৫।]
‘আবু সালত হারভি'র উদ্ধৃতি দিয়ে, ইমাম রেজা (আ.) কে ভবিষ্যত উত্তরাধিকারী হিসেবে নিযুক্ত করার কারণ ‘আহমাদ বিন আলী আনসারী' এভাবে বর্ণনা করেছেন : ভবিষ্যত উত্তরাধিকারীর পদটি তাকে দান করেছিল যাতে জনগণ মনে করে যে, ইমাম দুনিয়ালোভী ও দুনিয়ার মোহে আসক্ত। আর এভাবে যেন জনগণের নিকট তাঁর মর্যাদা ও সম্মানে হ্রাস ঘটে। মা'মুন তার এ কূটকৌশলে ব্যর্থ হয়, পাশাপাশি ফল হয় উল্টো। ইমামের সম্মান ও মর্যাদা জনগণের নিকট আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং আগের চেয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন ইমাম। এ পর্যায়ে মা'মুন [আরো একটি কূটকৌশলের আশ্রয় নেয়] অন্য শহর থেকে কালামশাস্ত্রে দক্ষ ব্যক্তিদেরকে ডেকে পাঠায়। তার আশা ছিল তাদের মধ্যে কেউ না কেউ ইমাম রেজা (আ.) কে বিতর্ক ও আলোচনা পরাজিত করতে সক্ষম হবে। আর ফলাফল এমন হলে আলেমদের মাঝে তাঁর অবস্থান নড়বড়ে হয়ে যাবে এবং জনগণের নিকট পরাজিত ও অদক্ষ বলে তিনি পরিচিত হবেন [আর এটাই ছিল মা'মুনের চূড়ান্ত উদ্দেশ্য]। সেদিন দরবারে ইহুদী, খ্রিষ্টান, মাজুসী, সায়েবী, ব্রাক্ষ্মন, মুলহিদ ও দেহরী সম্প্রদায়সহ অন্যান্য ইসলামি মাযহাবের দক্ষ আলেমরা ইমামের সাথে বিতর্ক ও আলোচনা শুরু করে। কিন্তু ইমাম রেজা (আ.) নিজের অখণ্ডনীয় ও স্পষ্ট যুক্তির মাধ্যমে তাদের সকলকে পরাজিত করলেন। এমতাবস্থায় জনগণ বলতে লাগলো আল্লাহর কসম তিনি খেলাফতের জন্য মা'মুন অপেক্ষা অধিক যোগ্য। গুপ্তচররা জনগণের এ সকল কথাবার্তা মা'মুনের কানে পৌঁছে দিত, আর সে ইমাম (আ.) এর উপর রাগান্বিত হত। ফলে ইমামের উপর তার বিদ্বেষ দিনের পর দিন বাড়তে থাকে। ইমাম রেজা (আ.) সত্যের পক্ষ নিয়ে মা'মুনের সাথে কথা বলার সময় কখনও ছাড় দিয়ে কথা বলতেন না। আর তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে যে সকল উত্তর তিনি মা'মুনকে দিতেন তা ছিল মা'মুনের অপছন্দ। এটা মা'মুনের মনে বিদ্যমান ক্রোধ ও বিদ্বেষকে বাড়িয়ে দেওয়ার অন্যতম কারণ ছিল। কিন্তু মা'মুন নিজের বিদ্বেষ কখনও প্রকাশ করতো না। অবশেষ মা'মুন ইমামের মর্যাদায় হ্রাস ঘটাতে এবং জনপ্রিয়তা কমাতে ব্যর্থ হয়ে তাঁকে বিষপ্রয়োগ করে হত্যা করে। [উয়ুনু আখবারির রেজা, খণ্ড ২, পৃ. ২৩৯-২৪০।]
যেভাবে এর পূর্বেও উল্লেখ করা হয়েছে, ইমাম (আ.) সর্বদা চাইতেন যেন মা'মুন তাকে নিজের ভবিষ্যত উত্তরাধিকারী হিসেবে নিযুক্ত না করে। কেননা তিনি জানতেন যে, মা'মুনের এ পদক্ষেপে একটি দল ক্রোধান্বিত হবে। ইব্রাহিম সুলী এ সম্পর্কে বলেছেন : ‘আল্লাহর কসম, এ বিষয়টি (উত্তরাধিকারী নির্বাচন) ইমাম রেজা (আ.) কে ঐ পরিস্থিতির সম্মুখীন করেছিল [যে, মা'মুন তাঁকে শহীদ করে দেয়]।' [নাসরুদ দুরার, খণ্ড ১, পৃ. ৩৬৩।]
ইমাম রেজা (আ.) কে নিজের ভবিষ্যত উত্তরাধিকারী নির্বাচন করে মামুন নিজ উদ্দেশ্যে পৌঁছুতে চেয়েছিল। সে তার উদ্দেশ্যে তো পৌঁছায়নি বরং সে একটি ফেতনা ও বিশৃখংলার মুখোমুখি হয় যা মা'মুনের হুকুমতের পতন ঘটাতে আব্বাসীয়রা সৃষ্টি করেছিল।
যেভাবে ইমাম (আলাইহিস সালাম) বলেছিলেন, মামুনের কিছু কিছু মন্ত্রী ও সেনাপতি মনে মনে ইমাম রেজা (আ.) এর ঘৃণা করে এবং তাঁর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। কিন্তু বিষয়টি এ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল না বরং তারা ইমামকে গালমন্দ এবং তার বিরুদ্ধে গোয়েন্দাবৃত্তি করতে লাগলো। অবশেষে তাদের অশুভ এ চেষ্টা কার্যকর হল এবং মা'মুন ইমাম রেজা (আ.) কে বিষপ্রয়োগ করলো। [বিস্তারিত জাতনে দেখুন, আল-আওয়ালেম, পৃ ৪৮৮-৪৯৮।]
মা'মুনের বাগদাদ যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং দারুল খেলাফা'কে বাগদাদে স্থানান্তরের সিদ্ধান্তের পর ইমাম রেজা (আ.) শহীদ হন। আর ইমাম রেজা (আ.) এর হত্যার নেপথ্যে মা'মুনের প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার সপক্ষে এটা অন্যতম দলীল। কেননা ইমাম রেজা (আ.) এর ভবিষ্যত উত্তরাধিকারীর পদে বহাল থাকলে আব্বাসীয়রা মামুনের বিরোধিতা অব্যাহত রাখতো। আর আব্বাসীয়দের সান্ত্বনা দিতে মা'মুন তাদের উদ্দেশ্যে যে পত্র লিখেছিলে তাতে এ বিষয়টি উল্লেখ করেছিল যে, ‘আমি আলী ইবনে মুসা আর-রেজা [আ.] কে নিজের ভবিষ্যত উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত করায় আপনারা অসন্তুষ্ট। এখন সে মারা গেছে, অতএব, আমার নির্দেশ পালন করুন।' [আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়া, খণ্ড ১০, পৃ. ২৭২।]
ইমাম (আ.) এর শেষ কথা
ইমাম রেজা (আ.) কে মা'মুন ডালিম -অন্য একটি বর্ণনায় আঙ্গুর- খাওয়ানের পর ইমামের চেহারায় মৃত্যুর চিহ্ন ফুটে ওঠে। বর্ণিত হয়েছে ইমাম (আ.) মৃত্যুর পূর্বে সর্বশেষ যে বাক্য উচ্চারণ করেছিলেন তা ছিল পবিত্র কুরআনের এ আয়াতটি : ((قُل لَّوْ كُنتُمْ فِي بُيُوتِكُمْ لَبَرَزَ الَّذِينَ كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقَتْلُ إِلَي مَضاجِعِهِم)) [‘....তুমি বল, তোমরা যদি নিজেদের ঘরেও থাকতে তবুও তারা অবশ্যই বেরিয়ে আসত নিজেদের অবস্থান থেকে যাদের মৃত্যু লিখে দেয়া হয়েছে...'। (আলে ইমরান : ১৫৪)] এবং এ আয়াতটি পড়েছিলেন : ((وَكَانَ أَمْرُ اللَّهِ قَدَرًا مَّقدُورًا)) [ ‘...আল্লাহর আদেশ নির্ধারিত, অবধারিত'। (আহযাব : ৩৮)]
ইমাম কর্তৃক এ আয়াতদ্বয়ের তেলাওয়াত আমাদেরকে ইমাম হুসাইন (আ.) এর শাহাদাতের মুহুর্তকে স্মরণ করিয়ে দেয়। কারবালায় কতলগাহ (যেখানে তার শিরোচ্ছেদ করা হয়েছিল) তে ঐ চরম বিপদের মুহুর্তের মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ বাক্যগুলো বলেছিলেন তিনি :
إلهي رضاً برضاك، تسليماً لأمرك، صَبراً عَلى قَضائِك، یا رَبِّ لا معبود سواك، يا غياثَ المستغيثين
‘হে প্রতিপালক! আমি তোমার সন্তুষ্টিতে সন্তুষ্ট এবং তোমার নির্দেশের অনুগত, তোমার নির্ধারিত বিষয়ের সম্মুখে আমি ধৈর্য্যধারণ করবো, হে প্রতিপালক তুমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই! হে আশ্রয়হীনের আশ্রয়স্থল...!
শাহাদাতের পর
চক্রান্তে সফল মামুন কাঁদতে কাঁদতে ইমামের শিয়রে এসেছিল। খালি পায়ে ইমামের জানাযায় অংশগ্রহণ করে বলছিলো : ‘হে ভাই! নিশ্চয়ই তোমার মৃত্যুতে ইসলাম অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন এবং যা কিছু আমি তোমার জন্য নির্ধারণ করেছিলাম (ভবিষ্যত উত্তরাধিকার), আল্লাহর নির্ধারিত বিষয় তার অগ্রগামী হয়েছে। অতঃপর সে তার বাবা হারুনের করব খনন করে ইমাম রেজা (আ.) এর পবিত্র দেহকে সেখানে দাফন করে দেয়।' [উয়ুনু আখবারির রেজা, খণ্ড ২, পৃ. ২৪১।]
অধিকাংশ বর্ণনাকারী ও ঐতিহাসিকদের মতে হযরত আলী ইবনে মুসা আর-রেজা আলাইহিমাস সালাম ২০৩ হিজরীর সফর মাসের শেষ দিনে শহীদ হয়েছিলেন।
فسلام علیه یوم ولد ویوم استشهد ویوم یبعث حیاً
‘তার প্রতি শান্তি-যেদিন সে জন্মগ্রহণ করে এবং যেদিন মৃত্যুবরণ করবে এবং যেদিন জীবিতাবস্থায় পুনরুত্থিত হবে।' [সূরা মারিয়াম : ১৫]
***(সূত্র : এ'লামুল হেদায়াহ গ্রন্থ হতে সংকলিত)***
source : www.abna.ir