ইমাম কাযিম (আ.) এর সন্তানদের মধ্যে ইমাম রেজা (আ.) এর পর শ্রেষ্ঠত্বের দিক থেকে হযরত ফাতেমা মা'সুমা (সা আ.) সমতুল্য কেউ ছিল না। তার মর্যাদা ও ফজিলত বর্ণনার ক্ষেত্রে এতটুকু বলাই যথেষ্ট হবে যে, যখন ইমাম সাদিক (আ.) এর সম্মুখে কোম শহরের বিষয়ে কথা উঠতো তখন তিনি বলতেন : ‘... আমার সন্তানদের মধ্যে হতে একজন নারী সন্তানকে সেখানে দাফন করা হবে, যে হবে মুসার কন্যা এবং যার নাম হবে ফাতেমা। তার শাফায়াতের মাধ্যমে সকল শিয়াদের বেহশতে প্রবেশ করবে'।
ফাতেমা-এ সানীকে (সা. আ.) ‘মাসুমা' উপাধী কে দিয়েছিলেন
আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা আবনা :
ফাতেমা-এ সানী, হযরত ইমাম মুসা ইবনে জাফার (আ.) এর কন্যা। তিনি শিয়াদের মাঝে কারিমায়ে আহলে বাইত (আ.) নামে সুপ্রসিদ্ধ। এছাড়া তিনি তাহেরাহ, হামিদাহ, বিররাহ, রাশিদাহ, তাকিয়াহ, নাকিয়াহ, সাইয়্যিদাহ, রাদ্বিয়াহ, উখতুর রেদ্বা, সিদ্দিকাহ, শাফিয়াহ ইত্যাদি উপাধীর অধিকারী। তার মায়ের নাম ‘নাজমা'। তিনি ১৭৩ হিজরী'র ১লা যিলক্বদ মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন।
ফাতেমায়ে সানী কে?
হযরত ফাতেমা (সা. আ.) যখন ১০ বছরের ছিলেন, তখন তাঁর সম্মানিত পিতা ইমাম মুসা ইবনে জাফার (আ.) শহীদ হন। এর পর হতে পিতার ওসিয়ত অনুযায়ী এ মহিয়সী এবং ইমামের অপর সন্তানাদির অবিভাবকত্ব ইমাম রেজা (আ.) এর উপর অর্পিত হয়।
হযরত ফাতেমা মাসুমা (সা. আ.) ছাড়াও ইমাম মুসা ইবনে জাফার (আ.) এর আরো কন্যা ছিলেন। তাদের মধ্যে শুধুমাত্র তিনিই ছিলেন বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। কেননা তিনি তাঁর পিতামহ হযরত যাহরা (সা. আ.) এর ন্যায় জ্ঞান, আমল, সম্মান, পবিত্রতা ও পরিপূর্ণতা অর্জনের ক্ষেত্রে অন্য সবার চেয়ে অগ্রগামী ছিলেন। নিঃসন্দেহে হযরত ফাতেমা মাসুমা (সা. আ.), তাঁর পিতামহের স্বরূপ ছিলেন। বিশেষতঃ তাঁরা উভয়ই কষ্টের মাঝে দিনাতিপাত করেছেন এবং উভয়েই অল্পদিনের জন্য পৃথিবীর মেহমান ছিলেন, আর দুজনেরই নাম ছিল ফাতেমা।
মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (স.), স্বীয় কন্যা হযরত ফাতেমা যাহরা (সা. আ.) এর সুউচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে তাঁর উপস্থিতিতে বা অনুপস্থিতিতে বহুবার উল্লেখ করেছেন যে, ‘তোমার বাবা তোমার উপর উত্সর্গ হোক', ‘তাঁর বাবা তাঁর উপর উত্সর্গ হোক'। হযরত মাসুমা (সা. আ.) এর পিতা হযরত ইমাম কাযেম (আ.)ও তাঁর সম্পর্কে একই ধরণের বাক্য ব্যবহার করেছেন।
একদা শিয়াদের একটি দল তাদের প্রশ্নের উত্তর গ্রহণের জন্য মদিনায় আসলো। কিন্তু ইমাম (আ.) সফরে থাকায় তারা বাধ্য হয়ে ইমামের সাথে সাক্ষাত না করেই প্রত্যাবর্তনের সিদ্ধান্ত নিল। এ কারণে তারা তাদের প্রশ্নগুলো লিখে ইমাম (আ.) আর পরিবারের এক সদস্যদের কাছে দিয়ে দিল, যাতে পরবর্তী সফরে এসে প্রশ্নগুলোর উত্তর নিয়ে যেতে পারে। বিদায় নেওয়ার সময় তারা দেখলো যে, হযরত মাসুম (সা. আ.) তাদের সকল প্রশ্নের উত্তর লিখে প্রস্তুত করেছেন। তারা অত্যন্ত খুশী হল এবং ঐ উত্তর পত্রটি গ্রহণ করলো। ঐ সময় হযরত মাসুমার বয়স ছিল ৬ বছর।
ফেরার পথে পথিমধ্যে ঐ দলটির সাথে ইমাম কাযিম (আ.) এর সাক্ষাত হয়, তারা তখন ইমাম (আ.) কে ঘটনাটি খুলে বলে। ইমাম (আ.) ঐ উত্তরপত্র আনতে বললেন। অতঃপর তিনি তা পড়ে বুঝতে পারলেন যে, তার কন্যার লেখা সকল উত্তরই সঠিক। তিনি স্বীয় কন্যার প্রশংসা করে তার উত্তর সঠিক হওয়ার কথা জানালেন, অতঃপর ৩ বার বললেন : ‘তার বাবা তার উপর উত্সর্গ হোক'।
আশ্চায্যজনক এ ঘটনা হতে এ বিষয়টিই স্পষ্ট হয় যে, হযরত মাসুমা (সা. আ.) হযরত ফাতেমা যাহরা (সা. আ.) এর ন্যায় ‘আলেমাহ গাইরু মুয়াল্লিমাহ' (যে নারী কোন শিক্ষকের নিকট হতে শিক্ষা গ্রহণ ছাড়াই শিক্ষিত হয়) ছিলেন এবং শৈশব হতে বিশেষ জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন।
হযরত মাসুমাহ (সা. আ.) এর ইসমাতের বিষয়ে কয়েকটি প্রশ্ন
রেজাল শাস্ত্রবিদদের মতানুযায়ী, ইমাম কাযেম (আ.) এর সন্তানদের মধ্য হতে ইমাম রেজা (আ.) এর পর মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের দিক হতে হযরত মাসুমা (সা. আ.) এর সমতুল্য কেউ ছিল না। তার মর্যাদা প্রমাণের লক্ষ্যে এতটুকু বলা যথেষ্ট যে, একদা ইমাম সাদিক (আ.) এর সম্মুখে কোম নগরী'র কথা উঠলে তিনি বলেন :
«الا وان قم الکوفه الغیره، الا ان الجنه ثمانیه ابواب، ثلاثه منها الی قم، نقبض فیها امراه هی من ولدی و اسمها فاطمه بنت موسی، و تدخل بشفاعتها الجنه باجمعهم». 216
অনুবাদ : ‘কোম (নগরী) হচ্ছে ছোট কুফা (নগরী)। বেহেশতের ৭টি দরজা রয়েছে যাদের মধ্য হতে ৩টি দরজা কোমের দিকে উন্মুক্ত করা, আমার সন্তানদের মধ্যে এক মহিয়সী সেখানে দাফন হবে, যে হবে মুসা'র [সপ্তম ইমাম] সন্তান এবং তাঁর নাম হবে ফাতেমা। তার শাফায়াতে সকল শিয়া বেহেশতে প্রবেশ করবে'।
শাফায়াত এমন একটি মর্যাদা যা সাধারণ কোন নারীকে প্রদান করা হয়নি। ইমাম রেজা (আ.) হতে বর্ণিত হযরত ফাতেমা মাসুমা (সা. আ.) এর যেয়ারত নামার শেষাংশে এ সত্য বিষয়ের প্রতি ইশারা করা হয়েছে যে, ‘হে ফাতেমা জান্নাত লাভের জন্য আমাদেরকে শাফায়াত কর, কেননা মহান আল্লাহর নিকট তোমার জন্য রয়েছে বিশেষ মর্যাদা ও স্থান'।
ইমাম মুসা কাযিম (আ.) এর কন্যা হযরত ফাতেমা (সা. আ.) এর অন্যতম প্রসিদ্ধ উপাধী হচ্ছে ‘মাসুমা' (নিষ্পাপ)। এখানে এ প্রশ্ন জাগে যে, এ উপাধীর কারণে তিনি কি নিষ্পাপ? উত্তরটি অবশ্যই হ্যাঁ সূচক। কেননা যেভাবে রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে, হযরত ইমাম আলী ইবনে মুসা রেজা (আ.) বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি কোম নগরীতে মাসুমা'কে যেয়ারত করবে, সে যেন আমাকে যেয়ারত করলো'।
ইমাম রেজা (আ.) এ রেওয়ায়েতে দু'টি বিষয় বর্ণনা করেছেন : প্রথমতঃ তাঁকে ‘মাসুমা' (নিষ্পাপ) উপাধীতে ভূষিত করেছেন। দ্বিতীয়তঃ তাঁর যেয়ারতকে নিজের যেয়ারত বলে আখ্যায়িত করেছেন তথা নিষ্পাপ ইমামের যেয়ারত বলে আখ্যায়িত করেছেন। যেহেতু ইমাম (আ.) এর কথা উদ্ভট ও মিথ্যা এবং অতিরঞ্জন হতে পবিত্র তাই ইমাম (আ.) এর এ কথা হযরত ফাতেমা মাসুমা (সা. আ.) এর নিষ্পাপত্বের ক্ষেত্রে অন্যতম দলীল স্বরূপ।
এছাড়া ইমাম সাদিক ও ইমাম রেজা (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, নিশ্চয় কোম নগরীতে হযরত ফাতেমা মাসুমা'র (মাজার) যেয়ারতের পুরস্কার হচ্ছে বেহেশত। আর এর মাধ্যমে তাঁর সুউচ্চ মর্যাদার বিষয়টিই প্রমাণিত হয়।
ইমাম রেজা (আ.) সায়াদ কুম্মিকে বলেন : হে সায়াদ তোমাদের নিকট আমাদের একটি মাজার রয়েছে। সায়াদ বলেন : আপনার উপর উত্সর্গ হই! আপনি কি মুসা ইবনে জাফার (আ.) এর কন্যা ফাতেমার কবরের কথা বলছেন? তিনি বললেন : হ্যাঁ, যে ব্যক্তি তাঁর সম্পর্কে সঠিক পরিচিতি নিয়ে তাঁকে যেয়ারত করবে সে বেহেশতে প্রবেশ করবে'।
যেভাবে অন্যান্য নিষ্পাপ ইমামগণ (আ.) এর মাজার যেয়ারতের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, যদি কেউ তাদের সত্য পরিচিতি নিয়ে তাঁদের মাজার যেয়ারত করে, তবে যোগ্য যায়ের পুরস্কার হিসেবে বেহেশতে প্রবেশের যোগ্যতা অর্জন করবে।
ইমাম জাওয়াদ (আ.) বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি কোম নগরীতে আমার ফুপুর (মাজার) যেয়ারত করবে সে বেহেশত পাওয়ার যোগ্য'। এ বিষয়ে অনেক রেওয়ায়েতই বর্ণিত হয়েছে, যার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, হযরত মাসুমার মর্যাদা সাধারণ মানুষ অপেক্ষা অনেক উর্ধ্বে। অবশ্য এ বিষয়টিওকে জেনে রাখা উচিত যে, অন্যান্য মানবিক পূর্ণতার ন্যায় ইসমাত তথা নিষ্পাপতারও বিভিন্ন স্তর রয়েছে। ইসমাতের সর্বোচ্চ স্তরে হযরত মুহাম্মাদ (স.), হযরত ফাতেমা (সা. আ.) এবং রাসুল (স.) এর ১২ জন স্থলাভিষিক্ত রয়েছেন।
ইমামিয়া উলামারা এ বিষয়ে মতৈক্য রাখেন যে, মহান আল্লাহর সকল নবী ও ফেরেস্তাগণ নিষ্পাপ। পাশাপাশি ইমামিয়া উলামাদের কেউই ‘হযরত আব্বাস', ‘হযরত আলী আকবার', হযরত যায়নাব ও ‘হযরত মাসুমা'র বিষয়ে এ দাবী তোলেননি যে তারা নিষ্পাপ নয়, বরং অনেকে তাদের নিষ্পাপ হওয়ার পক্ষে কথা বলেছেন।
হযরত ফাতেমা মাসুমা (সা. আ.) এর গোসল, কাফন ও দাফনের অনুষ্ঠানে দু'জন অপরিচিত ব্যক্তির আগমণ (যারা ইমাম রেজা ও ইমাম জাওয়াদ (আলাইহিমাস সালাম) হওয়ার বিষয়ে অধিক সম্ভাবনা দেওয়া সম্ভব) তার নিষ্পাপ হওয়ার বিষয়ে অন্যতম দলীল হিসেবে বিবেচিত। কেননা শিয়াদের নিশ্চিত আকিদাসমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যে, ‘নিষ্পাপ ব্যক্তির মাইয়াতের উপর শুধুমাত্র নিষ্পাপ ব্যক্তিই নামায পড়ে এবং নিষ্পাপ ব্যক্তির লাশ অপর এক নিষ্পাপ ব্যক্তি দাফন করে থাকেন'। যেভাবে ইমাম সাদিক (আ.) হতে মুফাদ্দাল বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন : আমি আবি আব্দিল্লাহ (আ.) [ইমাম সাদিক] কে বললাম, কে ফাতেমা [সা. আ.] কে গোসল দিয়েছেন? তিনি বললেন : আমিরুল মু'মিনীন (আ.)... কেননা তিনি ছিলেন সিদ্দিকাহ (সত্যবাদী) আর সত্যবাদী কোন ব্যক্তি ব্যতীত অপর কেউ তাঁকে কেউ গোসল দিতে পারবে না, তুমি কি জানো না যে, ঈসা [আ.] ব্যতীত মারইয়াম [সা. আ.]কে অপর কেউ গোসল দেয়নি'।
হযরত মাসুমা (সা. আ.) কেন ইরানে এসেছিলেন
২০০ হিজরীতে তত্কালীন বাদশাহ মা'মুন ইমাম রেজা (আ.) কে মারভ-এ আমন্ত্রণ জানায়! বরং বলা যায় তাঁকে তলব করেছিলেন এবং তিনি সেখানে থাকতে বাধ্য হন। হযরত মাসুমা (সা. আ.) অষ্টম ইমামকে প্রচন্ড ভালবাসতেন। তিনি দীর্ঘ একবছর ভাই হতে দূরে থাকেন, এরপর ভাই হতে দূরে থাকার কষ্ট সহ্য করা তার জন্য ছিল দূঃসাধ্য, একইভাবে ইমাম রেজা (আ.)ও স্বীয় প্রাণপ্রিয় বোনকে দেখার জন্য বিচলিত ছিলেন। তাই ইমাম রেজা (আ.), হযরত মাসুমা (সা. আ.) এর উদ্দেশ্যে একটি পত্র লিখে তা বিশেষ দূতের হাতে দিয়ে মদিনায় প্রেরণ করলেন। ঐ পত্রে তিনি হযরত মাসুমা (সা. আ.) কে খোরাসানে আমন্ত্রণ জানান।
অষ্টম ইমাম (আ.) এর ঐ পত্র পাওয়া মাত্রই ভাইয়ের সাথে সাক্ষাতের জন্য মারভে'র উদ্দেশ্যে মদিনা ত্যাগ করেন তিনি। এ সফরে তাঁর ৫ জন ভাই -ফাজল, জাফার, হাদী, কাসেম ও যায়েদ-, কয়েকজন ভাতিজা, কয়েকজন দাস ও দাসী সঙ্গে ছিলেন। হযরত মাসুমার কাফেলা সাভে শহরে পৌঁছালে সাভের অধিবাসীরা তাদের উপর হামলা চালায়, ঐ সময় সাভে'র অধিবাসীরা আহলে বাইত (আ.) এর সদস্যদের কঠিন শত্রু ছিল। কঠিন এক যুদ্ধে হযরত মাসুমার সকল ভাই ও ভাতিজারা শহীদ হন। কোন কোন ঐতিহাসের মতে, ইমামযাদাগণ সাইয়্যেদ ইসহাক, সাইয়্যেদ আবু রেজা ও সাইয়্যেদ আলী আসগার প্রমুখ হযরত ফাতেমা মাসুমার সাথে ছিলেন, মা'মুনের নির্দেশে তাদেরকে হত্যা করা হয়।
হযরত মাসুমা (সা. আ.) এর ওফাত
হযরত মাসুমা (সা. আ.) স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেছেন নাকি শহীদ হয়েছে -এ বিষয়ে অধিকাংশ ঐতিহাসিকরা দৃষ্টিভঙ্গী হচ্ছে এরূপ যে, মদিনা হতে খোরাসানে আসার সময় পথিমধ্যে সাভে শহরে পৌঁছার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখান হতে তাঁকে কোমে আনা হয়। এর ১৭ দিন পর; ১০ই রবিউস সানী ২০১ হিজরীতে ২৮ বছর বয়সে প্রাণপ্রিয় ভাইয়ের সাথে সাক্ষাতের পূর্বে কোম নগরীতে ইন্তিকাল করেন। কোম ঐ যুগে আহলে বাইত (আ.) এর অনুসারীদের একটি শহর হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিল। কোমের শিয়ারা বিশেষ সম্মানের সাথে বাগে বাবেলান (বর্তমানে যেখানে মাজার শরীফ অবস্থিত) নামক স্থানে দাফন করে।
হযরত মাসুমা (সা. আ.) সাভে শহরে অসুস্থ হওয়ার পর বুঝতে পারলেন যে, খোরাসান যাওয়ার মত শক্তি তাঁর মধ্যে আর অবশিষ্ট নেই। আর তিনি এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে গেলেন যে, প্রাণপ্রিয় ভাই ইমাম রেজা (আ.) এর সাথে তাঁর সাক্ষাত হবে না, তাই তিনি কোমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। কেননা তিনি পূর্ব হতেই জানতেন যে, কোম নগরীতেই তাঁকে দাফন করা হবে। কোমের কাছাকাছি পৌঁছা মাত্রই ‘মুসা বিন খাযরাজ' প্রাচীন কোম শহরের প্রাণকেন্দ্র ‘মায়দানে মীর'-এ অবস্থিত স্বীয় বাসভবনে তাঁর অবস্থানের ব্যবস্থা করে দেন।
তাঁকে সাভে হতে কোম শহরে স্থানান্তরের কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, ঐ যুগে সাভে শহরের জনগণের মনে নবী (স.) এর পরিবারের প্রতি ভালবাসা ছিল না বরং তারা আহলে বাইত (আ.) এর শত্রু ছিল। কিন্তু কোম নগরী প্রাচীনকাল হতে শিয়া ও আহলে বাইত (আ.) এর ভক্তদের কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হত। ৮৩ হিজরীর দিকে আব্দুর রহমান বিন মুহাম্মাদ বিন আশয়াস, ১৭ জন তাবেঈন ওলামা ও শিয়াদের দ্বারা গঠিত একটি দল -যাদের মাঝে কুমাইল, সাঈদ বিন জুবাইরে'র ন্যায় ব্যক্তিত্বও ছিলেন- নিয়ে কোমে আসেন এবং তারা সকলে জামকারান গ্রামে অবস্থান নেন। অতঃপর ইয়েমেনের প্রসিদ্ধ মুসলিম গোত্র আল-এ আশয়ার -যারা ইতিপূর্বে কুফায় বসবাস করত- প্রথম শতাব্দি'র শেষের দুই দশক ধরে কোমে আসতে শুরু করে। আর এর পর হতে কোম শিয়া ও আহলে বাইত (আ.) এর ভক্তদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিতে রূপান্তরিত হয়। প্রকৃতপক্ষে হযরত মাসুমা (সা. আ.) এর কোমে আগমনের সাথে সাথে শিয়াদের ভৌগলিক অবস্থান মদিনা হতে কোমে স্থানান্তরিত হয়।#
source : www.abna.ir