সৌদি সরকার বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র জন্মস্থানের স্মৃতি বিজড়িত স্থাপনাটি ধ্বংসের পরিকল্পনা করছে।
পবিত্র কাবা-ঘর সংলগ্ন মসজিদুল হারামের পাশে একটি উঁচু ভূমি বা পাহাড়ি জমিতে বিশ্বনবী (সা.)'র জন্মের পবিত্র স্থানটির ওপরে রয়েছে একটি লাইব্রেরি বা পাঠাগার। এই পাঠাগারটি নির্মাণ করা হয়েছিল এমন একটি ঘরের ওপর যেখানে জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্বনবী (সা.)।
সৌদি ওয়াহাবি শাসকগোষ্ঠী এমন পবিত্র স্থানের স্মৃতি সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ না নিয়ে বার বার নানা অজুহাতে এই পবিত্র স্থানের স্মৃতি বিলুপ্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে।
সম্প্রতি নানা সূত্রে খবর এসেছে যে, সৌদি কর্তৃপক্ষ এই পবিত্র স্থান ধ্বংসের অনুমতি দিয়েছে। কয়েকটি আকাশচুম্বী হোটেল নির্মাণ ও মসজিদুল হারাম সম্প্রসারণের অজুহাতে ধ্বংস করা হবে বিশ্বনবী(সা.)'র জন্মস্থান।
সৌদি আরবের ‘বিন লাদেন' নামের একটি নির্মাণ-কোম্পানি এই পবিত্র স্থান ধ্বংসের কাজ শিগগিরই শুরু করতে চায় বলে জানা গেছে।
এই উদ্যোগের ফলে সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে হজযাত্রীরাসহ বিশ্বের সচেতন মুসলমানরা তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানাবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে সৌদি আরবের ওয়াহাবি গ্র্যান্ড মুফতি শেইখ আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ মক্কার ইসলামী ঐতিহ্যের নিদর্শন বা স্থাপনাগুলো ধ্বংসের উদ্যোগকে সমর্থন জানান এবং তা করা জরুরি বলেও দাবি করেন।
এর আগে ওয়াহাবি মতবাদে বিশ্বাসী সৌদি সরকার গুড়িয়ে দিয়েছে মক্কার পবিত্র মসজিদুল হারামের অবশিষ্ট ঐতিহাসিক নিদর্শন। মসজিদুল হারামেই রয়েছে পবিত্র কাবা ঘর। এই কাবা ঘর মুসলমানদের কিবলা বা এই ঘরের দিকে মুখ করেই মুসলমানরা নামাজ আদায় করেন।
ব্রিটেনের দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট জানিয়েছে, ওয়াহাবি মতবাদে বিশ্বাসী সৌদি কর্তৃপক্ষ সেই স্তম্ভটি গুড়িয়ে দিয়েছে যেখান থেকে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) পবিত্র মে'রাজ বা ঊর্ধ্বাকাশ সফরের প্রাক্কালে মুসলমানদের প্রথম কিবলা বা আলকুদস অভিমুখে রওনা হয়েছিলেন। সৌদি ওয়াহাবি পুলিশ এই ধ্বংসযজ্ঞকে উৎসব (!) হিসেবে পালন করেছে বলে দৈনিকটি খবর দিয়েছিল।
ওদিকে বিশ্বনবী (সা.)'র মে'রাজের সঙ্গে সম্পর্কিত বা মুসলমানদের প্রথম কিবলার নিদর্শন তথা আল-আকসা মসজিদও ইসরাইলি দখলদারদের মাধ্যমে হুমকির মুখে রয়েছে।
লন্ডন-ভিত্তিক হিজাজের ঐতিহাসিক নিদর্শন বিষয়ক আন্তর্জাতিক গ্রুপ জানিয়েছিল, সৌদি আরবে ইসলামী নিদর্শনগুলোর শতকরা ৯৫ ভাগই ধ্বংস করে ফেলেছে ওয়াহাবিরা। ইসলামের দুই প্রধান কেন্দ্র তথা মক্কা ও মদিনায় ইসলামের প্রধান নিদর্শনগুলোর বেশির ভাগই ধ্বংস করে ফেলেছে তারা। অথচ ওয়াহাবিরা হিজাজে তথা সৌদি আরবে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের নিদর্শনগুলো রক্ষা করছে! এটা খুবই বিস্ময়কর ও লক্ষণীয় বিষয়। যেমন, খায়বরের মারহাব দুর্গ রক্ষা করছে তারা। মারহাব ছিল মদিনার অন্যতম ইহুদি গোত্র-প্রধান ও পালোয়ান যে হযরত আলী (আ.)'র সঙ্গে দ্বন্দ্ব যুদ্ধে নিহত হয়েছিল। এমনকি ওয়াহাবিদের প্রথম শাসনামলের দিকে নির্মিত খ্রিস্টানদের একটি গির্জাকে ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে রক্ষা করছে ওয়াহাবিরা। অথচ বিশ্বনবী (সা.)'র পবিত্র স্মৃতি-বিজড়িত নিদর্শনগুলো ধ্বংস করছে তারা।
বিভিন্ন দলিল প্রমাণে দেখা গেছে ওয়াহাবিরা সৌদি আরবে, বিশেষ করে, মক্কা ও মদিনায় অলি-আওলিয়ার মাজার বা কবর ধ্বংসের পাশাপাশি তাদের অবমাননার জঘন্য ও দুঃখজনক পদক্ষেপও নিয়েছে। যেমন, ওয়াহাবিরা মক্কায় বিশ্বনবী (সা.)'এর স্ত্রী ও প্রথম মুসলমান উম্মুল মুমিনিন হযরত খাদিজা (সালামুল্লাহি আলাইহার) বাসভবনটিকে ধ্বংস করে সেখানে টয়লেট নির্মাণ করেছে।তারা ‘মৌলুদুন্নবি' নামে খ্যাত বিশ্বনবী (সা.)'র জন্মের স্থানটিকে পশু রাখার স্থানে পরিণত করেছিল!
ওয়াহাবিদের এ ধরনের তাণ্ডবের প্রেক্ষাপটে মক্কা ও মদীনার মত পবিত্র শহরগুলো পরিচালনার দায়িত্ব থেকে ওয়াহাবিদের সরিয়ে দিয়ে তা মুসলমানদের প্রকৃত প্রতিনিধিদের কাছে অর্পণ করার দাবি ক্রমে জোরদার হচ্ছে।
কেউ কেউ বলে থাকেন যে সৌদি রাজ-পরিবার আসলে "দোমনেহ" নামের বিভ্রান্ত ইহুদিবাদী গোষ্ঠীর বংশধর। এই গোষ্ঠী ভণ্ড ইহুদিবাদী নবী ‘শাব্বিটি জিভি'র অনুসারী। তারা প্রকাশ্যে ইসলামের অনুসারী বলে দাবি করত। কিন্তু তারা বাস্তবে মদ্যপ ও নির্বিচার যৌনাচার বা যৌন অনাচারসহ নানা ঘৃণ্য কাজে অভ্যস্ত ছিল।